ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ: WBBSE ক্লাস 9 ভূগোল

ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ wbbse
Share with others

এখানে (chapter 4) ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ: WBBSE ক্লাস ৯ ভূগোল ও পরিবেশ (Bhugol o Poribesh) (বাংলা মাধ্যম)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

Select medium
English medium notes
Bengali medium notes

Register Login

সারাংশ (summary)

ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ  (Bhūmirūp gathanakārī prakriyā o pṛthibīr bibhinna bhūmirūp): এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সম্পর্কে। পৃথিবী যখন তৈরি হয়, তখন এটি ছিল বাষ্পীয় একটি পিণ্ড। কোটি কোটি বছর ধরে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এই সময়ে পদার্থগুলির মধ্যে স্থান বিনিময় ঘটেছে। হালকা পদার্থগুলি উপরের স্তরে জমে ভূত্বক গঠন করেছে, আর ভারী উপাদানগুলি পৃথিবীর কেন্দ্রে চলে গেছে।

ভূমিরূপ গঠনের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি হল যান্ত্রিক আবহবিকার, রাসায়নিক আবহবিকার ও জৈবরাসায়নিক আবহবিকার। ভূমিরূপ গঠনকারী শক্তিগুলি দুই ধরনের: অভ্যন্তরীণ শক্তি ও বহির্জাত শক্তি। অভ্যন্তরীণ শক্তি ভূগর্ভের অভ্যন্তরভাগে কাজ করে, যেখানে বহির্জাত শক্তি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে কাজ করে। এর ফলে ভূ-আলোড়ন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতির দ্বারা ভূমিরূপের ক্ষয় ও সঞ্চয় ঘটে।

পৃথিবীর প্রধান ভূমিরূপ হল পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি। পর্বত হল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু অংশ। মালভূমি হল পাহাড় বা পর্বতের মাথা কেটে দেওয়ার ফলে যা দাঁড়ায়। সমভূমি হল সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে বা সামান্য উঁচুতে অবস্থিত বিস্তীর্ণ সমতল স্থলভাগ।

ভূত্বক অনেকগুলি টুকরো-টুকরো পাত বা প্লেট নিয়ে গঠিত। এই পাতগুলি অনেকটা প্লাস্টিকের মতো সান্দ্র অ্যাথেনোস্ফিয়ার স্তরের উপর ভাসছে। অভ্যন্তরীণ শক্তির ফলে ভূ-আলোড়ন ঘটে এবং ভূপৃষ্ঠের পাতগুলি গতিশীল হয়। এই গতির ফলে পাতগুলি পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে ধাক্কা খায় বা দূরে সরে যায়।

ভূমিরূপ গঠনের প্রক্রিয়াগুলি হল ভূ-আলোড়ন, গিরিজনি আলোড়ন, মহীভাবক আলোড়ন, ইউস্টাটিক সঞ্চালন ও সমস্থিতিক আলোড়ন। এই প্রক্রিয়াগুলির ফলে ভূমিরূপের উচ্চতা ও বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। বহির্জাত শক্তিগুলি হল বৃষ্টির আঘাত, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রবাহ ও সমুদ্রতরঙ্গ। এই শক্তিগুলি ভূমিরূপের ওপর ক্ষয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূমিরূপের বৈচিত্র্য আনে।

লাভা মালভূমি হল ভূগর্ভের লাভা যা ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে জমাট বেঁধে তৈরি হয়। ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশ লাভা দ্বারা গঠিত। এই মালভূমির উপরের অংশ টেবিলের মতো সমতল এবং পার্শ্বদেশ সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নীচে নেমে গেছে।

এই অধ্যায়ে আরও আলোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পর্বত, মালভূমি ও সমভূমির উদাহরণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Prantik textbook)

সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো

১. হিমালয় পর্বত একটি-

(ক) আগ্নেয় পর্বত
(খ) ভঙ্গিল পর্বত
(গ) স্তূপ পর্বত
(ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত

উত্তর: খ) ভঙ্গিল পর্বত

২. ভারতের সাতপুরা একটি-

(ক) আগ্নেয় পর্বতের
(খ) ভঙ্গিল পর্বতের
(গ) স্তূপ পর্বতের
(ঘ) চ্যুতির উদাহরণ

উত্তর: গ) স্তূপ পর্বতের

৩. বিন্ধ্য পর্বত একটি-

(ক) আগ্নেয় পর্বত
(খ) ভঙ্গিল পর্বত
(গ) স্তূপ পর্বত
(ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত

উত্তর: গ) স্তূপ পর্বত

৪. আরাবল্লী একটি-

(ক) ভঙ্গিল
(খ) স্তূপ
(গ) ক্ষয়জাত
(ঘ) আগ্নেয় পর্বত

উত্তর: গ) ক্ষয়জাত

৫. ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সমভূমিটি একটি-

(ক) লোয়েস সমভূমি
(খ) প্লাবন সমভূমি
(গ) বদ্বীপ সমভূমি
(ঘ) কোনোটাই নয়

উত্তর: খ) প্লাবন সমভূমি

৬. আন্দিজ পর্বত একটি-

(ক) আগ্নেয় পর্বত
(খ) ভঙ্গিল পর্বত
(গ) স্তূপ পর্বত
(ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত

উত্তর: খ) ভঙ্গিল পর্বত

৭. আটলাস পর্বত একটি-

(ক) আগ্নেয় পর্বত
(খ) ভঙ্গিল পর্বত
(গ) স্তূপ পর্বত
(ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত

উত্তর: খ) ভঙ্গিল পর্বত

৮. স্তূপ পর্বতের শীর্ষদেশ-

(ক) ছুঁচোলো
(খ) গোলাকার
(গ) চ্যাপটা
(ঘ) সমতল

উত্তর: গ) চ্যাপটা

৯. গ্রস্ত উপত্যকা দেখা যায়—

(ক) স্তূপ
(খ) আগ্নেয়
(গ) ক্ষয়জাত
(ঘ) ভঙ্গিল পর্বতে

উত্তর: ক) স্তূপ পর্বতে

১০. ভারতের একটি জীবন্ত আগ্নেয় পর্বত হল-

(ক) আরাবল্লী
(খ) শুশুনিয়া
(গ) ব্যারেন
(ঘ) বিন্ধ্য

উত্তর: গ) ব্যারেন

১১. ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়-

(ক) পাললিক শিলা থেকে
(খ) আগ্নেয় শিলা থেকে
(গ) রূপান্তরিত শিলা থেকে
(ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর: ক) পাললিক শিলা থেকে

১২. পৃথিবীর বৃহত্তম উচ্চ-মালভূমি হল-

(ক) তিব্বত মালভূমি
(খ) পামির মালভূমি
(গ) আরব মালভূমি
(ঘ) দাক্ষিণাত্য মালভূমি

উত্তর: ক) তিব্বত মালভূমি

১৩. পৃথিবীর ছাদ বলা হয়-

(ক) তিব্বত মালভূমিকে
(খ) পামির মালভূমিকে
(গ) ছোটোনাগপুরের মালভূমিকে
(ঘ) কোনোটাই নয়

উত্তর: খ) পামির মালভূমিকে

১৪. লাভাগঠিত মালভূমির উদাহরণ হল-

(ক) পামির মালভূমি
(খ) ছোটোনাগপুর মালভূমি
(গ) ডেকানট্র্যাপ
(ঘ) লাদাখ

উত্তর: গ) ডেকানট্র্যাপ

১৫. চিনের হোয়াং হো নদী অববাহিকার সমভূমিটি একটি-

(ক) প্লাবন সমভূমি
(খ) বদ্বীপ সমভূমি
(গ) লোয়েস সমভূমি
(ঘ) কোনোটাই নয়

উত্তর: গ) লোয়েস সমভূমি

১৬. মাউন্ট ফুজিয়ামা আগ্নেয়গিরি একটি—

(ক) সক্রিয়
(খ) সুপ্ত
(গ) মৃত
(ঘ) কোনোটাই নয়

উত্তর: খ) সুপ্ত

বাক্যটি ‘সত্য’ হলে “ঠিক” এবং ‘অসত্য’ হলে “ভুল” লেখো

১. ভারতের ব্যারেন দ্বীপ একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৭৫ পৃষ্ঠায় একটি বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নে ব্যারেনকে ভারতের একটি জীবন্ত আগ্নেয় পর্বত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

২. মাউন্ট ফুজিয়ামা একটি মৃত আগ্নেয়গিরি।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬১ পৃষ্ঠায় ফুজিয়ামাকে একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা আছে। মৃত আগ্নেয়গিরিতে সেই সম্ভাবনা থাকে না।

৩. পরেশনাথ একটি ক্ষয়জাত পর্বত।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৭১ পৃষ্ঠায় পরেশনাথ পাহাড়কে ছোটোনাগপুর মালভূমির সমপ্রায় ভূমিতে অবস্থিত একটি মোনাডনক বা ক্ষয়প্রাপ্ত অবশিষ্ট পাহাড় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ক্ষয়জাত পর্বতের একটি উদাহরণ।

৪. সাতপুরা একটি স্তূপ পর্বত।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬২ পৃষ্ঠায় সাতপুরাকে স্তূপ পর্বতের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসাবে এবং হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

৫. ছোটোনাগপুর একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬৮ পৃষ্ঠায় পূর্ব ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমিকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির একটি নিদর্শন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

৬. দাক্ষিণাত্যের মালভূমি একটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমি।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬৭ পৃষ্ঠায় দাক্ষিণাত্য মালভূমিকে প্রধানত লাভা দ্বারা গঠিত মালভূমি (ডেকানট্র্যাপ) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পর্বতবেষ্টিত মালভূমি পর্বতের দ্বারা বেষ্টিত থাকে, যা দাক্ষিণাত্য মালভূমির মূল বৈশিষ্ট্য নয়।

৭. সাতপুরা ও বিন্ধ্য হল ভারতের দুটি স্তূপ পর্বত।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬২ পৃষ্ঠায় সাতপুরাকে স্তূপ পর্বত বলা হলেও, ৫৮ পৃষ্ঠায় বিন্ধ্য পর্বতকে প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

৮. দামোদর উপত্যকা হল ভারতের একটি গ্রস্ত উপত্যকার উদাহরণ।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকে নর্মদা, তাপ্তি ও রাইন নদীর উপত্যকাকে গ্রস্ত উপত্যকা হিসাবে উল্লেখ করা হলেও, দামোদর উপত্যকার কোনো উল্লেখ গ্রস্ত উপত্যকা হিসাবে নেই।

৯. সমপ্রায় ভূমি হল নদীর জলপ্রবাহের ক্ষয়কাজের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৭১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়। নদী এর মধ্যে একটি প্রধান শক্তি।

১০. আরাবল্লী একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বত।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৫৮ পৃষ্ঠায় আরাবল্লীকে প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রায় ২৪ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল।

১১. দুটি স্তূপ পর্বতের মধ্যবর্তী উপত্যকাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬২ ও ৬৩ পৃষ্ঠায় স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার গঠন ব্যাখ্যা করার সময় বলা হয়েছে যে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ নীচে বসে গেলে বা দুটি স্তূপ পর্বতের মধ্যবর্তী অংশে গ্রস্ত উপত্যকা (গ্রাবেন) সৃষ্টি হয়।

১২. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে দাক্ষিণাত্য মালভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬৭ পৃষ্ঠায় ডেকানট্র্যাপ বা দাক্ষিণাত্য মালভূমির সৃষ্টি বিদার অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে লাভা সঞ্চয়ের ফলে হয়েছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

১৩. ভারতের নীলগিরি একটি স্তূপ পর্বতের উদাহরণ।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকে নীলগিরি পর্বতের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

১৪. সাধারণত স্তূপ পর্বতের পাশেই গ্রস্ত উপত্যকা দেখা যায়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬৩ পৃষ্ঠায় স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার পারস্পরিক অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে স্তূপ পর্বতের পাশে গ্রস্ত উপত্যকার উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে।

১৫. হাওয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া একটি ভঙ্গিল পর্বত।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকে ভঙ্গিল পর্বত পার্শ্ব চাপের ফলে পাললিক শিলা ভাঁজ খেয়ে সৃষ্টি হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে (পৃষ্ঠা ৫৮)। মৌনালোয়া একটি আগ্নেয়গিরি, ভঙ্গিল পর্বত নয়।

১৬. চিনের হোয়াং হো নদী অববাহিকায় লোয়েস সমভূমি গঠিত হয়েছে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৭৪ পৃষ্ঠায় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে বায়ুবাহিত লোয়েস মৃত্তিকা হোয়াং হো নদীর অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি সৃষ্টি করেছে।

১৭. লাডাক ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৬৫ পৃষ্ঠায় পামির মালভূমিকে পৃথিবীর উচ্চতম মালভূমি এবং তিব্বত মালভূমিকে পৃথিবীর বৃহত্তম উচ্চ মালভূমি বলা হয়েছে। লাডাককে উচ্চ মালভূমি বলা হলেও সর্বোচ্চ বলা হয়নি।

১৮. ইউরোপের আল্পস একটি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতমালা।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৫৮ পৃষ্ঠায় আল্পস পর্বতমালাকে টার্সিয়ারি যুগে গঠিত নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালার উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯. পাখির পা-এর মতো দেখতে একটি বদ্বীপের নাম হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি-মিসিসিপি বদ্বীপ।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকে বদ্বীপ সমভূমির উদাহরণ হিসাবে গঙ্গা বদ্বীপের উল্লেখ থাকলেও, পাখির পা আকৃতির বদ্বীপ বা মিসিসিপি বদ্বীপের কোনো উল্লেখ নেই।

২০. দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ একটি আগ্নেয় পর্বত।

উত্তর: ভুল

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৫৮ পৃষ্ঠায় আন্দিজ পর্বতকে নবীন ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

২১. পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমিটি হল গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার সমভূমি।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পাঠ্যপুস্তকের ৭২ পৃষ্ঠায় গঙ্গার মোহানায় অবস্থিত বদ্বীপটিকে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে (যা গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বদ্বীপ)।

উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো

১. পৃথিবীর কেন্দ্রীয় স্তর ______ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে অবস্থিত হয়।

উত্তর: ৩,৪৭৩

২. ______ হল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ।

উত্তর: মাউন্ট এভারেস্ট

৩. ______ পর্বতমালা উত্তর আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত।

উত্তর: রকি

৪. পামির মালভূমিকে ______ বলা হয়।

উত্তর: পৃথিবীর ছাদ

৫. ______ আলোড়নের ফলে প্রধানত ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়।

উত্তর: গিরিজনি

৬. ৯০০ মিটার থেকে ১,০০০ মিটার উঁচু এবং অল্পদূর ছড়ানো শিলাস্তূপকে ______ বলে।

উত্তর: পাহাড়

৭. পৃথিবীর অধিকাংশ ভঙ্গিল পর্বত ______ পাতের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়।

উত্তর: মহাদেশীয়

৮. দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া পর্বতকে ______ বলে।

উত্তর: স্তূপ পর্বত

৯. ______ মালভূমি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ।

উত্তর: মালভূমি

১০. ‘লোয়েস’ কথাটির অর্থ হল ______।

উত্তর: স্থানচ্যুত বস্তু

১১. ______ হল একটি সমপ্রায় ভূমির উদাহরণ।

উত্তর: ছোটোনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ

১২. ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার উচ্চতাযুক্ত নীচু মালভূমিগুলোকে ______ মালভূমি বলে।

উত্তর: নিম্ন

স্তম্ভ মেলাও
বামদিকডানদিক
১। আন্দিজ পর্বতমালা1. ভাঁজ
২। ভাঙ্গল2. কাশ্মীর
৩। ব্যারেন3. সাহারা মরুভূমি
৪। লাডাক মালভূমি4. আগ্নেয় পর্বত
৫। বাজাদা5. দক্ষিণ আমেরিকা

উত্তর:

বামদিকডানদিক
১। আন্দিজ পর্বতমালা5. দক্ষিণ আমেরিকা
২। ভাঙ্গল1. ভাঁজ
৩। ব্যারেন3. সাহারা মরুভূমি
৪। লাডাক মালভূমি2. কাশ্মীর
৫। বাজাদা4. আগ্নেয় পর্বত
দু-এক কথায় উত্তর দাও

১. ভূত্বক কাকে বলে?

উত্তর: হালকা পদার্থগুলি পৃথিবীর উপরের স্তরে সরের মতো জমে ভূত্বক বা শিলামণ্ডল গঠন করেছে, যা ৬ থেকে ৭০ কিলোমিটার পুরু।

২. ভারতের একটি ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ দাও।

উত্তর: ভারতের একটি ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ হল হিমালয় পর্বতমালা।

৩. ভারতের প্রাচীনতম পর্বত ও উচ্চতম মালভূমির নাম করো।

উত্তর: ভারতের প্রাচীনতম পর্বত হল আরাবল্লী এবং ভারতের একটি উচ্চ মালভূমি হল কাশ্মীরের লাডাক মালভূমি (গড় উচ্চতা ৩,৫০০ মিটারের বেশি)।

৪. একটি স্তূপ পর্বতের উদাহরণ দাও।

উত্তর: একটি স্তূপ পর্বতের উদাহরণ হল মধ্যভারতের সাতপুরা পর্বত।

৫. একটি সঞ্চয়জাত পর্বতের উদাহরণ দাও।

উত্তর: একটি সঞ্চয়জাত পর্বতের উদাহরণ হল ভারতের ব্যারেন পর্বত।

৬. গঠন ও আকৃতি অনুসারে আগ্নেয়গিরি কত রকমের হয়?

উত্তর: গঠন ও আকৃতি অনুসারে আগ্নেয়গিরি প্রধানত কয়েক প্রকারের হয়, যেমন শিল্ড আগ্নেয়গিরি, সিণ্ডার শঙ্কু, মিশ্র বা স্তরীভূত আগ্নেয়গিরি, লাভা গম্বুজ ও ক্যালডেরা।

৭. অবশিষ্ট পর্বত কাকে বলে?

উত্তর: কোনো প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত বা উঁচু মালভূমি অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে বৃষ্টিপাত, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু পর্বতের আকার ধারণ করলে, তাকে ক্ষয়জাত পর্বত বা অবশিষ্ট পর্বত বলে।

৮. ভারতের একটি অবশিষ্ট পর্বতের নাম লেখো।

উত্তর: ভারতের একটি অবশিষ্ট পর্বতের নাম আরাবল্লী।

৯. গ্রস্ত উপত্যকা কাকে বলে?

উত্তর: দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ বসে গেলে যে অবনমিত অংশের সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে। এ ছাড়াও স্তূপ পর্বতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বসে গিয়ে যে উপত্যকার সৃষ্টি হয়, তাকেও গ্রস্ত উপত্যকা বলে।

১০. লাভা মালভূমি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বিদার অগ্ন্যুদ্গমের মাধ্যমে কোনো বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূগর্ভের ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো চ্যুতি, ফাটল, জোড় বা ছিদ্রপথ দিয়ে লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার পর ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়ে যে মালভূমি গড়ে ওঠে তাকে লাভা মালভূমি বা সঞ্চয়জাত মালভূমি বা আগ্নেয় মালভূমি বলে।

১১. ভারতের একটি লাভাগঠিত মালভূমি এবং একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির নাম লেখো।

উত্তর: ভারতের একটি লাভাগঠিত মালভূমি হল দাক্ষিণাত্য মালভূমি (ডেকানট্র্যাপ) এবং একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি হল পূর্ব ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি।

নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো

১। পৃথিবীর ভূমিরূপের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ করো।

উত্তর: পৃথিবীর পৃষ্ঠ অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের ভূমির এই বৈচিত্র্যই হল ভূমিরূপ। পৃথিবীর অন্তর্জাত ও বহির্জাত শক্তির মাধ্যমে ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভূমিরূপের বিবর্তন ও পরিবর্তনই হল ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া।

উচ্চতা, গঠন ও বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের ভিত্তিতে পৃথিবীতে প্রধানত তিনরকম ভূমিরূপ দেখা যায়:

(i) পর্বত: ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে উঁচু অংশ।
(ii) মালভূমি: মাঝারি উঁচু অংশ, অর্থাৎ পাহাড় কিংবা পর্বতের মাথা কেটে দিলে যা দাঁড়ায়।
(iii) সমভূমি: ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে নীচু, প্রায় সমতল অংশ।

২। পর্বত ও পর্বতশ্রেণি কাকে বলে? উৎপত্তি অনুসারে উদাহরণসহ পর্বতের শ্রেণিবিভাগ করো।

উত্তর: পর্বত: সমুদ্রতল থেকে ৯০০ মিটারের বেশি উঁচু, এক বা একাধিক শৃঙ্গবিশিষ্ট, তীব্র ঢালযুক্ত এবং বহুদূর বিস্তৃত শিলাময় ভূমিকে পর্বত বলে।
পর্বতশ্রেণি: অনেকগুলো পর্বতশৃঙ্গ ও উপত্যকা বিশাল অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করলে তাকে বলে পর্বতশ্রেণি।

উৎপত্তির কারণ ও ভূমিরূপের পার্থক্য অনুসারে পৃথিবীর উপরকার বিভিন্ন পর্বতগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা :

(i) ভঙ্গিল পর্বত: প্রবল গিরিজনি ভূ-আলোড়ন বা পার্শ্বচাপের ফলে ভুপৃষ্ঠের পাললিক শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে এই পর্বতের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ: ইউরোপ মহাদেশের আল্পস, এশিয়া মহাদেশের হিমালয়, উত্তর আমেরিকা মহাদেশের রকি, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দিজ প্রভৃতি।
(ii) স্তূপ পর্বত: মহীভাবক ভু-আলোড়নের ফলে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী বা পার্শ্ববর্তী অংশ যখন উঁচুতে উঠে গিয়ে স্তূপের আকারে পর্বতরূপে অবস্থান করে, তখন সেই পবর্তটিকে স্তূপ পর্বত বলা হয়। উদাহরণ: মধ্যভারতের সাতপুরা, জার্মানির ব্ল‍্যাক ফরেস্ট, ফ্রান্সের ভোজ প্রভৃতি।
(iii) ক্ষয়জাত পর্বত: কোনো প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত বা উঁচু মালভূমি অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু পর্বতের আকার ধারণ করলে, তাকে ক্ষয়জাত পর্বত বা অবশিষ্ট পর্বত বলে। উদাহরণ: ভারতের আরাবল্লী, ইউরাল প্রভৃতি।
(iv) সঞ্চয়জাত পর্বত বা আগ্নেয় পর্বত: পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের উত্তপ্ত ও গলিত ম্যাগমা বা লাভা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা ভূত্বকের ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়ে পর্বতের আকার ধারণ করলে তাকে আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলে। উদাহরণ: জাপানের ফুজিয়ামা, আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, ইটালির ভিসুভিয়াস, ভারতের ব্যারেন ও নরকোন্ডাম প্রভৃতি।

৩। গ্রস্ত উপত্যকা কীভাবে সৃষ্টি হয়?

উত্তর: প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূত্বকের শিলাস্তরে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরপর যদি আবার ভূ-আলোড়ন হয়, তবে ওই ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে আর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে চ্যুতি বলে। প্রবল ঊর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপের ফলে কোনো দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অঞ্চল যখন পাশের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াভাবে উপরে উঠে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দুটি নীচে বসে যায়, তখন নীচে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকারূপে বিরাজ করে। আবার, ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের প্রবল নিম্নচাপের ফলে কোনো সময় দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ যদি খাড়াভাবে নীচে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকায় পরিণত হয়, তাহলেও গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়। দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ বসে গেলে যে অবনমিত অংশের সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে। এ ছাড়াও স্তূপ পর্বতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বসে গিয়ে যে উপত্যকার সৃষ্টি হয়, তাকেও গ্রস্ত উপত্যকা বলে।

৪। ‘সব শিল্ড অঞ্চলই মালভূমি কিন্তু সব মালভূমি শিল্ড নয়।’-বুঝিয়ে বলো।

উত্তর: ভূত্বকের পাত সঞ্চরণের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন শিলায় গঠিত অংশগুলো পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে মালভূমি গঠন করে, তাকে বলা হয় মহাদেশীয় মালভূমি বা শিল্ড। এগুলি শক্ত শিলায় গঠিত, সুদৃঢ় ও অনমনীয় হয় এবং এর বিস্তার খুব বেশি হয়। সুদীর্ঘকাল ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এই মালভূমিগুলি নিম্ন মালভূমি বা সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, সংজ্ঞা অনুযায়ী শিল্ড অঞ্চলগুলি মালভূমিরই একটি প্রকারভেদ (মহাদেশীয় মালভূমি)। কিন্তু, সব মালভূমি শিল্ড নয় কারণ মালভূমি অন্যান্য উপায়েও সৃষ্টি হতে পারে, যেমন পর্বতবেষ্টিত মালভূমি (ভঙ্গিল পর্বত দ্বারা বেষ্টিত), লাভা মালভূমি (লাভা সঞ্চয়ের ফলে গঠিত) বা ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (ক্ষয়ীভবনের ফলে গঠিত)। এই অন্য প্রকার মালভূমিগুলির গঠন প্রক্রিয়া ও বৈশিষ্ট্য শিল্ড অঞ্চল থেকে ভিন্ন, তাই সব মালভূমি শিল্ড নয়।

৫। ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে?

উত্তর: প্রবল গিরিজনি ভূ-আলোড়ন বা পার্শ্বচাপের ফলে ভুপৃষ্ঠের পাললিক শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে।

৬। স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকা বলতে কী বোঝ?

উত্তর: স্তূপ পর্বত: মহীভাবক ভু-আলোড়নের ফলে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী বা পার্শ্ববর্তী অংশ যখন উঁচুতে উঠে গিয়ে স্তূপের আকারে পর্বতরূপে অবস্থান করে, তখন সেই পবর্তটিকে স্তূপ পর্বত বলা হয়।

গ্রস্ত উপত্যকা: দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ নীচে বসে গেলে বা দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ স্থির থেকে পার্শ্ববর্তী অংশ দুটি উপরে উঠে গেলে যে অবনমিত অংশের সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে। স্তূপ পর্বতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বসে গিয়েও গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হতে পারে।

৭। হোর্স্ট ও গ্রাবেন কী?

উত্তর: হোর্স্ট: দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্তূপ পর্বতকে হোর্স্ট (horst) বলা হয়।
গ্রাবেন: দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ নীচে বসে গিয়ে বা পার্শ্ববর্তী দুটি অংশ উপরে উঠে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া গ্রস্ত উপত্যকাকে ‘গ্রাবেন’ বলে

৮। ক্ষয়জাত পর্বত বা অবশিষ্ট পর্বত কাকে বলে?

উত্তর: কোনো প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত বা উঁচু মালভূমি অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে বৃষ্টিপাত, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু পর্বতের আকার ধারণ করলে, তাকে ক্ষয়জাত পর্বত বা অবশিষ্ট পর্বত বলে। কম ক্ষয়প্রাপ্ত অবশিষ্ট অংশ পর্বতে পরিণত হয় বলে একে অবশিষ্ট পর্বতও বলা হয়।

৯। আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত কাকে বলে?

উত্তর: পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের উত্তপ্ত ও গলিত ম্যাগমা বা লাভা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা ভূত্বকের ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়। ভূপৃষ্ঠের একই স্থানে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা বারংবার ঘটলে সেই স্থানে লাভা সঞ্চিত হয়ে যখন পর্বতের আকার ধারণ করে তখন তাকে আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলে। সঞ্চয়কাজের ফলে সৃষ্টি হয় বলে এই জাতীয় পর্বতকে সঞ্চয়জাত পর্বত বা আগ্নেয় পর্বত বলে।

১০। ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কী?

উত্তর: নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির নগ্নীভবন ক্রিয়ার দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, নরম শিলায় গঠিত অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নদী উপত্যকার সৃষ্টি হয় এবং কঠিন শিলায় গঠিত কম ক্ষয়প্রাপ্ত উঁচু অংশ মালভূমির আকারে অবস্থান করে। এইভাবে কোনো প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল যখন ছোটো-বড়ো নদী-উপত্যকার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে মালভূমির আকারে অবস্থান করে তখন তাকে বলা হয় ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি।

১১। পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: যেসব মালভূমির প্রায় সব দিকই পর্বত দ্বারা বেষ্টিত (ঘেরা) তাদের বলে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি। ভঙ্গিল পর্বতের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ভূত্বকের দুর্বলস্থানে পাতসীমানা-সংলগ্ন অঞ্চলে পর্বতের মধ্যবর্তী নীচু অংশগুলো পার্শ্বচাপের ফলে উঁচু হয়ে এই জাতীয় মালভূমির উৎপত্তি হয়।

১২। পলিগঠিত এবং বন্যাগঠিত সমভূমি অথবা প্লাবনভূমি কী?

উত্তর: পলিগঠিত সমভূমি: নদীবাহিত পলি অনেকদিন ধরে নদীর দু-পাশে বা নদী মোহানায় জমে যে ধরনের সমতল ভূভাগের সৃষ্টি করে, তাকে পলিগঠিত সমভূমি বলে।
প্লাবনভূমি: নদীর নিম্নপ্রবাহে ভূমির ঢাল কমে যাওয়ায় এবং নদীতে পলি জমে অগভীর হয়ে যাওয়ায় বর্ষার অতিরিক্ত জল দু-কূল ছাপিয়ে বন্যা সৃষ্টি করে। বন্যার সময় নদীর দু-ধারের বিস্তীর্ণ জমিতে পলি সঞ্চিত হয়ে যে উর্বর সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবনভূমি (Flood Plain) বলে।

১৩। বদ্বীপ সমভূমি ও হ্রদ সমভূমি কাকে বলে?

উত্তর: বদ্বীপ সমভূমি: মোহানার কাছে নদীর বহন করে আনা পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি জমা হয়ে চড়া সৃষ্টি হয়। নদীর স্রোত তখন ভাগ হয়ে চড়ার দুদিক দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে প্রায় ত্রিভুজের মতো (বাংলার মাত্রাহীন ‘ব’ বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টার (△) মতো) যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে বদ্বীপ সমভূমি বলে। এ ছাড়া মোহানার কাছে নদীগর্ভ পলি দ্বারা ভরাট হয়ে এবং সমুদ্রবাহিত পলিসঞ্চয়ের ফলে উপকূলবর্তী অগভীর সমুদ্রগর্ভ ভরাট হয়েও বদ্বীপ সমভূমির উৎপত্তি হয়।

হ্রদ সমভূমি: যে-সমস্ত নদী হ্রদে এসে পড়ে তাদের মোহানার কাছে নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাঁকর, পলি প্রভৃতির দ্বারা কোনো হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে কালক্রমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে হ্রদ সমভূমি বলে।

১৪। লাভাগঠিত সমভূমি কী?

উত্তর: কোনোরকম বিস্ফোরণ ছাড়াই পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা ভূত্বকের অসংখ্য ফাটল পথে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে এসে বহুদূরব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে যে বিস্তীর্ণ সমতলভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লাভা সমভূমি বলে।

১৫। মরু সমভূমি অথবা বাজাদা কাকে বলে?

উত্তর: মরু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে কোনো পর্বত, মালভূমি বা উচ্চভূমি থাকলে, স্বল্পমেয়াদি প্রবল বর্ষণের প্রভাবে তাদের পাদদেশ বরাবর জলস্রোতের দ্বারা পরিবাহিত হওয়া বালি, কাঁকর, নুড়ি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে মরু সমভূমি বা বাজাদা বলে।

১৬। লোয়েস সমভূমি কাকে বলে?

উত্তর: মরুভূমির অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা প্রভৃতি বায়ুর দ্বারা পরিবাহিত হয়ে দূরবর্তী কোনো নিম্নভূমিতে সঞ্চিত হলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।

১৭। সমপ্রায় ভূমি কী?

উত্তর: অনুচ্চ পার্বত্যভূমি এবং প্রাচীন মালভূমি ও উচ্চভূমি সূর্যের তাপ, নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচুনীচু ঢেউ খেলানো ‘প্রায় সমতলভূমিতে’ পরিণত হলে, তাকে সমপ্রায় ভূমি বলে। সমপ্রায় ভূমির মাঝেমধ্যে কঠিন শিলায় গঠিত ক্ষয়প্রাপ্ত অনুচ্চ পাহাড় বা টিলা দেখা যায়, যাদের মোনাত্মক বলে।

সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

১. পাহাড় ও পর্বতের মধ্যে পার্থক্য কী কী?

উত্তর: পাহাড় ও পর্বতের মধ্যে পার্থক্য গুলি হলো:

(i) পর্বত সুবিস্তৃত ও এর উচ্চতা অনেক বেশি (গড় উচ্চতা ১,০০০ মিটারের বেশি), কিন্তু পাহাড় নাতিদীর্ঘ ও নাতিউচ্চ (গড় উচ্চতা ১০০-১,০০০ মিটার)।
(ii) পর্বতের ভূমি অত্যন্ত বন্ধুর (উঁচু নীচু), কিন্তু পাহাড়ের ভূমি পর্বতের তুলনায় কম বন্ধুর।
(iii) পর্বত একটানা জটবাঁধা অবস্থায় পরপর অবস্থান করে, কিন্তু পাহাড় বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে।
(iv) পর্বতশৃঙ্গগুলো বছরের বেশিরভাগ সময়েই বরফে ঢাকা থাকে, কিন্তু পাহাড়ের চূড়াগুলো বরফে ঢাকা থাকে না।
(v) পর্বতের সঙ্গে ভূগাঠনিক শক্তির কাজ বেশিভাবে জড়িত, কিন্তু পাহাড়ের সঙ্গে নগ্নীভবনের কাজ বেশিভাবে জড়িত।

২. ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্য কী কী?

উত্তর: ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

(i) সৃষ্টি: পৃথিবীর অধিকাংশ ভঙ্গিল পর্বত মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
(ii) গঠন: ভঙ্গিল পর্বত সাধারণত পাললিক শিলাস্তর দ্বারা গঠিত হলেও অনেক সময় এই জাতীয় পর্বতে আগ্নেয়শিলা ও রূপান্তরিত শিলার সহাবস্থান দেখা যায়।
(iii) ভাঁজ ও চ্যুতির উপস্থিতি: প্রবল চাপ ও ভূ-আলোড়নের ফলশ্রুতিতে ভঙ্গিল পর্বতে বিভিন্ন ধরনের ভাঁজ ও চ্যুতি দেখা যায়।
(iv) দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও বিস্তার: ভঙ্গিল পর্বতের দৈর্ঘ্য প্রস্থের তুলনায় অনেক বেশি হয় এবং এদের উচ্চতা ও বিস্তার খুব বেশি হয়।
(v) পর্বতশৃঙ্গ ও গিরিখাত: ভঙ্গিল পর্বত সাধারণত বহু শৃঙ্গবিশিষ্ট ও ছুঁচালো হয়। এ ছাড়া এই জাতীয় পর্বতের অসংখ্য গভীর গিরিখাত দেখা যায়।
(vi) জীবাশ্মের উপস্থিতি: সাধারণত অগভীর সমুদ্রগর্ভ বা নিম্ন জলাভূমি থেকে ভঙ্গিল পর্বতগুলি সৃষ্টি হয়েছিল বলে এই জাতীয় পর্বতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবাশ্ম দেখা যায়।
(vii) ভূমিকম্প প্রবণতা: নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলগুলি সাধারণত ভূমিকম্পপ্রবণ হয়। ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে বারংবার ভূমিকম্প প্রমাণ করে যে, ভূপৃষ্ঠের এই অংশ এখনও সুস্থিত (Stable) অবস্থায় আসেনি।

৩. উদাহরণসহ স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

উত্তর: স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

(i) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে উপরে উঠে গেলে হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়, যার দুপাশে দুটি গ্রস্ত উপত্যকা থাকে। উদাহরণ: ভারতের সাতপুরা নামক স্তূপ পর্বতটির দুপাশে নর্মদা ও তাপ্তি নদীদ্বয়ের গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে।
(ii) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ খাড়াভাবে বসে গেলে ওই অংশে গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয় এবং গ্রস্ত উপত্যকার পার্শ্ববর্তী দুপাশে দুটি স্তূপ পর্বত গঠিত হয়। উদাহরণ: ফ্রান্সের ভোজ ও জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট হল এমন দুটি স্তূপ পর্বত যাদের মাঝখানের গ্রস্ত উপত্যকা দিয়ে রাইন নদী প্রবাহিত হয়েছে।
(iii) স্তূপ পর্বতের উপরিভাগ কিছুটা চ্যাপটা বা প্রায় সমতল হয়।
(iv) এই জাতীয় পর্বতের পার্শ্ববর্তী ঢাল অপেক্ষাকৃত কঠিন রূপান্তরিত শিলায় গঠিত এবং বেশ খাড়া হয়।
(v) স্তূপ পর্বতে অনেক চ্যুতি (Fault) ও গ্রস্ত উপত্যকা দেখা যায়।
(vi) স্তূপ পর্বতের পাশে গ্রস্ত উপত্যকা অবস্থান করে। সাধারণত গ্রস্ত উপত্যকায় নদী বা হ্রদ সৃষ্টি হয়।
(vii) ভঙ্গিল পর্বতের তুলনায় স্তূপ পর্বতের উচ্চতা অপেক্ষাকৃত কম হয় এবং এই পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের মতো বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয় না।
(viii) স্তূপ পর্বত সাধারণত শৃঙ্গবিহীন হয়।

৪. অবশিষ্ট পর্বত কীভাবে সৃষ্টি হয়?

উত্তর: কোনো প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত বা উঁচু মালভূমি অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে বৃষ্টিপাত, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু পর্বতের আকার ধারণ করলে, তাকে ক্ষয়জাত পর্বত বা অবশিষ্ট পর্বত বলে। কম ক্ষয়প্রাপ্ত অবশিষ্ট অংশ পর্বতে পরিণত হয় বলে একে অবশিষ্ট পর্বতও বলা হয়। প্রধানত দু’ভাবে ক্ষয়জাত পর্বতের সৃষ্টি হতে পারে, যেমন:

(i) প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত থেকে ক্ষয়জাত পর্বতের সৃষ্টি: কঠিন ও কোমল শিলাস্তর দিয়ে গঠিত প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতের কোমল শিলাস্তর তুলনামূলকভাবে দ্রুতহারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, কিন্তু কঠিন শিলাগঠিত অংশ কম ক্ষয় পেয়ে আশেপাশের কোমল শিলায় গঠিত অংশগুলি থেকে উঁচু হয়ে পর্বতের আকারে অবস্থান করে।
(ii) উঁচু মালভূমি অঞ্চল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত পর্বতের সৃষ্টি: কোনো উঁচু মালভূমি অঞ্চলের পাললিক শিলাস্তর বা কোমল শিলাগঠিত অংশ দ্রুতহারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন পর্বতের আকারে অবস্থান করলে ক্ষয়জাত পর্বতের উৎপত্তি হয়।

৫. ক্ষয়জাত পর্বতের সঙ্গে আগ্নেয় পর্বতের কী কী পার্থক্য রয়েছে?

উত্তর: ক্ষয়জাত পর্বতের সঙ্গে আগ্নেয় পর্বতের পার্থক্যগুলি হলো:

(i) উৎপত্তির প্রক্রিয়া: সূর্যকিরণ, বৃষ্টিপাত, নদী ও বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে কোনো প্রাচীন পর্বত বা মালভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত পর্বত গঠিত হয়, কিন্তু ভূগর্ভের অতি উত্তপ্ত ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে স্তরে-স্তরে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয় পর্বত গঠিত হয়।
(ii) সহায়ক শক্তি: ক্ষয়জাত পর্বতের উৎপত্তির সঙ্গে ‘এক্সোজেনিক ফোর্স বা ভূপৃষ্ঠ ক্ষয়কারী শক্তি’র সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তির সঙ্গে ‘টেকটনিক ফোর্স বা ভূ-অভ্যন্তরীণ শক্তি’র সম্পর্ক রয়েছে।
(iii) আকৃতি: ক্ষয়ের ফলে ক্ষয়জাত পর্বতের শীর্ষদেশ সাধারণত গম্বুজের মতো কিংবা চ্যাপটা হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ আগ্নেয় পর্বত শঙ্কু আকৃতির হলেও কখনো-কখনো এরা গম্বুজের মতো বা মিশ্র আকৃতিরও হয়।
(iv) শিলা গঠন: ক্ষয়জাত পর্বত সাধারণত আগ্নেয় বা রূপান্তরিত শিলায় গঠিত, কিন্তু আগ্নেয় পর্বত আগ্নেয় শিলায় গঠিত।
(v) উচ্চতা ও উচ্চতার পরিবর্তন: ক্ষয়জাত পর্বতের উচ্চতা কম এবং ক্ষয়ের ফলে এই পর্বতের উচ্চতা ক্রমশ কমে যায়, কিন্তু আগ্নেয় পর্বতের উচ্চতা মাঝারি এবং বারংবার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই পর্বতের উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে পারে।
(vi) বয়স: ক্ষয়জাত পর্বত বয়সে প্রাচীন, কিন্তু আগ্নেয় পর্বত বয়সে নবীন।
(vii) গাত্রদেশ: ক্ষয়জাত পর্বতের গাত্রদেশ এবড়োখেবড়ো, কিন্তু আগ্নেয় পর্বতের গাত্রদেশ তুলনামূলক মসৃণ।
(viii) জ্বালামুখ: ক্ষয়জাত পর্বতে জ্বালামুখ থাকে না, কিন্তু আগ্নেয় পর্বতে এক বা একাধিক জ্বালামুখ থাকে।
(ix) অবস্থান: ক্ষয়জাত পর্বত ভূপৃষ্ঠের যে-কোনো জায়গায় গঠিত হতে পারে, কিন্তু আগ্নেয় পর্বত সাধারণত ভূত্বকের পাতসীমান্ত বরাবর বা দুর্বল অংশে গঠিত হয়।

৬. মালভূমির বৈশিষ্ট্য কী কী?

উত্তর: মালভূমির বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

(i) মালভূমি হল আশেপাশের অঞ্চলগুলির সাপেক্ষে বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি যার গড় উচ্চতা ৩০০ মিটারেরও বেশি।
(ii) মালভূমির চারপাশ খাড়া ঢালযুক্ত এবং উপরটা মৃদু ঢেউখেলানো।
(iii) মালভূমির উপরটা সমতল বা মৃদু ঢেউখেলানো এবং চারপাশ খাড়া হওয়ায় একে দেখতে অনেকটা টেবিলের মতো, তাই একে টেবিলল্যান্ডও বলে।

৭. মানবজীবনে মালভূমির দুটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর: মানবজীবনে মালভূমির দুটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব হলো:

(i) খনিজসম্পদ: মালভূমিগুলি সাধারণত খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ হয় (যেমন: ছোটোনাগপুর মালভূমি)।
(ii) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: মালভূমির উপরিভাগ উঁচুনীচু হওয়ায় এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলি খরস্রোতা, তাই এরা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশেষ উপযোগী।

৮. অগ্ন্যুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ করো।

উত্তর: অগ্ন্যুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতগুলোকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা:

(i) সক্রিয়: এই ধরনের আগ্নেয়গিরিতে প্রায়ই অগ্ন্যুৎপাত হয়। সক্রিয় আগ্নেয়গিরিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: (ক) অবিরাম: এইসব আগ্নেয়গিরিতে অবিরাম অগ্ন্যুৎপাত হয় (উদাহরণ: ভিসুভিয়াস) এবং (খ) সবিরাম: কিছুদিন পরপর অগ্ন্যুৎপাত হয় (উদাহরণ: ইটালির সিসিলি দ্বীপের স্ট্রোম্বলি)।
(ii) সুপ্ত: যেসব আগ্নেয় পর্বতে বহুকাল অগ্ন্যুৎপাত হয়নি কিন্তু ভবিষ্যতে হওয়ার আশঙ্কা আছে (যেমন: জাপানের ফুজিয়ামা)।
(iii) মৃত: যেসব আগ্নেয় পর্বতে বহুকাল আগে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে কিন্তু ভবিষ্যতে আর অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই (যেমন: মায়ানমার-এর পোপা)।

৯. ক্ষয়জাত মালভূমি ও ভূ-আন্দোলনজাত মালভূমির মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী কী?

উত্তর: ক্ষয়জাত মালভূমি ও ভূ-আন্দোলনজাত মালভূমির মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি হলো:

(i) উৎপত্তি: ভূপৃষ্ঠের ওপর নদীস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যকিরণ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে এই জাতীয় মালভূমি গঠিত হয়, কিন্তু প্রধানত ভূমিকম্প বা ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-আন্দোলনজাত মালভূমি গঠিত হয়।
(ii) প্রাচীনত্ব: ক্ষয়জাত মালভূমিগুলি সাধারণত বয়সে প্রাচীন হয়, কিন্তু ভূ-আন্দোলনজাত মালভূমিগুলি বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীন হয়।
(iii) উচ্চতা ও বিস্তার: ক্ষয়জাত মালভূমিগুলি স্বল্প উচ্চতাযুক্ত হয় এবং এদের বিস্তৃতি অল্প স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু ভূ-আন্দোলনজাত মালভূমিগুলির উচ্চতা ও বিস্তৃতি অনেক বেশি হয়।
(iv) উদাহরণ: ‘ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি’, ‘অবশিষ্ট মালভূমি’, ‘অধিত্যকা মালভূমি’ প্রভৃতি ভূমিরূপগুলি হল ক্ষয়জাত মালভূমির উদাহরণ, কিন্তু ‘পর্বতবেষ্টিত মালভূমি’, ‘তির্যক মালভূমি’, ‘মহাদেশীয় মালভূমি’ বা ‘শিল্ড’ প্রভৃতি ভূমিরূপগুলি হল ভূ-আন্দোলনজাত মালভূমির উদাহরণ।

১০. পর্বতবেষ্টিত মালভূমি কীভাবে সৃষ্টি হয়?

উত্তর: ভঙ্গিল পর্বতের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ভূত্বকের দুর্বলস্থানে পাতসীমানা-সংলগ্ন অঞ্চলে পর্বতের মধ্যবর্তী নীচু অংশগুলো পার্শ্বচাপের ফলে উঁচু হয়ে পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উৎপত্তি হয়। উত্থানের সময় সাধারণত দুটি ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যবর্তী মহীখাত (বিস্তীর্ণ নীচু অঞ্চল) মধ্যবর্তী উঁচু হয়ে পর্বতবেষ্টিত মালভূমির সৃষ্টি হয়।

১১. পর্বতবেষ্টিত মালভূমি ও ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির তুলনা করো।

উত্তর: পর্বতবেষ্টিত মালভূমি ও ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির তুলনা নিচে দেওয়া হলো:

(i) উৎপত্তি: ভূ-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থানের সময় দুটি পর্বতের মধ্যবর্তী অংশ উঁচু হয়ে পর্বতবেষ্টিত মালভূমির সৃষ্টি হয়, কিন্তু সূর্যকিরণ, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে প্রাচীন উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সৃষ্টি হয়।
(ii) উৎপত্তির কারণ: প্রধানত ভূ-আলোড়নের ফলে পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উৎপত্তি হয়, কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির নগ্নীভবন ক্রিয়ার ফলে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির উৎপত্তি হয়।
(iii) বৈশিষ্ট্য: পর্বতবেষ্টিত মালভূমি সাধারণত নবীন ভঙ্গিল পর্বতবেষ্টিত থাকে এবং এদের গড় উচ্চতা অনেক বেশি, কিন্তু ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি সাধারণত বিভিন্ন নদী উপত্যকার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয় এবং এদের গড় উচ্চতা পর্বতবেষ্টিত মালভূমির তুলনায় অনেক কম।
(iv) গঠনকারী শিলা: পর্বতবেষ্টিত মালভূমি সাধারণত পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত, কিন্তু ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি সাধারণত কঠিন ও কোমল আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত।
(v) বয়স: পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বয়সে নবীন, কিন্তু ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বয়সে প্রাচীন।

১২. উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে উদাহরণসহ সমভূমির শ্রেণিবিভাগ করো।

উত্তর: উৎপত্তি ও ভূমিরূপের বিভিন্নতা অনুসারে সমভূমিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:

  • (A) ভূ-গাঠনিক সমভূমি (Tectonic Plain): ভূ-আন্দোলনের ফলে উঁচু স্থান নীচু হয়ে কিংবা নীচু স্থান উঁচু হয়ে সমভূমির সৃষ্টি হলে তাদের বলে ভূ-গাঠনিক সমভূমি। ভূ-গাঠনিক সমভূমিকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন:
    • (i) উন্নত সমভূমি (Uplifted Plain): সমুদ্রের অগভীর অংশ বা অন্য যে-কোনো জায়গা ভূ-আন্দোলনের ফলে উঁচু হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে বলে উন্নত সমভূমি। উদাহরণ: ইউরেশিয়ার স্টেপস্ অঞ্চল।
    • (ii) অবনত সমভূমি (Depressed Plain): ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থান ভূ-আন্দোলনের ফলে নীচু হয়ে যে সমভূমির উৎপত্তি হয় তাকে বলে অবনত সমভূমি। উদাহরণ: কাস্পিয়ান সাগরের কাছে তুরান নিম্নভূমি।
    • (iii) গঠনগত সমভূমি: সমান্তরাল শিলাস্তরে বিন্যস্ত ভূত্বক নিজে থেকেই সমভূমিতে পরিণত হয়ে গঠনগত সমভূমি গঠন করে। উদাহরণ: রাশিয়ার উচ্চভূমি।
  • (B) ক্ষয়জাত সমভূমি (Erosional Plain): নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে ক্ষয়জাত সমভূমি বলে। ক্ষয়জাত সমভূমিকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:
    • (i) সমপ্রায় ভূমি (Peneplain): অনুচ্চ পার্বত্যভূমি এবং প্রাচীন মালভূমি ও উচ্চভূমি সূর্যের তাপ, নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচুনীচু ঢেউ খেলানো ‘প্রায় সমতলভূমিতে’ পরিণত হলে, তাকে সমপ্রায় ভূমি বলে। উদাহরণ: ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর মালভূমির কোনো কোনো অংশ।
    • (ii) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট (Pediment): মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহ এবং অস্থায়ী জলধারার মিলিত ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে পর্বতের পাদদেশ বরাবর উন্মুক্ত শিলাস্তর ও পলিস্তরে ঢাকা মৃদু ঢালযুক্ত সমভূমি গড়ে উঠলে তাকে পেডিমেন্ট বা পাদদেশীয় সমভূমি বলা হয়। উদাহরণ: আফ্রিকা মহাদেশে সাহারা মরুভূমির আটলাস পর্বতের পাদদেশে।
    • (iii) তরঙ্গকর্তিত সমভূমি (Wave Truncated peneplain): অনেক সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে সমুদ্রোপকূল অঞ্চল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উপকূল বরাবর উঁচুনীচু প্রায় সমতল ভূভাগের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ: উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের নরওয়ে উপকূলে।
    • (iv) কাস্ট সমভূমি: চুনাপাথরে গঠিত অঞ্চলের চুনাপাথর কার্বোনেশন প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দ্রবীভবনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমভূমিতে পরিণত হয় একেই কার্স্ট সমভূমি বলে।
  • (C) সঞ্চয়জাত সমভূমি (Depositional Plain): নদী, সমুদ্র বা হ্রদে যুগ যুগ ধরে পলি সঞ্চিত হওয়ার ফলে ভরাট হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে সঞ্চয়জাত সমভূমি বলে। সঞ্চয়জাত সমভূমিগুলিকে প্রধানত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:
    • (i) পাদদেশীয় সমভূমি বা পিডমন্ড (Piedmont): পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, বালি ও পলি সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি গঠিত হয় তাকে পাদদেশীয় সমভূমি বা পিডমন্ড বলে। উদাহরণ: হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তরাই ও ডুয়ার্স সমভূমি।
    • (ii) প্লাবনভূমি (Flood Plain): নদীর নিম্নপ্রবাহে বন্যার সময় নদীর দু-ধারের বিস্তীর্ণ জমিতে পলি সঞ্চিত হয়ে যে উর্বর সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবনভূমি বলে। উদাহরণ: ভারতের সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র।
    • (iii) বদ্বীপ সমভূমি (Deltaic Plain): মোহানার কাছে নদীর বহন করে আনা পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি জমা হয়ে চড়া সৃষ্টি হয় এবং নদীর স্রোত ভাগ হয়ে প্রায় ত্রিভুজের মতো যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে বদ্বীপ সমভূমি বলে। উদাহরণ: গঙ্গার মোহানায় অবস্থিত বদ্বীপটি।
    • (iv) পলিগঠিত সমভূমি (Alluvial Plain): নদীবাহিত পলি অনেকদিন ধরে নদীর দু-পাশে বা নদী মোহানায় জমে এই ধরনের সমতল ভূভাগের সৃষ্টি করে। উদাহরণ: উত্তর ভারতের সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
    • (v) উপকূলীয় সমভূমি (Coastal Plain): সমুদ্রতরঙ্গ, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয় ও সঞ্চয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া পলি দীর্ঘকাল ধরে উপকূল বরাবর জমা হয়ে সমুদ্রের অগভীর অংশকে ভরাট করে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু হয়ে উঠে যে সমভূমির সৃষ্টি করে তাকে উপকূলীয় সমভূমি বলে। উদাহরণ: এশিয়ার উত্তর প্রান্তে।
    • (vi) হ্রদ সমভূমি (Lake Plain): যে-সমস্ত নদী হ্রদে এসে পড়ে তাদের মোহানার কাছে নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাঁকর, পলি প্রভৃতির দ্বারা কোনো হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে কালক্রমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে হ্রদ সমভূমি বলে। উদাহরণ: কাশ্মীর উপত্যকা।
    • (vii) মরু সমভূমি বা বাজাদা (Bazada): মরু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে পর্বত, মালভূমি বা উচ্চভূমির পাদদেশ বরাবর জলস্রোতের দ্বারা পরিবাহিত বালি, কাঁকর, নুড়ি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে মরু সমভূমি বা বাজাদা বলে। উদাহরণ: সাহারা মরুভূমির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে আটলাস পর্বতের পাদদেশে।
    • (viii) লাভা সমভূমি (Lava Plain): কোনোরকম বিস্ফোরণ ছাড়াই পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা ভূত্বকের অসংখ্য ফাটল পথে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে এসে বহুদূরব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে যে বিস্তীর্ণ সমতলভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লাভা সমভূমি বলে। উদাহরণ: দাক্ষিণাত্যের উত্তর অংশের সমভূমি।
    • (ix) হিমবাহ সমভূমি (Glacial Plain): হিমবাহগুলো ঢালু দিকে গড়িয়ে যাবার সময় প্রচণ্ড চাপে ও প্রবল ঘর্ষণে অনেক উঁচুনীচু জায়গাকে সমভূমিতে পরিণত করেছে বা হিমবাহিত গ্রাবরেখা নীচু অঞ্চলে জমেও অনেক স্থানে সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চল।
    • (x) লোয়েস সমভূমি (Loess Plain): বায়ুর দ্বারা পরিবাহিত মরুভূমির অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা প্রভৃতি দূরবর্তী কোনো নিম্নভূমিতে সঞ্চিত হলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। উদাহরণ: উত্তর চিনের লোয়েস সমভূমি অঞ্চল।

১৩. মানবজীবনের ওপর পর্বতের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পর্বতের অপরিসীম গুরুত্ব আছে:

  • (i) নদীর উৎপত্তি: উঁচু পর্বতের বরফগলা জল থেকে অসংখ্য নদীর উৎপত্তি হয়। এইসব নদীতে সারাবছর জল থাকে। উদাহরণ: হিমালয় পর্বত থেকে গঙ্গা, যমুনা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
  • (ii) জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: উঁচু পর্বতশ্রেণি কোনো দেশের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন: (ক) সমুদ্র থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উঁচু পর্বতের গায়ে ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। উদাহরণ: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতে ধাক্কা খেয়ে ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটায়। (খ) উঁচু পর্বতশ্রেণি বিরাট প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে উষ্ণ ও শীতল বায়ুপ্রবাহকে আটকে দিয়ে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। উদাহরণ: শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে আসা হিমশীতল বাতাস হিমালয় পর্বতে বাধা পায়।
  • (iii) বনজসম্পদ: পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণত নরম কাঠের মূল্যবান বনভূমি গড়ে ওঠে।
  • (iv) কৃষি ও পশুপালন: পর্বতের ঢালে ধাপ কেটে চা, কফি প্রভৃতি বাগিচা ফসল এবং নানান রকমের ফলচাষ করা হয়। এ ছাড়া পর্বতের ঢালগুলিতে ভালো পশুচারণক্ষেত্র গড়ে ওঠে।
  • (v) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: পার্বত্য অঞ্চলের খরস্রোতা নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে।
  • (vi) পর্যটন শিল্প: মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঠান্ডা আরামদায়ক আবহাওয়ার জন্য পার্বত্য অঞ্চলে ভালো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। উদাহরণ: দার্জিলিং, গ্যাংটক, উটি প্রভৃতি।

১৪. তির্যক মালভূমি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: ভূ-আন্দোলনের ফলে কোনো মালভূমি যখন একদিকে কাত হয়ে বা ঢালু হয়ে অবস্থান করে, তখন তাকে তির্যক মালভূমি বলে। এই ধরনের মালভূমির একদিকের উচ্চতা অন্যদিকের চেয়ে বেশি হয় এবং পৃষ্ঠদেশ একদিকে মৃদুভাবে ঢালু হয়ে যায়।

উদাহরণ: ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি একটি তির্যক মালভূমির উদাহরণ। এর পশ্চিম দিক উঁচু (পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বরাবর) এবং পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে পূর্ব উপকূলের দিকে নেমে গেছে।

১৫. বিভিন্ন প্রকার সমভূমির বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর: বিভিন্ন প্রকার সমভূমির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

  • ভূ-গাঠনিক সমভূমি: সাধারণত ভূ-আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়, উন্নত, অবনত বা গঠনগত হতে পারে।
  • ক্ষয়জাত সমভূমি: ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হয়।
    • সমপ্রায় ভূমি: প্রায় সমতল, ঢেউ খেলানো, মাঝে কঠিন শিলার অনুচ্চ পাহাড় বা টিলা (মোনাডনক) দেখা যায়।
    • পাদদেশীয় সমভূমি (পেডিমেন্ট): পর্বতের পাদদেশে মৃদু ঢালযুক্ত, উন্মুক্ত শিলাস্তর ও পলিতে ঢাকা, মাঝে ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
    • তরঙ্গকর্তিত সমভূমি: সমুদ্র উপকূল বরাবর প্রায় সমতল, কোনো টিলা থাকে না।
    • কাস্ট সমভূমি: চুনাপাথরে গঠিত, দ্রবীভূত ও ক্ষয়প্রাপ্ত, মাঝে অনুচ্চ টিলা (কার্স্ট টাওয়ার) থাকে।
  • সঞ্চয়জাত সমভূমি: পলি, লাভা, হিমবাহ বা বায়ু দ্বারা বাহিত পদার্থ সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়, সাধারণত খুব উর্বর হয়।
    • প্লাবনভূমি: নদীর দু-ধারে বন্যার পলি জমে গঠিত, খুব উর্বর, মাঝে মাঝে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ও জলাভূমি দেখা যায়, স্বাভাবিক বাঁধ থাকে।
    • বদ্বীপ সমভূমি: নদীর মোহানায় পলি জমে গঠিত, ত্রিভুজাকার বা ডেল্টা আকৃতির, খুব উর্বর, অসংখ্য শাখানদী ও জলাভূমি থাকে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উঁচু।
    • উপকূলীয় সমভূমি: উপকূল বরাবর পলি জমে গঠিত, অতি মৃদু ঢালে সমুদ্রে মেশে, বালিয়াড়ি, জলাভূমি ও লেগুন দেখা যায়।
    • হ্রদ সমভূমি: হ্রদের তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে গঠিত হয়।
    • লাভা সমভূমি: লাভা সঞ্চিত হয়ে গঠিত, বিস্তীর্ণ ও সমতল।
    • হিমবাহ সমভূমি: হিমবাহ বাহিত পদার্থ (গ্রাবরেখা) জমে বা হিমবাহের ঘর্ষণে গঠিত হয়।
    • লোয়েস সমভূমি: বায়ুবাহিত অতিসূক্ষ্ম বালিকণা জমে গঠিত, খুব উর্বর।

১৬. উদাহরণসহ উপকূলীয় সমভূমির শ্রেণিবিভাগ করো।

উত্তর: উপকূলীয় সমভূমি হলো সমুদ্রের ধারে অবস্থিত বিস্তীর্ণ, সমতল ও নিম্নভূমি। গঠন ও উৎপত্তি অনুসারে উপকূলীয় সমভূমিকে প্রধানত নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়:

  • উত্থিত উপকূলীয় সমভূমি: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস পেলে অথবা স্থলভাগ উঁচু হলে সমুদ্রের নীচে থাকা মহীসোপানের কিছু অংশ জেগে উঠে এই প্রকার সমভূমি গঠন করে। এগুলি সাধারণত চওড়া ও মৃদু ঢালযুক্ত হয়। উদাহরণ: ভারতের পূর্ব উপকূল (করমণ্ডল উপকূল), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল (ফ্লোরিডা)।
  • নিমজ্জিত উপকূলীয় সমভূমি: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে অথবা স্থলভাগ নীচে বসে গেলে উপকূল অঞ্চলের নিম্নভূমি বা নদী উপত্যকাগুলি জলে ডুবে গিয়ে এই প্রকার সমভূমি তৈরি করে। এর ফলে উপকূলরেখা সাধারণত ভগ্ন প্রকৃতির হয় এবং অনেক খাঁড়ি বা ফিয়র্ড দেখা যায়। উদাহরণ: ভারতের পশ্চিম উপকূল (কঙ্কন ও মালাবার উপকূল), নরওয়ের উপকূল, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূল।
  • নিরপেক্ষ বা সঞ্চয়জাত উপকূলীয় সমভূমি: সমুদ্রপৃষ্ঠ বা স্থলভাগের বিশেষ কোনো উল্লম্ব পরিবর্তন ছাড়াই নদী, সমুদ্রতরঙ্গ, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির সঞ্চয়কার্যের ফলে পলি, বালি ইত্যাদি জমা হয়ে এই সমভূমি গঠিত হয়। বদ্বীপ সমভূমি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। উদাহরণ: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বদ্বীপ অঞ্চল, নীলনদের বদ্বীপ অঞ্চল, মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ অঞ্চল।
  • যৌগিক উপকূলীয় সমভূমি: যে উপকূলীয় সমভূমিতে উত্থান ও নিমজ্জন – উভয় প্রকার প্রক্রিয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, তাকে যৌগিক উপকূলীয় সমভূমি বলে।উদাহরণ: অনেক উপকূলীয় অঞ্চলেই দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন প্রকার ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন ঘটায় যৌগিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো একটি উদাহরণকে কেবল যৌগিক হিসেবে চিহ্নিত করা কঠিন।
রচনাধর্মী প্রশ্ন

১. ‘পাতসঞ্চারণ ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তির প্রধান কারণ’-ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বর্তমানে ভূবিজ্ঞানীরা পাতসঞ্চালন (Plate tectonics) মতবাদের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা করেছেন, যেমন:

(১) পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে, ভূত্বক কয়েকটি গতিশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত, যারা গুরুমণ্ডলের উপরের দিকে প্লাস্টিকের মতো থকথকে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের ওপর ভেসে থাকে। এক-একটি পাত কেবল মহাদেশ (বা দেশ) কিংবা মহাসাগর অথবা দুই-ই মিলিয়ে গঠিত হতে পারে, যেমন : ইউরেশিয়ান প্লেট, আফ্রিকান প্লেট, ভারতীয় প্লেট, প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট প্রভৃতি।
(২) ভয়ংকর উষ্ণতার ফলে ভূগর্ভের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়, তার ফলে এই পাতগুলো গতিশক্তি লাভ করে এবং অতি ধীরগতিতে (বছরে ১০ মিলিমিটার মাত্র) চলতে থাকে।
(৩) পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরের ওপর ভাসতে-ভাসতে ভূত্বকের একটি গতিশীল পাত যখন অন্য একটি পাতের খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রবল চাপের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় গতিশীল পাত দুটির মধ্যবর্তী অগভীর খাতে যদি পলিসঞ্চয় ঘটে (অথবা আগে থেকেই ওই অংশে যদি পলিসঞ্চয় ঘটে থাকে) তবে পাতের চাপে সঞ্চিত পলিস্তরে ভাঁজ পড়তে থাকে। পার্শ্বচাপ ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজগুলো বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে এসে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে। পৃথিবীর অধিকাংশ ভঙ্গিল পর্বত মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। (যেমন-ইউরেশীয় ও ভারতীয় পাতের সংঘর্ষে এশিয়ার হিমালয় পর্বতমালা আর আফ্রিকা ও ইউরোপীয় পাতের সংঘর্ষে ইউরোপের আল্পস্ পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে।)

২. উদাহরণসহ স্তূপ পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: স্তূপ পর্বতের উৎপত্তির ব্যাখ্যা : ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশের শিলাস্তরের চ্যুতির ঝুলন অংশের উত্থান (স্তূপ পর্বতের উৎপত্তি) কিংবা বসে যাওয়ার মতো ভূ-প্রাকৃতিক ঘটনার ফলেই স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার উৎপত্তি হয়। স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার উৎপত্তি পরস্পর সংযুক্ত, কারণ :

(১) প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূত্বকের কোথাও সংকোচন টান, আবার কোথাও প্রসারণ চাপ পড়ে যার ফলে ভূত্বকের শিলাস্তরে ফাটল বা গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরপর যদি আবার ভূ-আলোড়ন হয়, তবে ওই ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে আর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে চ্যুতি বলে। ভূত্বকে যে রেখা বরাবর চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে চ্যুতিরেখা বলে।
(২) প্রবল ঊর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপের ফলে কোনো দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অঞ্চল যখন পাশের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াভাবে উপরে উঠে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দুটি নীচে বসে যায়, তখন উপরে উঠে আসা অংশটি স্তূপ পর্বতে পরিণত হয় এবং নীচে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকারূপে বিরাজ করে। এইভাবে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্তূপ পর্বতকে হোর্স্ট (horst) বলা হয়। উদাহরণ: ভারতের সাতপুরা পর্বতটি হল হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের উদাহরণ।
(৩) ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের প্রবল নিম্নচাপের ফলে কোনো সময় দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ যদি খাড়াভাবে নীচে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকায় পরিণত হয়, তখন গ্রস্ত উপত্যকাটির দুপাশের খাড়া অংশ দুটি স্তূপ পর্বতের আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এইভাবে সৃষ্টি হওয়া গ্রস্ত উপত্যকাগুলোকে ‘গ্রাবেন’ বলে (জার্মানির রাইন নদী উপত্যকাটি একটি গ্রাবেন-এর উদাহরণ)।
(৪) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির দুপাশের শিলাস্তর বসে গেলে ও তার মধ্যবর্তী অংশ একইভাবে থাকলে স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকারূপে এবং মধ্যবর্তী অংশটি স্তূপ পর্বতরূপে বিরাজ করে।
(৫) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধবর্তী অংশ তির্যকভাবে উঠে থাকলেও স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি হতে পারে (উদাহরণ: পশ্চিমঘাট পর্বতমালা)।

উদাহরণ:
(১) ফ্রান্সের ভোজ ও জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট স্তূপ পর্বত।
(২) ভারতের নর্মদা ও তাপ্তি নদীদ্বয়ের গ্রস্ত উপত্যকার মধ্যবর্তী সাতপুরা একটি স্তূপ পর্বত।

৩. উদাহরণসহ আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি বর্ণনা করো।

উত্তর: পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের উত্তপ্ত ও গলিত ম্যাগমা বা লাভা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা ভূত্বকের ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়। ভূপৃষ্ঠের একই স্থানে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা বারংবার ঘটলে সেই স্থানে লাভা সঞ্চিত হয়ে যখন পর্বতের আকার ধারণ করে তখন তাকে আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলে।

পাতসঞ্চরণ তত্ত্ব অনুসারে আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি:

(১) কোনো একটি মহাসাগরীয় পাত অপর একটি মহাদেশীয় পাতের দিকে অগ্রসর হলে দুইটি পাতের সংযোগস্থলে মহাসাগরীয় পাতের প্রান্তসীমা মহাদেশীয় পাতের নীচে ঢুকে যায় (Subduction) এবং নিমজ্জিত পাতের কিছু অংশ অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরে প্রবেশ করে গলতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রচণ্ড চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের ৮০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার নীচে তাপমাত্রা ভয়ানক বেড়ে যায়। এই তাপে ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন পদার্থ ও নিমজ্জিত পাতের অংশবিশেষ গলে গিয়ে তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমার সৃষ্টি হয় এবং গ্যাসের উৎপত্তি হয়।
(২) এ গ্যাসীয় বুদ্বুদগুলোর প্রচন্ড চাপে ভূগর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা দুটো পাতের সীমানা বরাবর বা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা ভূস্তরের ফাটল দিয়ে ভূত্বকের বাইরে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়। এই কারণে নিমজ্জিত পাতসীমানায় ভূত্বকের দুর্বল অংশে একাধিক আগ্নেয়গিরি ও আগ্নেয়দ্বীপ সৃষ্টি হয়। ভূত্বকের এই অংশ অস্থিত (Unstable) থাকায় প্রায়ই এই অংশে ভূ-আলোড়ন ও ভূমিকম্প হয়।
(৩) ভূপৃষ্ঠের একই স্থানে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা বারংবার ঘটলে বারবার অগ্ন্যুৎপাতের সময় ফাটলের চারদিকে আগ্নেয় পদার্থ জমা হয়ে যখন পর্বতের আকার ধারণ করে তখন তাকে আগ্নেয় পর্বত বলা হয়।
(৪) বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে বারংবার লাভা নির্গমনের সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকে এবং আগ্নেয় পর্বতটি ক্রমশ শঙ্কুর মতো আকৃতি নেয়। তবে পরবর্তী অগ্ন্যুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরির শঙ্কুর মতো আকৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে গিয়ে গম্বুজাকৃতি বা বিস্ফোরিত জ্বালামুখবিশিষ্ট কিংবা মিশ্র-শঙ্কু আকৃতির হয়। তাই বেশিরভাগ আগ্নেয় পর্বতগুলো মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট হয় এবং এদের ঢাল মাঝামাঝি রকমের। সঞ্চয়কাজের ফলে সৃষ্টি হয় বলে এই জাতীয় পর্বতকে সঞ্চয়জাত পর্বত বা আগ্নেয় পর্বত বলে।

উদাহরণ: পৃথিবীর বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি, যেমন জাপানের ফুজিয়ামা, আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, ইটালির ভিসুভিয়াস, ভারতের ব্যারেন ও নরকোন্ডাম প্রভৃতি পর্বতগুলো সঞ্চয়জাত পর্বতের উদাহরণ। জাপানের ফুজিয়ামা, ইটালির ভিসুভিয়াস, ভারতের ব্যারেন, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া-এই জাতীয় পর্বত।

৪. চিত্র ও উদাহরণ সহযোগে যে-কোনো একটি পর্বতের সৃষ্টির কারণ বর্ণনা করো।

উত্তর: ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টির কারণ নিচে বর্ণনা করা হলো:

পাতসঞ্চরণ তত্ত্ব অনুসারে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি: বর্তমানে ভূবিজ্ঞানীরা পাতসঞ্চালন (Plate tectonics) মতবাদের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা করেছেন, যেমন:

(১) পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে, ভূত্বক কয়েকটি গতিশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত, যারা গুরুমণ্ডলের উপরের দিকে প্লাস্টিকের মতো থকথকে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের ওপর ভেসে থাকে। এক-একটি পাত কেবল মহাদেশ (বা দেশ) কিংবা মহাসাগর অথবা দুই-ই মিলিয়ে গঠিত হতে পারে, যেমন : ইউরেশিয়ান প্লেট, আফ্রিকান প্লেট, ভারতীয় প্লেট, প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট প্রভৃতি।
(২) ভয়ংকর উষ্ণতার ফলে ভূগর্ভের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়, তার ফলে এই পাতগুলো গতিশক্তি লাভ করে এবং অতি ধীরগতিতে (বছরে ১০ মিলিমিটার মাত্র) চলতে থাকে।
(৩) পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরের ওপর ভাসতে-ভাসতে ভূত্বকের একটি গতিশীল পাত যখন অন্য একটি পাতের খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রবল চাপের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় গতিশীল পাত দুটির মধ্যবর্তী অগভীর খাতে যদি পলিসঞ্চয় ঘটে (অথবা আগে থেকেই ওই অংশে যদি পলিসঞ্চয় ঘটে থাকে) তবে পাতের চাপে সঞ্চিত পলিস্তরে ভাঁজ পড়তে থাকে। পার্শ্বচাপ ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজগুলো বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে এসে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে। পৃথিবীর অধিকাংশ ভঙ্গিল পর্বত মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

উদাহরণ : ইউরোপ মহাদেশের আল্পস, এশিয়া মহাদেশের হিমালয়, উত্তর আমেরিকা মহাদেশের রকি, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দিজ প্রভৃতি হল ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ।

৫. মালভূমি সৃষ্টির কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উত্তর: ভূপৃষ্ঠে মালভূমি সৃষ্টি হওয়ার প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে, যেমন:

(১) ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ীভবন: অনেক সময় নদী, হিমবাহ, সূর্যতাপ কিংবা বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়ীভবনের ফলে পার্বত্য অঞ্চল ক্ষয় পেয়ে মালভূমিতে পরিণত হয়। উদাহরণ: মধ্যভারতের বুন্দেলখণ্ড ও বাঘেলখণ্ড মালভূমিদ্বয় ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ীভবনের ফলে গঠিত হয়েছে।
(২) ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন (Plate techtonics): ভূত্বক কয়েকটি পাত বা প্লেট (Plate)-এ বিভক্ত, গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টেলের উপর এদের সঞ্চারণশীল হওয়া মালভূমি সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ। উদাহরণ: প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ড ও আঙ্গারাল্যান্ডের মহাদেশীয় পাতগুলো প্রবল ভূ-আন্দোলনের ফলে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমি, আরব মালভূমি, ব্রাজিল মালভূমি, আফ্রিকার মালভূমি এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মালভূমি সৃষ্টি করেছে।
(৩) ভূপৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয়: ভূপৃষ্ঠের কোনো কোনো স্থানে লাভা সঞ্চিত হয়ে লাভা মালভূমির সৃষ্টি করেছে। উদাহরণ: দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্র্যাপ।

৬. যে-কোনো তিন ধরনের মালভূমির উৎপত্তি চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: তিন ধরনের মালভূমির উৎপত্তি নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:

(ক) পর্বতবেষ্টিত মালভূমি: প্রবল গিরিজনি ভূ-আলোড়ন বা পার্শ্বচাপের ফলে ভঙ্গিল পর্বত উত্থানের সময় সাধারণত দুটি ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যবর্তী মহীখাত (বিস্তীর্ণ নীচু অঞ্চল) মধ্যবর্তী উঁচু হয়ে পর্বতবেষ্টিত মালভূমির সৃষ্টি হয়। ভঙ্গিল পর্বতের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ভূত্বকের দুর্বলস্থানে পাতসীমানা-সংলগ্ন অঞ্চলে পর্বতের মধ্যবর্তী নীচু অংশগুলো পার্শ্বচাপের ফলে উঁচু হয়ে এই জাতীয় মালভূমির উৎপত্তি হয়।

(খ) লাভা মালভূমি: বিদার অগ্ন্যুদ্গমের মাধ্যমে কোনো বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূগর্ভের ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো চ্যুতি, ফাটল, জোড় বা ছিদ্রপথ দিয়ে (Fissure eruption) লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার পর ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়ে যে মালভূমি গড়ে ওঠে তাকে লাভা মালভূমি বা সঞ্চয়জাত মালভূমি বা আগ্নেয় মালভূমি বলে। বিদার অগ্ন্যুদ্গমের (Fissure eruption) মাধ্যমে ভূগর্ভের ম্যাগমা লাভারূপে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়ে যে মালভূমির সৃষ্টি করে তাকে লাভা মালভূমি বলে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ৭ থেকে ১৩ কোটি বছর আগে ভূগর্ভের গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল অঞ্চল থেকে অতি উত্তপ্ত তরল লাভাস্রোত বহু ফাটলের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে এসে কোনোরকম বিস্ফোরণ না-ঘটিয়ে ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম ভাগের প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার অঞ্চলকে লাভায় ঢেকে ফেলেছিল, কালক্রমে যা জমাট বেঁধে দাক্ষিণাত্যের লাভাগঠিত মালভূমি গঠন করেছে। বেশ কয়েকবার এখানে লাভা উদ্গিরণের ঘটনা ঘটার মধ্যবর্তী সময়ে এখানে পাললিক শিলাস্তরের সৃষ্টি হয়।

(গ) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি: নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির নগ্নীভবন ক্রিয়ার দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, নরম শিলায় গঠিত অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নদী উপত্যকার সৃষ্টি হয় এবং কঠিন শিলায় গঠিত কম ক্ষয়প্রাপ্ত উঁচু অংশ মালভূমির আকারে অবস্থান করে। এইভাবে কোনো প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল যখন ছোটো-বড়ো নদী-উপত্যকার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে মালভূমির আকারে অবস্থান করে তখন তাকে বলা হয় ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি।

৭. দুটি উল্লেখযোগ্য মালভূমির বিবর্তন আলোচনা করো।

উত্তর: দুটি উল্লেখযোগ্য মালভূমির বিবর্তন নিচে আলোচনা করা হলো:

(ক) ডেকানট্র্যাপ (দাক্ষিণাত্য মালভূমি): বিদার অগ্ন্যুদ্গমের (Fissure eruption) মাধ্যমে ভূগর্ভের ম্যাগমা লাভারূপে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়ে যে মালভূমির সৃষ্টি করে তাকে লাভা মালভূমি বলে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ৭ থেকে ১৩ কোটি বছর আগে ভূগর্ভের গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল অঞ্চল থেকে অতি উত্তপ্ত তরল লাভাস্রোত বহু ফাটলের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে এসে কোনোরকম বিস্ফোরণ না-ঘটিয়ে ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম ভাগের প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার অঞ্চলকে লাভায় ঢেকে ফেলেছিল, কালক্রমে যা জমাট বেঁধে দাক্ষিণাত্যের লাভাগঠিত মালভূমি গঠন করেছে। বেশ কয়েকবার এখানে লাভা উদ্গিরণের ঘটনা ঘটার মধ্যবর্তী সময়ে এখানে পাললিক শিলাস্তরের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে সূর্যকিরণ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, নদীস্রোত প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিশেষ এক ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি করেছে, যেমন: (i) এই বিস্তীর্ণ মালভূমির উপরের অংশ টেবিলের মতো সমতল এবং (ii) পার্শ্বদেশ সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নীচে নেমে গেছে। এই বিশেষ আকৃতির জন্যেই দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশকে ডেকানট্র্যাপ বলা হয় [(Decan = দাক্ষিণাত্য), সুইডিশ শব্দ ট্র্যাপ = Stair = সিঁড়ি]।

(খ) মহাদেশীয় মালভূমি: ভূত্বকের পাত সঞ্চরণের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন শিলায় গঠিত অংশগুলো পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে মালভূমি গঠন করে, তাকে বলা হয় মহাদেশীয় মালভূমি। মহাদেশীয় মালভূমিগুলির মধ্যে এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যেগুলি অতি প্রাচীনকালে (শিলাস্তরের বয়স ১০০ কোটি বছরের বেশি) গঠিত হয়েছে। শক্ত শিলায় গঠিত এই মালভূমিগুলি সুদৃঢ় (Stable) ও অনমনীয় (Rigid)। এই মালভূমিগুলিতে ফাটল, চ্যুতি ও ভাঁজ খুবই কম দেখা যায়। মহাদেশীয় মালভূমিগুলির বিস্তার খুব বেশি হয়। সুদীর্ঘকাল ধরে ক্ষয় ও নগ্নীভবন কাজের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এই মালভূমিগুলি নিম্ন মালভূমি বা সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

অতিরিক্ত (Extras)

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)

coming soon

প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)

coming soon

Get notes of other boards, classes, and subjects

NBSESEBA/AHSEC
NCERTTBSE
WBBSE/WBCHSEICSE/ISC
BSEM/COHSEMMBOSE
Custom Notes ServiceQuestion papers

Share with others

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Only registered users are allowed to copy.