দুর্যোগ ও বিপর্যয়: WBBSE ক্লাস 9 ভূগোল ও পরিবেশ (Bhugol o Poribesh)

দুর্যোগ ও বিপর্যয় wbbse
Share + Two Real PDF + Guest PDF
WhatsApp

এখানে (chapter 6) দুর্যোগ ও বিপর্যয়: WBBSE ক্লাস ৯ ভূগোল ও পরিবেশ (Bhugol o Poribesh) (বাংলা মাধ্যম)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

Select medium
English medium notes
Bengali medium notes
OFN – Free vs Registered

সারাংশ (summary)

ষষ্ঠ অধ্যায় দুর্যোগ ও বিপর্যয় (Durjog O Biporjoy) নিয়ে আমরা এখন জানবো। আমাদের চারপাশে নানা ঘটনা ঘটে যা আমাদের জীবনযাত্রায় বাধা দেয় বা ক্ষতি করে, সেগুলোকে আমরা দুর্যোগ বলি। যেমন – ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প। যখন এই দুর্যোগ খুব বড়ো আকার নেয়, অনেক বেশি ক্ষতি করে, মানুষের জীবন ও সম্পত্তি নষ্ট হয়, তখন তাকে বিপর্যয় বলে। সহজ কথায়, বিপর্যয় হলো খুব বড়ো মাপের দুর্যোগ। দুর্যোগ অল্প সময়ের জন্য হয়, কিন্তু বিপর্যয় অনেক দিন ধরে চলতে পারে। দুর্যোগে ক্ষতি কম হয়, মানুষ সামলে নিতে পারে, কিন্তু বিপর্যয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়, যা সামলানো খুব কঠিন।

দুর্যোগ ও বিপর্যয়কে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমটি হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রকৃতির কারণে হয়, যেমন – ভূমিকম্প, সুনামি। দ্বিতীয়টি হলো প্রায়-প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার জন্য প্রকৃতি ও মানুষ দুজনেই দায়ী, যেমন – মানুষের কাজের ফলে নদীর নাব্যতা কমে বন্যা হওয়া। তৃতীয়টি হলো সামাজিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, যা মানুষের ভুলের বা কাজের ফলে হয়, যেমন – যুদ্ধ, দূষণ, বা কারখানার দুর্ঘটনা।

বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের মধ্যে বন্যা খুব পরিচিত। নদীর জল বেড়ে চারপাশ ডুবিয়ে দিলে বন্যা হয়। এর কারণ হতে পারে খুব বেশি বৃষ্টি, বা নদীতে পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়া। মানুষও বন কাটার ফলে বা নদীখাতে বাড়িঘর বানানোর ফলে বন্যার কারণ হয়। বন্যায় ফসল নষ্ট হয়, বাড়িঘর ভাঙে, রোগ ছড়ায়।

খরা হলো যখন অনেকদিন ধরে বৃষ্টি খুব কম হয় বা একদমই হয় না। এতে মাটি শুকিয়ে যায়, ফসল হয় না, খাবার ও জলের অভাব দেখা দেয়। গাছপালা, পশুপাখি মারা যায়।

ঘূর্ণিঝড় হলো খুব জোরে হাওয়া ঘোরার সাথে সাথে প্রবল বৃষ্টি। এতে বাড়িঘর, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। সমুদ্রের ধারে জলোচ্ছ্বাস হয়, মানে সমুদ্রের জল অনেকটা ওপরে উঠে এসে সব ডুবিয়ে দেয়।

ভূমিকম্পে মাটি কেঁপে ওঠে। মাটির নীচে পাত নড়াচড়া করলে বা আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বেরোনোর সময় এটা হতে পারে। এতে বাড়িঘর ভেঙে যায়, রাস্তাঘাট নষ্ট হয়। সমুদ্রের নীচে ভূমিকম্প হলে সুনামি হতে পারে, যা বিশাল উঁচু ঢেউ নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে।

পাহাড় থেকে যখন বরফ বা মাটি-পাথর হঠাৎ নীচে নেমে আসে, তাকে হিমানী সম্প্রপাত বা ভূমিধস বলে। এতে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, বাড়িঘর চাপা পড়ে। বনে আগুন লেগে গেলে তাকে দাবানল বলে। শুকনো আবহাওয়া বা মানুষের অসাবধানতায় এটা হতে পারে। এতে গাছপালা ও বন্যপ্রাণী মারা যায়।

পশ্চিমবঙ্গে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় প্রায়ই দেখা যায়। দার্জিলিং পাহাড়ে ভূমিধস হয়। নদী ভাঙনও একটা বড়ো সমস্যা।

এইসব দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া, দুর্যোগের সময় মানুষকে উদ্ধার করা ও সাহায্য করা, এবং পরে ক্ষতিপূরণ করে আবার সব স্বাভাবিক করার চেষ্টাকে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বলে। ছাত্রছাত্রীরাও এতে সাহায্য করতে পারে, যেমন – মানুষকে সচেতন করা, ত্রাণ কাজে সাহায্য করা, গাছ লাগানো।

পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Prantik textbook)

সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো

১. দুর্যোগ ও বিপর্যয়—

(ক) দুই প্রকার
(খ) তিন প্রকার
(গ) চার প্রকার
(ঘ) পাঁচ প্রকার

উত্তর: (খ) তিন প্রকার

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় কত প্রকার—

(ক) দুই
(খ) তিন
(গ) চার
(ঘ) পাঁচ

উত্তর: (গ) চার

৩. বন্যা—

(ক) দুই প্রকার
(খ) তিন প্রকার
(গ) চার প্রকার
(ঘ) পাঁচ প্রকার

উত্তর: (খ) তিন প্রকার

৪. খরা সাধারণত যে ক-ধরনের হয়—

(ক) তিন
(খ) চার
(গ) পাঁচ
(ঘ) ছয়

উত্তর: (ক) তিন

৫. ঘূর্ণিঝড়কে ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হয়—

(ক) সাইক্লোন
(খ) টাইফুন
(গ) হ্যারিকেন
(ঘ) টর্নেডো।

উত্তর: (ক) সাইক্লোন

৬. বন্যার প্রাকৃতিক কারণ হল—

(ক) প্রবল বর্ষণ
(খ) অতিরিক্ত গাছ কাটা
(গ) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ
(ঘ) নদীতে বাঁধ দেওয়া

উত্তর: (ক) প্রবল বর্ষণ

৭. খরার সৃষ্টি হয়—

(ক) অতিবৃষ্টি
(খ) অনাবৃষ্টি
(গ) দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির জন্য
(ঘ) কোনোটাই নয়

উত্তর: (খ) অনাবৃষ্টি

৮. কত কম বৃষ্টি হলে তীব্র খরা বলে অভিহিত করা হয়—

(ক) ৫০ শতাংশ
(খ) ২০ শতাংশ
(গ) ৩০ শতাংশ
(ঘ) ৪০ শতাংশ

উত্তর: (ক) ৫০ শতাংশ

৯. হিমানী সম্প্রপাত-প্রবণ অঞ্চলের অন্তর্গত হল—

(ক) সিকিম
(খ) উত্তরপ্রদেশ
(গ) দিল্লি
(ঘ) ত্রিপুরা

উত্তর: (ক) সিকিম

১০. মহারাষ্ট্রের কয়নানগরে ভূমিকম্প হয়েছিল—

(ক) ১৯৬৭
(খ) ১৯৭৭
(গ) ১৯৮৭
(ঘ) ১৯৯৭ সালে

উত্তর: (ক) ১৯৬৭

১১. বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ২০০৪ সালে ডিসেম্বরে কত তারিখ ভয়াবহ সুনামি আছড়ে পড়ে?

(ক) ২৫
(খ) ২৬
(গ) ২৭
(ঘ) ২৮

উত্তর: (খ) ২৬

১২. ফারাক্কা সেচবাঁধের ছাড়া জলে প্লাবিত হয়—

(ক) মালদহ
(খ) হাওড়া
(গ) হুগলি
(ঘ) বাঁকুড়া

উত্তর: (ক) মালদহ

১৩. খরা ঘটলে দেখা যায়—

(ক) জলোচ্ছ্বাস
(খ) জলসংকট
(গ) জলবণ্টন বৈষম্য
(ঘ) জলদূষণ

উত্তর: (খ) জলসংকট

১৫. একটি মহাজাগতিক বিপর্যয় হল—

(ক) সুনামি
(খ) দাবানল
(গ) উল্কাপাত
(ঘ) ব্লিজার্ড

উত্তর: (গ) উল্কাপাত

বাক্যটি ‘সত্য’ হলে ‘ঠিক’ এবং ‘অসত্য’ হলে ‘ভুল’ লেখো

১. দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

উত্তর: ভুল

কারণ: দুর্যোগ হল ঘটনার প্রথম পর্যায় আর বিপর্যয় হল দুর্যোগের চরম বা অন্তিম অবস্থা। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি সাধারণত সীমিত এবং তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, কিন্তু বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক এবং তা সহজে পূরণ করা যায় না। এদের মধ্যে উৎপত্তি, ব্যপ্তি, ক্ষয়ক্ষতিসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে।

২. দুর্যোগকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ভূবিজ্ঞানীরা দুর্যোগ ও বিপর্যয়কে তাদের চরিত্র অনুযায়ী প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন: প্রাকৃতিক, প্রায়-প্রাকৃতিক এবং সামাজিক ও মনুষ্যসৃষ্ট।

৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির প্রকৃতি অনুযায়ী এগুলিকে চারটি উপবিভাগে ভাগ করা হয়, যেমন – ভূতাত্ত্বিক (ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত), ভূসংস্থানিক (ভূমিধস), আবহাওয়া সংক্রান্ত (বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়) এবং জীব-সংশ্লিষ্ট (মহামারি)।

৪. বন্যা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: বন্যা প্রাকৃতিক কারণে (যেমন – একটানা ভারী বর্ষণ, নদীখাতে পলি জমা) ঘটলেও মানুষের বিভিন্ন কাজের ফলেও (যেমন – বনভূমি ধ্বংস, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাভূমি ভরাট) বন্যা হতে পারে। তাই বন্যা প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই ঘটে।

৫. মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলেও বন্যা হতে পারে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: মানুষের বিভিন্ন কাজ যেমন – অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষবাস, বনভূমি ধ্বংস করা, নদীর ধারে অপরিকল্পিতভাবে জনবসতি বা শিল্প গড়ে তোলা, জলাভূমি বুজিয়ে ফেলা ইত্যাদি কারণে নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমে যায় বা জলনিকাশে বাধা পায়, যার ফলে বন্যা হয়।

৬. কোনো অঞ্চলে বারংবার খরা হলে সেই অঞ্চলকে খরাপ্রবণ অঞ্চল বলে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: যে সমস্ত অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছর বা কয়েক বছর অন্তর অন্তর খরার প্রকোপ দেখা যায়, সেই অঞ্চলগুলিকে খরাপ্রবণ অঞ্চল বলা হয়।

৭. ঘূর্ণিঝড়ের স্থায়িত্ব ১২-১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: ঘূর্ণিঝড়ের স্থায়িত্ব সাধারণত ১২ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে, কেবল ১২-১৪ ঘণ্টা নয়।

৮. ব্লিজার্ড শব্দটির উৎসস্থল হল যুক্তরাজ্য।

উত্তর: ভুল

কারণ: ‘ব্লিজার্ড’ শব্দটির উৎসস্থল হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতমালার পূর্বদিকে অবস্থিত বিশাল সমভূমি অঞ্চল।

৯. হিমানী সম্প্রপাত দুই প্রকার।

উত্তর: ভুল

কারণ: হিমানী সম্প্রপাত প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে: আলগা বরফের পতন, বরফের চাঁইয়ের পতন এবং পাউডার-সদৃশ বরফকুচির পতন।

১০. শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই ভূমিকম্প হয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: ভূমিকম্প প্রধানত প্রাকৃতিক কারণে (যেমন – পাতের সঞ্চালন, অগ্ন্যুৎপাত) ঘটলেও মানুষের কিছু কাজের ফলেও (যেমন – জলাধার নির্মাণ, পারমাণবিক বিস্ফোরণ) ভূমিকম্প হতে পারে।

১১. হিমানী সম্প্রপাতের ফলে ভূমিকম্প হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পার্বত্য অঞ্চলে বিশাল বরফের স্তূপ বা হিমানী সম্প্রপাত ঘটলে তার প্রভাবে স্থানীয়ভাবে ভূত্বকে কম্পন সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হতে পারে।

১২. সুনামি হল একটি জাপানি শব্দ।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট বিশাল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসকে জাপানি ভাষায় ‘সুনামি’ বলা হয়।

১৩. ২০০৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারত মহাসাগর সন্নিহিত অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভয়াবহ সুনামি আছড়ে পড়েছিল।

উত্তর: ভুল

কারণ: ভারত মহাসাগর ও সংলগ্ন অঞ্চলে ভয়াবহ সুনামি হয়েছিল ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর।

১৪. অরণ্যে গাছের ডালে ডালে ঘর্ষণের ফলে আগুন জ্বলে দাবানল সৃষ্টি করে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: শুষ্ক ঋতুতে বৃষ্টিপাত না হলে অরণ্যে গাছের শুকনো ডালের পরস্পরের সাথে ঘর্ষণের ফলে যে তাপ সৃষ্টি হয়, তা থেকে আগুন লেগে দাবানল হতে পারে।

১৫. পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার কয়েকটি ব্লক খরাপ্রবণ।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা এবং বাঁকুড়া জেলার পশ্চিমাংশের কয়েকটি ব্লক খরাপ্রবণ অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত।

১৬. তরাই অঞ্চলে বন্যা হয় না।

উত্তর: ভুল

কারণ: উত্তরবঙ্গের তিস্তা, মহানন্দা প্রভৃতি নদী বর্ষাকালে অতিরিক্ত জলের ফলে তরাই অঞ্চলেও বন্যার সৃষ্টি করে।

১৭. ডিভিসি-র ছাড়া জলে রাঢ় অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: দামোদর নদের ওপর নির্মিত জলাধারগুলি থেকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।

১৮. আশ্বিন-কার্তিক মাসে পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পশ্চিমবঙ্গে প্রাক্-মৌসুমি (চৈত্র-বৈশাখ) এবং উত্তর-মৌসুমি (আশ্বিন-কার্তিক) ঋতুতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ে।

১৯. বিপর্যয় মোকাবিলার জন্যে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।

উত্তর: ভুল

কারণ: বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আসন্ন বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দেওয়া এবং সতর্কীকরণ, যা বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা সম্ভব, বিশেষত ঝড় ও বন্যার ক্ষেত্রে।

২০. বিপর্যয় আঘাত হানার আগে গণ-অপসারণ করতে হয়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: প্রাক্-বিপর্যয় মোকাবিলা পর্বের একটি জরুরি পদক্ষেপ হল পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ পাওয়ার পর সম্ভাব্য বিপদগ্রস্ত এলাকা থেকে মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া বা গণ অপসারণ করা।

উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো

১. দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত কিছু ______ আছে।

উত্তর: পার্থক্য

২. দুর্যোগের ভয়ংকর পরিণতি হল ______।

উত্তর: বিপর্যয়

৩. দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের চরিত্র অনুযায়ী ______ ভাগে ভাগ করা হয়।

উত্তর: তিন

৪. ভূমিকম্প, অগ্ন্যুদ্গম ও সুনামি হল ______ বিপর্যয়।

উত্তর: প্রাকৃতিক

৫. স্বাভাবিকের তুলনায় ______-এর কম বৃষ্টি হলে তাকে তীব্র খরা বলা হয়।

উত্তর: ৫০%

৬. ঘূর্ণিঝড়ের স্থায়িত্ব ______ ঘণ্টা থেকে ______ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়।

উত্তর: ১২, ৭২

৭. অতি শীতল বায়ু ছোটো ও মাঝারি বরফ কুচির সঙ্গে প্রবল বেগে ধাবিত হলে তাকে ______ বলে।

উত্তর: তুষার-ঝড়

৮. তুষার-ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ কখনো-কখনো ঘণ্টায় ______ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়।

উত্তর: ১২০-১৬০

৯. তুষার-ঝড়ের সময় তাপমাত্রা প্রায় ______ সেলসিয়াসেরও নীচে নেমে যায়।

উত্তর: -৭°

১০. হিমানী সম্প্রপাত ______ ধরনের হয়ে থাকে।

উত্তর: তিন

১১. উল্কা বা ধূমকেতুর সঙ্গে ______ সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্প হতে পারে।

উত্তর: ভূপৃষ্ঠের

১২. সাম্প্রতিককালে ______ অগ্ন্যুৎপাতের সময় দৃশ্যমানতার অভাবে দীর্ঘদিন বিমান পরিষেবা বন্ধ ছিল।

উত্তর: আইসল্যান্ডে

১৩. ভারতে লাভাজাত ______ মৃত্তিকা উর্বর।

উত্তর: রেগুর

১৪. অরণ্যসম্পদের দগ্ধ হওয়ার ঘটনাকে ______ বলে।

উত্তর: দাবানল

১৫. চৈত্র-বৈশাখে এবং ______ মাসে পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।

উত্তর: আশ্বিন-কার্তিক

১৬. পুরুলিয়া এবং ______ জেলার কয়েকটি ব্লক খরাপ্রবণ।

উত্তর: বাঁকুড়া

১৭. সুন্দরবনে নদীবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের ______ জলের প্লাবন ঘটে।

উত্তর: নোনা

১৮. বিপর্যয় মোকাবিলার জন্যে স্বল্প ও ______ পরিকল্পনা করা হয়।

উত্তর: দীর্ঘমেয়াদি

১৯. আকাশবাণী, দূরদর্শন ও সংবাদপত্রে প্রচারিত হয় ঝড় ও ______।

উত্তর: বন্যার পূর্বাভাস

২০. বিপর্যয় আঘাত হানার আগে ______ অপসারণ করতে।

উত্তর: গণ

স্তম্ভ মেলাও

বামদিকডানদিক
১। টাইফুন① মৃদু খরা
২। ব্লিজার্ড② ৫০% কম বৃষ্টি
৩। ২৫% কম বৃষ্টি③ তিন প্রকার
৪। তীব্র খরা④ তুষার-ঝড়
৫। দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের চরিত্র⑤ ঘূর্ণিঝড়

উত্তর:

বামদিকডানদিক
১। টাইফুন⑤ ঘূর্ণিঝড়
২। ব্লিজার্ড④ তুষার-ঝড়
৩। ২৫% কম বৃষ্টি① মৃদু খরা
৪। তীব্র খরা② ৫০% কম বৃষ্টি
৫। দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের চরিত্র③ তিন প্রকার

বামদিকডানদিক
১। হিমানী সম্প্রপাত① ভূমিকম্পের প্রভাব
২। উপকূল ভূমির উত্থান② তিন প্রকার
৩। ব্যারেন③ আগ্নেয়দ্বীপ
৪। ভূমিধস④ অরণ্যদগ্ধ
৫। দাবানল⑤ মাধ্যাকর্ষণের টান

উত্তর:

বামদিকডানদিক
১। হিমানী সম্প্রপাত② তিন প্রকার
২। উপকূল ভূমির উত্থান① ভূমিকম্পের প্রভাব
৩। ব্যারেন③ আগ্নেয়দ্বীপ
৪। ভূমিধস⑤ মাধ্যাকর্ষণের টান
৫। দাবানল④ অরণ্যদগ্ধ
দু-এক কথায় উত্তরদাও

ক. দুর্যোগ কাকে বলে?

উত্তর: প্রাকৃতিক ও সামাজিক কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হওয়াকে দুর্যোগ বলে।

খ. বিপর্যয় বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বিপর্যয় হল দুর্যোগের চরম অবস্থা যখন সম্পদ ও প্রাণহানির পরিমাণ বিপুল হয়।

গ. সুনামি কাকে বলে?

উত্তর: সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্পজনিত কারণে সৃষ্ট উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাসকে সুনামি বলে।

ঘ. ভূমিধস কাকে বলে?

উত্তর: মাধ্যাকর্ষণের টানে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে যখন আলগা পাথরের চাঁই, শিলাচূর্ণ ও মাটি হঠাৎ নেমে আসে তাকে বলে ভূমিধস।

ঙ. দাবানল কাকে বলে?

উত্তর: সবুজ অরণ্যে বৃষ্টিহীন ঋতুতে হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অরণ্যসম্পদের দগ্ধ হওয়াকে দাবানল বলে।

চ. ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কোন্ অঞ্চলে বেশি দেখা যায়?

উত্তর: ক্রান্তীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো

ক. বন্যা কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: বন্যা বলতে বোঝায় নদীর প্লাবন, উপকূলীয় প্লাবন এবং বৃষ্টির জল হয়ে থাকে। নদীর প্লাবন অগভীর নদীখাত ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ঘটে। উপকূলীয় প্লাবন জোয়ার, সামুদ্রিক ঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাস, ভূ-আলোড়নের ফলশ্রুতিতে ঘটে। বৃষ্টির জল এক্ষেত্রে জলনিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বন্যাজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

খ. খরা কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: খরা সাধারণত তিন ধরনের হয়; যেমন: আবহাওয়াজনিত খরা, শস্য খরা, এবং নগরাঞ্চলের খরা।

গ. হিমানী সম্প্রপাত কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: হিমানী সম্প্রপাত তিন ধরনের হয়ে থাকে, যথা: আলগা বরফের পতন, বরফের চাঁইয়ের পতন এবং বাতাসে ভাসমান শুকনো পাউডার-সদৃশ বরফকুচির পার্বত্য ঢাল বেয়ে দ্রুতপতন।

ঘ. খরা বলতে কী বোঝ?

উত্তর: দীর্ঘদিন ধরে অতি অল্পবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি চলতে থাকলে যে অস্বাভাবিক শুষ্ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাকে বলে খরা।

ঙ. ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে?

উত্তর: ক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্ট হওয়া প্রবল ঘূর্ণিবাত যাতে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো বাতাস প্রবাহিত হয়, সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে, আকাশে কালো মেঘের সঞ্চার হয় ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বলে।

চ. তুষার-ঝড় কী?

উত্তর: অতিশীতল প্রবলবেগে প্রবাহিত বাতাস যখন ছোটো বা মাঝারি বরফকুচির সঙ্গে ধাবিত হয়, সেই পরিস্থিতিকে বলে তুষার-ঝড়। তাপমাত্রা এই সময় শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক নীচে নেমে যায়।

ছ. হিমানী সম্প্রপাত কী?

উত্তর: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে পর্বতের ঢাল বেয়ে প্রবল বেগে সঞ্চিত তুষারের বিশাল অংশ যখন নীচের দিকে নামতে থাকে, তখন নিম্নমুখী হঠাৎ ধাবমান এই বরফের বেশ কিছুটা পাহাড়ের গা বেয়ে নামে এবং বাকিটা বাতাসে ভেসে যায়—এককথায় একেই বলে হিমানী সম্প্রপাত।

জ. ভূমিকম্প কাকে বলে?

উত্তর: ভূগর্ভে হঠাৎ সৃষ্ট কোনো কম্পন যখন কঠিন ভূত্বকের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ক্ষণিকের জন্য কাঁপিয়ে দেয় সাধারণভাবে তাকেই বলে ভূমিকম্প।

সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

১. দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি হল: দুর্যোগ ঘটনার প্রথম পর্যায়ে সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে দুর্যোগ তার অন্তিম স্তরে বিপর্যয়ে পর্যবসিত হয়। মানুষের কার্যকলাপ দুর্যোগের কারণ হতে পারে, কিন্তু দুর্যোগের ভয়ংকর পরিণতি হল বিপর্যয়। দুর্যোগের ঘটনাকাল সাধারণত সীমিত (কয়েক সেকেন্ড থেকে দু-এক ঘণ্টা), কিন্তু বিপর্যয় অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী (কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ) হতে পারে। দুর্যোগ প্রভাবিত এলাকার আয়তন কম এবং এটি ছোটো মাপের বিপজ্জনক ঘটনা, কিন্তু বিপর্যয়গ্রস্ত এলাকার আয়তন বেশি এবং এটি বড়ো মাপের চরম ক্ষতিকারক অবস্থা। দুর্যোগ বারংবার ঘটতে পারে, কিন্তু বিপর্যয় অত ঘনঘন আসে না। দুর্যোগে অল্প ক্ষতি হলেও মানুষ সহজে সামলে ওঠে, কিন্তু বিপর্যয়ে ব্যাপক ধ্বংস, স্বাস্থ্য ও প্রাণহানি ঘটে, যার ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সাধারণত বাইরের সাহায্য প্রয়োজন হয় না, কিন্তু বিপর্যয় সামলে উঠতে অন্য রাজ্য বা রাষ্ট্রের সাহায্য প্রয়োজন হয়।

২. কীভাবে ঝড়ের উৎপত্তি হয়?

উত্তর: ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরে। প্রাক্-মৌসুমি (এপ্রিল-মে) ও উত্তর-মৌসুমি (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ঋতুর মাসগুলিতে এর প্রাবল্য দেখা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। বাতাসে গভীর নিম্নচাপের সঙ্গে আকাশে কালো মেঘের সঞ্চার হয় ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়।

৩. সুনামি উৎপত্তির কারণ কী?

উত্তর: সমুদ্রের নীচে দুটি মহাসাগরীয় পাত বা প্লেট পরস্পরের কাছাকাছি এলে গভীর সমুদ্রে জলের তলদেশে যে তীব্র আঘাত লাগে তার ফলে দীর্ঘ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে অতিদ্রুত অগ্রসর হয়ে মহাদেশের মহীঢালে বাধাপ্রাপ্ত হলে পরমুহূর্তে ক্ষুদ্র তরঙ্গে পরিণত হয়ে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিশাল ঢেউয়ের আকারে আছড়ে পড়ে। তবে, সমুদ্রের নীচে ঘটা সব ভূমিকম্পে সুনামি হয় না; জলরাশির নীচে ঊর্ধ্বমুখী ধাক্কা (upthrow) লাগলে তবেই সুনামির উৎপত্তি হয়।

৪. দাবানল কীভাবে সৃষ্টি হয়?

উত্তর: সবুজ অরণ্যে বৃষ্টিবিহীন শুষ্ক ঋতুতে গাছের একটি ডাল ভেঙে অপরটির ওপর পড়লে সেই ঘর্ষণজনিত তাপে আগুন জ্বলে ওঠে ও দাবানল ছড়ায়। এছাড়া, কোনো প্রয়োজনে আগুন জ্বেলে কাজ শেষ হওয়ার পরে অসাবধানতাবশত তা ঠিকমতো না নেভালে মুহূর্তে দাবানল জ্বলে উঠতে পারে।

৫. ভূমিধসে মানুষের ভূমিকা কী?

উত্তর: পাহাড়ের ঢালে গাছের শিকড় মাটিকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে। কিন্তু মানুষ গাছপালা কেটে বনজঙ্গল সাফ করলে মাটির সবুজ আবরণ অপসারিত হয়, ফলে বৃষ্টির ফোঁটা সরাসরি মাটিকে আঘাত করে তাকে আলগা করে দেয় এবং পরে জলের তোড়ে ওই আলগা মাটি খসে পড়ে ধস নামে। খাড়া পাহাড়ের ঢালে অতিরিক্ত পশুচারণ করলেও একই ঘটনা ঘটে। এছাড়া, ভূমিকম্পপ্রবণ পাহাড়ি ঢালে ইট ও কংক্রিটের বহুতল বাড়ি নির্মাণ, ডিনামাইট বিস্ফোরণ করে পাকারাস্তা তৈরি ইত্যাদি কার্যকলাপ দুর্বল ও খাড়া পাহাড়ি ঢালের ওপর অতিরিক্ত ভার ও অত্যাচার সৃষ্টি করে, যা সইতে না পেরে ধস নামে।

৬. খরা সৃষ্টিতে মানুষের ভূমিকা কী?

উত্তর: খরা সৃষ্টিতে মানুষের ভূমিকাগুলি হল: প্রথমত, অনিয়ন্ত্রিতভাবে অরণ্য সংহার ও গাছ কাটার ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে গেলে খরা প্রবণতার সূচনা হয়। দ্বিতীয়ত, ভূগর্ভস্থ জলস্তর থেকে অতিরিক্ত জল তোলার ফলে এবং বৃষ্টির মাধ্যমে তার পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ (recharge) না হওয়ার কারণে জলস্তর নীচে নেমে যায় ও মাটির আর্দ্রতা কমে, যা খরাজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, নগরাঞ্চল বা তার আশপাশের জলাশয় ও জলাভূমি বুজিয়ে ফেলার ফলে মানুষ খরা পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তোলে।

৭. পরিবেশের ওপর খরার প্রভাব কী?

উত্তর: পরিবেশের ওপর খরার প্রধান প্রভাবগুলি হল: প্রথমত, জলাভাবের কারণে গাছপালা ও ঘাস-লতা গুল্ম শুকিয়ে যায়, পাতা ঝরে গিয়ে সালোকসংশ্লেষ ব্যাহত হয় এবং বীজের অঙ্কুরোদগম বিঘ্নিত হয়। দ্বিতীয়ত, জল ও তৃণজাতীয় খাদ্যের অভাবে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, সুদান প্রভৃতি দেশগুলির মতো অঞ্চলে প্রতি বছর অসংখ্য গবাদি পশু ও তৃণভোজী প্রাণীর মৃত্যু হয়।

রচনাধর্মী প্রশ্ন

১। বন্যার কারণ ও ফলাফল বর্ণনা করো।

উত্তর: বন্যার প্রাকৃতিক কারণ: সাধারণভাবে বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এর জন্য অনেক সময় প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই দায়ী থাকে। একটানা প্রবল বর্ষণ; ভূমিক্ষয় ও অন্যান্য কারণে পলি পড়ে নদীখাত বুজে গিয়ে নদীর গভীরতা কমে গেলে নদী অতিরিক্ত জলবহন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং তার ফলে বন্যা হয়। পাহাড় থেকে সমতলে নামার সময় নদীখাতের ঢাল হঠাৎ পরিবর্তিত হলে পাহাড়ের পাদদেশে বন্যা হয়।

বন্যার মানুষের তৈরি কারণ: অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষবাস, বনভূমিতে অতিরিক্ত গাছ কাটা ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে পশুচারণের ফলে ভূমিক্ষয় বাড়ে ও ওই মাটি নদীতে গিয়ে পড়ে, এতে নদী তার গভীরতা হারায়—যার ফলশ্রুতিতে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যা হয়। উদাহরণ : অসম ও উত্তরবঙ্গের বন্যা। বহুমুখী নদী পরিকল্পনায় বাঁধের কৃত্রিম জলাধারে ক্রমাগত জমা হওয়া পলিকে নিয়মিতভাবে কেটে পরিষ্কার না করলে বাঁধের জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়ে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন বর্ষাকালের অতিরিক্ত জল ধরে রাখার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ বাঁধ থেকে জল ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে বাঁধের ছাড়া জলে বন্যা হয়। উদাহরণ: বর্ষাকালে দামোদর প্রকল্পের বাঁধ ও জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে হাওড়া ও হুগলি জেলার নানান স্থানে বন্যা হয়। নদীর দু-পাশে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ, কৃষিক্ষেত্র বা শিল্প গড়ে তোলার ফলে বর্ষাকালে নদীর জল বাধাপ্রাপ্ত হলে নদীতে বন্যা হয়। উদাহরণ: সুন্দরবন, বর্ধমান, মুরশিদাবাদের বন্যা। শহরের আশেপাশে ও গ্রামাঞ্চলে জলাশয় ও জলাভূমিগুলো বুজিয়ে ফেলার জন্য ওইসব নীচু জমিতে জল জমার সুযোগ থাকে না। বর্ষাকালে নদীর বাড়তি জল অপসারিত হতে না-পেরে বন্যা ঘটায়। কলকাতার বাগজোলা, কেষ্টপুর প্রভৃতি খালগুলোর সংস্কার না-করে পূর্বদিকের জলাভূমি ও লবণহ্রদ ভরাট করে নগরায়ণ হয়েছে, ফলে কলকাতা ও তাঁর সংলগ্ন অঞ্চলের বন্যাপ্রবণতা বেড়েছে।

সজিব সম্পদ ও মানুষের ওপর বন্যার প্রভাব: বন্যার কারণে খেতের ফসল, শাকসবজি অনেক দিন জলমগ্ন থাকায় পচে নষ্ট হয়; আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ ঠিকমতো হয় না এবং ছত্রাক ও কীটের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়; প্রবল স্রোতে বহু জীবজন্তু ভেসে যায় এবং শেষপর্যন্ত তাদের প্রাণহানি ঘটে। তৃণভোজী প্রাণীর খাদ্যেও টান পড়ে; প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ফসল বন্যার জলে নষ্ট হয়ে যায় ফলে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে; বহু মানুষের প্রাণহানি হওয়া ছাড়াও মাটির বাড়িগুলো ধসে যায় এবং শ্রমিকের উপার্জনের সুযোগ থাকে না; পথঘাট, রেললাইন ভেঙে যায়, পানীয় জলের অভাব তীব্র হয় এবং জলবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

২। ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা করো।

উত্তর: ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ : কোনো মহাদেশ বা সমুদ্রের নীচে এদের যে-কোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসে (convergence) বা পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায় (divergence) তখন তাদের সংযোগ রেখা বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে ভূমিকম্প হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল ও পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলি দুটি পাতের সংযোগরেখায় অবস্থিত। হিমালয়ের মতো নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে পর্বত গঠনের কাজ এখনও চলছে বলে এইসব অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল তাই ভূমিকম্পপ্রবণ। আগ্নেয়গিরির থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূগর্ভে চাপের হ্রাসবৃদ্ধির জন্য এবং বাষ্প ও তপ্ত গলিত পদার্থের চাপে ভূমিকম্প হয়। পৃথিবীর আগ্নেয়গিরির বলয় ও ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলি প্রায়ই একই জায়গায় অবস্থিত হয়। পার্বত্য অঞ্চলে হিমানী সম্প্রপাতের ফলে ভূমিকম্প হয়। উল্কা বা ধূমকেতুর সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের সংঘর্ষের ফলেও ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পের অপ্রাকৃতিক কারণ: নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করলে বিপুল জলরাশির চাপে ভূস্তরে ফাটল ধরে। জলাধারের জল ওই ফাটল পথে ভূগর্ভে প্রবেশ করে বাষ্পীভূত হয়ে ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ভূমিকম্প ঘটাতে পারে। ১৯৬৭ সালে মহারাষ্ট্রের কয়নানগরে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তার জন্য অনেকে কয়না বাঁধের জলাধারকে দায়ী করেন। মরুভূমির বা সমুদ্রের নীচে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সংলগ্ন অঞ্চলে ভূকম্পন হতে পারে।

পরিবেশ ও মানুষের ওপর ভূমিকম্পের প্রভাব: ভূমিকম্পের কারণে: ভূত্বকে চ্যুতি, ফাটল ও গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়; পাললিক শিলায় ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি হয়; নদীর গতি পরিবর্তিত হয়; ভূমিকম্পের প্রভাবে উপকূলভূমির উত্থান বা অবনমন হয়; সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প হলে উপকূলে জলোচ্ছ্বাস ঘটে বা সুনামি হতে পারে; ভূমিকম্পজনিত কারণে সমুদ্রে নতুন দ্বীপের সৃষ্টি হয় এবং অনেক সময় নদীর গতিপথ রুদ্ধ হয়ে হ্রদ সৃষ্টি হয় বা নতুন নদীর যাত্রা শুরু হয়; ভূমিকম্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে হিমানী সম্প্রপাত হয়ে থাকে; নিম্নভূমি উচ্চভূমিতে এবং উচ্চভূমি নিম্নভূমিতে পরিণত হয়; বাড়িঘর ভেঙে পড়ে অথবা তাতে চিড় ও ফাটল ধরে এবং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ট্রেনলাইন বেঁকে যায়। সেতু ধসে পড়ে। বহু মানুষের সম্পত্তি ও জীবনহানি ঘটে।

৩। পশ্চিমবঙ্গে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রকৃতি ও প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর: যেসব ‘প্রাকৃতিক’ ও ‘প্রায়-প্রাকৃতিক’ দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের সঙ্গে আমরা পরিচিত হলাম, তাদের মধ্যে কয়েকটির প্রাদুর্ভাব পশ্চিমবঙ্গে বেশি, যেমন: আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ বা বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গে বেশি ঘটে। এ ছাড়া দার্জিলিঙে ভূমিধস পরিচিত ঘটনা। ভারতকে ভূমিকম্প-প্রবণতার দিক থেকে যে পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গ তার মধ্যে তৃতীয় অঞ্চলে পড়ে; পশ্চিমবঙ্গে তাই ভূমিকম্প-প্রবণতা মাঝারি ধরনের বলা যায়। অন্যদিকে নদীর পাড় ভেঙে এই রাজ্যের বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয় ও গৃহত্যাগে বাধ্য হয়।

বন্যা : নদীমাতৃক রাজ্য বলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বন্যার সঙ্গে অতিপরিচিত। উত্তরবঙ্গের তিস্তা, মহানন্দা প্রভৃতি নদী তরাই অঞ্চলে ও সমভূমিতে প্রায়ই বন্যার প্রাদুর্ভাব ঘটায়, যেমন: দক্ষিণবঙ্গের গঙ্গা, দামোদর, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী প্রভৃতি বন্যাপ্রবণ নদীগুলিতে বাঁধ দেওয়া হলেও ১৯৭৮ ও ২০০০ সালে কয়েক লক্ষ মানুষ বানভাসি হয়েছে। হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায় ও পূর্ব মেদিনীপুরের ঘাটাল অঞ্চলে ফি-বছর বন্যার প্রকোপ ঘটে। অজয়ের মতো অনিয়ন্ত্রিত নদীতে প্রাকৃতিক কারণে এবং দামোদর নদের জলাশয় থেকে ডিভিসি-র ছাড়া জলে রাঢ় বঙ্গের ব্যাপক অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ফরাক্কা সেচবাঁধের ছাড়া জলে প্লাবিত হয় মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলা। নষ্ট হয় খেতের ফসল, প্রাণহানি ঘটে গবাদিপশু ও মানুষের, ভেসে যায় জলাশয়ের মাছ।

খরা : পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র পুরুলিয়া জেলা ও বাঁকুড়া জেলার কয়েকটি ব্লক খরাপ্রবণ। মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তার কারণে এই খরা কোনো কোনো বছর তার এলাকা বৃদ্ধি করে। অনাবৃষ্টি বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টির ঘটনা ছাড়াও জলসেচের জন্য গভীর নলকূপের সাহায্যে অতিরিক্ত পরিমাণে জল তোলার ফলে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর; পরের বছর ঠিকমতো বৃষ্টি না-হলে এই জলস্তরের উন্নতি (ground water) ঘটে না। অনাবৃষ্টিজনিত খরা তখন পর্যবসিত হয় মৃত্তিকার খরায় (edaphic drought) এবং অবশেষে ধান উৎপাদনের অনুপযোগী শস্য খরায় (crop drought) পরিণত হয়।

ঘূর্ণিঝড়: চৈত্র-বৈশাখে এবং আশ্বিন-কার্তিক মাসে পশ্চিমবঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব দেখা যায়। কখনও তার নামকরণ হয়েছে সিডার (২০০৭), নার্গিস (২০০৮), কখনও-বা আয়লা (২০০৯), পিলিন (২০১৩) বা হুদহুদ (২০১৪)। উত্তর-পশ্চিম থেকে আসা বৈকালিক কালবৈশাখীর ঝড়ের থেকে এর প্রকৃতি আলাদা। ৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে এর গতিবেগ এবং সঙ্গে চলে প্রবল বৃষ্টি। সমুদ্রসন্নিহিত পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলাগুলোও রেহাই পায় না। সুন্দরবনে নদীবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের নোনাজলের প্লাবন ঘটে ও মাটিতে নোনা ধরে তার উর্বরতা হ্রাস পায়। ধ্বংস হয় পানের বোরজ ও খেতের ফসল, ভেঙে পড়ে গ্রামীণ মাটির বাড়ি এবং অসহায় মানুষ ও গবাদিপশুর মৃত্যু ঘটে।

নদীপাড়ের ভাঙন: ভাগীরথীর ধারে অবস্থিত মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায় নদীপাড়ের ভাঙন বর্ষাকালের শেষে দুর্যোগ হয়ে দেখা দেয়। চিরতরে নদীবক্ষে চলে যায় বাস্তুজমি, চাষের খেত ও ফলের বাগান। উদ্বাস্তু মানুষ বাধ্য হয় স্থানত্যাগ করতে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় বিপুল এবং তার সামাজিক অভিঘাতও অসামান্য।

৪। বিপর্যয় মোকাবিলার বিভিন্ন পর্যায়গুলির বিবরণ দাও।

উত্তর: বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার এই উদ্যোগটিকে বলে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা চক্র। এর দুটি অংশ আছে, যথা : প্রারম্ভিক প্রস্তুতি বা বিপর্যয় ঘটার আগে প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও কারিগরি উদ্যোগ পর্ব; বিপর্যয় সংঘটন; বিপর্যয়কালীন জরুরি প্রতিক্রিয়া বা উদ্ধার ও ত্রাণপর্ব; পুনরুন্নয়ন বা সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন; পুনর্গঠন বা পরিকাঠামো মেরামতি ও পুনর্নির্মাণ এবং বিপর্যয়ের প্রভাব দূরীকরণ বা ক্ষতচিহ্ন সারিয়ে তোলা। এই চক্রের প্রথম তিনটি অংশ নিয়ে সংগঠিত হয় নাগরিক সুরক্ষা উদ্যোগ, যার দুটি ভাগ-প্রাক্-বিপর্যয় ও বিপর্যয়কালীন মোকাবিলা পর্ব। আবার ওই চক্রের শেষ তিনটি অংশ নিয়ে সংগঠিত হয় সম্পদ ও পরিকাঠামো পুনরুন্নয়ন উদ্যোগ যাকে বিপর্যয় পরবর্তী পর্ব বলে অভিহিত করা হয়।

প্রাক্-বিপর্যয় মোকাবিলা পর্ব: কোনো বিপর্যয় ঘটার আগে নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগোলিক প্রবণতা অনুযায়ী সম্ভাব্য বিপর্যয়-সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণকে বলে প্রাক্-বিপর্যয় মোকাবিলা পর্ব—যার অন্তর্গত কাজগুলি হল: সম্ভাব্য বিপর্যয় অতীতে ঘটে থাকলে প্রথম ধাপে এর ব্যাপ্তিস্থান, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, অতীতের পরিকল্পনার দুর্বলতা সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা, যাকে বলে দুর্যোগ বা বিপর্যয়ের মূল্যায়ন। দ্বিতীয় ধাপে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ও আঞ্চলিক ব্যাপ্তির আন্দাজের প্রেক্ষিতে মানচিত্রায়ন করা হয় এবং নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা অনুযায়ী সুরক্ষাদানের পদ্ধতি ও হিসাবনিকাশ করা হয়; একে বলে নিরাপত্তাহীনতার মূল্যায়ন। তৃতীয় ধাপে দেখা যায় প্রাক্-প্রস্তুতি সত্ত্বেও কতটা ক্ষয়ক্ষতি অনিবার্য হতে পারে, যাকে বলে ঝুঁকির মূল্যায়ন। চতুর্থ ধাপের কাজ হল আসন্ন বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দেওয়া ও সতর্কীকরণ। আকাশবাণী, দূরদর্শন ও সংবাদপত্রে প্রচারিত হয় ঝড় ও বন্যার পূর্বাভাস। ঝড় বা বন্যার সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য আশ্রয়স্থল নির্মাণ, শুদ্ধ পানীয় জল, শুকনো খাবার ও জীবনদায়ী ওষুধের ব্যবস্থা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এই পর্বের কাজ, যাকে বলে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। বিপর্যয়ের সময় সাধারণ মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ, উদ্ধারকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন এই পর্বের কাজ; একে বলে জনসচেতনতা ও প্রশিক্ষণ পর্ব। বিপর্যয় আঘাত হানার আগে গণ অপসারণ করতে হয়।

বিপর্যয়কালীন ও অব্যবহিত পরের মোকাবিলা পর্ব: এই পর্বের প্রধান কাজ: নিরাপত্তাহীন বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করা, তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নিয়ে আসা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা। রোগ সংক্রমণ ও মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত কীটনাশক, জীবনদায়ী ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর্মীর জোগান দেওয়াও এই পর্বের কাজ। নিহতদের সৎকার ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

উত্তর-বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পর্ব: বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার পরে সাধারণ মানুষ ও পরিকাঠামোকে তার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগকে বলে বিপর্যয়-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা পর্ব। এই পর্যায়ের কাজ তিনটি স্তরে বিভক্ত : প্রথম স্তরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অর্থ সাহায্য করা, বিমার টাকা দেওয়া, গৃহনির্মাণের উপকরণ দেওয়া, কৃষিঋণের বন্দোবস্ত বা মকুব করা ইত্যাদি কাজ করা হয়; দ্বিতীয় স্তরে ধ্বংসস্তূপ সরানো, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও রেলপথ মেরামতি, নলকূপ স্থাপন, বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

৫। পশ্চিমবঙ্গে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার জন্যে গৃহীত কৌশলসমূহের উল্লেখ করো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার জন্যে গৃহীত কৌশলসমূহগুলি হল: রাজ্যস্তরে কেন্দ্রীয় কমিটি ও তার নীচের স্তরগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন, ভূমির ব্যবহার পরিকল্পনা ও তার আঞ্চলিকীকরণ, আইনি ও নীতিগত কাঠামো তৈরি, মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রশাসনিক সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, পূর্বাভাস প্রদান ব্যবস্থাকে জোরদার করা, মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, তথ্যভাণ্ডার গড়ে নিরন্তর গবেষণা চালানো, জরুরি পরিসেবা অব্যাহত রাখা, গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা, আশ্রয়স্থল রক্ষণাবেক্ষণ করা ও ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা।

অতিরিক্ত (Extras)

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)

coming soon

প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)

coming soon

Ron'e Dutta
Ron'e Dutta
Ron'e Dutta is a journalist, teacher, aspiring novelist, and blogger who manages Online Free Notes. An avid reader of Victorian literature, his favourite book is Wuthering Heights by Emily Brontë. He dreams of travelling the world. You can connect with him on social media. He does personal writing on ronism.

Get notes of other classes and subjects

NBSE SEBA/AHSEC
NCERT TBSE
WBBSE/WHCHSE ICSE/ISC
BSEM/COHSEM MBOSE
Share Feedback Question Papers
Notify change in syllabus/books Share PDFs of books, get benefits
Request notes not available now Share PDFs of question papers

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Only for Registered Users