এখানে (chapter 3) ঊনবিংশ শতকের ইউরোপ : রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত: WBBSE ক্লাস 9 ইতিহাস (History) (Bengali medium)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।
Select medium |
English medium notes |
Bengali medium notes |
সারাংশ (summary)
ইউরোপে ঊনবিংশ শতক: রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত (Europe in the 19th Century: Conflict of Monarchist and Nationalist Ideas)
জাতীয়তাবাদ হল একটি ঐক্যের অনুভূতি। বংশ, ধর্ম, ভাষা, ভৌগোলিক এলাকা বা সংস্কৃতি প্রভৃতি জনগণের মধ্যে এই ঐক্যবোধের সৃষ্টি করতে পারে। ফ্রান্স ছিল ইউরোপের পরিবর্তনের কারখানা। এই ফ্রান্সেই বহুবার রাজতান্ত্রিক ভাবধারার সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত ঘটেছে। ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে বিদেশি শক্তি ফ্রান্সের রাজতন্ত্র রক্ষায় লড়াই করেছিল।
ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্র নতুন করে তৈরি করা। এখানে ন্যায্য অধিকার নীতি, শক্তিসাম্য নীতি এবং ক্ষতিপূরণ নীতি গৃহীত হয়েছিল। ন্যায্য অধিকার নীতি বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রগুলির দেশশাসনের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ক্ষতিপূরণ নীতি অনুযায়ী ফ্রান্সের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ 70 কোটি ফ্রাঁ দাবি করা হয়েছিল।
1830 খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে জুলাই রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিপ্লবের ঢেউ ফ্রান্সের সীমানা অতিক্রম করে ইউরোপের নানা দেশে আছড়ে পড়ে। বেলজিয়াম হল্যান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জার্মানি, ইটালি প্রভৃতি দেশে জাতীয়তাবাদ ও উদারনৈতিক ভাবধারার প্রসার ঘটে।
1848 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ফ্রান্সে শুরু হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ইটালি প্রভৃতি দেশে গণতান্ত্রিক ও রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। মেটারনিক পদত্যাগ করে পালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনগুলি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সমবায়ের আক্রমণে ব্যর্থ হয়ে যায়।
ইটালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে বিসমার্ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য জোলভারেইন নামক শুল্কসংঘকে কেন্দ্র করে একত্রিত হতে শুরু করে।
রাশিয়ায় জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার 1861 খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটান। এই সংস্কারের ফলে রাশিয়ায় শিল্পবিপ্লব ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু মুক্ত ভূমিদাসদের ওপর চড়া হারে কর বসানো হয় এবং অনুর্বর জমিগুলি তাদের ভাগে পড়ে।
গ্রিসের জাতীয়তাবাদী যুদ্ধের ফলে গ্রিস তুর্কি শাসন থেকে মুক্তি পায়। হেটাইরিয়া ফিলিকে নামের গুপ্তসমিতি এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ হয় তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে। এই যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয়। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তুরস্কের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল।
এই সময়ে ইউরোপে রাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মধ্যে তীব্র সংঘাত চলছিল। জুলাই বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে জুলাই রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতীয়তাবাদী ধারণারই জয় হয়েছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই বিপ্লবের প্রভাবে উদারনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে দ্বিতীয় রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিপ্লবের প্রভাব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অস্ট্রিয়ার মূল ভূখণ্ডে আন্দোলনের চরিত্র ছিল গণতান্ত্রিক ও রাজতন্ত্র বিরোধী। অস্ট্রিয়ার অধীন হাঙ্গেরি ও বোহেমিয়ায় আন্দোলনের চরিত্র ছিল জাতীয়তাবাদী।
ইটালি ও জার্মানির পৃথক পৃথক রাজ্যগুলিকে একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ ইটালি ও জার্মান রাষ্ট্র গড়ে তোলাই ছিল এই আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য। এই সময়ের সব আন্দোলন সফল হয়নি কিন্তু এগুলি ইউরোপে জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Santra textbook)
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো (MCQ)
১. ভিয়েনা সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
a. 1815 খ্রিস্টাব্দে
b. 1816 খ্রিস্টাব্দে
c. 1817 খ্রিস্টাব্দে
d. 1818 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: a. 1815 খ্রিস্টাব্দে
২. জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল
a. জার্মানিতে
b. রাশিয়াতে
c. ফ্রান্সে
d. ইংল্যান্ডে
উত্তর: c. ফ্রান্সে
৩. ম্যাৎসিনি প্রতিষ্ঠিত গুপ্ত সমিতির নাম কী ছিল?
a. কার্বোনারি
b. ইয়ং ইটালি
c. রিসর্জিমেন্টো
d. ফ্রিম্যানস
উত্তর: b. ইয়ং ইটালি
৪. জার্মানিতে ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট গঠিত হয়েছিল
a. 1846 খ্রিস্টাব্দে
b. 1847 খ্রিস্টাব্দে
c. 1848 খ্রিস্টাব্দে
d. 1849 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: c. 1848 খ্রিস্টাব্দে
৫. রাশিয়ায় ভূমিদাস মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি হয়েছিল
a. 1851 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি
b. 1861 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি
c. 1871 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি
d. 1881 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি
উত্তর: b. 1861 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি
শূন্যস্থান পূরণ করো
১. ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ______ পর্যন্ত সময়কাল ইউরোপে ‘মেটারনিকের যুগ’ নামে পরিচিত।
উত্তর: ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ
২. ‘ফেব্রুয়ারি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল ______ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ১৮৪৮
৩. ইয়ং ইটালি দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ______।
উত্তর: ম্যাজিনি
৪. জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন হয়েছিল ______ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ১৮৭১
৫. রাশিয়ায় ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র’ জারি করেছিলেন ______।
উত্তর: জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার
‘ঠিক’/’ভুল’ নির্বাচন করো
১. ভিয়েনা সম্মেলনে যোগদানকারী চারটি বৃহৎ শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল—অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স।
উত্তর: ঠিক
কারণ: ভিয়েনা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চারটি প্রধান বৃহৎ শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স। এই সম্মেলনে ইউরোপের পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।
২. ১৮১৫-১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ইউরোপে ‘মেটারনিকের যুগ’ নামে পরিচিত।
উত্তর: ঠিক
কারণ: অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিকের নীতি ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ফলে ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ঐতিহাসিকভাবে ‘মেটারনিকের যুগ’ বলা হয়। এই সময়ে তিনি ইউরোপে রক্ষণশীল শাসন বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
৩. ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
উত্তর: ভুল
কারণ: ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এটি ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে গড়ে ওঠা একটি প্রজাতন্ত্র ছিল।
৪. ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যাভুর ও তৃতীয় নেপোলিয়ানের মধ্যে প্লমবিয়ার্সের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
উত্তর: ঠিক
কারণ: ইটালির ঐক্য আন্দোলনের সময় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে সার্ডিনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাউন্ট ক্যাভুর এবং ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ানের মধ্যে প্লমবিয়ার্সের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে উত্তর ইটালি থেকে অস্ট্রিয়ার আধিপত্য অপসারণের প্রচেষ্টা শুরু হয়।
৫. ক্রিমিয়ার যুদ্ধ হয়েছিল তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে।
উত্তর: ঠিক
কারণ: ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৩-১৮৫৬) শুরু হয় রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তুরস্কের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। এই যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি এবং ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার স্বার্থের সঙ্গে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের স্বার্থের সংঘাত।
স্তম্ভ মেলাও
‘ক’ স্তম্ভ | ‘খ’-স্তম্ভ |
(a) জুলাই বিপ্লব | (i) 1848 খ্রিস্টাব্দ |
(b) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব | (ii) 1830 খ্রিস্টাব্দ |
(c) ক্রিমিয়ার যুদ্ধ | (iii) 1870 খ্রিস্টাব্দ |
(d) এমস টেলিগ্রাম | (iv) 1853 খ্রিস্টাব্দ |
উত্তর:
‘ক’ স্তম্ভ | ‘খ’-স্তম্ভ |
(a) জুলাই বিপ্লব | (ii) 1830 খ্রিস্টাব্দ |
(b) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব | (i) 1848 খ্রিস্টাব্দ |
(c) ক্রিমিয়ার যুদ্ধ | (iv) 1853 খ্রিস্টাব্দ |
(d) এমস টেলিগ্রাম | (iii) 1870 খ্রিস্টাব্দ |
২.
‘ক’ স্তম্ভ | ‘খ’-স্তম্ভ |
(a) ভিয়েনা সম্মেলনের সূচনা | (i) 1819 খ্রিস্টাব্দ |
(b) জোলভারেইন গঠন | (ii) 1815 খ্রিস্টাব্দ |
(c) দ্বিতীয় আলেকজান্ডার কর্তৃক মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি | (iii) 1870 খ্রিস্টাব্দ |
(d) সেডানের যুদ্ধ | (iv) 1861 খ্রিস্টাব্দ |
উত্তর:
‘ক’ স্তম্ভ | ‘খ’-স্তম্ভ |
(a) ভিয়েনা সম্মেলনের সূচনা | (ii) 1815 খ্রিস্টাব্দ |
(b) জোলভারেইন গঠন | (i) 1819 খ্রিস্টাব্দ |
(c) দ্বিতীয় আলেকজান্ডার কর্তৃক মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি | (iv) 1861 খ্রিস্টাব্দ |
(d) সেডানের যুদ্ধ | (iii) 1870 খ্রিস্টাব্দ |
অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
1. ভিয়েনা সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ভিয়েনা সম্মেলন 1815 খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
2. কবে ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
3. ম্যাৎসিনিকোন্সমিতির সদস্য ছিলেন?
উত্তর: ম্যাৎসিনি কার্বোনারি নামক গুপ্তসমিতির সদস্য ছিলেন।
4. রাশিয়ায় মুক্তির ঘোষণাপত্র কবেজারি হয়েছিল?
উত্তর: রাশিয়ায় মুক্তির ঘোষণাপত্র ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি জারি হয়েছিল।
5.‘রক্তও লৌহ’নীতিরপ্রবর্তক কে ছিলেন?
উত্তর: ‘রক্ত ও লৌহ’নীতির প্রবর্তক ছিলেন বিসমার্ক।
6. ভিয়েনাসম্মেলনের একটি উদ্দেশ্যলেখো।
উত্তর: ভিয়েনা সম্মেলনের একটি উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের পুনর্গঠন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নেপোলিয়ানের ভীতি থেকে ইউরোপকে রক্ষা করা।
7. জুলাই বিপ্লব কোন্ দেশে অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর: জুলাই বিপ্লব ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হয়।
৪. জোলভারেইন সর্বপ্রথম কে প্রতিষ্টা করেছিলেন?
উত্তর: জোলভারেইন সর্বপ্রথম অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
9.কোন্ দেশ ‘উজলনীতি’ গ্রহণকরেছিল ?
উত্তর: উজলনীতি গ্রহণ করেছিল ইংল্যান্ড।
10. ‘কার্লসবাড ডিক্রি’ কেজারি করেন?
উত্তর: ‘কার্লসবাড ডিক্রি’ জারি করেন মেটারনিক।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
1. মেটারনিকের যুগ’ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: মেটারনিকের যুগ বলতে 1815 থেকে 1848 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে বোঝায়। এই সময়ে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার প্রিন্স মেটারনিক ইউরোপের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন।
2.প্লমবিয়ার্সের চুক্তি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তর: প্লমবিয়ার্সের চুক্তি 1858 খ্রিস্টাব্দে ক্যাভুর ও তৃতীয় নেপোলিয়ানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
3.ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কবে সংঘটিত হয়? এই যুদ্ধে কে পরাজিত হয়?
উত্তর: ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয় 1853 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1856 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয়।
4. ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র কী ?
উত্তর: ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র’ হল 1861 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার কর্তৃক জারি একটি ঘোষণাপত্র, যার মাধ্যমে রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করা হয়। এই নির্দেশনামায় 300টি পাতায় 22টি ধারা ছিল। এতে বলা হয়- ভূমিদাসদের ওপর কোনো মালিকের কর্তৃত্ব আর থাকবে না।
5. ফ্রান্সে কবে, কার নেতৃত্বে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর, যখন রাজা লুই-ফিলিপের জুলাই রাজতন্ত্র পতিত হয়। এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুই-নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, যিনি ১৮৪৮ সালে নির্বাচিত হন।
6. জাতীয়তাবাদ কী?
উত্তর: জাতীয়তাবাদ হল একটি ঐক্যের অনুভূতি। বংশ, ধর্ম, ভাষা, ভৌগোলিক এলাকা, সংস্কৃতি প্রভৃতি জনগণের মধ্যে এই ঐক্যবোধের সৃষ্টি করতে পারে। এই ঐক্যবোধের জন্য একটি বিশেষ ভূখণ্ড বা জনসমাজের প্রতিটি সদস্য আনন্দ, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, হাসিকান্নার সমান অংশীদার বলে নিজেকে মনে করে। এই ধরনের ঐক্যবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হলে তাকে জাতীয়তাবাদ বলে।
7. ‘Big Four’ কাদের বলা হত?
উত্তর: ‘Big Four’ বলা হত ভিয়েনা সম্মেলনে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্বকারী চার প্রধান নেতাদের। এরা হলেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার মেটারনিক, প্রাশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়াম, ইংল্যান্ডের বিদেশ সচিব ক্যাসালরি এবং রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার।
৪. জুলাই রাজতন্ত্র কাকে বলা হত?
উত্তর: ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লবের পর লুই ফিলিপের নেতৃত্বে যে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে ‘জুলাই রাজতন্ত্র’ বা ‘জুলাই মনার্কি’ নামে পরিচিত।
9. কে ও কেনইয়ং ইটালি দল প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: ম্যাৎসিনি ইয়ং ইটালি দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই দল প্রতিষ্ঠা করেন কারণ তিনি কার্বোনারি দলের কার্যকলাপকে ধ্বংসাত্মক ও পরিকল্পনাহীন বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ বলে উপলব্ধি করেছিলেন এবং ইটালির ঐক্যসাধনের জন্য একটি সংগঠিত ও পরিকল্পিত আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।
10. প্রাগের সন্ধি কবে ও কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর: প্রাগের সন্ধি ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
11. ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি কবে ও কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর: ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও প্রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
12. জোলভাৱেইন কী?
উত্তর: জোলভাৱেইন ছিল একটি শুল্কসংঘ। 1819 খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন জোলভাৱেইন নামক শুল্কসংঘের জন্ম দিয়েছিলেন। অ্যাডাম স্মিথের অবাধ বাণিজ্য নীতি এই শুল্কসংঘ স্থাপনের ক্ষেত্রে ছিল মূল অনুপ্রেরণা। এর উদ্দেশ্য ছিল জার্মানির আন্তঃশুল্ক প্রাচীর তুলে দেওয়া, অবাধ বাণিজ্য গড়ে তোলা এবং বাণিজ্যিক সুযোগসুবিধা আদায় করা। এভাবে অর্থনৈতিক স্বার্থে জার্মান রাজ্যগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
1. মেটারনিক ব্যবস্থা কী? এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কী ছিল? [1+3]
উত্তর: মেটারনিক ব্যবস্থা হল অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার প্রিন্স মেটারনিক যে পদ্ধতিতে ইউরোপীয় রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন।
মেটারনিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল:
(i) ইউরোপে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার রোধ করা।
(ii) রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনগুলিকে দমন করা।
(iii) ফরাসি বিপ্লবের গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী চেতনাকে পরাধীন জাতিগুলিকে উদ্বুদ্ধ করে তোলা থেকে বাধা দেওয়া।
2. ইটালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির ভূমিকা আলোচনা?
উত্তর:ইটালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির ভূমিকা নিম্নরূপ:
ম্যাৎসিনি ছিলেন ইটালির ঐক্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা। তিনি প্রথম জীবনে কার্বোনারি নামক গুপ্তসমিতির সদস্য ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি ভিন্নতর আদর্শ গ্রহণ করেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের পথ পরিত্যাগ করে গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইটালিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তিনি ইটালির জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনার বিকাশ করতে চেয়েছিলেন।
1831 খ্রিস্টাব্দে ম্যাৎসিনি “ইয়ং ইটালি” নামে একটি দল গড়ে তোলেন। একই নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে তিনি তাঁর লক্ষ্য ও কর্মসূচি প্রচার করতে থাকেন। 1849 খ্রিস্টাব্দে ম্যাৎসিনি এবং তাঁর ভাবশিষ্য গ্যারিবল্ডির উদ্যোগে রোমে অল্পকালের জন্য একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু অস্ট্রিয়ার সৈন্যবাহিনীর মোকাবিলা করে এই সরকার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
আপাতদৃষ্টিতে ম্যাৎসিনিকে ব্যর্থ বলে মনে হলেও তাঁর আদর্শ পরবর্তীকালেও ইটালিবাসীকে ঐক্যের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার উৎসাহ জুগিয়েছিল।
3.জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে বিসমার্কের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর:জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে বিসমার্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি জার্মানির ঐক্যসাধনের জন্য “রক্ত ও লৌহ” নীতি প্রবর্তন করেছিলেন। তাঁর মতে, জার্মানির ঐক্য বক্তৃতা দিয়ে সম্ভব নয়; রক্ত ও লৌহনীতি তথা যুদ্ধের মাধ্যমেই জার্মানিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিসমার্ক জার্মানির ঐক্যসাধনের জন্য তিনটি যুদ্ধ করতে হয়েছিল। এগুলি হল:
- ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ (1852 খ্রিস্টাব্দে): এই যুদ্ধের ফলে ডেনমার্ক থেকে কিছু অঞ্চল জার্মানির অধীনে আসে।
- অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ (1866 খ্রিস্টাব্দে): স্যাডোয়া বা কোনিগ্রাসের যুদ্ধে অস্ট্রিয়া চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। অস্ট্রিয়ার সঙ্গে প্রাগের সন্ধি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মেইন নদীর উত্তরে অবস্থিত অঞ্চলগুলি প্রাশিয়া লাভ করে।
- ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ (1870 খ্রিস্টাব্দে): 1870 খ্রিস্টাব্দের 16 জুলাই ফ্রান্স ও প্রাশিয়ার মধ্যে সেডানের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে পরাজিত ফ্রান্স ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। সন্ধির শর্তানুসারে প্রাশিয়া মেটজ ও আলসাস-লোরেন লাভ করে এবং ফ্রান্স যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ প্রদানে স্বীকৃত হয়।
এভাবে বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্যসাধন সম্পন্ন হয়। তিনি যুদ্ধ ও কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
4. জাতি-রাষ্ট্র সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর: জাতি-রাষ্ট্র হল একটি ঐক্যের অনুভূতি যা বংশ, ধর্ম, ভাষা, ভৌগোলিক এলাকা, সংস্কৃতি প্রভৃতি জনগণের মধ্যে ঐক্যবোধের সৃষ্টি করে। এই ঐক্যবোধের ফলে জনসমাজের প্রতিটি সদস্য আনন্দ, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, হাসিকান্নার সমান অংশীদার বলে নিজেকে মনে করে। এই ধরনের ঐক্যবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হলে তাকে জাতীয়তাবাদ বলে। জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পিছনে জাতীয়তাবাদের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয়তাবাদের একপ্রকার বহিঃপ্রকাশ হল জাতি-রাষ্ট্র।
জাতি ও রাষ্ট্র দুটি পৃথক ধারণা। জাতি বলতে রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদ দ্বারা ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্ঠিকে বোঝায়। অপরদিকে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনসমষ্টির ওপর সার্বভৌম কর্তৃত্বসম্পন্ন সরকার দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠান হল রাষ্ট্র।
5. ভিয়েনা সম্মেলনেগৃহীত ন্যায্য অধিকার নীতি সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর: ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত ন্যায্য অধিকার নীতি অনুযায়ী, পূর্ববর্তী শাসকদের পুনরায় তাদের সিংহাসনে বসানো হয়েছিল। এই নীতির অধীনে, ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজবংশের রাজা অষ্টাদশ লুই সিংহাসনে বসেছিলেন। অস্ট্রিয়া লাভ করে উত্তর ইটালিতে লম্বার্ডি ও ভেনেশিয়া প্রদেশ এবং টাইরল, সালজবার্জ ও ইলিরিয়া অঞ্চল। প্রাশিয়া পায় পোজেন, থর্ন, ডানজিগ, স্যাক্সনির উত্তরাংশ, পশ্চিম পোমেরেনিয়া ও রাইন নদীর তীরবর্তী প্রদেশ। রাশিয়া লাভ করে পোজেন ও থর্ন বাদে গ্র্যান্ড-ডাচি অফ ওয়ারসর অধিকাংশ অঞ্চল, ফিনল্যান্ড ও বেসারাবিয়ার অধিকাংশ। তবে জেনোয়া ও ভেনিসের মতো প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার প্রয়োগ করা হয়নি।
6. টীকা লেখো : ইয়ংইটালি।
উত্তর: ইয়ং ইটালি হল ম্যাৎসিনি কর্তৃক 1831 খ্রিস্টাব্দে গঠিত একটি দল। ম্যাৎসিনি কার্বোনারি দলের পরিকল্পনাহীন বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ দ্বারা ইটালির ঐক্যসাধন অসম্ভব উপলব্ধি করে এই দলটি গড়ে তোলেন। তিনি একই নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে তাঁর লক্ষ্য ও কর্মসূচি প্রচার করতে থাকেন। 1849 খ্রিস্টাব্দে ম্যাৎসিনি এবং তাঁর ভাবশিষ্য গ্যারিবল্ডির উদ্যোগে রোমে অল্পকালের জন্য একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার সৈন্যবাহিনীর মোকাবিলায় এই সরকার ব্যর্থ হয়।
7. ইউরোপে জুলাই বিপ্লবের প্রভাব সম্পর্কেসংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
উত্তর: ইউরোপে জুলাই বিপ্লবের প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা হল—জুলাই বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সত্যি, কিন্তু তাতে জাতীয়তাবাদী ধারণারই জয় হয়েছিল। এই বিপ্লব প্রমাণ করে যে ফ্রান্সে আর পুরোনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না। বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের মূল ভিত্তি ছিল রাজার সিংহাসনে বসার ঐশ্বরিক অধিকার। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফরাসি জাতি সেই অধিকারকে অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠা করেছে ‘জনতার ইচ্ছা’। ভিয়েনা সম্মেলন, বুরবো রাজা অষ্টাদশ লুইয়ের হাতে সিংহাসন তুলে দিয়ে যে ন্যায্য অধিকার নীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, জুলাই বিপ্লবে সেই নীতির অসারতা স্পষ্ট হয়। রাজতন্ত্রের মোকাবিলায় জাতির স্বাধীন ইচ্ছাই প্রাধান্য পায়।
প্যারিসের বিপ্লবী চুল্লি থেকে উড়ে আসা স্ফুলিঙ্গ আগুন লাগিয়েছিল কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত ইউরোপের কাঠের স্তূপে। জুলাই বিপ্লব সত্যিই ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উৎসাহ দিয়েছিল। ভিয়েনা সম্মেলনে বেলজিয়াম আর নরওয়েকে যথাক্রমে হল্যান্ড আর সুইডেনের সঙ্গে যুক্ত করে তাদের জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষা দমন করা হয়েছিল। জুলাই বিপ্লবের পর ওই দুই অঞ্চলেই আন্দোলন তীব্র হয় এবং শেষ পর্যন্ত বেলজিয়াম এবং নরওয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে জাতীয়তাবাদ জয়যুক্ত হয়।
ইটালির বিভিন্ন অঞ্চলেও এসময়ে গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলি মাথাচাড়া দেয়। যদিও তারা স্থায়ী সাফল্য অর্জন করেনি।
৪. জার দ্বিতীয়আলেকজান্ডার ঘোষিত ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র’-এর শর্তগুলিকীছিল?
উত্তর: 1861 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এক ঘোষণার দ্বারা ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করেন। এই ঘোষণাপত্রে 300টি পাতায় 22টি ধারা ছিল। এতে বলা হয়—ভূমিদাসদের ওপর কোনো মালিকের কর্তৃত্ব আর থাকবে না।
ভূমিদাস প্রথার অবসানের পটভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে:
- রাশিয়ায় শিল্পবিপ্লব ঘটায় ও অন্তর্বাণিজ্য গড়ে ওঠায় স্বাধীন শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
- কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ভূমিদাসদের আর কোনো প্রয়োজন ছিল না।
- জারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কৃষকেরা উদারনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। এই আন্দোলন ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদের বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করে।
ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদের ফলে রাশিয়ায় ভূমিদাসরা মুক্তি পায়, এবং জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে ‘মুক্তিদাতা জার’ নামে অভিহিত করা হয়।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
1. ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র’কী? এর ফলাফলকী হয়েছিল? [3+5]
উত্তর: ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র’ হল 1861 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার কর্তৃক জারি করা একটি ঘোষণাপত্র। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ঘটে। এই নির্দেশনামায় 300টি পাতায় 22টি ধারা ছিল। এতে বলা হয়- ভূমিদাসদের ওপর কোনো মালিকের কর্তৃত্ব আর থাকবে না।
এর ফলাফলগুলি হল:
- রাশিয়ার বাণিজ্য, কৃষির উৎপাদন এবং জমির মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
- রাশিয়ায় শিল্পবিপ্লব ত্বরান্বিত হয়।
- কুফলস্বরূপ, মুক্ত ভূমিদাসদের দেয় অর্থ (জমির জন্য) অনেক বেশি ছিল।
- মুক্ত ভূমিদাসদের ওপর চড়া হারে কর বসানো হয়।
- অনুর্বর ও খারাপ জমিগুলি ভূমিদাসদের ভাগে পড়ে।
- প্রয়োজনের তুলনায় ভূমিদাসদের জমির পরিমাণ ছিল অল্প।
- ভূমিদাসদের ওপর ‘মির’-এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ভূমিদাসদের ক্ষোভের কোনো অবসান হয়নি।
2. ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ কী ছিল? এই যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর: ক্রিমিয়ার যুদ্ধের প্রধান কারণটি ছিল রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্ররোচনা। তুরস্কে অবস্থিত গ্রিক রক্ষণশীল খ্রিস্টান প্রজাদের প্রতি তুরস্কের আচরণের ত্রুটিকে অজুহাত হিসেবে গ্রহণ করে রাশিয়াই আগে তুরস্ক আক্রমণ করে তার সাম্রাজ্যভুক্ত অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
এই যুদ্ধ 1853 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1856 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং তুরস্কের মিলিত বাহিনী যুদ্ধ করে। যুদ্ধটি কৃষ্ণসাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলের উপদ্বীপে সংঘটিত হয়, যা তখন রাশিয়ার অধীনস্থ ছিল।
ফলাফল:
- ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয়।
- এই যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরের উপর দিয়ে দার্দানেলিস প্রণালী হয়ে ভূমধ্যসাগরে পৌঁছোনোর পথ বাধাগ্রস্ত হয়।
- ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের পক্ষে তুরস্কের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার প্রয়াস সফল হয়।
- রাশিয়ার ‘উজল নীতি’-র প্রয়োগ ব্যর্থ হয়।
3. ভিয়েনা সম্মেলন কত খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় ? এই সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: ভিয়েনা সম্মেলন 1815 খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়।
এই সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির পিছনে তিনটি প্রধান নীতি কার্যকর ছিল। এগুলি হল—ন্যায্য অধিকার নীতি, শক্তিসাম্য নীতি এবং ক্ষতিপূরণ নীতি।
- ন্যায্য অধিকার নীতি: এই নীতি অনুসারে, ফ্রান্সের সীমানা বিপ্লব-পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফরাসি সেনাবাহিনী ভেঙে দেওয়া হয় এবং সেখানে পাঁচ বছরের জন্য মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ফ্রান্সকে 75 কোটি ফ্রাঁ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়। ফ্রান্স যাতে পুনরায় ইউরোপের শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে, সেজন্য তার চারপাশে শক্তিশালী রাষ্ট্রের একটি বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। এজন্য উত্তর-পূর্বে হল্যান্ডের সঙ্গে বেলজিয়ামকে সংযুক্ত করে একটি রাজ্য গঠন করা হয়।
- শক্তিসাম্য নীতি: এই নীতি অনুসারে, কোনো একটি দেশ যদি তার প্রতিবেশীদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে তাহলে সে বিস্তারনীতি গ্রহণ করে শান্তিভঙ্গ করবে। ফ্রান্স এমন তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে করেছিল। ভিয়েনা সম্মেলনে ফ্রান্সের সীমানা বিপ্লব-পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফরাসি সেনাবাহিনী ভেঙে দেওয়া হয় এবং সেখানে পাঁচ বছরের জন্য মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
- ক্ষতিপূরণ নীতি: এই নীতির দুটো দিক ছিল। একদিকে ফ্রান্সের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ 70 কোটি ফ্রাঁ দাবি করা হয়েছিল, অন্যদিকে নেপোলিয়ানকে পরাজিত করার পুরস্কার স্বরূপ অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া ও রাশিয়া ইউরোপের আর ইংল্যান্ড ইউরোপের বাইরের কিছু জায়গা দখল করে নেয়। এই নীতি অনুযায়ী—অস্ট্রিয়া লাভ করে উত্তর ইটালির লম্বার্ডি ও ভেনেশিয়া প্রদেশ এবং টাইরল, সালজবার্জ ও ইলিরিয়া অঞ্চল। প্রাশিয়া পায় রাইন অঞ্চলের কিছু অংশ।
4. ইটালির ঐক্য আন্দোলন কীভাবে সম্পন্ন হয়?
উত্তর: ইটালির ঐক্য আন্দোলন নিম্নলিখিতভাবে সম্পন্ন হয়েছিল:
প্রথমত, ফরাসি বিপ্লবের আগে ইটালি ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত। নেপোলিয়ান ইটালি জয় করে সেখানে একই ধরনের আইনব্যবস্থা, শাসনকার্য চালু করেন। ফলে ইটালিবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ধারণা অঙ্কুরিত হয়।
দ্বিতীয়ত, নেপোলিয়ানের পতনের পর 1815 খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলনে ইটালিকে পুনরায় বিভক্ত করা হয়, ফলে ইটালির জাতীয়তাবাদ ধাক্কা খায়।
তৃতীয়ত, প্রথম পর্যায়ে ইটালির জাতীয়তাবাদের বিকাশে কিছু পত্রপত্রিকা ইটালির ঐতিহ্য জনসমক্ষে তুলে ধরে। এই সময় কিছু গুপ্তসমিতি জাতীয়তাবাদের বিকাশে সহায়তা করে। এর মধ্যে কার্বোনারি নামক গুপ্তসমিতি ছিল অন্যতম।
চতুর্থত, ম্যাৎসিনি কার্বোনারি দলের পরিকল্পনাহীন বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ দ্বারা ইটালির ঐক্যসাধন অসম্ভব উপলব্ধি করে 1831 খ্রিস্টাব্দে ‘ইয়ং ইটালি’ নামে একটি দল গড়ে তোলেন। একই নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে তিনি তাঁর লক্ষ্য ও কর্মসূচি প্রচার করতে থাকেন।
পঞ্চমত, 1849 খ্রিস্টাব্দে ম্যাৎসিনি এবং তাঁর ভাবশিষ্য গ্যারিবল্ডির উদ্যোগে রোমে অল্পকালের জন্য একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ষষ্ঠত, কাউন্ট ক্যামিলো বেনসো ক্যাভুর ইটালির অন্তর্গত স্বাধীন রাজ্য সার্ডিনিয়া-পিডমন্টের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। তিনি সার্ডিনিয়া-পিডমন্টের রাজতন্ত্রের নেতৃত্বে একটি রাজতান্ত্রিক ইটালি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
সপ্তমত, 1858 খ্রিস্টাব্দে ক্যাভুর ও তৃতীয় নেপোলিয়ানের মধ্যে প্লমবিয়ার্সের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর ফলে উত্তর ইটালি থেকে অস্ট্রিয়ার আধিপত্যের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করেন।
অষ্টমত, ক্যাভুরের উদ্যোগ কিছুটা সাফল্য লাভ করেছিল। তৃতীয় নেপোলিয়ানের সহযোগিতায় উত্তর ইটালির কিছু অংশ অস্ট্রিয়ার শাসনমুক্ত হয়। তবে ঐক্যসাধন সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তৃতীয় নেপোলিয়ান তাঁর ফরাসি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর ইটালির ঐক্য আন্দোলনে সাধারণ ইটালিবাসীর ভূমিকা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।
5. জার্মানির ঐক্য আন্দোলন কীভাবে সম্পন্ন হয়?
উত্তর: জার্মানির ঐক্য আন্দোলন কীভাবে সম্পন্ন হয় তা বিশদভাবে আলোচনা করা হল:
জার্মানির ঐক্য আন্দোলনটি মূলত অস্ট্রিয়া এবং প্রাশিয়ার মধ্যে সংঘটিত সংগ্রামের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বিসমার্কের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি “রক্ত ও লৌহ” নীতি প্রয়োগ করে জার্মানির ঐক্য সাধনে সফল হন।
প্রথমে, ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার মধ্যে স্যাডোয়া বা কোনিগ্রাসের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে অস্ট্রিয়া চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। অস্ট্রিয়ার সঙ্গে প্রাগের সন্ধি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মেইন নদীর উত্তরে অবস্থিত অঞ্চলগুলি প্রাশিয়া লাভ করে।
দ্বিতীয়ত, ফ্রান্স নিরাপত্তার কারণে তার সীমান্ত অঞ্চলে শক্তিশালী জার্মান রাষ্ট্র গড়ে ওঠার বিরোধিতা করে। ফলে, ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুলাই ফ্রান্স ও প্রাশিয়ার মধ্যে সেডানের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে পরাজিত ফ্রান্স ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। সন্ধির শর্তানুসারে প্রাশিয়া মেটজ ও আলসাস-লোরেন লাভ করে এবং ফ্রান্স যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ প্রদানে স্বীকৃত হয়।
এভাবে বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্য আন্দোলন সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
6. জুলাই বিপ্লবের পটভূমি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
উত্তর: জুলাই বিপ্লবের পটভূমি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:
ভিয়েনা সম্মেলনের ন্যায্য অধিকার নীতির অনুসরণে ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজবংশের রাজা অষ্টাদশ লুই সিংহাসনে বসেছিলেন। অষ্টাদশ লুই রাজার দেশশাসনের ঐশ্বরিক অধিকারে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন যে, বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে যে ধরনের চরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই সময় ফ্রান্সের বিপ্লবী শক্তির একটি অংশ কোনো ধরনের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি করার অধিকার তাঁর ছিল না।
রাজতন্ত্রীরাও সকলে লুই ফিলিপকে সমর্থন করেনি। তাদের এক অংশের সমর্থন ছিল বুরবোঁ রাজবংশের দিকে। অপর অংশ চাইছিল নেপোলিয়ানের কোনো এক উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে বসাতে। বৈদেশিক ক্ষেত্রেও লুই ফিলিপের নীতি ফরাসিবাসীকে হতাশ করেছিল। পোল্যান্ড এবং ইটালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নিরপেক্ষ থেকে বৈদেশিক শক্তির সাহায্য নেওয়ার বিষয়ে তাঁর কোনো আপত্তি ছিল না।
ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লবের পর লুই ফিলিপের নেতৃত্বে যে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তা ‘জুলাই রাজতন্ত্র’ বা ‘জুলাই মনার্কি’ নামে পরিচিত। এই রাজতন্ত্র কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। এখানে উদারনৈতিক সংস্কার সাধনের চেষ্টা চলেছিল, ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের প্রতি সহানুভূতি প্রচলিত হয়েছিল এবং জনগণের কাছ থেকে সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজতন্ত্রের দৈবস্বত্ব, চরম স্বৈরতন্ত্র, মধ্যযুগীয় রাজতান্ত্রিক আদর্শ এখানে অনুপস্থিত ছিল।
7. মেটারনিক ব্যবস্থা কী? এর উদ্দেশ্যগুলি লেখো।
উত্তর: মেটারনিক ব্যবস্থা হল অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার প্রিন্স মেটারনিক কর্তৃক ইউরোপীয় রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োগ করা একটি পদ্ধতি। 1815 থেকে 1848 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মেটারনিক শুধু অস্ট্রিয়া নয়, সমগ্র ইউরোপের বিস্তৃত অঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন। ইউরোপের ইতিহাসে এই সময়কালকে ‘মেটারনিক যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার রোধ করা এবং রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনগুলিকে দমন করা। মেটারনিক বুঝেছিলেন, ফরাসি বিপ্লবের গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদের চেতনা যদি পরাধীন জাতিগুলিকে উদ্বুদ্ধ করে তোলে তবে তা অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক হবে। এই কারণে তিনি বিপ্লবের প্রগতিমূলক ছবিটি দেখতে চাননি। পুরাতনতন্ত্রের নেতিবাচক আদর্শ আঁকড়ে থেকে তিনি যাজক, অভিজাতদের পুরোনো সুযোগসুবিধাগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
মেটারনিক ব্যবস্থার লক্ষ্য ছিল ইউরোপে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার রোধ করা এবং রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনগুলিকে দমন করা।
অতিরিক্ত (Extras)
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)
Coming soon
প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)
Coming soon
Get notes of other boards, classes, and subjects