ইতিহাসের ধারণা: WBBSE ক্লাস 10 ইতিহাস (History)

ইতিহাসের ধারণা
Share with others

এখানে (chapter 1) ইতিহাসের ধারণা: WBBSE ক্লাস 10 ইতিহাস (History) (Bengali medium) আধুনিক ভারতের ইতিহাস ও পরিবেশ (Adhunik Bharater Itihas O Poribesh)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

Select medium
English medium notes
Bengali medium notes

Register Login

সারাংশ (summary)

ইতিহাস মানে শুধুমাত্র রাজা-মহারাজাদের যুদ্ধের গল্প নয়। এখন ইতিহাস মানে হলো সমাজের সাধারণ, রোজকার মানুষদের জীবনের কথা জানা। এই অধ্যায়ের নাম ইতিহাসের ধারণা (Itihaser Dharona)।

আগেকার দিনে ইতিহাস লেখা হতো শুধু বড় বড় নেতা বা রাজাদের নিয়ে, যেন উপর থেকে নীচের দিকে দেখা হচ্ছে। কিন্তু এখন ইতিহাস লেখা হয় সাধারণ মানুষদের জীবন দিয়ে, যেন নীচ থেকে উপরের দিকে দেখা হচ্ছে। একে বলা হয় নতুন সামাজিক ইতিহাস। ফ্রান্সের কিছু ঐতিহাসিক এই ধরনের ইতিহাস লেখা শুরু করেছিলেন। এই নতুন ইতিহাসে আমরা সমাজের সব দিকের ছবি পাই।

যেমন, মানুষের খাবারদাবার কেমন ছিল বা তারা কী পোশাক পরত, তা থেকেও আমরা সেই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের পছন্দ বা অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝতে পারি। খেলাধুলার ইতিহাসও খুব জরুরি। যেমন, মোহনবাগান ক্লাবের ফুটবল জয়ের ঘটনা শুধু একটা খেলার জয় ছিল না, সেটা পরাধীন ভারতের মানুষের মনে সাহস জুগিয়েছিল। এখন মেয়েরাও খেলাধুলা আর তার দর্শক হিসেবে এগিয়ে আসছে, এটাও ইতিহাসের একটা জরুরি দিক।

শিল্পের বিভিন্ন দিক, যেমন গান, নাচ, নাটক, সিনেমা, ছবি আঁকা – এগুলোর মাধ্যমেও আমরা পুরোনো সময়ের মানুষের ভাবনা, অনুভূতি ও সমাজের বদল বুঝতে পারি। পুরোনো দিনের বাড়িঘর বা স্থাপত্য দেখেও সেই সময়ের মানুষের শিল্পজ্ঞান ও জীবনযাত্রা জানা যায়। কীভাবে মানুষ আগে যাতায়াত করত, পায়ে হেঁটে বা গরুর গাড়ি চেপে, আর এখন কত দ্রুত এরোপ্লেন বা ট্রেনে যাতায়াত করে – এই যানবাহন আর যোগাযোগের ব্যবস্থার বদলও ইতিহাসের অংশ।

এছাড়া, কোনো একটা ছোট জায়গার ইতিহাস (স্থানীয় ইতিহাস), শহরের বেড়ে ওঠার গল্প (শহরের ইতিহাস), যুদ্ধের কারণ ও তার প্রভাব (সামরিক ইতিহাস), প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক (পরিবেশের ইতিহাস), বিজ্ঞান ও চিকিৎসার উন্নতি (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস) আর নারীদের কথা (নারী ইতিহাস) – এই সবকিছুই এখন ইতিহাসের জরুরি বিষয়।

এই ইতিহাস জানার জন্য আমরা নানা জিনিস ব্যবহার করি। যেমন, পুরোনো সরকারি কাগজপত্র, রিপোর্ট বা চিঠি (যেমন মেকলের লেখা বা ডালহৌসির চিঠি)। আবার, অনেক বিখ্যাত মানুষ নিজেদের জীবন নিয়ে বই লিখেছেন (আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা), যেমন বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ বা সরলাদেবী চৌধুরানীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’। ব্যক্তিগত চিঠি, যেমন জওহরলাল নেহরুর তাঁর মেয়ে ইন্দিরাকে লেখা চিঠিগুলোও খুব দরকারি। পুরোনো দিনের খবরের কাগজ ও পত্রিকা (যেমন ‘বঙ্গদর্শন’ বা ‘সোমপ্রকাশ’) থেকেও অনেক কথা জানা যায়। ছবি বা ফটোগ্রাফিও আমাদের পুরোনো সময় দেখতে সাহায্য করে। তবে, কোনো লেখা বা ছবি দেখার সময় একটু সতর্ক থাকতে হয়, কারণ যিনি লিখেছেন বা ছবি তুলেছেন, তার নিজের ভাবনার ছাপ তাতে থাকতে পারে।

তাই, ইতিহাস আসলে শুধু ছেলেদের বা বড় মানুষদের গল্প নয়, এটা সবার গল্প, মেয়েদেরও গল্প, আমাদের সবার জীবনের কথা।

পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Prantik textbook)

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

ক) নতুন সামাজিকইতিহাসযাদের কথা বলে তারা হল–

(i) রাজা-মহারাজা
(ii) সামন্ত প্রভু
(iii) সাধারণ মানুষ
(iv) বড় মানুষ

উত্তর: (iii) সাধারণ মানুষ

খ) ভারতে ফুটবল খেলা প্রবর্তন করেন—

(i) ইংরেজরা
(ii) ওলন্দাজরা
(iii) ফরাসিরা
(iv) পোর্তুগীজরা

উত্তর: (i) ইংরেজরা

গ) ‘মেক্‌লে মিনিট্স’ এ যে বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে তা হল—

(i) সমাজ
(ii) শিক্ষা
(iii) অর্থনীতি
(iv) রাজনীতি

উত্তর: (ii) শিক্ষা

ঘ) ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থটি যার জীবনকে অবলম্বন করে রচিত তিনি হলেন-

(i) সরলাদেবী চৌধুরানী
(ii) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(iii) বিপিনচন্দ্র পাল
(iv) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তর: (iii) বিপিনচন্দ্র পাল

নীচের বিবৃতি গুলির মধ্যে কোটি ঠিক কোটি ভূল লেখো

১. ইংল্যান্ডে নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা অ্যানাল্স স্কুল নামে পরিচিত ছিল।

উত্তর: ভুল

কারণ: অ্যানালস্ স্কুল ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ইংল্যান্ডে নয়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেভর দি অ্যানালস্ (The Annales) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই স্কুলটি সামাজিক ইতিহাস রচনার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছিল।

২. নবান্ন নাটকটির রচয়িতা হলেন বিজন ভট্টাচার্য্য।

উত্তর: ঠিক

কারণ: উল্লেখ আছে যে, “নবান্ন” নাটকটির রচয়িতা বিজন ভট্টাচার্য্য। এটি বাংলা নাটকের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ যা সমসাময়িক চিত্র তুলে ধরে।

৩. গন্ধার শিল্প ইন্দো-ইসলামিক সমন্বিত শিল্পরীতির নিদর্শন।

উত্তর: ভুলকারণ: গন্ধার শিল্প ইন্দো-ইসলামিক সমন্বয়ের পরিবর্তে গ্রিক ও রোমান শিল্পরীতির সঙ্গে ভারতীয় শিল্পরীতির সমন্বয় ঘটেছিল। এছাড়াও ইরানীয় ও মধ্য এশীয় শিল্পের প্রভাবও গন্ধার শিল্পে লক্ষ্য করা যায়।

প্রদত্ত ভারতবর্ষের মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত করো

(ক) আলিগড
(খ) বারাণসী
(গ) দিল্লি
(ঘ) পানিপথ

উত্তর:

বামস্তম্ভের সঙ্গে ডানস্তম্ভ মেলাও
বামস্তম্ভজনস্তম্ভ
(i) সত্যজিৎ রায়(a) অমৃতবাজার
(ii) ভরতমুনি(b) অস্কার
(iii) বঙ্কিমচন্দ্র(c) বঙ্গদর্শন
(iv) শিশিরকুমার ঘোষ(d) নাট্যশাস্ত্র

উত্তর:

বামস্তম্ভজনস্তম্ভ
(i) সত্যজিৎ রায়(b) অস্কার
(ii) ভরতমুনি(d) নাট্যশাস্ত্র
(iii) বঙ্কিমচন্দ্র(c) বঙ্গদর্শন
(iv) শিশিরকুমার ঘোষ(a) অমৃতবাজার
একটি বাক্যে উত্তর দাও

৫। একটি বাক্যে উত্তর দাও

ক. সামাজিক ইতিহাস ক-টি পর্বে বিভক্ত?

উত্তর: সামাজিক ইতিহাস মূলত দুটি পর্বে বিভক্ত।

খ. ‘শিল্প একটি অভিজ্ঞতা’-এই মন্তব্যটি কার?

উত্তর: ‘শিল্প একটি অভিজ্ঞতা’ (Art as Experience) এই ধারণাটি আমেরিকান দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ জন ডিউই (John Dewey)-এর সাথে বিশেষভাবে যুক্ত। তিনি তাঁর ১৯৩৪ সালের বিখ্যাত গ্রন্থ “Art as Experience”-এ এই ধারণাটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।

গ. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার প্রকাশনা কিছুদিন স্থগিত রাখতে হয়েছিল কেন?

উত্তর: ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে নির্ভীক মত প্রকাশের কারণে সরকারি রোষের স্বীকার হওয়ায় এবং ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট’-এর কোপে পড়ে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার প্রকাশনা কিছুদিন স্থগিত রাখতে হয়েছিল।

ঘ. কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়?

উত্তর: ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

ঙ. সরকারি নথিপত্র কোথায় সংরক্ষণ করা হয়?

উত্তর: সরকারি নথিপত্র সাধারণত জাতীয় বা রাজ্য মহাফেজখানায় (National or State Archives) সংরক্ষণ করা হয়।

চ. ‘ছেঁড়া তমসুক’-এর লেখক কে?

উত্তর: ‘ছেঁড়া তমসুক’ নাটকটি সমরেশ বসুর লেখা অবলম্বনে রচিত হয়েছিল।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন

ক. মানুষের খাদ্যাভ্যাস সময়ের সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?

উত্তর: খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চা মানুষের সামাজিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। খাদ্য মানুষের একটি প্রাথমিক চাহিদা। সময়ের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আসলে মানুষের জীবনযাত্রার বিবর্তনের কথাও বলে। খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা যেমন মানুষের চাহিদা, রুচি, সংস্কৃতি ইত্যাদির সময়ানুযায়ী নতুন ধারার সন্ধান দেয়, তেমনি দিক নির্দেশ করে সমাজের সামগ্রিক পটপরিবর্তনেরও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শ্রেণিবিন্যাস কীভাবে মানুষের খাদ্যাভ্যাসকে প্রভাবিত করে, তার নিরপেক্ষ বর্ণনাও খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিশ্বায়নের প্রভাব মানুষের খাদ্যাভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করে কিনা বা খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আসলে সাংস্কৃতিক ঔপনিবেশিকতারই পরিচায়ক কিনা খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা সেই বিতর্কেরই অবকাশ রাখে।

খ. বিশ্বায়ন মানুষের পোশাক পরিচ্ছদকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

উত্তর: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে পরিধান সামগ্রী বিষয়ে যে পোশাকি দূরত্ব ছিল, বিশ্বায়নের সুবাদে তা ক্রমবিলীয়মান। পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা মানুষের এই ক্রমপরিবর্তিত ফ্যাশনেরও নথিবদ্ধকরণ করে। এই ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি ভৌগোলিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক অভিরুচি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক রীতি কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে।

গ. স্থানীয় ইতিহাস বলতে কী বোঝো?

উত্তর: স্থানীয় ইতিহাস (Local History) বলতে আমরা বুঝি স্থানীয় কোনো নির্দিষ্ট জায়গার মানুষের জীবনের ইতিহাস। সময়ের সঙ্গে সেই ছোটো জায়গায় যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধিত হয় স্থানীয় ইতিহাস তার-ই নথিবদ্ধকরণ (Documentation) করে।

ঘ. ‘Letters from a Father to his Daughter’-এ নেহেরু গল্পের ছলে কোন্ কোন্ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: জওহরলাল নেহরুর তাঁর মেয়েকে লেখা চিঠিগুচ্ছ—’Letters from a Father to His Daughter’ ইতিহাসচর্চার এক অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চিঠিগুলোতে দেখানো হয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশের ইতিহাস থেকে মানব ইতিহাস সম্পর্কে কত কিছু জানা যায়। গল্পের ছলে পৃথিবীর সৃষ্টি, প্রাণের আবির্ভাব, মানুষের জন্ম, আগুনের ব্যবহার, ভাষাবৈচিত্র্য, ধর্মের প্রাদুর্ভাব, দলপতি ও রাজার সৃষ্টি, শ্রমের বিভাজন, পুরানো সভ্যতা ও শহর, রামায়ণ-মহাভারতের গল্প ও গুরুত্ব—এই সমস্ত কিছু নিয়েই সহজ ও অথচ বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা রয়েছে চিঠিগুচ্ছটিতে। তিনি ইন্দিরাকে সহজ কথায় বুঝিয়েছেন কীভাবে মানুষের দ্বারা নির্বাচিত দলপতি একসময় রাজা হয়ে যায় এবং বিশ্বাস করতে শুরু করে ‘The State, it is I’ তিনিই রাজা, তিনি রাজত্ব। তিনি ‘How Early History was written’ শীর্ষক চিঠিতে জানান যে সেই সময়ে ভারতবর্ষ হয়তো ছিল পরাধীন এক দেশ। কিন্তু ভারতবর্ষ একসময় সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ ছিল। তিনি তাঁর ‘The Races and Languages of Mankind’ শীর্ষক চিঠিতে ভারতবর্ষের দ্রাবিড়, আর্য ও মঙ্গোলীয়দের সম্পর্কে আলোচনা করেন। তাঁর লেখা থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার সম্বন্ধেও ধারণা তৈরি হয়। ‘The First Living Things’ শীর্ষক চিঠিতে জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান বিষয়ক কাজের কথা তিনি উল্লেখ করেন। ভারতবর্ষের তৎকালীন সময়ের বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কেও চিঠিটা আমাদের ধারণা দেয়। তিনি তাঁর ‘Different Classes of People’ শীর্ষক চিঠিতে ইতিহাস পাঠ নিয়ে মন্তব্য করেন।

বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন

ক. নতুন সামাজিক ইতিহাস কেন ‘অন্যরকম’ ইতিহাস?

উত্তর: নতুন সামাজিক ইতিহাস ‘অন্যরকম’ কারণ এটি সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে। ইতিহাস বলতেই সাধারণত যা বোঝা হতো—তা বড়ো ঘটনা, বড় মানুষের কথা বলবে—নতুন সামাজিক ইতিহাস সেই ‘বড়ো’ মানুষের (Great man) পরিবর্তে সাধারণ মানুষের (Common man) কথা বলে। সাধারণভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে টপ-ডাউন (Top-down) পদ্ধতি অনুসৃত হয়, অর্থাৎ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তে যে সকল মানুষ আছেন, ইতিহাসচর্চার সূচনা তাদের থেকেই হয়। কিন্তু নতুন সামাজিক ইতিহাস রচনা শুরুই হল সাধারণ মানুষদের নিয়ে, এবং অনুসৃত হল বটম-আপ (Bottom-up) পদ্ধতি। এই চর্চায় মানুষের ‘ইতিহাসে মানুষ ফিরে এল’ (‘History with the people put back in’), যা একে প্রাসঙ্গিক করে তোলে। মানব ইতিহাসের বিভিন্ন সামাজিক উপাদান যেমন— খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস, পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস, স্থানীয় ইতিহাস, খেলার ইতিহাস, শিল্পচর্চার ইতিহাস—এ সমস্ত কিছুই নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার পরিধির মধ্যে পড়ে, যা প্রচলিত ইতিহাস চর্চা থেকে ভিন্ন।

খ. টীকা লেখো: চিত্রকলা ও সমসাময়িক সময়।

উত্তর: চিত্রকলা হল দৃশ্য শিল্পের একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই চিত্রকলার চর্চা হয়ে চলেছে। আদিম মানব বিভিন্ন গুহার গায়ে বা দেওয়ালে ছবি আঁকত; ভাষা আবিষ্কারের পূর্বে এই ছবিগুলিই ছিল মানুষের ভাবপ্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। চিত্রকলার মাধ্যমে শিল্পী সমসাময়িক ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করেন। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ-সপ্তদশ শতকের মধ্যে ইতালিতে লিওনার্দো-দ্য-ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো ও র‍্যাফ্যায়েলের মতো শিল্পীদের হাতে চিত্রকলায় যুগান্তকারী সাফল্য আসে। পরবর্তীকালে শৈল্পিক ভাবনা ও অঙ্কনশৈলীর ওপর নির্ভর করে পৃথিবীতে বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে এবং চিত্র ধীরে ধীরে প্রতীকধর্মী হয়ে ওঠে। ভারতবর্ষেও প্রস্তরযুগীয় চিত্রকলা থেকে শুরু করে গুপ্ত যুগের অজন্তা-গুহাচিত্র, মোঘল যুগের চিত্রকলা এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে নব্য ভারতীয় চিত্রকলার ধারা—এ সবই সমসাময়িক সময়ের প্রতিফলন। নন্দলাল বসু এবং তাঁর অনুগামীরা এই ধারাকে বিকশিত করেন। চিত্রকলা সরাসরি মানুষের জীবনচর্চাকে প্রকাশ করে এবং মানুষের ব্যক্তি ও সমাজজীবনের নানা উত্থান-পতন ও বিবর্তনের চলমান আলেখ্য তৈরি করে। ঐতিহাসিকরা চিত্রকলার ইতিহাস চর্চার মধ্য দিয়ে সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া শিল্পীর ভাবনা, অঙ্কনশৈলী প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করেছেন, যা সমসাময়িক সময়কে বুঝতে সাহায্য করে।

গ. ইতিহাসের উপাদান হিসাবে সরকারি নথি, না ব্যক্তিগত চিঠি—কোন্টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে তুমি মনে করো।

উত্তর: ইতিহাস চর্চার উপাদান হিসাবে সরকারি নথিপত্র এবং ব্যক্তিগত চিঠিপত্র উভয়েরই গুরুত্ব অপরিসীম। সরকারি নথিপত্রের মধ্যে সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন, গোয়েন্দা বা পুলিশের রিপোর্ট, চিঠিপত্র ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি থেকে তদানীন্তন ‘শাসক’দের চিন্তাভাবনা, প্রশাসনিক কাজকর্ম, সরকারি নীতি ও তার উদ্দেশ্য বোঝা যায়, যেমন লর্ড মেকলের ‘মিনিটস্’ বা লর্ড ডালহৌসির রানি ভিক্টোরিয়াকে লেখা চিঠি থেকে বোঝা যায়। তবে, সরকারি নথিতে অনেক সময় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বা বিশেষ উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হতে পারে, যা সবসময় নিরপেক্ষ নাও হতে পারে, যেমন সরকারি সার্কুলারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে থাকা।

অন্যদিকে, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র সমকালীন সমাজ ও সেই সময়ে মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা জানার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। জওহরলাল নেহরুর তাঁর মেয়ে ইন্দিরাকে লেখা চিঠিগুলি থেকে প্রকৃতি, পরিবেশ, মানব ইতিহাস, সভ্যতা, সমাজ, ধর্ম, এমনকি পরাধীনতার গ্লানি সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনা ও তৎকালীন সময়ের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এই ধরনের চিঠি ইতিহাসের অনেক ব্যক্তিগত ও সামাজিক দিক তুলে ধরে যা সরকারি নথিতে পাওয়া যায় না।

সরকারি নথি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ঘটনার কাঠামো বুঝতে সাহায্য করে, আর ব্যক্তিগত চিঠি সমকালীন সমাজ ও ব্যক্তি মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি ও জীবনযাত্রার ছবি তুলে ধরে। কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ভর করে ঐতিহাসিক কোন বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন তার উপর। উভয় প্রকার উপাদানই ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসকে জানতে সাহায্য করে এবং একে অপরের পরিপূরক হতে পারে।

অতিরিক্ত (Extras)

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)

১. নতুন সামাজিক ইতিহাসের মূল লক্ষ্য কী?

ক. রাজা-মহারাজা
খ. সাধারণ মানুষ
গ. সামন্ত প্রভু
ঘ. উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্ব

উত্তর: খ. সাধারণ মানুষ

Missing answers are only available to registered users. Please register or login if already registered. How to register? Click on Menu and select Register

৩৭. প্রাথমিক মানবের চিত্রকলার প্রধান মাধ্যম হিসেবে কোনটি ব্যবহৃত হত?

ক. কাগজে আঁকা ছবি
খ. দেওয়ালে আঁকা ছবি
গ. ক্যানভাসে আঁকা ছবি
ঘ. ডিজিটাল ছবি

উত্তর: খ. দেওয়ালে আঁকা ছবি

প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)

1: নতুন সামাজিক ইতিহাস বলতে কী বোঝানো হয়?

উত্তর: নতুন সামাজিক ইতিহাস আসলে সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনের ইতিহাস। এই ইতিহাস ‘বড়ো’ মানুষের পরিবর্তে সাধারণ মানুষের কথা বলে।

Missing answers are only available to registered users. Please register or login if already registered. How to register? Click on Menu and select Register

37 . প্রশ্ন: আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার মাধ্যমে সমকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক ইতিহাসকে কীভাবে বুঝতে সাহায্য করে, উদাহরণসহ আলোচনা করো।

উত্তর: ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার গুরুত্ব অপরিসীম। এই ধরনের লিখিত উপাদানে লেখকের সমসাময়িক রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ইতিহাসের নানা কথার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উল্লেখ থাকে। সেই আত্মজীবনী যখন হয় কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামীর, তখন তা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জীবন্ত আলেখ্য হয়ে উঠবে, একথা বলাই বাহুল্য। মহাত্মা গান্ধির লেখা ‘দ্যা স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ’ বা জওয়াহরলাল নেহরুর ‘অ্যান অটোবায়োগ্রাফি (টু ওয়ার্ড ফ্রিডম) প্রভৃতি আত্মজীবনীর মধ্যে তৎকালীন সমাজ, রাজনীতি ও মানবজীবন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাই।

বিপিনচন্দ্র পাল তাঁর আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’-এ নিজের জীবনের সত্তর বছরের ইতিহাসকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। ভূমিকাতে লিখেছেন, ‘আমার সত্তর বৎসরের জীবনকথা বাস্তবিক এই বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাসেরই কথা, আমার ক্ষুদ্র জীবন বাংলার এই সত্তর বৎসরের সমাজজীবনের সঙ্গে কাপড়ের টানা ও পোড়েনের সূতার মতন জড়াইয়া আছে।’ যে সমস্ত মানুষের ত্যাগ ও প্রচেষ্টায় ভারতবর্ষ এক নতুন রূপ লাভ করেছে, তাঁদের কথা লেখক তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নবগোপাল মিত্র, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, “সুরেন্দ্রনাথ আমাদিগকে পেট্রিয়টিজম-এ অথবা স্বদেশভক্তিতে দীক্ষিত করিয়াছিলেন। নবগোপাল মিত্র ন্যাশনালিজম্ বা স্বাজাত্যাভিমানে দীক্ষা দিয়াছিলেন।” সুরেন্দ্রনাথের নব্য ইতালীয় স্বাধীনতার ইতিহাসের কথার প্রচার সে যুগে স্বদেশপ্রেমের জোয়ার আনে। ইতালীর প্রাচীন বিপ্লবীবাদী কারবনারিদের মতো এদেশের ছাত্ররাও ছোটো ছোটো গুপ্ত সমিতি গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়। লেখকও শিবনাথ শাস্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘সাধক দল’-এর সদস্য হয়েছিলেন। হিন্দুমেলা, স্বদেশি আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষার প্রসার প্রভৃতি নানা বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে লেখক সমসাময়িককালের রাজনৈতিক তথা সামাজিক ইতিহাসকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন। লেখকের জাতীয় চেতনা উন্মেষের বর্ণনার মধ্যে সেই সময়ের মানুষের ভাবনার প্রতিফলন পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থটিও সমসাময়িক ইতিহাসের নানান টুকরো ছবি আমাদের সামনে নিয়ে আসে। যদিও রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য, “এই স্মৃতির ভান্ডারে অত্যন্ত যথাযথরূপে ইতিহাস সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে”- তবু জীবনস্মৃতি অজান্তেই হয়ে ওঠে সে সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিল। ‘জীবনস্মৃতি’র মাধ্যমে, হিন্দুমেলা, স্বদেশি যুগ, স্বদেশি ভাবনা সম্পর্কিত নানা তথ্য পাওয়া যায়। ‘জ্যোতি দাদা’র উদ্যোগে ‘স্বাদেশিকতার সভা’ অনুষ্ঠিত করা, স্বদেশে দিয়াশলাই কারখানা তৈরির সমবেত প্রচেষ্টা, রাজনারায়ণ বসুর সঙ্গে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে ওঠা- এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন/এক কার্যে সঁপিয়াছি সহস্র জীবন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আত্মিক যোগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই এ কথা বলাই বাহুল্য ‘জীবনস্মৃতি’ শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের কবিসত্তা উন্মেষের কাহিনি নয়। সমকালীন ইতিহাসের নানা টুকরো ছবিতে সমৃদ্ধ জীবনস্মৃতির ‘ছবিঘর’।

সরলাদেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’য় এক বালিকার বড় হয়ে ওঠার কথা রয়েছে। একইসাথে রয়েছে আমাদের দেশের একটি বিশেষ সময়ের ইতিহাস। জাতীয়তাবাদের প্রভাবে দেশ যখন আন্দোলিত, তখন সরলাদেবীও এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। বাঙালি যুবকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপযুক্ত করে তোলার উদ্দেশ্যে তাদের অস্ত্রশিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। গড়ে তোলেন ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’, ‘উদয়াদিত্য উৎসব’ বা ‘বীরাষ্টমীর’ মতো অনুষ্ঠান। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে স্বদেশি-যুগ-তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের নানান তথ্য। এখানে উল্লেখ্য ‘বন্দেমাতরম’ গানটিতে প্রথম দুটি পদ ছাড়া বাকিটুকুতে সরলাদেবী সুর দিয়েছিলেন। বইটিতে তৎকালীন সামাজিক ইতিহাসেরও প্রচুর উপাদান নিহিত আছে। অভিজাত পরিবারের কায়দাকানুন, দুধমা-ধাইমা দিয়ে সন্তানপালন, গৃহশিক্ষক প্রথা, মেয়েদের শিক্ষার কথা, ঠাকুরবাড়ির জন্মদিন পালনের রীতি, শাড়ি-পরার আধুনিক রীতি, রাখিবন্ধন, বসন্ত উৎসব পালনের রীতি, মাঘোৎসব প্রভৃতি সে যুগের সমাজজীবনের নানাদিক তুলে ধরে।

এই তিনটি গ্রন্থ (‘সত্তর বৎসর’, ‘জীবনস্মৃতি’, ‘জীবনের ঝরাপাতা’) প্রকৃতপক্ষে লেখকদের ব্যক্তিজীবনের নানা কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সময়ের আয়নাও হয়ে উঠেছে।

Get notes of other boards, classes, and subjects

NBSESEBA/AHSEC
NCERTTBSE
WBBSE/WBCHSEICSE/ISC
BSEM/COHSEMMBOSE
Custom Notes ServiceQuestion papers

Share with others

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Only registered users are allowed to copy.