পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়: WBBSE ক্লাস 9 ভূগোল ও পরিবেশ

পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় WBBSE
Share with others

এখানে (chapter 3) পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়: WBBSE ক্লাস ৯ ভূগোল ও পরিবেশ (Bhugol o Poribesh) (বাংলা মাধ্যম)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

Select medium
English medium notes
Bengali medium notes

Register Login

সারাংশ (summary)

পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় (Determining the Location of a Place on Earth’s Surface)

এই অধ্যায়ে পৃথিবীর উপর কোনো স্থানের অবস্থান কীভাবে নির্ণয় করা হয় তা আলোচনা করা হয়েছে। পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির জন্য এটি কঠিন হতে পারে, কিন্তু কাল্পনিক রেখাগুলি ব্যবহার করে এটি সহজ করা হয়েছে। দুটি ধরনের কাল্পনিক রেখা আছে: অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা। অক্ষরেখা হল পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত পূর্ণবৃত্ত, যার মধ্যে নিরক্ষরেখা প্রধান। দ্রাঘিমারেখা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত অর্ধবৃত্ত, যা উত্তর মেরু থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ মেরুতে শেষ হয়। মূলমধ্যরেখা হল ০° দ্রাঘিমারেখা।

অক্ষাংশ হল কোনো স্থান থেকে নিরক্ষরেখার কৌণিক দূরত্ব। দ্রাঘিমা হল মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে ঐ স্থানের কৌণিক দূরত্ব। পৃথিবীকে দুটি গোলার্ধে ভাগ করা হয়েছে: উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধ। এছাড়াও আছে কর্কটক্রান্তি রেখা, মকরক্রান্তি রেখা, সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত।

আন্তর্জাতিক তারিখরেখা ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করে উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। এটি পৃথিবীর দিন ও তারিখ নির্ধারণে সাহায্য করে। স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রমাণ সময় হল দেশের মধ্যভাগের স্থানীয় সময়। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা পেরোলে একদিন বাড়ে বা কমে। দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয়। প্রতি ১° দ্রাঘিমার জন্য ৪ মিনিট সময় পার্থক্য হয়। এগুলি বুঝতে সাহায্য করে ক্রনোমিটার ও সেক্সট্যান্ট যন্ত্র। পৃথিবীর কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়ে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়।

পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Prantik textbook)

সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো

১। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে বলে সেই স্থানের—

(ক) অক্ষাংশ
(খ) দ্রাঘিমা
(গ) প্রতিপাদ স্থান
(ঘ) অক্ষাংশ

উত্তর: (ক) অক্ষাংশ

২। মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্বে বা পশ্চিমে অবস্থিত কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে বলে সেই স্থানের—

(ক) অক্ষাংশ
(খ) দ্রাঘিমা
(গ) প্রতিপাদ স্থান
(ঘ) আন্তর্জাতিক তারিখরেখা

উত্তর: (খ) দ্রাঘিমা

৩। গ্রিনিচের দ্রাঘিমা হল—

(ক) ১৮০°
(খ) ০০
(গ) ৯০০
(ঘ) ৩০০

উত্তর: (খ) ০০

৪। মহাবৃত্তের উদাহরণ হল—

(ক) মূলমধ্যরেখা
(খ) নিরক্ষরেখা
(গ) আন্তর্জাতিক তারিখরেখা
(ঘ) প্রতিপাদ স্থান

উত্তর: (খ) নিরক্ষরেখা

৫। ৪৫° উত্তর অক্ষরেখায় অবস্থিত স্থানের প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ—

(ক) ১৮০° পূ.
(খ) ৪৫° দ.
(গ) ৪৫°৩০′ প.
(ঘ) ৪৫° পৃ.

উত্তর: (খ) ৪৫° দ.

৬। সর্বোচ্চ অক্ষাংশ হল—

(ক) ০০
(খ) ৯০০
(গ) ১৮০০
(ঘ) ৩৬০°

উত্তর: (খ) ৯০০

৭। ১০ দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয়—

(ক) ২ মিনিট
(খ) ৪ মিনিট
(গ) ৮ মিনিট
(ঘ) ১০ মিনিট

উত্তর: (খ) ৪ মিনিট

৮। পূর্ব বা পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত কোনো স্থানের অবস্থান জানতে প্রয়োজন—

(ক) অক্ষাংশের
(খ) দ্রাঘিমার
(গ) অক্ষরেখার
(ঘ) কোনোটাই নয়

উত্তর: (খ) দ্রাঘিমার

৯। দ্রাঘিমারেখার সর্বাধিক মান হল—

(ক) ০°
(খ) ৯০০
(গ) ১৮০°
(ঘ) ১০০০

উত্তর: (গ) ১৮০°

১০। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা কল্পনা করা হয়েছে যে দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করে—

(ক) ১৮০°
(খ) ৩৬০°
(গ) ৯০°
(ঘ) ০০

উত্তর: (ক) ১৮০°

১১। নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ হল্—

(ক) ০০
(খ) ১০০
(গ) ১০০০
(ঘ) ১১০০

উত্তর: (ক) ০০

১২। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে— ______ সর্বোচ্চ অবস্থান দেখে কোনো স্থানে মধ্যাহ্ন বা বেলা ১২টা স্থির করা যায়

(ক) সূর্যের
(খ) ধ্রুবতারার
(গ) শুকতারার
(ঘ) চন্দ্রের

উত্তর: (ক) সূর্যের

১৩। ২৩২ উত্তর হল— ______ অক্ষাংশ

(ক) কর্কটক্রান্তি রেখার
(খ) মকরক্রান্তি রেখার
(গ) নিরক্ষরেখার
(ঘ) মূলমধ্যরেখার

উত্তর: (ক) কর্কটক্রান্তি রেখার

১৪। সুমেরুবৃত্তের অক্ষাংশ হল—

(ক) ৬৬°৩০′ দ.
(খ) ৬৬২° উ.
(গ) ৬৬°৩০′ পূ
(ঘ) ৬৬°৩০′ প.

উত্তর: (খ) ৬৬২° উ.

১৫। কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের সময়ের পার্থক্য—

(ক) ৬ ঘণ্টা
(খ) ১২ ঘণ্টা
(গ) ১৮ ঘণ্টা
(ঘ) ২০ ঘণ্টা

উত্তর: (খ) ১২ ঘণ্টা

১৬। কলকাতার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ—

(ক) ২২ ২০ দক্ষিণ
(খ) ২৩২০° উত্তর
(গ) ৬৬২ দক্ষিণ
(ঘ) ৬৬২° উত্তর

উত্তর: (ক) ২২ ২০ দক্ষিণ

১৭। উত্তর গোলার্ধের ৬৬২° উত্তর সমাক্ষরেখাকে— ______ বলা হয়

(ক) সুমেরুবৃত্ত
(খ) কুমেরুবৃত্ত
(গ) কুমেরু বিন্দু
(ঘ) সুমেরু বিন্দু

উত্তর: (ক) সুমেরুবৃত্ত

“বাক্যটি ‘সত্য’ হলে “ঠিক” এবং “অসত্য’ হলে ‘ভুল’ লেখো

১. একই অক্ষরেখায় অবস্থিত সমস্ত স্থানের অক্ষাংশ সমান হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: অক্ষরেখাগুলি নিরক্ষরেখার সমান্তরালে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখা। তাই একটি নির্দিষ্ট অক্ষরেখার ওপর অবস্থিত সব স্থানেরই নিরক্ষরেখা থেকে কৌণিক দূরত্ব বা অক্ষাংশ একই থাকে।

২. দ্রাঘিমারেখাগুলি পূর্ণবৃত্ত।

উত্তর: ভুল

কারণ: দ্রাঘিমারেখাগুলি উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত অর্ধবৃত্তাকার রেখা। দুটি বিপরীত দ্রাঘিমারেখা (যেমন ০° এবং ১৮০°) मिलकर একটি পূর্ণবৃত্ত গঠন করে। অক্ষরেখাগুলি পূর্ণবৃত্ত হয়।

৩. মূলমধ্যরেখার মান হল ৫০° পূর্ব।

উত্তর: ভুল

কারণ: মূলমধ্যরেখার মান ০° ধরা হয়। এই রেখাটি লন্ডনের গ্রিনিচ মানমন্দিরের ওপর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে।

৪. কর্কটক্রান্তি রেখার মান ২৩ ১/২° দক্ষিণ।

উত্তর: ভুল

কারণ: কর্কটক্রান্তি রেখার মান ২৩ ১/২° উত্তর (২৩°৩০′ উত্তর)। ২৩ ১/২° দক্ষিণ (২৩°৩০′ দক্ষিণ) অক্ষাংশকে মকরক্রান্তি রেখা বলা হয়।

৫. সমাক্ষরেখাকে ভিত্তি করে স্থানীয় সময় নির্দেশ করা হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: স্থানীয় সময় দ্রাঘিমারেখার ওপর নির্ভর করে। একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থানগুলিতে একই সময়ে মধ্যাহ্ন হয়, তাই তাদের স্থানীয় সময়ও একই হয়। অক্ষরেখার সাহায্যে সময়ের পার্থক্য বোঝা যায় না।

৬. ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা ও ১৮০° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা একই রেখাকে নির্দেশ করে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পৃথিবী গোলাকার হওয়ায় ০° দ্রাঘিমারেখার ঠিক বিপরীতে পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে গণনা করে এলে ১৮০° দ্রাঘিমারেখাটি একটিই হয়। তাই ১৮০° পূর্ব বা ১৮০° পশ্চিম বলার প্রয়োজন হয় না, এটি একটি অভিন্ন রেখা।

৭. মালাক্কা প্রণালীর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা কল্পনা করা হয়েছে।

উত্তর: ভুল

কারণ: আন্তর্জাতিক তারিখরেখা মূলত ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে টানা হয়েছে। স্থলভাগকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এটিকে কয়েকটি স্থানে বাঁকানো হয়েছে, যেমন বেরিং প্রণালী, ফিজি, টোঙ্গা প্রভৃতি অঞ্চলের কাছে। এটি মালাক্কা প্রণালীর ওপর দিয়ে যায় না।

৮. উত্তর গোলার্ধের সুমেরু বিন্দুতে ধ্রুবতারার উন্নতি ৯০° দক্ষিণ।

উত্তর: ভুল

কারণ: উত্তর গোলার্ধের যেকোনো স্থান থেকে ধ্রুবতারার উন্নতি সেই স্থানের অক্ষাংশের সমান হয়। সুমেরু বিন্দুর অক্ষাংশ ৯০° উত্তর, তাই সেখানে ধ্রুবতারার উন্নতি ৯০° (উত্তর আকাশের দিকে)। ৯০° দক্ষিণ উন্নতি সম্ভব নয়।

৯. মূলমধ্যরেখাকেই আন্তর্জাতিক তারিখরেখা বলা হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: মূলমধ্যরেখা হল ০° দ্রাঘিমারেখা। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা মূলত ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করে কল্পনা করা হয়েছে, যা মূলমধ্যরেখার ঠিক বিপরীতে অবস্থিত।

১০. নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ হল ০০।

উত্তর: ঠিক

কারণ: নিরক্ষরেখা হল অক্ষাংশ পরিমাপের মূল ভিত্তি বা ০° অক্ষরেখা। এর থেকেই উত্তর ও দক্ষিণে অন্যান্য অক্ষাংশ গণনা করা হয়।

১১. ক্রনোমিটার হল একধরনের ঘড়ি, যা গ্রিনিচের সময় অনুসারে চলে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ক্রনোমিটার একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম সময়মাপক যন্ত্র যা সাধারণত গ্রিনিচ গড় সময় (GMT) নির্দেশ করে। নাবিকেরা এটি ব্যবহার করে দ্রাঘিমা নির্ণয় করতেন।

১২. সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে কোনো স্থানের অক্ষাংশ স্থির করা যায়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে সূর্য বা অন্যান্য জ্যোতিষ্কের কৌণিক উন্নতি পরিমাপ করে কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়।

১৩. কুমেরু বৃত্তের অক্ষাংশ হল ৬৬ ১/২° উত্তর।

উত্তর: ভুল

কারণ: কুমেরু বৃত্তের অক্ষাংশ হল ৬৬ ১/২° দক্ষিণ (৬৬°৩০′ দক্ষিণ)। ৬৬ ১/২° উত্তর (৬৬°৩০′ উত্তর) অক্ষাংশকে সুমেরু বৃত্ত বলা হয়।

১৪. কলকাতার দ্রাঘিমা ৮৮°৩০′ পূ., সুতরাং তার প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা হবে ৯১°৩০′ প.।

উত্তর: ঠিক

কারণ: কোনো স্থানের প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করতে হলে সেই স্থানের দ্রাঘিমাকে ১৮০° থেকে বিয়োগ করতে হয় এবং দিক পরিবর্তন করতে হয় (পূর্ব থাকলে পশ্চিম, পশ্চিম থাকলে পূর্ব)। তাই কলকাতার (৮৮°৩০′ পূর্ব) প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা হবে (১৮০° – ৮৮°৩০′) = ৯১°৩০′ পশ্চিম।

১৫. কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের সময়ের পার্থক্য হয় ১৪ ঘণ্টা।

উত্তর: ভুল

কারণ: কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য ১৮০°। প্রতি ডিগ্রি দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট হলে, ১৮০° দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য হয় (১৮০ × ৪) মিনিট = ৭২০ মিনিট = ১২ ঘণ্টা।

১৬. ৮৮ ১/২° পূর্ব দ্রাঘিমা-রেখাটি কলকাতার ওপর দিয়ে গেছে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: কলকাতার প্রমাণ দ্রাঘিমা ৮৮°৩০′ পূর্ব, যা ৮৮ ১/২° পূর্ব-এর সমান।

১৭. মেরুপ্রদেশের কাছাকাছি স্থানসমূহের অক্ষাংশকে উচ্চ অক্ষাংশ বলা হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সাধারণত ৬৬ ১/২° অক্ষাংশ থেকে মেরুবিন্দু (৯০°) পর্যন্ত অক্ষাংশগুলিকে উচ্চ অক্ষাংশ বলা হয়। এই অঞ্চলগুলি মেরুপ্রদেশের কাছাকাছি অবস্থিত।

১৮. একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় সময় একই হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: স্থানীয় সময় নির্ভর করে দ্রাঘিমার ওপর। একই অক্ষরেখায় অবস্থিত স্থানগুলির দ্রাঘিমা ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় তাদের স্থানীয় সময়ও আলাদা হয়। শুধুমাত্র একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থানগুলির স্থানীয় সময় একই হয়।

১৯. একই অক্ষরেখায় অবস্থিত যে-কোনো স্থান থেকে নিরক্ষরেখার দূরত্ব সর্বদা সমান হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: অক্ষরেখাগুলি নিরক্ষরেখার সমান্তরাল। তাই একই অক্ষরেখার ওপর অবস্থিত সমস্ত বিন্দুই নিরক্ষরেখা থেকে সমান কৌণিক দূরত্বে (অক্ষাংশ) এবং রৈখিক দূরত্বে অবস্থান করে।

২০. ০° দ্রাঘিমারেখাকে মূলমধ্যরেখা হিসেবে গণ্য করা হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লন্ডনের গ্রিনিচের ওপর দিয়ে বিস্তৃত ০° দ্রাঘিমারেখাটিকেই মূলমধ্যরেখা হিসেবে ধরা হয়।

২১. একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের জলবায়ু ভিন্ন রকমের হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: একই অক্ষরেখায় অবস্থিত স্থানগুলিতে সূর্যরশ্মি প্রায় একই কোণে পড়ে এবং দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের পার্থক্যও প্রায় একই রকম থাকে। তাই এই স্থানগুলির জলবায়ু সাধারণত প্রায় একই রকমের হয়। তবে উচ্চতা, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি বিষয় জলবায়ুর কিছু পার্থক্য ঘটাতে পারে।

২২. একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় সময় আলাদা।

উত্তর: ভুল

কারণ: একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত সমস্ত স্থানে সূর্য একই সময়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে আসে (মধ্যাহ্ন)। তাই এই স্থানগুলির স্থানীয় সময় একই হয়।

উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো

১. মূলমধ্যরেখা ___________শহরের ওপর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে।

উত্তর: গ্রিনিচ

২. পৃথিবীর অক্ষরেখা কক্ষপথের সঙ্গে সর্বদা_________কোণে হেলে আছে।

উত্তর: ৬৬ ১/২°

৩. মহাবৃত্ত বলা হয়_________ রেখাকে।

উত্তর: নিরক্ষরেখা

৪. নিরক্ষরেখা থেকে কলকাতার কৌণিক দূরত্ব হল _________।

উত্তর: ২২°৩৪′

৫. __________ হল এক ধরনের, ঘড়ি, যা গ্রিনিচের সময় অনুসারে চলে।

উত্তর: ক্রনোমিটার

৬. ____________যন্ত্রের সাহায্যে কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়।

উত্তর: সেক্সট্যান্ট

৭. দ্রাঘিমার পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় ______________তারতম্য ঘটে।

উত্তর: সময়ের

৮. কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের সময়ের পার্থক্য হয__________ ঘণ্টা।

উত্তর: ১২

৯. আন্তর্জাতিক তারিখরেখা, স্থির করার সম্মেলন হল ____________।

উত্তর: ১৮৮৪ সালে

১০. ___________ শহরের স্থানীয় সময়কে ভারতের প্রমাণ সময় ধরা হয়েছে।

উত্তর: এলাহাবাদ (বর্তমানে প্রয়াগরাজ)

স্তম্ভ মেলাও
বামদিকডানদিক
১. কক্ষপথের রৈখ্য1. ১° দ্রাঘিমা
২. এলাহাবাদ2. ০° দ্রাঘিমারেখা
৩. ৪ মিনিট3. ২৩ ১/২° উত্তর অক্ষাংশ
৪. ৪ সেকেন্ড4. ১° দ্রাঘিমা
৫. মূলমধ্যরেখা5. ভারতের প্রধান সময়

উত্তর:

কক্ষপথের রৈখ্য২৩ ১/২° উত্তর অক্ষাংশ
এলাহাবাদভারতের প্রধান সময়
৪ মিনিট১° দ্রাঘিমা
৪ সেকেন্ড১° দ্রাঘিমা
মূলমধ্যরেখা০° দ্রাঘিমারেখা
দু-এক কথায় উত্তর দাও

১. ক্রনোমিটার কী?

উত্তর: ক্রনোমিটার হল এক ধরনের ঘড়ি যা গ্রিনিচের সময় নির্দেশ করে।

২. সেক্সট্যান্ট কী?

উত্তর: সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান দেখে পৃথিবী পৃষ্ঠের যে-কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়।

৩. একাধিক প্রমাণ সময় পৃথিবীর কোন্ কোন্ দেশে ব্যবহার করা হয়?

উত্তর: যে-সব দেশ পূর্ব-পশ্চিমে বেশি চওড়া সেসব দেশে একাধিক প্রমাণ সময় থাকে। যেমন: কানাডা, চিন, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিরাট দেশে একাধিক প্রমাণ সময় ধরা হয়।

৪. উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখার উত্তরে অবস্থিত স্থানের অক্ষাংশকে উত্তর অক্ষাংশ এবং দক্ষিণে অবস্থিত স্থানের অক্ষাংশকে দক্ষিণ অক্ষাংশ বলে।

৫. মহাবৃত্ত কাকে বলে?

উত্তর: যে পূর্ণবৃত্তরেখা পৃথিবীকে সমান দুটি অংশে ভাগ করে তা হল মহাবৃত্ত। কোনো গোলোকের পৃষ্ঠে মহাবৃত্ত হল সেই বৃত্ত, যার কেন্দ্র ও গোলোকটির কেন্দ্র এক। নিরক্ষরেখা একটি মহাবৃত্ত এবং দুটি বিপরীত দ্রাঘিমা রেখার মিলিত বৃত্তরেখাও একটি মহাবৃত্ত।

৬. নিরক্ষরেখা কাকে বলে?

উত্তর: পৃথিবীর দুই মেরু থেকে সমান দূরে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক রেখাটিকে নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা বলে। এটি পৃথিবীর দুই মেরু থেকে সমদূরত্বে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক সর্ববৃহৎ রেখা।

৭. ভারতীয় প্রমাণ সময় বলতে কী বোঝ?

উত্তর: ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের মাঝামাঝি ৮২°৩০′ পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত এলাহাবাদ বা কোকনদের কাছাকাছি স্থানের স্থানীয় সময়কে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণ সময় (IST) ধরা হয়। এই সময় অনুসারে ভারতের সমস্ত সরকারি অফিসের কাজকর্ম পরিচালিত হয়। এটি ৮২°৩০′ পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত এলাহাবাদের সময়।

৮. AM ও PM কী?

উত্তর: একদিনের মধ্যাহ্ন থেকে পরের দিনের মধ্যাহ্ন পর্যন্ত সময়ের ব্যবধানকে ২৪ ঘণ্টা ধরা হয়। মধ্যাহ্ন সময়ের পূর্ববর্তী সময়কে am এবং পরবর্তী সময়কে pm বলা হয়।

৯. সমাক্ষরেখা কী?

উত্তর: নিরক্ষরেখার সমান্তরালে পূর্ব-পশ্চিমে অঙ্কিত রেখাগুলি হল অক্ষরেখা বা সমাক্ষরেখা। এগুলি গোলীয় পৃথিবীর ওপর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক পূর্ণবৃত্ত।

১০. প্রমাণ সময় কাকে বলে?

উত্তর: স্থানীয় সময়-সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুবিধা দূর করার জন্য প্রত্যেক দেশের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থিত যে দ্রাঘিমারেখার সময় অনুসারে সেই দেশের রেল, ডাক, বেতার এবং প্রশাসনিক কাজ চালানো হয় সেই সময়কেই বলে সেই দেশের প্রমাণ সময়। কোনো দেশের প্রশাসনিক কাজ চালানোর জন্য দেশটির মধ্যভাগ দিয়ে বিস্তৃত কোনো নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময়কে সেই দেশের প্রমাণ সময় বলে।

নীচের চের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো

১. অক্ষাংশ ও অক্ষরেখার মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: নিরক্ষরেখার সমান্তরাল কল্পিত পূর্ণবৃত্তগুলি হল অক্ষরেখা। অন্যদিকে নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত কোনো স্থান এবং নিরক্ষীয় তলের কৌণিক দূরত্ব হল অক্ষাংশ। অর্থাৎ নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণের কৌণিক মাপ হল অক্ষাংশ এবং নিরক্ষরেখার সমান্তরালে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা হল অক্ষরেখা। এককথায় বলা যায়, অক্ষাংশ হল কৌণিক পরিমাপ এবং অক্ষরেখা হল পূর্ণবৃত্ত রেখা।

২. আন্তর্জাতিক তারিখরেখা সর্বত্র ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করেনি কেন?

উত্তর: আন্তর্জাতিক তারিখরেখাকে মোটামুটিভাবে ১৮০° দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে কল্পনা করা হলেও, সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্বাংশ এবং অ্যালাউশিয়ান, ফিজি এবং চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের স্থলভাগকে এড়িয়ে চলার জন্য এই রেখাটি কিছুটা পূর্বে এবং পশ্চিমে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ তা না হলে একই দেশের আন্তর্জাতিক তারিখরেখার দুদিকে দুরকম সময় সূচিত হত, এতে একই দ্বীপ বা দেশে আন্তর্জাতিক রেখার এধারে ওধারে একই দিনে দুটো তারিখ হয়ে যেত, ফলে এই সমস্ত জায়গার স্থানীয় অধিবাসীদের বার নির্ণয় করতে অসুবিধা হত। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক তারিখরেখা সর্বত্র ১৮০° দ্রাঘিমা রেখাকে অনুসরণ করেনি এবং এই রেখাটি স্থানে-স্থানে বাঁকা।

৩. গ্রিনিচের সময়ের তুলনায় ভারতীয় প্রমাণ সময় এগিয়ে থাকে কেন?

উত্তর: নিজের আবর্তন গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে ২৪ ঘণ্টায় একবার পাক খাচ্ছে, তাই সূর্য পূর্বদিকে আগে ওঠে, যার ফলে পৃথিবীর পূর্বদিকের জায়গায় সময় এগিয়ে থাকে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণ সময় ৮২°৩০′ পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত এলাহাবাদ বা কোকনদের কাছাকাছি স্থানের স্থানীয় সময়কে ধরা হয়। যেহেতু এই দ্রাঘিমা গ্রিনিচের (০°) পূর্বে অবস্থিত, তাই ভারতীয় প্রমাণ সময় গ্রিনিচের সময় থেকে এগিয়ে থাকে (৮২°৩০′ × ৪ মিনিট = ৩৩০ মিনিট = ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট এগিয়ে)।

৪. গ্রিনিচের সময় দ্বারা কীভাবে কোনো স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়?

উত্তর: কোনো স্থানের স্থানীয় সময় এবং গ্রিনিচের সময়ের পার্থক্য থেকে ওই স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়। প্রতি ১৫° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় ১ ঘণ্টা বা প্রতি ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট। যদি কোনো স্থানের স্থানীয় সময় গ্রিনিচ সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকে, তবে স্থানটি গ্রিনিচের পূর্বে অবস্থিত (পূর্ব দ্রাঘিমা)। যদি স্থানীয় সময় গ্রিনিচ সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকে, তবে স্থানটি গ্রিনিচের পশ্চিমে অবস্থিত (পশ্চিম দ্রাঘিমা)। সময়ের পার্থক্যকে ৪ মিনিট দিয়ে ভাগ করলে দ্রাঘিমার পার্থক্য ডিগ্রিতে পাওয়া যায়।

৫. গ্রিনিচ সময় ও ভারতীয় প্রমাণ সময়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।

উত্তর: ভারতীয় প্রমাণ সময় (IST) গ্রিনিচের সময় (GMT) থেকে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট এগিয়ে থাকে। অর্থাৎ ভারতের প্রমাণ সময় যখন দুপুর ১২টা তখন গ্রিনিচের সময় সকাল ৬ টা ৩০ মিনিট।

৬. মহাবৃত্ত কী?

উত্তর: যে পূর্ণবৃত্তরেখা পৃথিবীকে সমান দুটি অংশে ভাগ করে তা হল মহাবৃত্ত (Great Circle)। কোনো গোলোকের পৃষ্ঠে মহাবৃত্ত হল সেই বৃত্ত, যার কেন্দ্র ও গোলোকটির কেন্দ্র এক। এই হিসেবে নিরক্ষরেখা একটি মহাবৃত্ত এবং দুটি বিপরীত দ্রাঘিমা রেখার মিলিত বৃত্তরেখাও একটি মহাবৃত্ত (যেমন ০° দ্রাঘিমারেখা বা মূলমধ্যরেখা ও ১৮০° দ্রাঘিমারেখার মিলিত বৃত্তরেখাও মহাবৃত্ত)।

৭. অক্ষাংশ কাকে বলে?

উত্তর: নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে অবস্থিত কোনো স্থান এবং নিরক্ষীয় তলের কৌণিক দূরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলে। এটি পৃথিবীর কেন্দ্র বা নিরক্ষীয় তল থেকে উত্তর বা দক্ষিণের কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্ব।

৮. দ্রাঘিমা কী?

উত্তর: মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের নিরক্ষীয়তল বরাবর কৌণিক দূরত্বকে সেই স্থানের দ্রাঘিমা বলে। অর্থাৎ, মূলমধ্যরেখা থেকে নিরক্ষীয়তল বরাবর পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত আঁকা সরলরেখাটি, মূলমধ্যরেখার পূর্ব বা পশ্চিমে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠের কোনো জায়গা থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত অঙ্কিত সরলরেখার সঙ্গে পৃথিবীর কেন্দ্রে যে-কোণ তৈরি করে, সেই কোণই হল সেই জায়গাটির দ্রাঘিমা।

৯. স্থানীয় সময় কাকে বলে?

উত্তর: নিজের আবর্তন গতিতে পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘুরছে, তাই প্রতি ২৪ ঘণ্টায় প্রতিটি দ্রাঘিমারেখাই একবার সূর্যের সামনে এসে পড়লে সূর্য সেখানে লম্বভাবে কিরণ দেয়। এইভাবে আকাশে মধ্যাহ্ন সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান অনুসারে কোনো স্থানের যে-সময় নির্ণয় করা হয়, সেই সময়ই হল সেই স্থানের স্থানীয় সময়।

১০. আন্তর্জাতিক তারিখরেখা কী?

উত্তর: আন্তর্জাতিক তারিখরেখা হল এমন একটি কাল্পনিক রেখা, যে রেখা ১৮০° দ্রাঘিমা রেখাকে মোটামুটি অনুসরণ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। এই রেখাটি পৃথিবীর পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের তারিখ বিভাজিকার কাজ করে। এটি মোটামুটি ১৮০° দ্রাঘিমা রেখাকে অনুসরণ করে আঁকা যে রেখার দু-পাশে সময়ের ব্যবধান এক দিন বা ২৪ ঘণ্টা।

১১. প্রতিপাদ স্থান বলতে কী বোঝ?

উত্তর: ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত কোনো স্থান বা বিন্দু থেকে পৃথিবীর কোনো কল্পিত ব্যাস ভূকেন্দ্র ভেদ করে বিপরীত দিকে ভূপৃষ্ঠকে যে বিন্দুতে স্পর্শ করে, সেই বিন্দুকে প্রথম বিন্দুটির প্রতিপাদ স্থান (Antipode) বলে।

১২. ‘নিরক্ষরেখায় অবস্থিত কোনো স্থানের প্রতিপাদ স্থান নিরক্ষরেখাতেই অবস্থিত হয়’—ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশের মান সমান, কিন্তু একটি অপরটির বিপরীত গোলার্ধে অবস্থিত। যদি কোনো স্থান নিরক্ষরেখায় (০° অক্ষাংশ) অবস্থিত হয়, তবে তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশও ০° হবে, অর্থাৎ প্রতিপাদ স্থানটিও নিরক্ষরেখাতেই অবস্থিত হবে। তবে, কোনো বিশেষ দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থানের প্রতিপাদ স্থান সেই স্থানের বিপরীত দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত হয়, ফলে তাদের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় ১৮০°। সুতরাং, নিরক্ষরেখায় অবস্থিত কোনো স্থানের প্রতিপাদ স্থান নিরক্ষরেখাতেই ১৮০° দ্রাঘিমা দূরে অবস্থিত হয়।

সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

১. সমাক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা বলতে কী বোঝ?

উত্তর: নিরক্ষরেখার সমান্তরালে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক পূর্ণবৃত্ত রেখাগুলি হল অক্ষরেখা বা সমাক্ষরেখা। প্রত্যেকটি অক্ষরেখা নিরক্ষরেখার সমান্তরালে অবস্থিত, এইজন্য একই অক্ষরেখায় অবস্থিত যে-কোনো স্থান থেকে নিরক্ষরেখার দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে। অক্ষরেখাগুলো পরস্পরের সমান্তরাল হওয়ায় যে-কোনো দুটো অক্ষরেখার মধ্যবর্তী দূরত্ব সর্বদা সমান হয়।

উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত মেরু সংযোগকারী কাল্পনিক অর্ধবৃত্ত রেখাগুলোই হল দ্রাঘিমারেখা। এই রেখাগুলোর প্রত্যেকটাই অর্ধেক বৃত্ত এবং একই দৈর্ঘ্যের। দ্রাঘিমারেখাগুলি উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, এরা সমান্তরাল নয়। দ্রাঘিমারেখাগুলো প্রত্যেকটি এক-একটি অর্ধবৃত্ত, কিন্তু এরা পরস্পরের সমান্তরাল নয়, সুতরাং এদের পরস্পরের দূরত্ব সমান নয়। দুটি দ্রাঘিমারেখার মধ্যে দূরত্ব নিরক্ষরেখার কাছে সবচেয়ে বেশি। নিরক্ষরেখার থেকে মেরুর দিকে ক্রমশ দূরত্ব কমে যায়।

২. আন্তর্জাতিক তারিখরেখার প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তর: ১৮০° পূর্ব বা পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার দুপাশে সময়ের পার্থক্য ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ১ দিন। এই অসুবিধা দূর করার জন্যই আন্তর্জাতিক তারিখরেখার প্রবর্তন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা হল এমন একটি কাল্পনিক রেখা, যে রেখা ১৮০° দ্রাঘিমা রেখাকে মোটামুটি অনুসরণ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। এই রেখাটি পৃথিবীর পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের তারিখ বিভাজিকার কাজ করে। মূলমধ্যরেখার ঠিক বিপরীত দিকে ১৮০° দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে ‘আন্তর্জাতিক তারিখরেখা’ ঠিক করা হয়েছে। এখান থেকেই শুরু হয় নতুন তারিখ। জাহাজ বা প্লেনে করে এই রেখা পেরিয়ে পশ্চিম গোলার্ধে গেলে একদিন কমিয়ে নিতে হয়। আবার পূর্ব গোলার্ধে গেলে একদিন বাড়িয়ে নিতে হয়। এক্ষেত্রে সময়ের কোনো পরিবর্তন হয় না, শুধু তারিখটা পালটে যায়। তা না হলে একই দেশের আন্তর্জাতিক তারিখরেখার দুদিকে দুরকম সময় সূচিত হত, এতে একই দ্বীপ বা দেশে আন্তর্জাতিক রেখার এধারে ওধারে একই দিনে দুটো তারিখ হয়ে যেত, ফলে এই সমস্ত জায়গার স্থানীয় অধিবাসীদের বার নির্ণয় করতে অসুবিধা হত।

৩. প্রমাণ সময় ও স্থানীয় সময়ের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময়ের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল:

বিষয়স্থানীয় সময়প্রমাণ সময়
সংজ্ঞা ও প্রকৃতিকোনো স্থানের আকাশে মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থান দেখে যে সময় গণনা করা হয় তাকে স্থানীয় সময় বলে।কোনো দেশের প্রশাসনিক কাজ চালানোর জন্য দেশটির মধ্যভাগ দিয়ে বিস্তৃত কোনো নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময়কে সেই দেশের প্রমাণ সময় বলে।
নির্ণয়ের ভিত্তিকোনো জায়গার স্থানীয় দ্রাঘিমারেখার উপর মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থান ভিত্তি করে সেই জায়গায় স্থানীয় সময় নির্ণয় করা হয়।কোনো দেশের মাঝবরাবর বিস্তৃত দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময়ের ওপর ভিত্তি করে সেই দেশের প্রমাণ সময় নির্ণয় করা হয়।
সংখ্যাএকই দেশে বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় সময় আলাদা।পূর্ব-পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত কম বিস্তৃত কোনো দেশে সাধারণত একটি প্রমাণ সময় থাকে।
তারতম্যএকই দ্রাঘিমারেখা বরাবর স্থানীয় সময় একই থাকে।একই দ্রাঘিমারেখা বরাবর প্রমাণ সময় আলাদা হতে পারে। যেমন ৯০° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা বরাবর বাংলাদেশ ভারতের প্রমাণ সময় আলাদা।

৪. ১০° উত্তর অক্ষাংশ ও ৬০° পূর্ব দ্রাঘিমা বিশিষ্ট কোনো স্থানের প্রতিপাদ স্থান উল্লেখ করো।

উত্তর: কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশের মান সমান, কিন্তু একটি অপরটির বিপরীত গোলার্ধে অবস্থিত। কোনো বিশেষ দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থানের প্রতিপাদ স্থান সেই স্থানের বিপরীত দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত হয়, ফলে তাদের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় ১৮০০। সুতরাং, ১০° উত্তর অক্ষাংশ ও ৬০° পূর্ব দ্রাঘিমা বিশিষ্ট কোনো স্থানের প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ হবে ১০° দক্ষিণ এবং দ্রাঘিমা হবে (১৮০০ – ৬০০) = ১২০০ পশ্চিম।

৫. স্থানীয় সময়ের পার্থক্যের সাহায্যে কীভাবে কোনো স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়?

উত্তর: দ্রাঘিমার সঙ্গে সময়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি ১৫° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় ১ ঘণ্টা বা ৬০ মিনিট। অর্থাৎ, ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট। দুটি স্থানের স্থানীয় সময়ের পার্থক্য থেকে তাদের মোট দ্রাঘিমার পার্থক্য বের করা যায়। ৪ মিনিট সময়ের পার্থক্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় ১°, সুতরাং মোট সময়ের পার্থক্যকে ৪ মিনিট দিয়ে ভাগ করলে মোট দ্রাঘিমার পার্থক্য ডিগ্রিতে পাওয়া যায়। যদি কোনো স্থানের স্থানীয় সময় গ্রিনিচ বা অন্য কোনো জানা দ্রাঘিমার স্থানের স্থানীয় সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকে, তবে স্থানটি ওই জানা স্থানের পূর্বে অবস্থিত। আর যদি স্থানীয় সময় পিছিয়ে থাকে, তবে স্থানটি পশ্চিমে অবস্থিত। এইভাবে জানা দ্রাঘিমার স্থান থেকে দ্রাঘিমার পার্থক্য যোগ বা বিয়োগ করে অজানা স্থানটির দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়।

৬. দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তনের সঙ্গে স্থানীয় সময়ের পরিবর্তন হয় কেন?

উত্তর: নিজের আবর্তন গতিতে পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘুরছে, তাই প্রতি ২৪ ঘণ্টায় প্রতিটি দ্রাঘিমারেখাই একবার সূর্যের সামনে আসে। আকাশে মধ্যাহ্ন সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান অনুসারে কোনো স্থানের যে-সময় নির্ণয় করা হয়, সেই সময়ই হল সেই স্থানের স্থানীয় সময়। যেহেতু পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরছে, তাই পূর্বদিকের দ্রাঘিমারেখাগুলি আগে সূর্যের সামনে আসে এবং সেখানে আগে মধ্যাহ্ন হয়। দ্রাঘিমারেখা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যাহ্ন হওয়ার সময় পরিবর্তিত হয়, ফলে স্থানীয় সময়ও পরিবর্তিত হয়। গ্রিনিচ থেকে যে স্থান যত পূর্ব দ্রাঘিমায় রয়েছে, সেই স্থানের স্থানীয় সময় ততই এগিয়ে থাকে এবং যে স্থানের অবস্থান গ্রিনিচ থেকে যত ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমায় রয়েছে, সেই স্থানের স্থানীয় সময় ততই পিছিয়ে থাকে। প্রতি ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যে স্থানীয় সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট।

রচনাধর্মী প্রশ্ন

১। অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর: অক্ষরেখার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

  • অক্ষরেখাগুলো পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত।
  • অক্ষরেখাগুলো পূর্ণবৃত্ত।
  • প্রত্যেকটি অক্ষরেখা নিরক্ষরেখার সমান্তরালে অবস্থিত, এইজন্য একই অক্ষরেখায় অবস্থিত যে-কোনো স্থান থেকে নিরক্ষরেখার দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে।
  • অক্ষরেখাগুলো পরস্পরের সমান্তরাল হওয়ায় যে-কোনো দুটো অক্ষরেখার মধ্যবর্তী দূরত্ব সর্বদা সমান হয়।
  • নিরক্ষরেখা নিজেও একটি অক্ষরেখা এবং এর পরিধি সর্বাধিক।
  • অক্ষরেখাগুলোর পরিধি নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে ক্রমশ ছোটো হতে হতে অবশেষে দুই মেরুতে বিন্দুতে পরিণত হয়, অর্থাৎ অক্ষরেখাগুলোর পরিধি সর্বত্র সমান নয়।
  • একই অক্ষরেখায় অবস্থিত পৃথিবীর সমস্ত স্থানের অক্ষাংশ সমান।
  • একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় সময় আলাদা হয়।
  • অক্ষরেখাগুলো পূর্ব-পশ্চিমে পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাই একই অক্ষরেখার সর্বত্র একই সময়ে সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন বা সূর্যাস্ত হয় না, আগে-পরে হয়।
  • একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য এবং জলবায়ু প্রায় একইরকম হয়।
  • বিভিন্ন অক্ষরেখায় বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু দেখা যায়।

দ্রাঘিমারেখার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

  • দ্রাঘিমার সঙ্গে সময়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; প্রতি ১৫° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় ১ ঘণ্টা এবং প্রতি ১’ দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট।
  • একই দ্রাঘিমাযুক্ত প্রত্যেক স্থানের স্থানীয় সময় অভিন্ন হয়।
  • গ্রিনিচ থেকে পূর্বে অবস্থিত স্থানের স্থানীয় সময় এগিয়ে থাকে এবং পশ্চিমে অবস্থিত স্থানের স্থানীয় সময় পিছিয়ে থাকে।
  • দ্রাঘিমারেখাগুলো প্রত্যেকটি এক-একটি অর্ধবৃত্ত।
  • এরা পরস্পরের সমান্তরাল নয়, তাই এদের পরস্পরের দূরত্ব সমান নয়; নিরক্ষরেখার কাছে দূরত্ব সবচেয়ে বেশি এবং মেরুর দিকে ক্রমশ কমে যায়।
  • দ্রাঘিমারেখার মান মূলমধ্যরেখা (০°) থেকে পূর্বে বা পশ্চিমে ১৮০° পর্যন্ত বাড়ে।
  • মোট দ্রাঘিমারেখার সংখ্যা ৩৬০টি (পূর্বে ১৭৯টি, পশ্চিমে ১৭৯টি, মূলমধ্যরেখা ও ১৮০° দ্রাঘিমারেখা)।
  • ১৮০° পূর্ব এবং ১৮০° পশ্চিম একই দ্রাঘিমারেখা।
  • একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত সব স্থানের দ্রাঘিমা সমান।
  • প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা প্রতিটি অক্ষরেখাকে লম্বভাবে ছেদ করে।
  • প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা সুমেরু থেকে কুমেরু পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত।
  • একই দ্রাঘিমারেখার অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় সময় একই হয়।
  • একই দ্রাঘিমারেখার বিভিন্ন স্থানের জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়।

২। অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার মধ্যে তুলনা করো।

উত্তর: অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার মধ্যে তুলনা নিচে দেওয়া হলো:

বৈশিষ্ট্যঅক্ষরেখাদ্রাঘিমারেখা
অবস্থানপৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিমে অবস্থিত।পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত।
সমান্তরালনিরক্ষরেখা এবং নিজেদের মধ্যে সর্বদা সমান্তরালভাবে অবস্থিত থাকে।উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, এরা সমান্তরাল নয়।
আকৃতিপূর্ণবৃত্ত।অর্ধবৃত্ত।
পারস্পরিক অবস্থানএকই অক্ষরেখায় অবস্থিত স্থানগুলো পরস্পরের পূর্ব বা পশ্চিম দিকে অবস্থিত হয়ে থাকে।একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থানগুলো পরস্পরের উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত হয়।
বেষ্টনপৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে।পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণে বেষ্টন করে আছে।
স্থানীয় সময়একই সমাক্ষরেখার সর্বত্র এক সময়ে, সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন বা সূর্যাস্ত হয় না, আগে পরে হয়।একই দ্রাঘিমায় সর্বত্র একই সময়ে সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন বা সূর্যাস্ত হয়।
জলবায়ুএকই অক্ষরেখার ওপর অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের উষ্ণতা ও জলবায়ুর খুব একটা তারতম্য হয় না।একই দ্রাঘিমারেখার ওপর অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

৩। ভূপৃষ্ঠের ওপর কোনো স্থানের অবস্থান কীভাবে নির্ণয় করা যায় তা ছবি এঁকে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: ভূপৃষ্ঠের ওপর কোনো স্থানের সঠিক অবস্থান জানার জন্য পৃথিবীর ওপর কতকগুলো নির্দিষ্ট বিন্দু ও রেখা কল্পনা করা হয়েছে, যেগুলি হলো অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা। অক্ষরেখার সাহায্যে উত্তর-দক্ষিণের এবং দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে পূর্ব-পশ্চিমের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করতে হলে অক্ষরেখা এবং দ্রাঘিমারেখার মান প্রয়োজন। মানচিত্রে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য অসংখ্য অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা দিয়ে ভূজালক (Grid) তৈরি করা হয়। এই ভূজালকের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত যে-কোনো স্থানে অবস্থান নির্ণয় করা হয়। নির্দিষ্ট অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার ছেদবিন্দুই হল ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের সঠিক অবস্থান।

৪। আন্তর্জাতিক তারিখরেখার ভৌগোলিক বিবরণ দাও।

উত্তর: আন্তর্জাতিক তারিখরেখা হল এমন একটি কাল্পনিক রেখা, যেটি মোটামুটিভাবে ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং পৃথিবীতে তারিখ বিভাজনের কাজ করে। এই রেখাটি পৃথিবীর পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের তারিখ বিভাজিকার কাজ করে। পশ্চিম দিক থেকে এই রেখা পার হলে তারিখ ১ দিন বাড়িয়ে নিতে হয় এবং পূর্বদিক থেকে এই রেখাটি অতিক্রম করার সময় তারিখ ১ দিন কমিয়ে দিতে হয়।

আন্তর্জাতিক তারিখরেখাকে মোটামুটিভাবে ১৮০° দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে কল্পনা করা হলেও, কয়েকটি স্থলভাগকে এড়িয়ে চলার জন্য এই রেখাটি কিছুটা পূর্বে এবং পশ্চিমে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন:

(১) উত্তর গোলার্ধের বেরিং প্রণালীর কাছে সাইবেরিয়াকে এড়ানোর জন্য রেখাটিকে পূর্বদিকে প্রায় ১১° বাঁকানো হয়েছে।
(২) উত্তর সাগরের কিছু দ্বীপের কাছে সামান্য পূর্বে বাঁকানো হয়েছে।
(৩) অ্যালাউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে ৭০ পশ্চিমে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
(৪) দক্ষিণ গোলার্ধের ফিজি, চ্যাথাম, টোঙ্গা প্রভৃতি দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জকে এড়িয়ে চলার জন্য রেখাটিকে চ্যাথাম, ফিজি প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জের কাছে ১১° পূর্বে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
(৫) কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত দ্বীপকে একই সময় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই রেখাকে অনেকটা (প্রায় ৩২০) পূর্বে বাঁকিয়ে স্থলভাগকে এড়িয়ে সম্পূর্ণভাবে জলভাগের (মহাসাগরের) ওপর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে।

এইভাবে বাঁকানোর কারণ হলো, তা না হলে একই দেশের বা দ্বীপপুঞ্জের আন্তর্জাতিক তারিখরেখার দুদিকে দুরকম সময় ও তারিখ সূচিত হত, ফলে স্থানীয় অধিবাসীদের বার নির্ণয় করতে অসুবিধা হত। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক তারিখরেখা সর্বত্র ১৮০° দ্রাঘিমা রেখাকে অনুসরণ করেনি এবং এই রেখাটি স্থানে-স্থানে বাঁকা।

৫। প্রতিপাদ স্থান সম্পর্কে তোমার ধারণা ব্যক্ত করো।

উত্তর: ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত কোনো স্থান বা বিন্দু থেকে পৃথিবীর কোনো কল্পিত ব্যাস ভূকেন্দ্র ভেদ করে বিপরীত দিকে ভূপৃষ্ঠকে যে বিন্দুতে স্পর্শ করে, সেই বিন্দুকে প্রথম বিন্দুটির প্রতিপাদ স্থান (Antipode) বলে।

প্রতিপাদ স্থানের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

(১) কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশের মান সমান, কিন্তু একটি অপরটির বিপরীত গোলার্ধে অবস্থিত। যেমন, কলকাতার অক্ষাংশ ২২°৩৪′ উত্তর, সুতরাং এর প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ হবে ২২°৩৪′ দক্ষিণ।
(২) কোনো বিশেষ দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থানের প্রতিপাদ স্থান সেই স্থানের বিপরীত দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত হয়, ফলে তাদের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় ১৮০°। যেমন, কলকাতার দ্রাঘিমা ৮৮°৩০′ পূর্ব, সুতরাং এর প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা হবে ১৮০° – ৮৮°৩০′ পূর্ব = ৯১°৩০′ পশ্চিম।
(৩) গোলীয় পৃথিবীর কোনো ব্যাসের ভূপৃষ্ঠস্থ দুটি প্রান্ত হল একে অপরের প্রতিপাদ স্থান।
(৪) কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের সময়ের পার্থক্য হয় ১২ ঘণ্টা।
(৫) কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে দিনরাত্রি ও ঋতুচক্রের মধ্যে পরস্পর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। অর্থাৎ, কোনো স্থানে দিন হলে তার প্রতিপাদ স্থানে রাত্রি হবে এবং কোনো স্থানে গ্রীষ্মকাল হলে তার প্রতিপাদ স্থানে শীতকাল হবে।

অঙ্ক

১. যখন কলকাতার (৮৮°৩০′ পূ./২২°৩০′ উ.) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা, রবিবার, ১ জানুয়ারি ২০০৬, তখন তার প্রতিপাদ স্থানের স্থানীয় সময়, বার ও তারিখ কত হবে?

উত্তর: কলকাতার দ্রাঘিমা ৮৮°৩০′ পূর্ব, সুতরাং তার প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা হবে (১৮০০ – ৮৮°৩০′) = ৯১°৩০′ পশ্চিম। কলকাতার অক্ষাংশ ২২°৩০′ উত্তর, সুতরাং এর প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ হবে ২২°৩০′ দক্ষিণ।

যে-কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের সময়ের পার্থক্য হয় ১৮০° × ৪ মিনিট = ৭২০ মিনিট = ১২ ঘণ্টা। কলকাতা পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ায় তার প্রতিপাদ স্থানের সময় অপেক্ষা এগিয়ে থাকবে, অর্থাৎ প্রতিপাদ স্থানটির সময় কলকাতার তুলনায় ১২ ঘণ্টা পিছিয়ে থাকবে।

সুতরাং, যখন কলকাতার স্থানীয় সময় ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি রবিবার সকাল ১০টা, তখন ৯১°৩০′ পশ্চিম দ্রাঘিমায় অবস্থিত কলকাতার প্রতিপাদ স্থানের স্থানীয় সময় হবে সকাল ১০টা – ১২ ঘণ্টা = পূর্ববর্তী দিনের রাত্রি ১০টা।

অতএব, কলকাতার প্রতিপাদ স্থানের স্থানীয় সময় হবে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর শনিবার রাত্রি ১০টা।

২. সকাল ৮টায় গ্রিনিচ থেকে প্রচারিত সংবাদ কোনো একটি স্থানে দুপুর ২টো ৩০ মিনিটে শোনা গেলে স্থানটির দ্রাঘিমা কত?

উত্তর: গ্রিনিচের সময় = সকাল ৮টা।
স্থানটির স্থানীয় সময় = দুপুর ২টো ৩০ মিনিট।

স্থানটি ও গ্রিনিচের মধ্যে সময়ের পার্থক্য = দুপুর ২টো ৩০ মিনিট – সকাল ৮টা = ৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট = (৬ × ৬০ + ৩০) মিনিট = ৩৯০ মিনিট।

আমরা জানি যে, ৪ মিনিট সময়ের পার্থক্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় ১°।
∴ ১ মিনিট সময়ের পার্থক্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় ১/৪°।
∴ ৩৯০ মিনিট সময়ের পার্থক্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় (১/৪ × ৩৯০)° = ৯৭.৫° = ৯৭°৩০′।

যেহেতু স্থানটির স্থানীয় সময় গ্রিনিচের সময় চেয়ে বেশি (অগ্রবর্তী), সুতরাং স্থানটি গ্রিনিচের পূর্বদিকে অবস্থিত হবে।
অতএব, স্থানটির দ্রাঘিমা হবে ৯৭°৩০′ পূর্ব।

অতিরিক্ত (Extras)

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)

Coming soon

প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)

Coming soon

Get notes of other boards, classes, and subjects

NBSESEBA/AHSEC
NCERTTBSE
WBBSE/WBCHSEICSE/ISC
BSEM/COHSEMMBOSE
Custom Notes ServiceQuestion papers

Share with others

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Only registered users are allowed to copy.