এখানে (chapter 6) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর: WBBSE ক্লাস ৯ ইতিহাস (বাংলা মাধ্যম)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।
Select medium |
English medium notes |
Bengali medium notes |
সারাংশ (summary)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (Dwitiyo Bishshojuddho O Tarpor) এই অধ্যায়টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ, ঘটনা এবং ফলাফল নিয়ে আলোচনা করে। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ডকে আক্রমণ করার সাথে সাথে যুদ্ধটি শুরু হয়। ইউরোপের অনেক দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। একদিকে ছিল অক্ষশক্তি (জার্মানি, ইটালি, জাপান), অন্যদিকে মিত্রশক্তি (ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন)।
যুদ্ধের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ ছিল। কিন্তু ১৯৪১ সালে জাপান পার্ল হারবারে আক্রমণ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে যোগ দেয়। জাপানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলে। এর ফলে জাপান আত্মসমর্পণ করে এবং যুদ্ধ শেষ হয়।
এই যুদ্ধে বিশ্বের অনেক দেশ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জার্মানি এবং জাপান পরাজিত হয়। মিত্রশক্তি জয়লাভ করে। যুদ্ধের পর বিশ্বে অনেক পরিবর্তন আসে। যুদ্ধের পর জাতিসংঘ গঠিত হয় যাতে ভবিষ্যতে এমন বড় যুদ্ধ না হয়। জাপান এবং জার্মানি অনেক দেশের উপর আক্রমণ করেছিল এবং তাদের নিজেদের শক্তি বাড়াতে চেয়েছিল। এর ফলে অনেক মানুষ মারা যায় এবং ধ্বংসলীলা চলে।
এই যুদ্ধে বিজ্ঞানের ভূমিকা অনেক বেশি ছিল। নতুন অস্ত্র আবিষ্কার হয় যা যুদ্ধকে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলে। পারমাণবিক বোমার ব্যবহার ছিল একটি বড় ঘটনা। এটি প্রমাণ করে যে মানুষের বিজ্ঞান যদি ভুলভাবে ব্যবহৃত হয় তবে কতটা ধ্বংস করতে পারে। যুদ্ধের পর বিশ্বে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। অনেক দেশ ধ্বংসের মুখে পড়ে এবং তাদের পুনর্গঠনের জন্য অনেক সময় লাগে।
যুদ্ধের পর বিশ্বে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এই সংঘাত ছিল আদর্শের যুদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্যবাদ নিয়ে বিশ্বকে দুভাগে ভাগ করে। যুদ্ধের পর বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, আলজিরিয়া এসব দেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়।
এই যুদ্ধটি বিশ্বের ইতিহাসে একটি বড় পালা ঘুরিয়ে দেয়। এটি শুধু যুদ্ধ ছিল না, বরং মানুষের চিন্তাধারা এবং সভ্যতার উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। যুদ্ধের পর বিশ্ব একটি নতুন যুগে প্রবেশ করে যেখানে শান্তি এবং সহযোগিতার গুরুত্ব বোঝা যায়।
পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Santra textbook)
সঠিকউত্তরটি নির্বাচন করো (MCQ)
১. নাতসিবাদের উত্থান ঘটেছিল
(ক) ইটালিতে
(খ) জার্মানিতে
(গ) ইংল্যান্ডে
(ঘ) ভারতে
উত্তর: (খ) জার্মানিতে
২. ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল
(ক) 1917 খ্রিস্টাব্দে
(খ) 1918 খ্রিস্টাব্দে
(গ) 1919 খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) 1920 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (গ) 1919 খ্রিস্টাব্দে
৩. পার্ল হারবারের ঘটনা ঘটেছিল 1941 খ্রিস্টাব্দের
(ক) 7 ডিসেম্বর
(খ) ৪ ডিসেম্বর
(গ) 9 ডিসেম্বর
(ঘ) 10 ডিসেম্বর
উত্তর: (ক) 7 ডিসেম্বর
৪. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠিত হয়
(ক) 1944 খ্রিস্টাব্দে
(খ) 1945 খ্রিস্টাব্দে
(গ) 1946 খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) 1947 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (খ) 1945 খ্রিস্টাব্দে
৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ইটালির রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন
(ক) চার্চিল
(খ) হিটলার
(গ) মুসোলিনি
(ঘ) রুজভেল্ট
উত্তর: (গ) মুসোলিনি
৬. রিজক্রিগ হল
(ক) জার্মান বিমানহানা
(খ) মার্কিন বিমানহানা
(গ) ব্রিটিশ ট্যাংক আক্রমণ
(ঘ) জার্মান ট্যাংক আক্রমণ
উত্তর: (ঘ) জার্মান ট্যাংক আক্রমণ
৭. রোমেল ছিলেন
(ক) মার্কিন সেনানায়ক
(খ) জার্মানির প্রধানমন্ত্রী
(গ) ইটালির সেনাপতি
(ঘ) জার্মান সেনানায়ক
উত্তর: (ঘ) জার্মান সেনানায়ক
৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রত্যক্ষরূপে অংশনিয়েছিল
(ক) অপারেশন বারবারোসা ব্যর্থ হওয়ার পর
(খ) জাপানের চিন আক্রমণের পর
(গ) পার্ল হারবারে বোমাবর্ষণের পর
(ঘ) হিরোশিমায় বোমাবর্ষণের পর
উত্তর: (গ) পার্ল হারবারে বোমাবর্ষণের পর
৯. হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন
(ক) 1937 খ্রিস্টাব্দে
(খ) 1939 খ্রিস্টাব্দে
(গ) 1938 খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) 1940 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (খ) 1939 খ্রিস্টাব্দে
১০. জাপানের শহরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু বোমানিক্ষেপ করেছিল।
(ক) 1943 খ্রিস্টাব্দে
(খ) 1944 খ্রিস্টাব্দে
(গ) 1945 খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) 1946 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (গ) 1945 খ্রিস্টাব্দে
শূন্যস্থান পূরণ করো
১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিবাদমান দু-পক্ষ ছিল _________________ ________________
উত্তর: মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তি।
2. ___________________খ্রিস্টাব্দের 1 সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে।
উত্তর: ১৯৩৯
3. লেনিনগ্রাদের অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছিল___________খ্রিস্টাব্দের 27 জানুয়ারি
উত্তর: ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি
4. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেছিল ________ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ১৯৪১
5.1945 খ্রিস্টাব্দের____________ _____________ তারিখে জাপানেরহিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
উত্তর:-6 ও 9 আগস্ট
6. ফ্রান্স এবং ________ দুই বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তী সময়ে জার্মানিকে তোষণ করার নীতি গ্রহণ করেছিল।
উত্তর: ইংল্যান্ড
7. উইনস্টন চার্চিলের আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ______________
উত্তর: নেভিল চেম্বারলেন।
৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ______________ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে।
৯. জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা পারমাণবিক বোমাটি ______ নামে পরিচিত।
উত্তর: লিটল বয় (Little Boy)
১০. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। ______ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ১৯৪৫
‘ঠিক’/’ভুল’ নির্বাচন করো
১. অক্ষশক্তির অন্তর্ভুক্ত দুটি দেশ হল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স।
উত্তর: ভুল
কারণ: অক্ষশক্তির প্রধান দেশগুলি ছিল জার্মানি, ইটালি এবং জাপান। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মিত্রশক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২. নাতসিবাদের জনক অ্যাডলফ হিটলার।
উত্তর: ঠিক
কারণ: অ্যাডলফ হিটলার জার্মানিতে নাতসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন।
৩. জাপান, ইটালি ও জার্মানির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ত্রিপাক্ষিক চুক্তি।
উত্তর: ঠিক
কারণ: ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানি, ইটালি এবং জাপানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা “রোম-বার্লিন-টোকিও জোট” নামে পরিচিত ছিল।
৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল 1944 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ভুল
কারণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে 1945 খ্রিস্টাব্দে। জার্মানি মে মাসে আত্মসমর্পণ করে এবং জাপান আগস্ট মাসে আত্মসমর্পণ করে।
৫. চিনে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটেছিল।
উত্তর: ঠিক
কারণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চিনে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটে, যার ফলে কমিউনিস্ট দল ক্ষমতায় আসে।
৬. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়েই পোল্যান্ড আক্রমণ করেছিল।
উত্তর: ঠিক
কারণ: ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি প্রথমে পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং কয়েক সপ্তাহ পর সোভিয়েত ইউনিয়নও পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চল দখল করে।
৭. প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান পরস্পরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল।
উত্তর: ঠিক
কারণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে তীব্র সংঘাত চলেছিল।
৮. ব্রিটিশ জাহাজ হুডের আক্রমণে জার্মান জাহাজ বিসমার্কের সলিলসমাধি হয়।
উত্তর: ভুল
কারণ: ব্রিটিশ জাহাজ হুড জার্মান জাহাজ বিসমার্কের আক্রমণে ডুবে যায়। পরে ব্রিটিশ বাহিনীর প্রতিশোধ আক্রমণে বিসমার্ক ডুবে যায়।
৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল।
উত্তর: ভুল
কারণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে নিরপেক্ষ ছিল এবং জার্মানির সঙ্গে কোনো অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেনি।
১০. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরাস্ত হয়েছিল।
উত্তর: ভুল
কারণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির অন্যতম প্রধান সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেছিল।
স্তম্ভ মেলাও
1.
ক-স্তম্ভ | খ-স্তম্ভ |
(a) তোষণ নীতি | (i) চেকোশ্লোভাকিয়া |
(b) রোমানভ বংশ | (ii) রাশিয়া |
(c) হোহেনজোলাৰ্ন বংশ | (iii) প্রাশিয়া |
(d) সুদেতান অঞ্চল | (iv) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স |
ক-স্তম্ভ | খ-স্তম্ভ |
(a) তোষণ নীতি | (i) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স |
(b) রোমানভ বংশ | (ii) রাশিয়া |
(c) হোহেনজোলাৰ্ন বংশ | (iii) প্রাশিয়া |
(d) সুদেতান অঞ্চল | (iv) চেকোশ্লোভাকিয়া |
2.
ক-স্তম্ভ | খ-স্তম্ভ |
(a) ফ্যাসিবাদ | (i) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
(b) নাতসিবাদ | (ii) জাপান |
(c) ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি | (iii) হিটলার |
(d) হিরোশিমা ও নাগাসাকি | (iv) মুসোলিনি |
ক-স্তম্ভ | খ-স্তম্ভ |
(a) ফ্যাসিবাদ | (i) মুসোলিনি |
(b) নাতসিবাদ | (ii) হিটলার |
(c) ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি | (iii) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
(d) হিরোশিমা ও নাগাসাকি | (iv) জাপান |
অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
1. জার্মানি কবে পোল্যান্ড আক্রমণ করেছিল ?
উত্তর: জার্মানি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করেছিল।
2. আমেরিকা কবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে?
উত্তর: আমেরিকা 1941 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে।
৩. হিরোশিমায় পরমাণু বোমা কবে ফেলা হয়েছিল?
উত্তর: হিরোশিমায় পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছিল 1945 খ্রিস্টাব্দের 6 আগস্ট।
4. লেনিনগ্রাদের অবরোধ কত দিনের জন্য চলেছিল।?
উত্তর: লেনিনগ্রাদের অবরোধ প্রায় 900 দিনের জন্য চলেছিল।
5. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কবে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ 1945 খ্রিস্টাব্দের 24 অক্টোবর গঠিত হয়েছিল।
6. অপারেশন বারবোরোসা কি?
উত্তর: অপারেশন বারবোরোসা হল 1941 খ্রিস্টাব্দের 22 জুন জার্মানি দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।
7. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোন দুটি দেশ পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
8. লেন্ড-লিজ আইন পাস করে কোন্ দেশ কাদের সাহায্য করেছিল?
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেন্ড-লিজ আইন পাস করে ব্রিটেন, চিন প্রভৃতি অক্ষশক্তি বিরোধী দেশগুলিকে সহায়তা প্রদান করেছিল।
9. উড়ন্ত দুর্গ’কী?
উত্তর: ‘উড়ন্ত দুর্গ’ হল মার্কিন বি-29 বিমানগুলির নাম। এই বিমানগুলি জাপানের বিভিন্ন শহর এবং ইউরোপের জার্মান অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে নিয়মিত বোমাবর্ষণের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল।
10.আন্তর্জাতিকতাবাদ কী?
উত্তর: আন্তর্জাতিকতাবাদ হল সেই নীতি যা অনুযায়ী জাতি বা স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তিযুক্ত দেশগুলির নাম লেখো?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তিযুক্ত দেশগুলি ছিল জার্মানি, ইটালি এবং জাপান।
2. রোম-বার্লিন টোকিও চুক্তি’ কবে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ইটালি, জার্মানি এবং জাপানের মধ্যে রোম-বার্লিন-টোকিও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহারকারী দুটি মারণাস্ত্রের নাম লেখে
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত দুটি মারণাস্ত্র হল পারমাণবিক বোমা এবং অ্যাসল্ট রাইফেল।
4. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কবে জাপানের ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল?
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1945 খ্রিস্টাব্দের 6 ও 9 আগস্ট জাপানের দুটি শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল।
5. ‘আটলান্টিক চার্টার কী?
উত্তর: 1941 খ্রিস্টাব্দের 14 আগস্ট ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে একটি ঘোষণা করে, যা আটলান্টিক চার্টার নামে পরিচিত। এই চার্টারে জাতিগুলিকে স্বশাসনের অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয় এবং জাতিগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়।
6. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কখন গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ 1945 খ্রিস্টাব্দের 24 অক্টোবর গঠিত হয়েছিল।
7. জার্মানি কখন সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্ৰমণ করেছিল?
উত্তর: জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করেছিল 1941 খ্রিস্টাব্দের 22 জুন।
8. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি কারা ছিল?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি ছিল ফ্রান্স, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন।
9.দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হতাহতেরপরিমাণ কত ছিল?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা ছিল প্রায় 60 মিলিয়ন।
10. আন্তর্জাতিকতাবাদ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: আন্তর্জাতিকতাবাদ হল সেই আদর্শ যা অনুযায়ী জাতি বা স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এই অর্থে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোনো স্পষ্ট বিরোধ নেই, বরং তারা একে অপরের পরিপূরক। জাতীয় রাষ্ট্রের স্বাধীন অস্তিত্ব, তাদের সীমান্ত রক্ষার অধিকার বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত রক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিকতাবাদের দ্বারাই স্বীকৃতি পায়।
বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
1. ইঙ্গ-ফরাসি তোষণনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য কতখানি দায়ী ছিল?
উত্তর: ইঙ্গ-ফরাসি তোষণনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স ও ব্রিটেন আবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায়নি। তারা হিটলারের প্রাথমিক দাবিগুলি মেনে নিয়ে তাকে তুষ্ট করার নীতি বা তোষণনীতি গ্রহণ করেছিল। এই নীতি সফল হয়নি, কারণ হিটলারের সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে এই তোষণনীতি হিটলারকে আরও উৎসাহিত করে তুলেছিল এবং তার আগ্রাসী নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছিল।
2. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেছিল?
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেছিল প্রধানত জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। 1941 খ্রিস্টাব্দের 7 ডিসেম্বর জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন নৌবহরের ওপর হঠাৎ বোমাবর্ষণ করে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ঠিক তিনদিন পর জার্মানি আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ইউরোপীয় যুদ্ধ প্রকৃত বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান মিত্রপক্ষের সাফল্যকে প্রায় সুনিশ্চিত করে তোলে।
3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে গভীর অর্থনৈতিক প্রভাব দেখা দেয়। যুদ্ধের কারণে জমি, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চলে। এই ধ্বংসের ফলে অনেক দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলি যেমন ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দীর্ঘ সময় ধরে অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হয়।
অন্যদিকে, মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইটালি এই পরিকল্পনার সুযোগ গ্রহণ করে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনে সফল হয়। জাপান এবং চিনও কয়েক দশকের মধ্যে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয় এবং জাপান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।
যুদ্ধের পর ব্রিটেন কিন্তু দীর্ঘ কয়েক দশক অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হয়। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চিনে কমিউনিস্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
4. জাতীয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যেকার পার্থক্য নিরূপণ করো।
উত্তর: উগ্র জাতীয়তাবাদ হল এমন একটি আদর্শ যা নিজের জাতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং নিজের জাতীয় উন্নতি বা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্য জাতিগুলির অধিকার খর্ব করতে দ্বিধা করে না। অনেক সময় উগ্র জাতীয়তাবাদ আগ্রাসী চেহারায় অপর জাতি-রাষ্ট্রের স্বাধীনতা খর্ব করতে উদ্যত হয়। আবার কখনও নিজের জাতিগত পবিত্রতা বজায় রাখার চেষ্টায় একই ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য জাতি বা সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত হয়।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিকতাবাদ হল সেই আদর্শ যা জাতি বা স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সম্মানের উপর গুরুত্ব দেয়। জাতীয় রাষ্ট্রের স্বাধীন অস্তিত্ব, তাদের সীমান্ত রক্ষার অধিকার বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত রক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিকতাবাদের দ্বারাই স্বীকৃতি পায়। উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী, কারণ উগ্র জাতীয়তাবাদ নিজের জাতির প্রতি আগ্রাসী ও বিধ্বংসী প্রবণতা প্রকাশ করে, যা আন্তর্জাতিকতাবাদের মূল লক্ষ্যের বিরোধী।
উগ্র জাতীয়তাবাদ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ। জার্মানির নাতসি পার্টির আদর্শের ভিত্তিই ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ। এই মতাদর্শ অনুযায়ী টিউটনিক জার্মানরা প্রকৃত আর্য এবং পৃথিবীর উন্নততর জাতিগুলির একটি। তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হলে পৃথিবীর কল্যাণ হবে। কিন্তু ভার্সাই চুক্তিতে তাদের জন্য যে স্থান বরাদ্দ করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। জার্মানদের বসবাসের জন্য লেবেনস্রাউম বা বসবাসের স্থান দরকার। অতএব, প্রয়োজনে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলিকে লঙ্ঘন করে অন্য দেশ দখল করে জার্মানিকে আরও বাসযোগ্য অঞ্চল পেতে হবে। ফলত, জার্মানির আগ্রাসী বিস্তারনীতি ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদেরই ফসল।
আন্তর্জাতিকতাবাদের গুরুত্ব আধুনিক যুগে অর্থনৈতিক কারণে জাতি-রাষ্ট্রগুলি পরস্পরের ওপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। পরিবহণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক অগ্রগতির ফলে তাদের মধ্যেকার দূরত্ব অনেকখানি কমে এসেছে। তাই আন্তর্জাতিকতাবাদের গুরুত্ব আজকের পৃথিবীতে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।
5. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বরাজনীতিতে কী পরিবর্তন এসেছিল?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিশ্বরাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রশক্তির সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জার্মানি ও তার কবল থেকে মুক্ত করা রাষ্ট্রগুলিতে কী ধরনের রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠবে, এই বিষয়ে মতভেদ ছিল। পশ্চিমি শক্তিগুলি চেয়েছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসার, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেয়েছিল তার নিকটবর্তী দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা।
6. ‘পোড়ামাটি নীতি’ বলতে কী বোঝায়? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন্ দেশ এই নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তর: ‘পোড়ামাটি নীতি’ অনুযায়ী শত্রুর সঙ্গে সামনাসামনি যুদ্ধে শক্তিক্ষয় না করে তাকে দেশের ভিতরে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হয়। আত্মরক্ষাকারী দেশ পিছিয়ে আসার সময়ে নিজেদের মজুত শস্য, রাস্তাঘাট, সেতু সব ধ্বংস করে দেয় যাতে আক্রমণকারী দেশ রসদ সংগ্রহ করতে না পারে এবং অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন এই নীতি গ্রহণ করেছিল।
7. ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ কাকে বলে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে “সর্বাত্মক যুদ্ধ’ কেন বলা হয়?
উত্তর: সাধারণ যুদ্ধের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের পার্থক্য এই যে, সাধারণ যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকে কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে, কিন্তু সর্বাত্মক যুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট রণাঙ্গন থাকে না। বসতবাড়ি, চাষের জমি, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবর্ত্রই যুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে সর্বাত্মক যুদ্ধ (টোটাল ওয়ার) বলা হয়, কারণ এই যুদ্ধে হিটলার তাঁর বিপক্ষের ওপর সর্বাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে তাদের মনোবল নষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন। এই ধরনের যুদ্ধে সাধারণ মানুষের ওপরও আক্রমণ নেমে আসে, ফলে যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।
8. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন জাপানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল? এর ফল কী হয়?
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল কারণ জাপানকে পরাজিত করার জন্য এটি সম্ভবত অপরিহার্য ছিল। যদিও স্থলযুদ্ধের মাধ্যমে জাপানকে পরাজিত করা সম্ভব ছিল, তবে সেক্ষেত্রে জাপানের মূল ভূখণ্ডে বহু মার্কিন সৈন্যের প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। অথবা সোভিয়েত সৈন্যবাহিনীর সহায়তার ওপর তাদের নির্ভর করতে হত। মার্কিন সমরবিভাগ এই দুটি বিকল্পই অপছন্দ করেছিল।
এর ফলে 1945 খ্রিস্টাব্দের 6 ও 9 আগস্ট জাপানের দুটি শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। দুটি শহরই ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এর কয়েকদিন পর জাপান আত্মসমর্পণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত অবসান ঘটে।
9. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। যুদ্ধের ধ্বংসলীলার ফলে জমি, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এই যুদ্ধের প্রভাব অনুভব করেছিল।
যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ঘটে। পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইটালি এই পরিকল্পনার সুযোগ গ্রহণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সফল হয়। অন্যদিকে, ব্রিটেন দীর্ঘ কয়েক দশক অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির শিকার সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিন এবং জাপানও দ্রুত অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়। জাপান কয়েক দশকের মধ্যেই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। চিনেও কমিউনিস্ট বিপ্লবের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম হয়।
10. জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো।
উত্তর: জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে সম্পর্ক হল একে অপরের পরিপূরক। জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোনো স্পষ্ট বিরোধ নেই, বরং তারা একে অপরের পরিপূরক। কারণ জাতীয় রাষ্ট্রের স্বাধীন অস্তিত্ব, তাদের সীমান্ত রক্ষার অধিকার বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত রক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিকতাবাদের দ্বারাই স্বীকৃতি পায়। উগ্র জাতীয়তাবাদ কিন্তু আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী, কারণ উগ্র জাতীয়তাবাদ নিজের জাতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং নিজের জাতীয় উন্নতি বা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্য জাতিগুলির অধিকার খর্ব করতে দ্বিধা করে না।
আন্তর্জাতিকতাবাদ হল সেই আদর্শ, যার ভিত্তিতে জাতিগুলি নিজেদের স্বাধীনতা এবং স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য জাতিগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিকতাবাদের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়, কারণ বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলি জাতিসংঘের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছিল।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিকপ্রশ্নাবলি
1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেসংঘাত কেন দেখা দিয়েছিল? উক্ত সংঘাতের পরিণাম কী হয়েছিল? (5+3)
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাতের প্রধান কারণ ছিল আদর্শগত মতভেদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল সাম্যবাদী রাষ্ট্র। এই আদর্শগত মতভেদ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছিল।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পশ্চিমি শক্তিগুলি চেয়েছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসার, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেয়েছিল তার নিকটবর্তী দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। এই মতভেদের ফলে জার্মানি এবং তার কবল থেকে মুক্ত করা রাষ্ট্রগুলিতে কী ধরনের রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠবে তা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়।
উক্ত সংঘাতের পরিণামে জার্মানিসহ গোটা ইউরোপই দুটি পরস্পর বিরোধী শক্তিজোটে বিভক্ত হয়ে যায়। এই বিভাজন ইউরোপের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধ চলাকালীন পারমাণবিক শক্তির অধিকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিধর রাষ্ট্র। পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নও পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়। পরমাণু বোমার ভয়াবহ মারণশক্তির কারণে কোনো পক্ষই বিশেষ চিন্তাভাবনা না করে এই অস্ত্র ব্যবহার করতে চায়নি। অতএব, প্রাধান্য নিয়ে এই দ্বন্দ্ব ইউরোপে জার্মানির সঙ্গে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন থেকেই ইউরোপের যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়।
2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক ওঅর্থনৈতিক প্রভাব আলোচনা করো। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেকি এর কোনো প্রভাবছিল? [5+3]
উত্তর:দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিম্নরূপ:
রাজনৈতিক প্রভাব:
(i) যুদ্ধের ফলে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্র পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়।
(ii) জার্মানি ও ইতালি পরাজিত হয়, এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চিরতরে ধ্বংস হয়।
(iii) যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের দুটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়, যা শীতল যুদ্ধের সূচনা করে।
(iv) ইউরোপের উপনিবেশগুলি স্বাধীনতা লাভ করতে থাকে, যা বিশ্বের রাজনৈতিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটায়।
অর্থনৈতিক প্রভাব:
(i) যুদ্ধের ফলে ইউরোপের অর্থনীতি ভারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং অনেক দেশ ঋণগ্রস্ত হয়।
(ii) মার্শাল প্ল্যানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশগুলিকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে।
(iii) যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। যুদ্ধের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সংস্কৃতির আদান-প্রদান বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটে, যা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে নতুন সংস্কৃতির উদ্ভবে সহায়তা করে।
3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণ কীছিল? এই যুদ্ধকে নাতসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আদর্শের সংঘাত বলাযায় কি? [5+3]
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণগুলি হল:
- ভার্সাই সন্ধির ত্রুটি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির উপর ভার্সাই সন্ধির অমর্যাদাকর শর্তগুলি জার্মানদের প্রতিশোধস্পৃহার জাগরণ ঘটিয়েছিল। এই চুক্তি জার্মান জাতীয়তাবাদকে অপমান করেছিল এবং ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছিল।
- জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ: হিটলারের আগ্রাসী নীতি এবং জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের জার্মান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে বাগোপনে আন্দোলন গড়ে তোলার ইন্ধন জুগিয়েছিল।
- ফ্যাসিবাদ ও নাতসিবাদ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইটালি এবং জার্মানিতে ফ্যাসিবাদী ও নাতসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দুই আগ্রাসী জাতীয়তাবাদী শক্তি খুব দ্রুত ইউরোপ তথা বিশ্বের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলেছিল।
- ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি: ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স প্রথমদিকে আগ্রাসী জাতীয়তাবাদকে তোষণ করলেও হিটলারের অনমনীয় বিস্তার নীতি শেষপর্যন্ত তাদেরকে জার্মানির বিরোধী পক্ষে পরিণত করে।
এই যুদ্ধকে নাতসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আদর্শের সংঘাত বলা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে দুই পক্ষ লড়াই করেছিল, তাদের ইতিহাসে মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি বলা হয়। মিত্রপক্ষের দেশগুলির মধ্যে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিন প্রভৃতি। আর অক্ষশক্তির ভিতরে ছিল জার্মানি, ইটালি, জাপান, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া প্রভৃতি দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া মিত্রপক্ষের দেশগুলির বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক কাঠামো ছিল গণতান্ত্রিক। অন্যদিকে, অক্ষশক্তির প্রধান দুই শরিক ইটালি আর জার্মানিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ফ্যাসিবাদী আর নাতসিবাদী রাজনৈতিক কাঠামো। এইজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনেকেই ফ্যাসিবাদ আর নাতসিবাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের লড়াই বলে মনে করেন।
4. জার্মানি কেন সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করেছিল? এর ফল কী হয়? [3 + 5]
উত্তর: জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করেছিল কারণ জার্মানি বাল্টিক অঞ্চল, ইউক্রেন এবং মস্কো দখল করে পূর্ব দিকে রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে এই আক্রমণ শুরু করে।
এর ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই জার্মান বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে অনেকটা এগিয়ে যায়। লেনিনগ্রাদ অবরুদ্ধ হয় এবং ইউক্রেনের বেশ কিছু অংশ জার্মানির অধিকারে আসে। কিন্তু মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে জার্মানির ব্লিৎজিগ বা ঝটিকা আক্রমণ যেভাবে দ্রুতগতিতে সাফল্য পেয়েছিল, পূর্ব দিকে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং, জার্মান বাহিনীর বড়ো অংশ পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় ব্রিটেন স্বস্তি লাভ করে। জুলাই মাসে ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির বিরুদ্ধে সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। জার্মান বাহিনী মস্কোর খুব কাছাকাছি পৌঁছোলেও প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি ও প্রবল ঠান্ডার কারণে তারা এই অভিযান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ডিসেম্বর মাসের গোড়া থেকেই সোভিয়েত বাহিনী পালটা আক্রমণ শুরু করে এবং জার্মান বাহিনী কোনো কোনো জায়গায় আড়াইশো কিলোমিটার পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।
5. উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে কীবোঝো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের সম্পর্ক আলোচনাকরো। [3+5]
উত্তর: উগ্র জাতীয়তাবাদ হল এমন একটি মানসিকতা যেখানে নিজের জাতিকে শ্রেষ্টতম মনে করা হয় এবং অন্য জাতিগুলির অধিকার খর্ব করে নিজের জাতীয় উন্নতি ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়। উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী, কারণ এটি অন্য জাতি-রাষ্ট্রের স্বাধীনতা খর্ব করতে উদ্যত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে, উগ্র জাতীয়তাবাদ ছিল একটি প্রধান কারণ। জার্মানির নাতসি পার্টির আদর্শই ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ, যা অনুযায়ী জার্মানদের বসবাসের জন্য অন্য দেশ দখল করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিকতাবাদের সঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবাদের সম্পর্ক ছিল বিরোধী। আন্তর্জাতিকতাবাদ হল স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণের একটি আদর্শ, যা জাতীয়তাবাদের সঙ্গে পরিপূরক হওয়ার কথা। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী, কারণ এটি নিজের জাতির প্রতিষ্ঠা ও উন্নতির জন্য অন্য জাতিগুলির অধিকার খর্ব করতে দ্বিধা করে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিকতাবাদের গুরুত্ব বেড়ে যায়, কারণ দেশগুলি আর্থনৈতিকভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির ফলে দূরত্ব কমে আসে।
6. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী ছিল? এই বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি কী হয়েছিল? [5+3]
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি হল:
- ভার্সাই সন্ধির ত্রুটি: ভার্সাই সন্ধির অমর্যাদাকর শর্তগুলি জার্মানদের প্রতিশোধস্পৃহার জাগরণ ঘটিয়েছিল।
- জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ: জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং হিটলারের আগ্রাসী নীতি বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার উপযুক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল।
- ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি: ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ভ্রান্ত তোষণ নীতি হিটলারকে আরও সাম্রাজ্যবাদী করে তুলেছিল।
- আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ, যা অন্য জাতিকে ধ্বংস করে তার সম্পদ দখল করার অধিকার মনে করত।
এই বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি হল:
- জার্মানি, ইটালি এবং জাপানের আধিপত্যের অবসান: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি, ইটালি এবং জাপানের আধিপত্যের অবসান ঘটে।
- সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ও ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করে ভবিষ্যতে বিশ্ববাসীকে এই ধরনের বিধ্বংসী যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations Organization)।
- ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান: ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত দেশগুলি তৃতীয় বিশ্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
- জাতীয়তাবোধের বিকাশ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি বিভিন্ন দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক দেশগুলি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
৭. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনোদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে? এর ফল কী হয়েছিল? [5+3]
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪১ সালে যোগদান করে। এই যোগদানের প্রধান কারণ ছিল জাপানের পার্ল হারবরে আক্রমণ (Pearl Harbor Attack)। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ শুরু করে।
এর ফলাফলসমূহ নিম্নরূপ:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের ফলে মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি পায়।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও অর্থনীতি যুদ্ধের চাহিদা মেটাতে ত্বরান্বিত হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতির দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- জার্মানি ও জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হয়, এবং মিত্রশক্তির জয়ের পথ সুগম হয়।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে বিপুল ক্ষতি হয়, যা যুদ্ধের অবসানের দিকে পরিচালিত করে।
এভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি চরিত্রগত ক্ষেত্রে বিশ্বজনীন ছিল? এই যুদ্ধে ধ্বংসের ক্ষেত্রে গুণগত ও পরিমাণগত ক্ষেত্রে কী ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছিল? [3+5]
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বলা হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ (টোটাল ওয়ার)। সাধারণ যুদ্ধের সঙ্গে এর পার্থক্য এই যে, সাধারণ যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকে কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে, কিন্তু সর্বাত্মক যুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট রণাঙ্গন থাকে না। বসতবাড়ি, চাষের জমি, শহর, গ্রাম—সবকিছুই যুদ্ধের আওতায় আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চরিত্র ছিল প্রকৃতই বিশ্বজনীন। ইউরোপে সোভিয়েত বনাম জার্মানির যুদ্ধ ছাড়াও উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সঙ্গে ইটালি, জার্মানির ঔপনিবেশিক লড়াই চলেছিল। লড়াই হয়েছিল এশিয়ায় চিন ও জাপানের মধ্যে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আবার জাপানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ হয়। যে সমস্ত জায়গায় প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হয়নি, সেই অঞ্চলগুলিও যুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি।
ধ্বংসের ক্ষেত্রে গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অস্ত্রের ব্যবহার ছিল অনেক বেশি বিধ্বংসী। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের ব্যবহারের ফলে ধ্বংসের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। অসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মোট মৃতের সংখ্যা 6 কোটির বেশি, যার মধ্যে 4 থেকে 5 কোটি সৈনিক ছিলেন। এই যুদ্ধে বিমানশক্তির ব্যবহার আগের তুলনায় বেড়েছিল। জার্মানি ব্লিৎজিগ আক্রমণ, স্থল ও বিমানবাহিনীর যুগপৎ ব্যবহারের ফলে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছিল। পক্ষান্তরে বোমারু বিমানের হামলা থেকে বাঁচার জন্য তৈরি হয় উন্নতমানের রাডার যন্ত্র, যা বিমানহানার সম্ভাবনা আগে থেকেই জানাতে পারত।
অতিরিক্ত (Extras)
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)
Coming soon
প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)
Coming soon
Get notes of other boards, classes, and subjects