পৃথিবীর গতিসমূহ: WBBSE ক্লাস 9 ভূগোল ও পরিবেশ

পৃথিবীর গতিসমূহ wbbse
Share with others

এখানে (chapter 2) পৃথিবীর গতিসমূহ: WBBSE ক্লাস ৯ ভূগোল ও পরিবেশ (Bhugol o Poribesh) (বাংলা মাধ্যম)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

Select medium
English medium notes
Bengali medium notes

Register Login

সারাংশ (summary)

পৃথিবীর গতিসমূহ (The Movements of the Earth): পৃথিবীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ গতি আছে – আবর্তন ও পরিক্রমণ। আবর্তন গতি হল পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণন। এই গতির ফলে দিন ও রাত হয়। পৃথিবী ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজ অক্ষে ঘুরে আসে। এই গতির জন্যই আমরা সূর্যকে উদয় ও অস্ত যেতে দেখি.

পরিক্রমণ গতি হল পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ। এই গতির ফলে ঋতু পরিবর্তন হয়। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময় নেয়। এই অতিরিক্ত ৬ ঘণ্টা জমা হওয়ার ফলে চার বছর পর এক দিন বেশি হয়, যা অধিবর্ষ বলে।

পৃথিবীর অক্ষ ২৩.৫ ডিগ্রি হেলানো থাকায় সূর্যের আলো সব সময় সমানভাবে পড়ে না। ফলে ঋতু পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে সূর্যের আলো লম্বভাবে পড়ে বলে দিন বড় হয়। শীতকালে তির্যকভাবে পড়ে বলে দিন ছোট হয়।

বছরে দুবার দিন-রাত সমান হয় – মহাবিষুব ও জলবিষুবে। কর্কটসংক্রান্তি ও মকরসংক্রান্তি দিনে দিন-রাতের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি হয়। মেরু অঞ্চলে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত থাকে। এই সব ঘটনাগুলি পৃথিবীর গতির ফলে ঘটে।

পৃথিবীর গতির কারণেই আমরা বছরে চারটি ঋতু দেখি। এছাড়া জোয়ার-ভাটা, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতি পরিবর্তন হয়। পৃথিবীর এই গতিগুলি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে।

পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Prantik textbook)

সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো

১. নিরক্ষরেখায় দীর্ঘতম দিন হল: 

(ক) ১৩ ঘণ্টা
(খ) ২৪ ঘণ্টা
(গ) ১২ ঘণ্টা
(ঘ) ১৮ ঘণ্টা 

উত্তর: (গ) ১২ ঘণ্টা

২। পৃথিবীর কিমি—৯৬পথের কোটি পরিধি কিমি হল—

(ক) ৯৫ কোটি কিমি
(খ) ৯৬ কোটি কিমি
(গ) ৯৭ কোটি কিমি
(ঘ) ৯৮ কোটি কিমি

উত্তর: (ক) ৯৫ কোটি কিমি

৩. পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে ঘুরতে সময় লাগে—

(ক) ৩৬৫ দিন
(খ) ৩৯০ দিন,
(গ) ৩৫০ দিন
(ঘ) ৩৫৫ দিন 

উত্তর: (ক) ৩৬৫ দিন

৪. ২১ মার্চ দিনটিকে বলা হয়—

(ক) জলবিষুব
(খ) মহাবিষুব
(গ) মকরসংক্রান্তি
(ঘ) কর্কটসংক্রান্তি

উত্তর: (খ) মহাবিষুব

৫. অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গ্রীষ্মকালের সূচনা হয় 

(ক) নভেম্বর,
(খ) ডিসেম্বর,
(গ) জানুয়ারি,
(ঘ) মার্চ মাসে। 

উত্তর: (খ) ডিসেম্বর

৬। পৃথিবীর মেরুরেখা বা অক্ষ তার কক্ষের সঙ্গে

(ক) ২২ ১/২°
(খ) ৬৬ ১/২°
(গ) ৯০°
(ঘ) ১০০°

উত্তর: (খ) ৬৬ ১/২°

৭. অরোরা বোরিয়ালিস দেখা যায়—

(ক) উত্তমেরুতে
(খ) দক্ষিণ মেরুতে
(গ) কুমেরুবৃে
(ঘ) সুমেরুবৃত্তে 

উত্তর: (ক) উত্তমেরুতে

৮. অপসূর অবস্থানে সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব থাকে যত কিমি— 

(ক) ১৫ কোটি,
(খ) ১৪.৭ কোটি
(ঘ) ১৫.২ কোটি
(ঘ) ১৬ কোটি

উত্তর: (ঘ) ১৫.২ কোটি

৯. সূর্যকিরণ কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়— 

(ক) ২২ জুলাই
(খ) ২৩ সেপ্টেম্বর
(গ) ২১ জুন
(ঘ) ২২ মে 

উত্তর: (গ) ২১ জুন

১০. সূর্যকিরণ মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে—

(ক) ২১ ডিসেম্বর
(খ) ২২ ডিসেম্বর
(গ) ২৩ সেপ্টেম্বর
(ঘ) ২১ মার্চ

উত্তর: (খ) ২২ ডিসেম্বর

১১. পৃথিবী আবর্তন 

(ক) পূর্ব থেকে পশ্চিে
(খ) পশ্চিম থেকে পূর্বে
(গ) উত্তর থেকে দক্ষি
(ঘ) দক্ষিণ থেকে উত্তরে

উত্তর: (খ) পশ্চিম থেকে পূর্বে

১২. নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায়— 

(ক) ১,৬৩০ কিমি
(খ) ১,৬০০ কিমি
(গ) ১,৬৫০ কিমি
(ঘ) ১,৭৫০ কিমি

উত্তর: (ক) ১,৬৩০ কিমি

১৩. পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান হয়—

(ক) ৩ জানুয়ারি
(খ) ১২ জুন
(গ) ৪ জুলাই
(ঘ) ৫ এপ্রিল 

উত্তর: (ক) ৩ জানুয়ারি

১৪. পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশি— 

(ক) নিরক্ষরেখায়
(খ) সুমেরুবৃত্তে
(গ) সুমেরু বিন্দুতে
(ঘ) দ্রাঘিমারেখায় 

উত্তর: (ক) নিরক্ষরেখায়

১৫. ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে  পড়ে – 

(ক) কর্কটক্রান্তি রেখায়
(খ) নিরক্ষরেখায়
(গ) মকরক্রান্তি রেখায়
(ঘ) কোথাও না

উত্তর: (খ) নিরক্ষরেখায়

১৬। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব যত কিমি—

(ক) ১৩ কোটি
(খ) ১৪ কোটি
(গ) ১৫ কোটি
(ঘ) ১৬ কোটি কিলোমিটার

উত্তর: (গ) ১৫ কোটি

১৭। ৩ জানুয়ারি সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব—

(ক) ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি
(খ) ১৫ কোটি কিমি
(গ) ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি
(ঘ) ১৬ কোটি কিমি

উত্তর: (ক) ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি

১৮। পৃথিবীর অনুসূর অবস্থানের দিনটি হল—

(ক) ১ জুন,
(খ) ৪ জুলাই
(গ) ৩ জানুয়ারি
(ঘ) ২২ ডিসেম্বর

উত্তর: (গ) ৩ জানুয়ারি

১৯। সৌরদিন নাক্ষত্রদিন অপেক্ষা—

(ক)৩ মি. ৫৬ সে. কম
(খ) ৩ মি. ৫৬ সে. বেশি
(গ) ৩মি. ৫২ সে..বেশি বোঁ
(ঘ) ৩মি. ৫২ সে. কম

উত্তর: (খ) ৩ মি. ৫৬ সে. বেশি

২০। ঋতুচক্রে প্রধানত ক-টি প্রধান ঋতু দেখা যায়- 

(ক) আটটি
(খ) সাতটি
(গ) চারটি
(ঘ) পাঁচট

উত্তর: (গ) চারটি

বাক্যটি ‘সত্য’ হলে ‘ঠিক’ এবং ‘অসত্য’ হলে ‘ভুল’ লেখো

১. ২২ ডিসেম্বর তারিখে উত্তর গোলার্ধে দিন বড়ো হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: ২২ ডিসেম্বর তারিখে উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোটো (১০ ঘণ্টা) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো (১৪ ঘণ্টা) হয়।

২. ২১ মার্চ পৃথিবীব্যাপী বসন্তকাল।

উত্তর: ভুল

কারণ: ২১ মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল বিরাজ করে।

৩. পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে দিন বড়ো এবং রাত ছোটো হয় ২২ ডিসেম্বর তারিখে।

উত্তর: ভুল

কারণ: ২২ ডিসেম্বর তারিখে উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোটো (১০ ঘণ্টা) এবং রাত সবচেয়ে বড়ো (১৪ ঘণ্টা) হয়।

৪. অনুসূর অবস্থানের তারিখটি হল ৩ জানুয়ারি।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ৩ জানুয়ারি তারিখে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে (প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি দূরে) এবং এই অবস্থানকে অনুসূর অবস্থান বলা হয়।

৫. জাপানকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ।

উত্তর: ভুল

কারণ: সুমেরুবৃত্তের কাছাকাছি অবস্থিত নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর ও তার আশেপাশের অঞ্চলকে মধ্যরাত্রির সূর্যের দেশ বলা হয়, জাপানকে নয়।

৬. ৪ জুলাই পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব হয় ১৪ কোটি ২০ লক্ষ কিমি।

উত্তর: ভুল

কারণ: ৪ জুলাই অপসূর অবস্থানে পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয়, প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি।

৭. ১৯৯৯ সালে একটি অধিবর্ষ ছিল।

উত্তর: ভুল

কারণ: অধিবর্ষ বা লিপইয়ার হতে হলে বছরটিকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকা উচিত নয়। ১৯৯৯ সালটি ৪ দিয়ে বিভাজ্য নয়।

৮. ‘বিষুব’ শব্দের অর্থ হল সমান দিন ও রাত্রি।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ‘বিষুব’ কথাটির অর্থ ‘সমান দিনরাত্রি’। এই দিনগুলিতে পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়।

৯. পৃথিবীর মেরুদ্বয়ে আবর্তন বেগ সর্বাধিক।

উত্তর: ভুল

কারণ: পৃথিবীর আবর্তনের বেগ নিরক্ষরেখায় সর্বাধিক (প্রায় ১৬৬৬ কিমি/ঘণ্টায়) এবং মেরুদ্বয়ের দিকে ক্রমশ কমতে কমতে মেরুবিন্দুতে প্রায় শূন্য হয়ে যায়।

১০. গোলাকার পৃথিবীর আলোকিত অর্ধাংশ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন অর্ধাংশের সীমারেখাকে পৃথিবীর অক্ষ বলে।

উত্তর: ভুল

কারণ: পৃথিবীর আলোকিত ও অন্ধকার অংশের মাঝের বৃত্তাকার সীমারেখাকে ছায়াবৃত্ত বলে। অক্ষ হল একটি কল্পিত রেখা যা পৃথিবীর দুই মেরুকে যোগ করে এবং যার চারপাশে পৃথিবী আবর্তন করে।

১১. পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষতলের সঙ্গে ২৩½° কোণে হেলে আছে।

উত্তর: ভুল

কারণ: পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬½° কোণে হেলে থাকে। এটি কক্ষপথের ওপর টানা লম্বের সঙ্গে ২৩½° কোণ করে।

১২. ২২ ডিসেম্বর তারিখটিকে কর্কটসংক্রান্তি বলে।

উত্তর: ভুল

কারণ: ২২ ডিসেম্বর তারিখটিকে মকরসংক্রান্তি বলা হয়। ২১ জুন তারিখটিকে কর্কটসংক্রান্তি বলে।

১৩. পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে দিনরাত্রির উদ্ভব হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যই এর বিভিন্ন অংশ পর্যায়ক্রমে সূর্যের আলো পায় (দিন) এবং অন্ধকারে থাকে (রাত্রি)।

১৪. আবর্তন গতির ফলে বায়ুর গতিবিক্ষেপ ঘটে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের জন্য বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের মতো গতিশীল বস্তুর দিক পরিবর্তন বা গতিবিক্ষেপ ঘটে।

১৫. ১৮৭৪ সালটি অধিবর্ষ ছিল।

উত্তর: ভুল

কারণ: অধিবর্ষ হতে হলে বছরটিকে ৪ দিয়ে বিভাজ্য হতে হয়। ১৮৭৪ সালটি ৪ দিয়ে বিভাজ্য নয়।

১৬. পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬½° কোণ করে অবস্থান করে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পৃথিবীর মেরুরেখা বা অক্ষ তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬½° কোণে হেলে অবস্থান করে।

১৭. পৃথিবী যে নির্দিষ্ট পথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে তাকে অক্ষ বলে।

উত্তর: ভুল

কারণ: পৃথিবী যে নির্দিষ্ট পথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে তাকে কক্ষপথ বলে। অক্ষ হল কল্পিত মেরুরেখা যার চারদিকে পৃথিবী ঘোরে।

১৮. একবার সূর্যকে পরিক্রমা করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড।

১৯. ২১ মার্চকে মহাবিষুব বলে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ২১ মার্চ তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয় এবং উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল থাকে, তাই একে মহাবিষুব বা বসন্তকালীন বিষুব বলা হয়।

২০. ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত্রি হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ২১ জুন তারিখে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়, ফলে উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো (প্রায় ১৪ ঘণ্টা) এবং রাত সবচেয়ে ছোটো (প্রায় ১০ ঘণ্টা) হয়।

স্তম্ভ মেলাও
বাঁদিকডানদিক
১। কোপারনিকাস(i) দিন
২। অহ্ন(ii) ২১ জুন
৩। লিপইয়ার(iii) জ্যোতির্বিজ্ঞানী
৪। কর্কটসংক্রান্তি(iv) হ্যামারফেস্ট
৫। নিশীথ সূর্য(v) ৩৬৬ দিন

উত্তর:-

বাঁদিকডানদিক
১। কোপারনিকাস(i) জ্যোতির্বিজ্ঞানী
২। অহ্ন(ii) ২১ জুন
৩। লিপইয়ার(iii) ৩৬৬ দিন
৪। কর্কটসংক্রান্তি(iv) হ্যামারফেস্ট
৫। নিশীথ সূর্য(v) দিন
দু-এক কথায় উত্তর দাও

১। অধিবর্ষ কাকে বলে?

উত্তর: নিজের পরিক্রমণ গতিতে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করার জন্য পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বা প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা। হিসাবের সুবিধার জন্য ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরা হয়, ফলে প্রতি বছরে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় বাড়তি থেকে যায়। প্রতি চার বছর অন্তর এই বাড়তি সময় মিলিয়ে (৬ ঘণ্টা × ৪ = ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন) ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে ১ দিন যোগ করা হয়। যে বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা ১ দিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করা হয় এবং বছরটি ৩৬৬ দিনের হয়, সেই বছরকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার (Leap-year) বলা হয়।

২। নিশীথ সূর্যের দেশ কাকে বলে?

উত্তর: মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে উত্তর মেরু অঞ্চলে যখন আলোকিত রাত্রিসহ একটানা দিন থাকে, তখন নরওয়ের উত্তরে অবস্থিত হ্যামারফেস্ট বন্দর ও আশপাশের অঞ্চলে ঘড়ির কাঁটার সময় হিসেবে গভীর রাত্রির সময়েও সূর্যালোক দেখা যায় বলে ওই অঞ্চলকে মধ্যরাত্রির সূর্যের দেশ বলে।

৩। সৌরদিন কাকে বলে?

উত্তর: সৌরদিন বলতে বোঝায় পৃথিবীর আবর্তনের ফলে যে সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সূর্যকে পুনরায় মাঝামাঝি অবস্থানে আসতে দেখা যায়, তাকে। এটি হল প্রায় ২৪ ঘণ্টা, যা পৃথিবীর একবার আবর্তনের সময়কে নির্দেশ করে।

৪। সূর্যের আপাত দৈনিক গতি কাকে বলে?

উত্তর: পৃথিবী নিজের অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পাক খায় বলে আমরা সূর্যকে উলটো দিকে অর্থাৎ পূর্ব আকাশে উঠতে এবং দিনের শেষে পশ্চিম আকাশে অস্ত যেতে দেখি। আকাশে সূর্যের এইরকম চলাচলকে সূর্যের দৈনিক আবর্তন গতি বলে।

৫। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন কাকে বলে?

উত্তর: ২২ ডিসেম্বর থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ৬ মাস ধরে সূর্যের উত্তরমুখী আপাতগতি হল উত্তরায়ণ এবং ২১ জুন থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস ধরে সূর্যের দক্ষিণমুখী আপাতগতি হল দক্ষিণায়ন।

৬। কোন্ দিন দুটিতে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়?

উত্তর: ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর, এই দুই দিন পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়।

৭। কোন্ দিনকে মহাবিষুব ও কোন্ দিনকে জলবিষুব বলা হয় এবং কেন?

উত্তর: ২১ মার্চ তারিখটিকে মহাবিষুব বা বসন্তকালীন বিষুব বলা হয় কারণ এই দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয় এবং উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল বিরাজ করে। ২৩ সেপ্টেম্বর দিনটিকে জলবিষুব বা শরৎকালীন বিষুব বলা হয় কারণ এই দিনও পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয় এবং উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল বিরাজ করে।

৮। পৃথিবীর কোন্ কাল্পনিক রেখার প্রত্যেক স্থানে সারাবছরই দিন ও রাত্রি সমান হয়?

উত্তর: পৃথিবীর নিরক্ষরেখার প্রত্যেক স্থানে সারাবছরই দিন ও রাত্রি সমান হয় (১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত্রি)।

৯। সৌরবৎসর কাকে বলে?

উত্তর: পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে যে সময় নেয় (প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড), সেই সময়কে সৌরবৎসর বলে।

১০। জলবিষুব ও মহাবিষুব কোন্ কোন্ তারিখকে বলা হয়?

উত্তর: ২১ মার্চকে মহাবিষুব এবং ২৩ সেপ্টেম্বরকে জলবিষুব বলা হয়।

১১। ছায়াবৃত্ত কী?

উত্তর: যে কাল্পনিক বৃত্তাকার সীমারেখা পৃথিবীর দিনের আলোকিত অংশ এবং রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশকে পৃথক করে, তাকে ছায়াবৃত্ত বলে। অর্থাৎ ছায়াবৃত্ত হল পৃথিবীর আলো অন্ধকারের সীমারেখা।

১২। ঊষা ও গোধূলি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: সূর্য ওঠার ঠিক আগে বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে পুব আকাশে যে ক্ষীণ আলো দেখা যায়, তাকে উষা বলে। সূর্যাস্তের পর বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে পশ্চিম আকাশে যে ম্লান আলো দেখা যায়, তাকে গোধূলি বলে।

১৩। কর্কটসংক্রান্তি কী?

উত্তর: ২১ জুন তারিখে সূর্য উত্তরায়ণের শেষ সীমায় কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর পৌঁছোয়, তাই ২১ জুন দিনটিকে কর্কটসংক্রান্তি বা উত্তর অয়নান্ত বলা হয়। এই দিন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো এবং রাত সবচেয়ে ছোটো হয়।

১৪। মকরসংক্রান্তি কী?

উত্তর: ২২ ডিসেম্বর তারিখে সূর্য তার দক্ষিণায়নের শেষ সীমা মকরক্রান্তি রেখার ওপর পৌঁছোয়, তাই ২২ ডিসেম্বর দিনটিকে মকরসংক্রান্তি বা দক্ষিণ অয়নান্ত বলে। এই দিন দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো এবং রাত সবচেয়ে ছোটো হয়।

১৫। লিপইয়ার বা অধিবর্ষ কী?

উত্তর: নিজের পরিক্রমণ গতিতে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করার জন্য পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বা প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা। হিসাবের সুবিধার জন্য ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরা হয়, ফলে প্রতি বছরে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় বাড়তি থেকে যায়। প্রতি চার বছর অন্তর এই বাড়তি সময় মিলিয়ে (৬ ঘণ্টা × ৪ = ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন) ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে ১ দিন যোগ করা হয়। যে বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা ১ দিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করা হয় এবং বছরটি ৩৬৬ দিনের হয়, সেই বছরকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার (Leap-year) বলা হয়।

১৬। ফেরেল সূত্রটি বিবৃত করো।

উত্তর: ফেরেলের সূত্র অনুসারে, পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে এবং নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকার জন্য বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি গতিশীল পদার্থের গতিপথ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।

১৭। নিশীথ সূর্যের দেশ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে যখন উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্তের উত্তরে অবস্থিত অঞ্চলগুলিতে একটানা দিন থাকে, তখন নরওয়ের উত্তরে অবস্থিত হ্যামারফেস্ট বন্দর ও তার আশপাশের অঞ্চলে স্থানীয় সময় অনুসারে গভীর রাত্রিতেও আকাশে সূর্য দেখা যায়। এই ঘটনাকে মধ্যরাত্রির সূর্য এবং ওই অঞ্চলকে মধ্যরাত্রির সূর্যের দেশ বলা হয়।

১৮। ঋতু পরিবর্তন বলতে কী বোঝ?

উত্তর: পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির ফলে উভয় গোলার্ধে দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপেরও তারতম্য ঘটে। উত্তাপের তারতম্যের ফলে উভয় গোলার্ধের বিভিন্ন অংশে ঋতুর পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন ঘটে, যাকে ঋতুপরিবর্তন বলা হয়।

নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো

১. ছায়াবৃত্ত সৃষ্টি হয় কেন?

উত্তর: পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে সূর্যের আলো পড়ে পৃথিবীর কোনো জায়গা দিনের আলোয় আলোকিত হয়, আবার কোথাও সূর্যের আলোর অভাবে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। টেবিলের ওপর রাখা গ্লোবের সামনে একটা ল্যাম্প রাখলে দেখা যায়, ল্যাম্পের আলো গ্লোবের একদিক আলোকিত করছে, গ্লোবের অন্যদিকে ল্যাম্পের আলো পড়ছে না, ফলে ওই দিকটায় অন্ধকার। আলো আর অন্ধকারের মাঝে একটা স্পষ্ট সীমারেখা দেখা যায়, যা ছায়াবৃত্ত নামে পরিচিত।

২. উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল হয় কেন?

উত্তর: পৃথিবীর হেলানো অক্ষের জন্য যখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে, তখন উত্তর গোলার্ধে দিন ক্রমশ ছোটো আর রাত বড়ো হতে থাকে। এই সময় উত্তর গোলার্ধে সূর্যরশ্মি বাঁকাভাবে পড়ে (তাই এই গোলার্ধ কম উত্তপ্ত হয়) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে লম্বভাবে পড়ে (তাই এই গোলার্ধটি বেশি উত্তপ্ত হয়)। এই সময় উত্তর গোলার্ধ শীতকাল আর দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে।

৩. উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্বের তুলনায় বেশি হয় কেন?

উত্তর: পৃথিবীর অপসূর ও অনুসূর অবস্থানই হল পৃথিবীর দুই গোলার্ধে শীত ও গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্বের তারতম্যের প্রধান কারণ। ৪ জুলাই পৃথিবী অপসূর অবস্থানে থাকায় সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব এই সময়ে বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি) হয়। অপসূর অবস্থানে পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ তুলনামূলকভাবে কম থাকে বলে স্বাভাবিক ভাবেই এই সময়ে উত্তর গোলার্ধে সূর্যকিরণ দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়ে যার সামগ্রিক ফলশ্রুতিতে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, যখন দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল থাকে।

৪. উত্তর গোলার্ধে কীভাবে গ্রীষ্মঋতু সংঘটিত হয়?

উত্তর: ২১ মার্চের পর থেকে পৃথিবী ধীরে ধীরে তার কক্ষপথের এমন একটা জায়গায় আসতে থাকে, যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকায় সূর্যরশ্মি উত্তর গোলার্ধে ক্রমশ লম্বভাবে পড়তে থাকে। এর ফলে উত্তর গোলার্ধে দিন ক্রমশ বড়ো (১২ ঘণ্টার বেশি) আর রাত ক্রমশ ছোটো (১২ ঘণ্টার কম) হতে থাকে। ২১শে মার্চ থেকে ২১শে জুন পর্যন্ত সময়ে উত্তর গোলার্ধে দিনের আলো অনেকক্ষণ পাওয়া যায়। সারাদিন ধরে সূর্যের তাপে পৃথিবী উত্তপ্ত হয় অথচ রাত ছোটো হওয়ায় ঠান্ডা হওয়ার তেমন সময় পায় না। এই সময় সূর্যের তাপও হয় প্রবল। দিনের পর দিন এরকম হলে উত্তর গোলার্ধে গরম বাড়তে থাকে এবং গ্রীষ্মকাল দেখা যায়।

৫. সূর্যের আপাত দৈনিক গতি ও ‘রবিমার্গ’ কাকে বলে?

উত্তর: আকাশে সূর্যের চলাচলকে সূর্যের দৈনিক আবর্তন গতি বলে। বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর নিরক্ষরেখা (০º অক্ষরেখা), কর্কটক্রান্তিরেখা (২৩½º উত্তর অক্ষরেখা) এবং মকরক্রান্তিরেখায় (২৩½º দক্ষিণ অক্ষরেখা) সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে। ফলে আপাতভাবে মনে হয় যে, সূর্য নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখা পর্যন্ত চলাচল করে। এটাই সূর্যের বার্ষিক আপাতগতি বা রবিমার্গ (রবি = সূর্য, মার্গ = পথ)।

৬. পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না কেন?

উত্তর: ভূপৃষ্ঠে বসবাস করা সত্ত্বেও আমরা আবর্তন গতি বুঝতে পারি না। এর কারণ হল, আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠের যেখানে আছি তার পারিপার্শ্বিক গাছপালা, জীবজন্তু, যাবতীয় জিনিসপত্র প্রভৃতি পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে এবং একই সঙ্গে আবর্তন করছে, অর্থাৎ প্রতিটি সচল বস্তুর আপেক্ষিক অবস্থান একই থাকছে বলে, আমাদের চোখে তার স্থানগত পরিবর্তন ঘটে না, ফলে আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি না। অন্যদিকে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত সমস্ত বস্তুকে পৃথিবী অভিকর্ষ শক্তির বলে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, এজন্য আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।

৭. আহ্নিক গতির ফলাফল কী কী?

উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন গতির বা আহ্নিক গতির ফলাফল গুলি হল:

  • পৃথিবীতে দিন ও রাত্রি হয়;
  • পৃথিবীর জলভাগে—অর্থাৎ নদী, সমুদ্র বা হ্রদে জোয়ারভাটা সৃষ্টি হয়;
  • বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের নানান রকমের গতিবিক্ষেপ ঘটে;
  • সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়;
  • উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতে এর গুরুত্ব রয়েছে;
  • সময় গণনার ক্ষেত্রে পৃথিবীর আবর্তন গতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

৮. পৃথিবীর আবর্তন গতি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: পৃথিবী তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬½º কোণ করে হেলানোভাবে নিজের অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অবিরামভাবে পাক খায়। যে কল্পিত রেখার চারিদিকে পৃথিবী আবর্তন করে, সেটাই পৃথিবীর ‘অক্ষ’। এটাই পৃথিবীর আবর্তন গতি।

৯. পৃথিবীর বার্ষিক গতি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর আবর্তন করতে করতে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে) নির্দিষ্ট সময়ে (প্রায় ৩৬৫ দিনে) সূর্যের চারদিকে ঘোরে বা পরিক্রমণ করে। এটাই পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি। পৃথিবীর বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতির বেগ সেকেন্ডে প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

১০. পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল কী কী?

উত্তর: পৃথিবীর পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতির ফলাফল হল:

  • সারাবছর ধরে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।
  • ঋতুপরিবর্তন হয়।

১১. পৃথিবীর আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: পৃথিবী তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬½º কোণ করে হেলানোভাবে নিজের অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অবিরামভাবে পাক খায়। ‘অহ্ন’ থেকে ‘আহ্নিক’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে যার অর্থ ‘দিন’। নিজের মেরুরেখার চারদিকে একবার সম্পূর্ণ ঘুরতে বা আবর্তন করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ১ দিন। তাই আবর্তন গতিকে (Rotation) আহ্নিক গতিও (Diurnal Motion) বলা হয়।

১২. পৃথিবীর বার্ষিক বা পরিক্রমণ গতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর পাক খেতে খেতে নির্দিষ্ট পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পাক খায়। পৃথিবীসহ সমস্ত গ্রহের নিজেদের এক-একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করার যে গতি আছে, তার নাম পরিক্রমণ গতি। পৃথিবী এই পরিক্রমণ করে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রায় ৩৬৫ দিনে, সেকেন্ডে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেগে।

১৩. ছায়াবৃত্ত কী?

উত্তর: যে কাল্পনিক বৃত্তাকার সীমারেখা পৃথিবীর দিনের আলোকিত অংশ এবং রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশকে পৃথক করে, তাকে ছায়াবৃত্ত বলে। অর্থাৎ ছায়াবৃত্ত হল পৃথিবীর আলো অন্ধকারের সীমারেখা।

১৪. উষা ও গোধূলি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: উষা: সূর্য ওঠার ঠিক আগে বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে পুব আকাশে যে ক্ষীণ আলো দেখা যায়, তাকে উষা বলে।

গোধূলি: সূর্যাস্তের পর বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে পশ্চিম আকাশে যে ম্লান আলো দেখা যায়, তাকে গোধূলি (Twilight) বলে।

১৫. কর্কটসংক্রান্তি কী?

উত্তর: ২১ জুন তারিখে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে। ওইদিন সূর্যকিরণ কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। ফলে, ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো (১৪ ঘণ্টা) এবং রাত সবচেয়ে ছোটো (১০ ঘণ্টা) হয়। ২১ জুন সূর্য উত্তরায়ণের শেষ সীমা কর্কটক্রান্তি রেখার উপর পৌঁছোয় বলে ২১ জুন দিনটিকে কর্কটসংক্রান্তি বা উত্তর অয়নান্ত বলা হয়।

১৬. মকরসংক্রান্তি কী?

উত্তর: ২২ ডিসেম্বর তারিখে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে। ওই দিন সূর্যকিরণ দক্ষিণ গোলার্ধে মকরসংক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ার ফলে ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো (১৪ ঘণ্টা) এবং রাত সবচেয়ে ছোটো (১০ ঘণ্টা) হয়। ২২ ডিসেম্বর সূর্য তার দক্ষিণায়নের শেষ সীমা মকরক্রান্তি রেখার ওপর পৌঁছোয়, তাই ২২ ডিসেম্বর দিনটিকে মকরসংক্রান্তি বা দক্ষিণ অয়নান্ত বলে।

১৭. লিপইয়ার বা অধিবর্ষ কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

উত্তর: সাধারণভাবে বছরের অঙ্ককে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোনো ভাগশেষ না থাকে, তবে ওইসব বছরকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার বলা হয়। শতাব্দী বছরের ক্ষেত্রে, যে বছরগুলো ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য, অর্থাৎ যেসব শতাব্দী বছরকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না, শুধুমাত্র সেই সব শতাব্দী বছরগুলোকেই লিপইয়ার বা অধিবর্ষ হিসেবে ধরা হয়।

১৮. ফেরেল সূত্রটি বিবৃত কর।

উত্তর: ফেরেলের সূত্র অনুসারে পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতির জন্য নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। পৃথিবীর আবর্তন বেগের এইরকম তারতম্যের জন্য বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি গতিশীল পদার্থের গতিপথ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।

১৯. নিশীথ সূর্যের দেশ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে সুমেরুবৃত্তে যখন একটানা দিন থাকে তখন উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্তের উত্তরে অবস্থিত ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের কোনো কোনো স্থান এবং উত্তর কানাডার বেশ কিছু অঞ্চলে স্থানীয় সময় অনুসারে গভীর রাত্রিতেও আকাশে সূর্য দেখা যায়, একে মধ্যরাত্রির সূর্য বলে। নরওয়ের উত্তরে অবস্থিত হ্যামারফেস্ট বন্দর ও আশপাশের অঞ্চলে (মে থেকে জুলাই) গভীর রাত্রির সময়েও সূর্যালোক দেখা যায় বলে ওই অঞ্চলকে মধ্যরাত্রির সূর্যের দেশ বলে।

২০. ঋতু পরিবর্তন বলতে কী বোঝ?

উত্তর: পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির ফলে উভয় গোলার্ধে দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপেরও তারতম্য ঘটে। উত্তাপের তারতম্যের ফলে উভয় গোলার্ধের বিভিন্ন অংশে ঋতুর (যেমন গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত, বসন্ত) পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন ঘটে, যাকে ঋতুপরিবর্তন বলা হয়। এর প্রধান কারণ হল উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমা এবং পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে তার মেরুরেখার ৬৬½º কৌণিক অবস্থান।

সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

১. পৃথিবীর গতি ক-প্রকার ও কী কী?

উত্তর: পৃথিবীর নির্দিষ্ট দু-রকমের গতি আছে, যথা:

(i) আবর্তন গতি: নিজেদের মেরুদণ্ডের বা অক্ষের চারদিকে ঘোরার গতি।
(ii) পরিক্রমণ গতি: নিজেদের এক-একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করার গতি।

২. মেরু অঞ্চলে ছ-মাস দিন ও ছ-মাস রাত্রি হয় কেন?

উত্তর: পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬ ১/২° কোণে হেলে থাকার কারণে এবং সূর্যকে পরিক্রমণ করার ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে এক একটি মেরু অঞ্চল সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে বা সূর্য থেকে দূরে সরে যায়। যখন কোনও মেরু অঞ্চল সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে, তখন সেখানে একটানা ৬ মাস সূর্যকে দেখা যায়, ফলে ৬ মাস দিন থাকে। ঠিক সেই সময়ে অপর মেরু অঞ্চল সূর্য থেকে দূরে সরে থাকায় সেখানে একটানা ৬ মাস রাত্রি বিরাজ করে। যেমন, সূর্যের উত্তরায়ণের সময় (প্রায় ২১ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর) সুমেরুতে একটানা ৬ মাস দিন এবং কুমেরুতে ৬ মাস রাত থাকে, আবার সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় (প্রায় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ মার্চ) কুমেরুতে ৬ মাস দিন ও সুমেরুতে ৬ মাস রাত থাকে।

৩. ১৯৯০ সাল কেন অধিবর্ষ ছিল না তার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সাধারণভাবে বছরের অঙ্ককে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোনো ভাগশেষ না থাকে, তবে সেই বছরকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার বলা হয়। কিন্তু ১৯৯০ সালকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ থাকে (১৯৯০ ÷ ৪ = ৪৯৭.৫), অর্থাৎ এটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য নয়। তাই ১৯৯০ সাল অধিবর্ষ ছিল না। শতাব্দী বছরের ক্ষেত্রে নিয়মটি আলাদা, সেক্ষেত্রে ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য হতে হয়।

৪. পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সর্বত্র সমান হয় না কেন?

উত্তর: পৃথিবী একটি অভিগত গোলক হওয়ায় এর মাঝখানটা অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল ফোলা এবং দুই মেরুর দিক চাপা। ফলে নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশি (প্রায় ৪০,০০০ কিমি) এবং মেরুর দিকে পরিধি ক্রমশ কমে মেরুবিন্দুতে প্রায় শূন্য হয়ে যায়। পৃথিবীকে ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজের অক্ষের চারিদিকে আবর্তন করতে হয়, তাই নিরক্ষরেখায় সর্বাধিক পরিধি অতিক্রম করার জন্য আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশি (ঘণ্টায় প্রায় ১,৬৬৬ কিমি) থাকে। নিরক্ষরেখা থেকে যতই মেরুর দিকে যাওয়া যায়, পৃথিবীর পরিধি কমতে থাকায় আবর্তনের বেগও ততই কমতে থাকে এবং মেরুবিন্দুতে এই বেগ প্রায় শূন্য হয়ে যায়। এজন্য পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সর্বত্র সমান হয় না।

৫. নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল থাকে কেন লেখো।

উত্তর: নিরক্ষরেখা পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে অবস্থিত এবং এখানে সূর্যরশ্মি প্রায় সারাবছরই লম্বভাবে পড়ে। এর ফলে এই অঞ্চলে সবসময়ই বেশি উত্তাপ অনুভূত হয়। এছাড়া, নিরক্ষরেখায় সারাবছর দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান (১২ ঘণ্টা করে) হওয়ায় ঋতুপরিবর্তনও হয় না। সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়া এবং ঋতুপরিবর্তন না হওয়ার কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সব সময়ই উত্তাপ বেশি থাকে এবং বছরের সব সময়ই উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে।

৬. গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে দিন ছোটো হয় কেন?

উত্তর: পৃথিবীর মেরুরেখা কক্ষপথের সাথে ৬৬ ১/২° কোণে হেলে থাকার কারণে, পরিক্রমণের সময় বিভিন্ন গোলার্ধ বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের দিকে হেলে থাকে বা দূরে সরে যায়। যখন কোনো গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তখন সেখানে গ্রীষ্মকাল হয় এবং দিনগুলো বড়ো ও রাত ছোটো হয়। এর বিপরীতে, যখন কোনো গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে সরে যায়, তখন সেখানে শীতকাল হয় এবং সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ায় ও কম সময় ধরে আলো থাকায় দিন ক্রমশ ছোটো আর রাত বড়ো হতে থাকে।

৭. দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকালের স্থায়িত্ব বেশি এবং উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব কম হয় কেন?

উত্তর: পৃথিবীর অপসূর (৪ জুলাই, যখন পৃথিবী সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে) এবং অনুসূর (৩ জানুয়ারি, যখন পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে) অবস্থানই হল দুই গোলার্ধে শীত ও গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্বের তারতম্যের প্রধান কারণ। ৪ জুলাই পৃথিবী অপসূর অবস্থানে থাকায় সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয় (প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি)। এই সময় পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। অপসূর অবস্থানকালে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল থাকে। পরিক্রমণ বেগ কম থাকার ফলে এই সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়। এর বিপরীতে, অনুসূর অবস্থানে পৃথিবীর পরিক্রমণ বেগ বেশি থাকায় উত্তর গোলার্ধে শীতকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল কম স্থায়ী হয়।

৮. শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে দিন বড়ো হয় কেন?

উত্তর: পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষতলের সাথে ৬৬ ১/২° কোণে হেলে থাকার কারণে, সূর্যকে পরিক্রমণের সময় যখন কোনো গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে, তখন সেই গোলার্ধে সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত লম্বভাবে পড়ে এবং দিনের আলো বেশিক্ষণ ধরে পাওয়া যায়। এর ফলে সেই গোলার্ধে দিন ক্রমশ বড়ো (১২ ঘণ্টার বেশি) এবং রাত ছোটো (১২ ঘণ্টার কম) হতে থাকে, যা গ্রীষ্মকালের বৈশিষ্ট্য। বিপরীত গোলার্ধে তখন শীতকাল এবং দিন ছোটো ও রাত বড়ো হয়।

৯. অপসূর ও অনুসূর কাকে বলে?

উত্তর: অনুসূর অবস্থান: পৃথিবী তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় ৩রা জানুয়ারি তারিখে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম হয় (প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিলোমিটার)। পৃথিবীর এই অবস্থানকে অনুসূর অবস্থান বলে।

অপসূর অবস্থান: পৃথিবী তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় ৪ঠা জুলাই তারিখে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয় (প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিলোমিটার)। পৃথিবীর এই অবস্থানকে অপসূর অবস্থান বলে।

১০. কুমেরুপ্রভা ও সুমেরুপ্রভা কী?

উত্তর: পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চলে যখন একটানা ৬ মাস রাত্রি থাকে, তখন সেখানকার রাতের আকাশে মাঝে মাঝে রামধনুর মতো এক অপূর্ব সুন্দর আলোর জ্যোতি বা বিচ্ছুরিত আলো দেখা যায়। এই আলোকেই মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বা অরোরা বলে। সুমেরু বা উত্তর মেরু অঞ্চলে একে সুমেরুপ্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিস এবং কুমেরু বা দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে একে কুমেরুপ্রভা বা অরোরা অস্ট্রালিস বলা হয়। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন আয়নিত গ্যাসের সঙ্গে সূর্যরশ্মির সংঘর্ষের ফলে এই আলোর সৃষ্টি হয়।

১১. নিশীথ সূর্যের দেশ পৃথিবীর কোন্ অঞ্চলকে বলে ও কেন বলে?

উত্তর: মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে যখন উত্তর গোলার্ধের সুমেরুবৃত্তীয় অঞ্চলে একটানা দিন থাকে, তখন সুমেরুবৃত্তের উত্তরে অবস্থিত ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার কিছু অঞ্চলে (যেমন কানাডা, ডেনমার্ক, আলাস্কা, নরওয়ে, সুইডেন, আইসল্যান্ড) স্থানীয় সময় অনুসারে গভীর রাত্রিতেও আকাশে সূর্য দেখা যায়। একে মধ্যরাত্রির সূর্য বা নিশীথ সূর্য বলে। নরওয়ের উত্তরে অবস্থিত হ্যামারফেস্ট বন্দর ও তার আশেপাশের অঞ্চলে গভীর রাতেও সূর্য দেখা যায় বলে ওই অঞ্চলকে ‘নিশীথ সূর্যের দেশ’ বলা হয়।

১২. মেরু অঞ্চলে সর্বদা শীতকাল কেন, কারণ দেখাও?

উত্তর: মেরু অঞ্চলে সারাবছর ধরেই সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে বা বাঁকাভাবে পড়ে, ফলে ভূপৃষ্ঠ খুব কমই উত্তপ্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এছাড়া, এই দুই অঞ্চলে বছরে একটানা ৬ মাস রাত থাকায় পর্যাপ্ত সূর্য তাপের অভাব ঘটে এবং রাতের বেলায় সঞ্চিত তাপ বিকিরিত হয়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত শীতল হয়ে যায়। এই দুটি প্রধান কারণে, অর্থাৎ সূর্যরশ্মির তির্যক পতন এবং দীর্ঘ রাত্রি থাকার ফলে, মেরু অঞ্চলে ঋতুপরিবর্তন হয় না এবং প্রায় সারাবছরই শীতকাল বিরাজ করে ও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নীচে থাকে।

১৩. পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের কারণ কী?

উত্তর: পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের প্রধান কারণ দুটি হল:

(i) পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ এবং এর ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের পরিবর্তন।
(ii) পৃথিবীর অক্ষের ৬৬ ১/২° কোণে হেলে থাকা অবস্থা, যার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের দিকে হেলে থাকে বা দূরে সরে যায় এবং সূর্যরশ্মি কোথাও লম্বভাবে আবার কোথাও তির্যকভাবে পড়ে, যার জন্য উত্তাপের তারতম্য ঘটে ও দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি হয়।

১৪. কোন্ কোন্ দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয় এবং কেন হয়?

উত্তর: ২১শে মার্চ এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর—এই দুটি দিনে পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান (১২ ঘণ্টা করে) হয়। এই দিন দুটিকে বিষুব বলা হয় (২১ মার্চ মহাবিষুব এবং ২৩ সেপ্টেম্বর জলবিষুব)। এর কারণ হল, এই দুটি দিনে পৃথিবী তার কক্ষপথে এমন অবস্থানে থাকে যে, পৃথিবীর মেরুরেখা সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে হেলে না থেকে পাশে হেলে থাকে। ফলে সূর্যরশ্মি ঠিক নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পড়ে এবং ছায়াবৃত্ত মেরু অঞ্চলসহ সমস্ত সমাক্ষরেখাকে ঠিক সমান দু-ভাগে ভাগ করে। তাই এই দুটি দিনে পৃথিবীর সমস্ত স্থানেই দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়।

১৫. সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পাক খাচ্ছে বা আবর্তন করছে। পৃথিবীর এই আবর্তনের জন্য আমরা দেখি প্রতিদিন সূর্য পূর্ব আকাশে ওঠে এবং দিনের শেষে পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়। আকাশে সূর্যের এইরকম চলাচল, যা পৃথিবীর আবর্তনের উলটো দিকে ঘটছে বলে মনে হয়, তাকেই সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বা দৈনিক আপাত আবর্তন গতি বলে।

১৬. ডিসেম্বর মাসে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে যান কেন?

উত্তর: ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল থাকে কারণ এই সময় পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে। গ্রীষ্মকালে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে দিনের আলো বেশিক্ষণ পাওয়া যায় (দিন বড়ো হয়) এবং তাপমাত্রা যদিও হিমাঙ্কের অনেক নীচে থাকে (-৪০°C), তবুও তা শীতকালের (-৬০°C বা তারও কম) তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে। শীতকালে অ্যান্টার্কটিকায় ক্রমাগত তুষারপাত ও ভয়াবহ তুষারঝড় হয় এবং একটানা অন্ধকার থাকায় সেখানে পদার্পণ করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অভিযান চালানোর জন্য বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার ভয়াবহ শীতকালের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম প্রতিকূল গ্রীষ্মকালকেই বেছে নেন।

১৭. অ্যান্টার্কটিকা বা অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা গ্রীষ্মকালে বড়োদিন পালন করে কেন?

উত্তর: বড়োদিন বা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বর পালিত হয়। এই সময় পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে বলে সেখানে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ায় সেখানকার অধিবাসীরা ডিসেম্বর মাসে অর্থাৎ গ্রীষ্মকালেই বড়োদিন পালন করে।

১৮. সৌরদিন ও নাক্ষত্রদিন সম্পর্কে লেখো।

উত্তর: নাক্ষত্রদিন: কোনো নির্দিষ্ট নক্ষত্রকে পরপর দুবার পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখার ঠিক উপরে আসতে যে সময় লাগে, তাকে নাক্ষত্রদিন বলে। এর সময়কাল হল ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড। অর্থাৎ, দূরের নক্ষত্রকে সামনে রেখে পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারিদিকে একবার সম্পূর্ণ পাক খেতে এই সময় লাগে।

সৌরদিন: পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখায় পরপর দুবার সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান বা মধ্যাহ্ন হওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধানকে সৌরদিন বলে। এর গড় সময়কাল হল ২৪ ঘণ্টা। সৌরদিন নাক্ষত্রদিনের চেয়ে প্রায় ৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড বড়ো।

১৯. মহাবিষুব ও জলবিষুব বলতে কী বোঝ?

উত্তর: মহাবিষুব: ‘বিষুব’ কথার অর্থ ‘সমান দিনরাত্রি’। ২১শে মার্চ তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান (১২ ঘণ্টা করে) হয়। এই দিন সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পড়ে এবং উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল থাকে। তাই ২১শে মার্চ তারিখটিকে বসন্তকালীন বিষুব বা মহাবিষুব বলা হয়।

জলবিষুব: ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখেও পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয় এবং সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পড়ে। এই দিন উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল বিরাজ করে। তাই ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখটিকে শরৎকালীন বিষুব বা জলবিষুব বলা হয়।

২০. ঋতুপরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তর: পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

  • পর্যায়ক্রমিক আবর্তন: গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত ও বসন্ত—এই চারটি প্রধান ঋতু বছরের বিভিন্ন সময়ে চক্রাকারে বা পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।
  • উত্তাপের তারতম্য: ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির পতনকোণের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে উত্তাপের পরিমাণ পরিবর্তিত হয় (গ্রীষ্মকালে বেশি, শীতকালে কম)।
  • দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: ঋতু পরিবর্তনের ফলে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে (যেমন, গ্রীষ্মকালে দিন বড়ো ও রাত ছোটো, শীতকালে দিন ছোটো ও রাত বড়ো), তবে বিষুবের দিনগুলিতে এবং নিরক্ষরেখায় দিনরাত্রি প্রায় সমান থাকে।
  • বিপরীত গোলার্ধে বিপরীত ঋতু: পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে একই সময়ে বিপরীত ঋতু বিরাজ করে (যেমন, যখন উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, তখন দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল)।
  • নির্দিষ্ট সময়ে সংঘটন: প্রতিটি ঋতুর আগমন ও স্থায়িত্ব বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে থাকে যা পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির উপর নির্ভরশীল।
রচনাধর্মী প্রশ্ন

১. পৃথিবীর আবর্তন গতির সপক্ষে তিনটি যুক্তি দাও।
উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন গতির সপক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলি দেওয়া যেতে পারে:

  • দিন ও রাত্রি সংঘটন: পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত্রি সংঘটিত হয় কারণ পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে পৃথিবীর যে-দিক সূর্যের সামনে আসে, সেই দিকটা আলোকিত হয়ে দিন হয় এবং তার উলটোদিকে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছোয় না, সেখানে রাত্রি হয়। এই নিয়মিত পর্যায়ক্রম পৃথিবীর আবর্তনের একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
  • কোরিওলিস বলের প্রভাব: পৃথিবীর আবর্তনজনিত কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপর গতিশীল বস্তু যেমন বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের দিকের বিক্ষেপ ঘটে। এই বিক্ষেপকারী বলকে কোরিওলিস বল বলা হয়। ফেরেলের সূত্র অনুসারে, এই বলের প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়, যা পৃথিবীর আবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
  • জ্যোতিষ্কদের আপাত দৈনিক চলাচল: প্রতিদিন সূর্যকে পূর্ব আকাশে উঠতে দেখা এবং পশ্চিম আকাশে অস্ত যেতে দেখা, এবং একইভাবে চাঁদ ও অন্যান্য নক্ষত্রদের আকাশে চলাচল করা আসলে পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তনের ফল। পৃথিবী ঘুরছে বলেই আমাদের মনে হয় যেন এই জ্যোতিষ্কগুলি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।

২. আবর্তন গতির ফলাফল চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রধান ফলাফলগুলি নিচে চিত্রসহ আলোচনা করা হলো:

  • দিন ও রাত্রি সংঘটন: পৃথিবীর আবর্তন গতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল হলো দিন ও রাত্রি হওয়া। পৃথিবী গোলকাকার হওয়ায় এবং নিজের আলো না থাকায়, আবর্তনের সময় এর যে অংশ সূর্যের সামনে আসে, সেখানে সূর্যের আলো পড়ে দিন হয়। বিপরীত অংশটি অন্ধকারে থাকায় সেখানে রাত্রি হয়। একটি গ্লোব ও ল্যাম্পের সাহায্যে দেখা যায়, ল্যাম্পের আলো গ্লোবের অর্ধেকাংশকে আলোকিত (দিন) করে এবং বাকি অর্ধেকাংশ অন্ধকার (রাত্রি) থাকে। পৃথিবী ক্রমাগত ঘোরার ফলে আলোকিত ও অন্ধকার অংশগুলির স্থান পরিবর্তন হয় ও দিনরাত্রি চক্রাকারে চলতে থাকে। আলো ও অন্ধকারের মধ্যবর্তী বৃত্তাকার সীমারেখাকে ছায়াবৃত্ত বলে।
  • সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং উষা ও গোধূলি: পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে বলেই আমরা সূর্যকে পূর্ব আকাশে উদিত হতে এবং পশ্চিম আকাশে অস্ত যেতে দেখি। সূর্য ওঠার ঠিক আগে বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণায় সূর্যের আলোর প্রতিফলনে পূব আকাশে যে ক্ষীণ আলো দেখা যায়, তাকে উষা বলে। আবার সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে একই কারণে যে ম্লান আলো দেখা যায়, তাকে গোধূলি বলে। প্রভাত ও সন্ধ্যার মাঝামাঝি যখন কোনো স্থানে সূর্যের আলো ঠিক মাথার উপর থাকে, তখন মধ্যাহ্ন হয় ।
  • কোরিওলিস বলের সৃষ্টি ও তার প্রভাব: পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে চলাচলকারী বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের দিকের বিক্ষেপ ঘটে। ফেরেলের সূত্রানুসারে এই বিক্ষেপ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে হয় ।
  • জোয়ারভাটা সৃষ্টি: পৃথিবীর জলভাগে, অর্থাৎ নদী, সমুদ্র বা হ্রদে জোয়ারভাটা সৃষ্টিতেও আবর্তন গতির প্রভাব রয়েছে (যদিও বিস্তারিত আলোচনা নেই)।
  • সময় গণনা: সময় গণনার ক্ষেত্রেও পৃথিবীর আবর্তন গতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

৩. পৃথিবীর বার্ষিক বা পরিক্রমণ গতির সপক্ষে ৫টি প্রমাণ দাও।

উত্তর: পৃথিবীর বার্ষিক বা পরিক্রমণ গতির সপক্ষে নিম্নলিখিত প্রমাণগুলি উল্লেখ করা যায়:

  • ঋতু পরিবর্তন: পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি এবং অক্ষের কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬.৫° কোণে হেলে থাকার কারণে পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব হয়। পরিক্রমণের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের দিকে হেলে থাকে, ফলে সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ঘটে এবং উত্তাপের হ্রাসবৃদ্ধি হয়, যা ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ।
  • দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: পৃথিবীর পরিক্রমণ এবং অক্ষীয় হেলনের কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে। যখন যে গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে, তখন সেই গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত ছোটো হয় এবং বিপরীত গোলার্ধে এর উল্টোটা ঘটে। এই দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন পরিক্রমণ গতির একটি ফল।
  • সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি (রবিমার্গ): পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দেখলে মনে হয় সূর্য বছরে একবার করে কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে চলাচল করে। সূর্যের এই আপাত বার্ষিক গতি বা রবিমার্গ (উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন) আসলে পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি ও অক্ষীয় হেলনের ফল।
  • অধিবর্ষের সৃষ্টি: পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা (৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড)। কিন্তু আমরা হিসাবের সুবিধার জন্য ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরি। এই অতিরিক্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতি ৪ বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসে ১ দিন যোগ করে বছরটিকে ৩৬৬ দিনের করা হয়, যাকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার বলে। এটি পরিক্রমণ কালের দৈর্ঘ্যের প্রমাণ।
  • অনুসূর ও অপসূর অবস্থান: পৃথিবী সূর্যকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করার সময় সূর্য থেকে এর দূরত্ব সবসময় সমান থাকে না। ৩রা জানুয়ারি পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে (অনুসূর অবস্থান, প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি) এবং ৪ঠা জুলাই সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে চলে যায় (অপসূর অবস্থান, প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি)। দূরত্বের এই পরিবর্তন পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির একটি প্রমাণ।

৪. পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ভৌগোলিক বিবরণ দাও।

উত্তর: পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের প্রধান কারণ দুটি – পৃথিবীর বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ এবং পৃথিবীর অক্ষের তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬.৫° কোণে হেলে থাকা।

পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু পৃথিবীর অক্ষটি কক্ষপথের সাথে লম্বভাবে না থেকে ৬৬.৫° কোণে হেলে থাকে। এই হেলানো অবস্থানের কারণে পরিক্রমণের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে বা সূর্য থেকে দূরে সরে যায়।

যখন যে গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তখন সেই গোলার্ধে সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত লম্বভাবে পড়ে। লম্বরশ্মি কম বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং কম জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, ফলে ভূপৃষ্ঠকে বেশি উত্তপ্ত করে। এই সময় ওই গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত ছোটো হয়। দিনের বেলায় বেশি সময় ধরে উত্তাপ পাওয়ায় এবং রাতে কম সময়ে তাপ বিকিরণের সুযোগ পাওয়ায় সেখানে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ও গ্রীষ্মকাল অনুভূত হয়। একই সময়ে বিপরীত গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে থাকায় সেখানে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। তির্যকরশ্মি বেশি বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, ফলে ভূপৃষ্ঠকে কম উত্তপ্ত করে। এই সময় ওই গোলার্ধে দিন ছোটো ও রাত বড়ো হয়, ফলে উষ্ণতা কম থাকে ও শীতকাল অনুভূত হয়।

আবার পরিক্রমণকালে এমন দুটি অবস্থান আসে (২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর) যখন পৃথিবীর উভয় গোলার্ধই সূর্য থেকে সমান দূরত্বে থাকে এবং সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। এই সময় পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই সময়গুলিতে উত্তর গোলার্ধে যথাক্রমে বসন্তকাল ও শরৎকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে যথাক্রমে শরৎকাল ও বসন্তকাল বিরাজ করে।

এইভাবে পৃথিবীর পরিক্রমণ এবং অক্ষীয় হেলনের যৌথ প্রভাবে পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত ও বসন্ত—এই চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়, যাকে ঋতুচক্র বলে।

৫. বছরের বিভিন্ন সময়ে বার্ষিক রবি সরণের বা রবিমার্গের বিভিন্ন অবস্থানের সচিত্র বর্ণনা দাও।

উত্তর: পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি ও হেলানো অক্ষের কারণে আপাতভাবে মনে হয় সূর্য যেন বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখা পর্যন্ত চলাচল করে। সূর্যের এই আপাত বার্ষিক চলাচলকে রবিমার্গ বা সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি বলে। এর বিভিন্ন অবস্থান নিচে চিত্রসহ বর্ণনা করা হলো:

  • মহাবিষুব (২১ মার্চ): এই দিন সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার (০° অক্ষরেখা) ওপর লম্বভাবে পড়ে। পৃথিবীর উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরত্বে থাকে এবং ছায়াবৃত্ত সমস্ত সমাক্ষরেখাকে সমানভাবে ভাগ করে। ফলে এই দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান (১২ ঘণ্টা করে) হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল থাকে।
  • উত্তরায়ণ ও কর্কটসংক্রান্তি (২১ জুন): ২১ মার্চের পর থেকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ উত্তর গোলার্ধের দিকে লম্বভাবে পড়তে থাকে। সূর্যের এই উত্তরমুখী আপাত গতিকে উত্তরায়ণ বলে। ২১ জুন সূর্যরশ্মি কর্কটক্রান্তি রেখার (২৩.৫° উত্তর অক্ষরেখা) ওপর লম্বভাবে পড়ে। এটি সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ সীমা। এই দিন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো (প্রায় ১৪ ঘণ্টা) এবং রাত সবচেয়ে ছোটো হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল থাকে।
  • জলবিষুব (২৩ সেপ্টেম্বর): ২১ জুনের পর থেকে সূর্যরশ্মি আবার দক্ষিণ দিকে সরতে থাকে (দক্ষিণায়ন শুরু)। ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্যরশ্মি পুনরায় নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। এই দিনও পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল থাকে।
  • দক্ষিণায়ন ও মকরসংক্রান্তি (২২ ডিসেম্বর): ২৩ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সূর্যের আপাত গতি দক্ষিণ দিকে চলতে থাকে (দক্ষিণায়ন)। ২২ ডিসেম্বর সূর্যরশ্মি মকরক্রান্তি রেখার (২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষরেখা) ওপর লম্বভাবে পড়ে। এটি সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ সীমা। এই দিন দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো এবং রাত সবচেয়ে ছোটো হয়, আর উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোটো (প্রায় ১০ ঘণ্টা) এবং রাত সবচেয়ে বড়ো হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকে । ২২ ডিসেম্বরের পর সূর্য আবার উত্তর দিকে সরতে শুরু করে (উত্তরায়ণ শুরু) এবং চক্রটি পুনরায় চলতে থাকে।

অতিরিক্ত (Extras)

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)

coming soon

প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)

coming soon

Get notes of other boards, classes, and subjects

NBSESEBA/AHSEC
NCERTTBSE
WBBSE/WBCHSEICSE/ISC
BSEM/COHSEMMBOSE
Custom Notes ServiceQuestion papers

Share with others

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Only registered users are allowed to copy.