পশ্চিমবঙ্গ: WBBSE ক্লাস 9 ভূগোল ও পরিবেশ (Bhugol o Poribesh)

পশ্চিমবঙ্গ WBBSE
Share + Two Real PDF + Guest PDF
WhatsApp

এখানে (chapter 8) পশ্চিমবঙ্গ: WBBSE ক্লাস ৯ ভূগোল ও পরিবেশ (Bhugol o Poribesh) (বাংলা মাধ্যম)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

Select medium
English medium notes
Bengali medium notes
OFN – Free vs Registered

সারাংশ (summary)

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি ভারতের পূর্বে অবস্থিত। এর উত্তরে আছে সিকিম রাজ্য ও ভুটান দেশ। পূর্বে আছে অসম রাজ্য ও বাংলাদেশ দেশ। পশ্চিমে আছে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্য এবং নেপাল দেশ। দক্ষিণে আছে বঙ্গোপসাগর। স্বাধীনতার পরে বাংলা ভাগ হয়ে পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়। প্রথমে ১৪টি জেলা ছিল, এখন ২৩টি জেলা আছে। কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী।

পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রকৃতি খুব বৈচিত্র্যময়। উত্তরে উঁচু হিমালয় পর্বত আছে, এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু। পশ্চিমে আছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম জেলা জুড়ে মালভূমি অঞ্চল, যা ছোটনাগপুর মালভূমির অংশ। এখানকার অযোধ্যা পাহাড়ের গোরগাবুরু সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। বাকি বেশিরভাগটাই নদী দিয়ে তৈরি হওয়া সমভূমি। গঙ্গা নদী (যা এখানে ভাগীরথী-হুগলি নামে পরিচিত) এই রাজ্যের প্রধান নদী। উত্তরের নদীগুলির মধ্যে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, মহানন্দা প্রধান। তিস্তা নদীকে ‘ত্রাসের নদী’ বলা হয় কারণ এতে প্রায়ই বন্যা হয়। মালভূমি অঞ্চলের প্রধান নদী হল দামোদর, অজয়, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী। দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চল আছে, যা গঙ্গা নদীর বদ্বীপ এলাকা এবং এখানে ম্যানগ্রোভ বন (যেমন সুন্দরী গাছ) দেখা যায়।

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র মৌসুমী প্রকৃতির। এখানে প্রধানত চারটি ঋতু দেখা যায় – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত। পাহাড়ি অঞ্চলে ঠান্ডা বেশি, মালভূমি অঞ্চলে গরম বেশি ও বৃষ্টি কম হয়। গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখী ঝড় হয়। এখানকার মাটিও বিভিন্ন রকম। সমভূমিতে পলিমাটি খুব উর্বর। মালভূমিতে লাল কাঁকুরে ল্যাটেরাইট মাটি আছে। পাহাড়ে পডসল মাটি ও সুন্দরবনে নোনা মাটি দেখা যায়।

চাষবাস এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। ধান প্রধান ফসল (আউশ, আমন, বোরো)। বর্ধমান জেলাকে ‘পশ্চিমবঙ্গের ধানের ভাণ্ডার’ বলা হয়। পাট প্রধান অর্থকরী ফসল। এছাড়া দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে চা চাষ হয়। রাজ্যে অনেক শিল্পও আছে, যেমন দুর্গাপুর ও বার্নপুরে লোহা-ইস্পাত শিল্প, হুগলি নদীর ধারে পাট শিল্প, চা শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। কলকাতা ও হলদিয়া এখানকার প্রধান বন্দর। পর্যটন শিল্পও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Prantik textbook)

সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো

১। উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘প্রবেশদ্বার’ হল—

(ক) শিলিগুড়ি
(খ) শিলং
(গ) কলকাতা
(ঘ) সুন্দরবন

উত্তর: (ক) শিলিগুড়ি

২। পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রসারিত হয়েছে—

(ক) কর্কটক্রান্তি রেখা
(খ) মকরক্রান্তি রেখা
(গ) বিষুবরেখা
(ঘ) মূলমধ্যরেখা

উত্তর: (ক) কর্কটক্রান্তি রেখা

৩। আয়তনে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান হল—

(ক) দ্বিতীয়
(খ) তৃতীয়
(গ) চতুর্থ
(ঘ) পঞ্চম

উত্তর: (খ) তৃতীয়

৪। জনসংখ্যার বিচারে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান—

(ক) প্রথম
(খ) দ্বিতীয়
(গ) তৃতীয়
(ঘ) চতুর্থ

উত্তর: (খ) দ্বিতীয়

৫। ভূ-প্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করা যায়—

(ক) ২টি ভাগে
(খ) ৩টি ভাগে
(গ) ৪টি ভাগে
(ঘ) ৫টি ভাগে

উত্তর: (খ) ৩টি ভাগে

৬। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল—

(ক) কাঞ্চনজঙ্ঘা
(খ) সান্ডাকফু
(গ) টাইগার হিল
(ঘ) কোনোটাই নয়

উত্তর: (খ) সান্ডাকফু

৭। সক্রিয় বদ্বীপ দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গের—

(ক) উত্তরের সমভূমি
(খ) গাঙ্গেয় বদ্বীপ
(গ) সুন্দরবন
(ঘ) মেদিনীপুর অঞ্চলে

উত্তর: (গ) সুন্দরবন

৮। নিয়মিত জোয়ারভাটা হয় পশ্চিমবঙ্গের—

(ক) মাতলা
(খ) লিস
(গ) সুবর্ণরেখা
(ঘ) তিস্তা নদীতে

উত্তর: (ক) মাতলা

৯। পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত একটি নদীর নাম হল—

(ক) ময়ূরাক্ষী
(খ) তোর্সা
(গ) বিদ্যাধরী
(ঘ) জলঢাকা

উত্তর: (ক) ময়ূরাক্ষী

১০। পশ্চিমবঙ্গের একটি পূর্ববাহিনী নদীর নাম হল—

(ক) মহানন্দা
(খ) দামোদর
(গ) পিয়ালি
(ঘ) মেচি

উত্তর: (গ) পিয়ালি

১১। পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলে প্রবাহিত একটি নদী হল—

(ক) তিস্তা
(খ) দামোদর
(গ) গোসাবা
(ঘ) সুবর্ণরেখা

উত্তর: (ক) তিস্তা

১২। পশ্চিমবঙ্গে সারাবছরে ঋতু দেখা যায়—

(ক) ৪টি
(খ) ৫টি
(গ) ৬টি
(ঘ) ৭টি

উত্তর: (ক) ৪টি

১৩। পশ্চিমবঙ্গ— … অঞ্চলে অন্তর্গত

(ক) নিরক্ষীয় জলবায়ু
(খ) মৌসুমি জলবায়ু
(গ) পার্বত্য জলবায়ু
(ঘ) তুন্দ্রা জলবায়ু

উত্তর: (খ) মৌসুমি জলবায়ু

১৪। পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায়—

(ক) এপ্রিল-মে
(খ) জুন-জুলাই
(গ) আগস্ট-সেপ্টেম্বর
(ঘ) মে-জুন মাসে

উত্তর: (ক) এপ্রিল-মে

১৫। পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়—

(ক) সুন্দরবন
(খ) দিঘা-শংকরপুর
(গ) পার্বত্য
(ঘ) হাওড়া অঞ্চলে

উত্তর: (গ) পার্বত্য

বাক্যটি ‘সত্য’ হলে ‘ঠিক’ এবং ‘অসত্য’ হলে ‘ভুল’ লেখো

১. ভূ-প্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গকে ৩টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও ভূমির গঠন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গকে প্রধান তিনটি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়, এগুলি হল – উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল এবং গাঙ্গেয় বদ্বীপসহ সমভূমি অঞ্চল।

২. পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম হল সান্ডাকফু।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সান্ডাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ, যা সিংগালিলা শৈলশিরার একটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ।

৩. পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল শুশুনিয়া।

উত্তর: ভুল

কারণ: অযোধ্যা পাহাড়ের গোরগাবুরু (উচ্চতা ৬৭৭ মিটার) পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

৪. সিংগালিলা শৈলশিরা পশ্চিমবঙ্গকে নেপাল থেকে পৃথক করেছে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সিংগালিলা শৈলশিরা নেপাল ও দার্জিলিং সীমান্তে অবস্থিত থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলাকে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

৫. গোসাবা নদীটি হল সুন্দরবন অঞ্চলের নদী।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সুন্দরবন অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলির মধ্যে গোসাবা অন্যতম, যা প্রধানত জোয়ারের জলে পুষ্ট।

৬. কংসাবতী ও কেলেঘাই নদী দুটির মিলিত প্রবাহের নাম হলদি নদী।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন কংসাবতী ও কেলেঘাই নদী দুটি মিলিত হয়ে হলদি নদী নামে প্রবাহিত হয়েছে।

৭. পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলি জোয়ারের জলে পুষ্ট।

উত্তর: ভুল

কারণ: পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলি শুধুমাত্র বৃষ্টির জলে পুষ্ট এবং চিরপ্রবাহী নয়, বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে এগুলিতে জলপ্রবাহ প্রায় থাকেই না। জোয়ারের জলে পুষ্ট নদীগুলি মূলত সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায়।

৮. পশ্চিমবঙ্গের শুষ্কতম জেলা পুরুলিয়া।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিমাংশের মালভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে কম (গড়ে ১০০-১২৫ সেমি) এবং পুরুলিয়া জেলা এই অঞ্চলের অন্তর্গত।

৯. তিস্তা নদী জেমু হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

উত্তর: ভুল

কারণ: তিস্তা নদী পূর্ব হিমালয়ের উত্তর সিকিমের প্রায় ৫,৩৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তেসোলামো হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

১০. সুন্দরবনের কর্দমাক্ত নীচু জলাভূমি ও বনভূমি ‘বাদা’ নামে পরিচিত।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সুন্দরবনের জমিকে স্থানীয়ভাবে দু-ভাগে ভাগ করা হয়; এর মধ্যে কর্দমাক্ত নীচু জলা জমি ও বনভূমি ‘বাদা’ নামে পরিচিত।

১১. পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে এপ্রিল-মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হয় তা ‘আশ্বিনের ঝড়’ নামে পরিচিত।

উত্তর: ভুল

কারণ: পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী ঝড় হয়। ‘আশ্বিনের ঝড়’ নামক ঘূর্ণবাত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অর্থাৎ শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির ফলে সৃষ্টি হয়।

১২. দুর্গাপুর, আসানসোল ও রানিগঞ্জ শহর তিনটি পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত।

উত্তর: ঠিক

কারণ: পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চলের প্রধান শহরগুলো হল দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জ, বার্নপুর, চিত্তরঞ্জন, পুরুলিয়া প্রভৃতি।

১৩. সিংগালিলা শৈলশিরার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ হল টাইগার হিল।

উত্তর: ভুল

কারণ: সিংগালিলা শৈলশিরার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল ফালুট, সিংগালিলা, সান্ডাকফু, টাংলু, সবরগ্রাম প্রভৃতি। টাইগার হিল দার্জিলিং-কার্শিয়াং শৈলশিরার একটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ।

১৪. সুন্দরবন অঞ্চলের বনভূমিকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বলে।

উত্তর: ঠিক

কারণ: সুন্দরবন অঞ্চলের কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়, তাই এই বনভূমি ম্যানগ্রোভ অরণ্য নামে পরিচিত।

উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শুন্যস্থান পূরণ করে।

১. পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রফল ______ বর্গ কিলোমিটার।

উত্তর: ৮৮,৭৫২

২. দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতম শৃঙ্গ ______।

উত্তর: সান্ডাকফু

৩. অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গ ______।

উত্তর: গোরগাবুরু

৪. ‘ডুয়ার্স’ কথার অর্থ ______ বা ______।

উত্তর: দরজা, প্রবেশদ্বার

৫. কেলেঘাই ও ______ নদী মিলিত হয়ে ______ নদী গঠিত হয়েছে।

উত্তর: কংসাবতী, হলদি

৬. পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রফল ভারতের ক্ষেত্রফলের মাত্র ______ শতাংশ।

উত্তর: ২

৭. মার্চ মাস থেকে ______ মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকাল।

উত্তর: মে

৮. দোআঁশ মৃত্তিকায় বালি এবং ______ পরিমাণ প্রায় সমান।

উত্তর: কাদার

৯. পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ______ জমি কৃষিকাজের উপযোগী।

উত্তর: বেশিরভাগ

১০. পশ্চিমবঙ্গে ধান গবেষণা কেন্দ্র আছে ______।

উত্তর: চুঁচুড়াতে

১১. চা চাষের জন্যে ______ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত উপযুক্ত।

উত্তর: ২০০-২৫০

১২. পশ্চিমবঙ্গে প্রধান ঋতু ______ টি।

উত্তর: ৪

স্তম্ভ মেলাও

প্রশ্ন:

ক (বামদিক)খ (ডানদিক)
১। থিম্পু① ৮৮,৭৫২ বর্গকিমি
২। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রফল② ৭০৯৬ বর্গকিমি
৩। বাংলাদেশের আয়তন③ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়
৪। সিকিমের আয়তন④ ভুটানের রাজধানী
৫। উত্তরের সমভূমি অঞ্চলকে⑤ ১,৪৭,৫৭৩ বর্গকিমি

উত্তর:

ক (বামদিক)খ (ডানদিক)
১। থিম্পু④ ভুটানের রাজধানী
২। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রফল① ৮৮,৭৫২ বর্গকিমি
৩। বাংলাদেশের আয়তন⑤ ১,৪৭,৫৭৩ বর্গকিমি
৪। সিকিমের আয়তন② ৭০৯৬ বর্গকিমি
৫। উত্তরের সমভূমি অঞ্চলকে③ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়
দু-এক কথায় উত্তর দাও

১. পশ্চিমবঙ্গের কোন্ অঞ্চলগুলি উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের শিলিগুড়ি মহকুমা ছাড়া পুরো দার্জিলিং জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর-পূর্ব অংশের সামান্য কিছু অংশ উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত।

২. তরাই ও ডুয়ার্স কী?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে পার্বত্য নদীবাহিত বালি ও নুড়ি জমে তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলটির সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে তিস্তা নদীর পশ্চিম অংশ তরাই এবং তিস্তা নদীর পূর্ব অংশ ডুয়ার্স নামে পরিচিত।

৩. পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর নাম লেখো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নদী হল তিস্তা ও জলঢাকা।

৪. কোন্ ধরনের মৃত্তিকা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় সমভূমি গঠিত?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় সমভূমি পুরানো পলিমাটি দিয়ে গঠিত।

৫. ‘সুন্দরবন’ কোন্ সমভূমির অংশ?

উত্তর: সুন্দরবন সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত।

৬. পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু কোন্ প্রকৃতির?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির।

৭. কোন্ কোন্ মাসে পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখীর আবির্ভাব বেশি হয়?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখীর আবির্ভাব বেশি হয়।

৮. পাট ক-প্রকার ও কী কী?

উত্তর: পাট দুই প্রকারের হয়, যথা – সাদা পাট এবং তোষা পাট।

৯. লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালগুলোর নাম করো।

উত্তর: লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামালগুলো হল লৌহ আকরিক ও কোক কয়লা। এছাড়া চুনাপাথর, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, টাংস্টেন, নিকেল ও প্রচুর জল প্রয়োজন হয়।

১০. আশ্বিনের ঝড় কী?

উত্তর: শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির ফলে হঠাৎ আসা ঘূর্ণবাত বা ‘আশ্বিনের ঝড়’ মাঝে মাঝে উপদ্রবের সৃষ্টি করে।

নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো

১. ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের ভূ-প্রকৃতিকে ক-টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

উত্তর: ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও ভূমির গঠন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গকে প্রধান তিনটি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়, যেমন:
(i) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল,
(ii) পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল
(iii) এবং গাঙ্গেয় বদ্বীপসহ সমভূমি অঞ্চল।

২. ‘তাল’ ও ‘দিয়ারা’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: কালিন্দী নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত কোচবিহার জেলার দক্ষিণতম অংশ এবং সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তাল সমভূমি নামে পরিচিত; ভূ-প্রকৃতিগতভাবে অগভীর হ্রদ অঞ্চলে পলি সঞ্চয়ের ফলে তাল অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। মালদহ জেলার কালিন্দী নদীর দক্ষিণাংশের নবীন পলিগঠিত ভূমি দিয়ারা নামে পরিচিত; এই অঞ্চলটি খুব উর্বর ও ঘনবসতিপূর্ণ।

৩. উৎপত্তি ও ভূমির গঠন অনুসারে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলকে ক-ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?

উত্তর: ভূ-প্রকৃতি অনুসারে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা:
(i) মুমুর্ষু বদ্বীপ,
(ii) পরিণত বদ্বীপ
(iii) ও সক্রিয় বদ্বীপ।

৪. ‘বাদা’ ও ‘আবাদ’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: সুন্দরবনের কর্দমাক্ত নীচু জলা জমি ও বনভুমি বাদা নামে পরিচিত। আর সুন্দরবনের যে অঞ্চলে চাষবাস করা হয় তাকে আবাদ বলে।

৫. পশ্চিমবঙ্গের তিনটি পূর্ববাহিনী নদীর নাম করো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের তিনটি পূর্ববাহিনী নদী হল দামোদর, অজয় এবং ময়ূরাক্ষী।

৬. পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তিনটি নদীর নাম লেখো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলির মধ্যে তিস্তা, জলঢাকা, মহানন্দা, তোর্সা, রায়ডাক, সঙ্কোশ, কালজানি প্রভৃতি নদীগুলি উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে তিনটি হল তিস্তা, জলঢাকা ও মহানন্দা।

৭. পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের তিনটি নদীর নাম লেখো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের তিনটি নদী হল তিস্তা, তোর্সা এবং মহানন্দা। এছাড়া আত্রাই, টাঙ্গন, পুনর্ভবা প্রভৃতি নদীও এই অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

৮. পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের সমভূমি অঞ্চলের তিনটি নদীর নাম লেখো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় সমভূমি ও সুন্দরবন অঞ্চলের তিনটি নদী হল মাতলা, পিয়ালী এবং গোসাবা।

৯. পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের জোয়ারের জলে পুষ্ট তিনটি নদীর নাম করো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের জোয়ারের জলে পুষ্ট তিনটি নদী হল গোসাবা, মাতলা এবং পিয়ালী। এছাড়া বিদ্যাধরী, কালিন্দী, ঠাকুরানী, রায়মঙ্গল, সপ্তমুখী প্রভৃতিও এখানকার উল্লেখযোগ্য নদী।

১০. পশ্চিমবঙ্গে কোন্ ঋতুতে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা এবং কোন্ ঋতুতে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব ঘটে?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে শীতকালে পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস ও অল্প বৃষ্টিপাত হয়, যা পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব સૂચિત করে। শরৎকালে (অক্টোবর-নভেম্বর) বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির ফলে হঠাৎ আসা ঘূর্ণবাত বা ‘আশ্বিনের ঝড়’ মাঝে মাঝে উপদ্রবের সৃষ্টি করে, যা ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সমতুল্য।

১১. পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকার বর্ণনা দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলে, বিশেষত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, মেদিনীপুর ও মুরশিদাবাদ জেলার কোনো কোনো অংশে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আছে। ল্যাটিন শব্দ ‘ল্যাটার’ কথার অর্থ ইট। এই মৃত্তিকা ইটের মতো শক্ত এবং লাল হয়। এতে নুড়ি, কাঁকর ও বালির ভাগ বেশি, তাই এর জলধারণ ক্ষমতা কম। লোহার ভাগ বেশি থাকায় এর রং লাল। এই মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন, পটাশ এবং জৈব পদার্থ কম থাকে। তবে জলসেচের মাধ্যমে ধান, আখ ও সরষে এই মৃত্তিকায় চাষ করা হয়।

১২. ধান ক-প্রকার ও কী কী?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে ঋতুর তারতম্য অনুসারে তিন প্রকার ধান উৎপন্ন হয়। যথা:

(i) আউশ,
(ii) আমন
(iii) ও বোরো।

১৩. পাটশিল্পের গুরুত্ব কী?

উত্তর: পাট পশ্চিমবঙ্গের প্রধান অর্থকরী ফসল এবং পাটশিল্প রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সর্বাধিক (৭৯%) পাট উৎপন্ন করে। এই শিল্পের उत्पादিত দ্রব্য দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয় এবং বিদেশেও এর চাহিদা আছে, যদিও বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। এই শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত চটের থলে খাদ্য ও চিনি প্যাকিং-এর জন্য আবশ্যিক করা হয়েছে, যা এর গুরুত্ব বোঝায়।

১৪. সিংগালিলা শৈলশিরা সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তর: সিংগালিলা শৈলশিরা নেপাল ও দার্জিলিং সীমান্তে অবস্থিত থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলাকে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সিংগালিলার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল ফালুট, সিংগালিলা, সান্ডাকফু, টাংলু, সবরগ্রাম প্রভৃতি। সান্ডাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ।

সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

১. পশ্চিমবঙ্গের অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত বিস্তারের উল্লেখ করো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ দক্ষিণে ২১°৩০′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে উত্তরে ২৭°১৪′ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই রাজ্যটি পশ্চিমে ৮৬°৩০′ পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পূর্বদিকে ৮৯°৫৩’ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত।

২. পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব কী?

উত্তর: ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ভারতের পূর্বভাগে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়েই উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ ও পরিবহণ-ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য যেমন অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা প্রভৃতির সঙ্গে জলপথে বিদেশে পণ্য বিনিময়ের কোনো সুযোগ নেই কারণ রাজ্যগুলো স্থলবেষ্টিত, তাই এদের পশ্চিমবঙ্গের বন্দর ব্যবহার করেই সমুদ্রপথে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে হয়। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান এবং প্রতিবেশী রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কোনো সমুদ্র উপকূল না-থাকায় পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্যে পশ্চিমবঙ্গের বন্দর ব্যবহার করতে হয়। কারণ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হল এই রাজ্য ও রাষ্ট্রগুলোর নিকটতম বন্দর। অবস্থানগত দিক থেকে এই রাজ্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ও রাজ্যগুলো অনেকাংশে পশ্চিমবঙ্গের ওপর নির্ভরশীল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক বিভাগের উল্লেখ করো।

উত্তর: শাসনকার্যের সুবিধার জন্য গোটা পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলাকে পাঁচটি প্রশাসনিক বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জেলার সামগ্রিক দেখভালের দায়িত্বে থাকেন এক-একজন জেলাশাসক। প্রত্যেক জেলার জেলাশাসকের অধীনে জেলাটির প্রত্যেকটি মহকুমার দায়িত্বে থাকেন মহকুমা শাসক এবং প্রত্যেক মহকুমা শাসকের অধীনে এক-একটি ব্লকে কাজ করেন এক-একজন ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার বা BDO। প্রতিটি জেলা কয়েকটি মহকুমা এবং কলকাতা ছাড়া প্রতিটি মহকুমা কয়েকটি ব্লকে বিভক্ত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে পঞ্চায়েত, তার উপরে পঞ্চায়েত সমিতি এবং তার উপরে জেলা পরিষদ। বড়ো শহরগুলির ক্ষেত্রে রয়েছে কর্পোরেশন ও মিউনিসিপ্যালিটি।

পাঁচটি প্রশাসনিক বিভাগ ও তাদের অন্তর্গত জেলাগুলি হল:

  • বর্ধমান বিভাগ: ① পূর্ব বর্ধমান, ② পশ্চিম বর্ধমান, ③ বীরভূম, ④ হুগলি।
  • মালদা বিভাগ: ① উত্তর দিনাজপুর, ② মালদা, ③ মুরশিদাবাদ, ④ দক্ষিণ দিনাজপুর।
  • জলপাইগুড়ি বিভাগ: ① আলিপুরদুয়ার, ② কালিম্পং ③ কোচবিহার, ④ জলপাইগুড়ি, ⑤ দার্জিলিং।
  • প্রেসিডন্সি বিভাগ: ① উত্তর ২৪ পরগনা, ② কলকাতা, ③ দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ④ নদিয়া, ⑤ হাওড়া।
  • মেদিনীপুর বিভাগ: ① পশ্চিম মেদিনীপুর, ② পুরুলিয়া, ③ পূর্ব মেদিনীপুর, ④ বাঁকুড়া, ⑤ ঝাড়গ্রাম।

৪. পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিকে ক-টি ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?

উত্তর: ভূ-প্রকৃতি ও মৃত্তিকার পার্থক্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি অঞ্চলকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : ① তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, ② উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, ③ রাঢ় অঞ্চল, ④ উপকূলের বালুকাময় সমভূমি, ⑤ গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল এবং ⑥ সুন্দরবন অঞ্চল।

৫. পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির বিবরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের পার্বত্য অঞ্চলটি পূর্ব হিমালয় পর্বতশ্রেণির ওপর অবস্থিত যা তরাইয়ের সমভূমি থেকে হঠাৎ খাড়াভাবে উপরে উঠে গেছে। একমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা ছাড়া পুরো দার্জিলিং জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর-পূর্ব অংশের সামান্য কিছু অংশ এই পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত। হিমালয় পর্বতের কয়েকটি গিরিশ্রেণি এবং উপত্যকা গঠিত এই অঞ্চলটি দক্ষিণদিক থেকে উত্তরদিকে ক্রমশ উঁচু হয়ে গেছে। তিস্তা নদী উত্তরদিকের সিকিম থেকে এই অঞ্চলে প্রবেশ করে তার সুগভীর গিরিখাত দ্বারা এই অঞ্চলটিকে দু-ভাগে ভাগ করেছে, যথা তিস্তার পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চল এবং তিস্তার পূর্বদিকের পার্বত্য অঞ্চল।

তিস্তার পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চলটি পূর্বদিকের পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় উঁচু। তিস্তা নদীর পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চলে দুইটি পর্বতশিরা দেখা যায়, এরা হল সিংগালিলা এবং দার্জিলিং-কার্শিয়াং শৈলশিরা। সিংগালিলা শৈলশিরা নেপাল ও দার্জিলিং সীমান্তে অবস্থিত থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলাকে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সিংগালিলার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল ফালুট, সিংগালিলা, সান্ডাকফু, টাংলু, সবরগ্রাম প্রভৃতি। সান্ডাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। দার্জিলিং-কার্শিয়াং শৈলশিরার উল্লেখযোগ্য দুটি শৃঙ্গ হল টাইগার হিল ও সিঞ্চুলা।

তিস্তার পূর্বদিকে রয়েছে দুরবিনদারা পর্বত। কালিম্পং শহর এখানে অবস্থিত। কালিম্পং থেকে দুরবিনদারা পর্বতটি ক্রমশ নীচু হয়ে পূর্বদিকে জলঢাকা নদীর উপত্যকার দিকে এগিয়ে গেছে। ঋষিলা এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এর আরও পূর্বদিকে জলপাইগুড়ি জেলার পূর্ব অংশে নাতিউচ্চ বক্সা-জয়ন্তী পাহাড় অবস্থিত। অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে এই পার্বত্য অঞ্চলটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।

ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে অঞ্চলগত অবস্থান, যা শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে পুরো দার্জিলিং জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর-পূর্বের সামান্য কিছু অংশ জুড়ে। ভূমিগতভাবে, এই অঞ্চলের পর্বতগুলি পূর্ব হিমালয় পর্বতশ্রেণির অংশ। ভূমির ঢাল উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চলের পর্বতগুলি সবই নবীন ভঙ্গিল পর্বত। এখানকার উল্লেখযোগ্য পাহাড়-পর্বত হল সিংগালিলা, তাকদহ-পেশক, দার্জিলিং-লেবং ডাওহিল, দুরবিনদারা, বাগোরা, চোলা প্রভৃতি।

৬. পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির বিবরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চল পুরুলিয়া জেলার সম্পূর্ণ অংশ, বীরভূম জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমের সামান্য অংশ এবং বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমভাগ নিয়ে গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ও মালভূমি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এই ঢেউখেলানো উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চলটি সমগ্র পুরুলিয়া জেলা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার পশ্চিমদিকের ৫০ মিটারের বেশি উচ্চতাযুক্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে। গ্রানাইট ও নাইস শিলা দ্বারা গঠিত এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি হল ছোটোনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ। সমগ্র অঞ্চলটি পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু হয়ে গেছে। এই অঞ্চলটি দক্ষিণে বরাভূম উচ্চভূমি, পশ্চিমে পুরুলিয়া উচ্চভূমি এবং উত্তর-পূর্বে শুশুনিয়া উচ্চভূমিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

নদীর ক্ষয়কাজের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি বর্তমানে সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলার দ্বারা গঠিত এই উচ্চভূমির বাকি অংশগুলো এখানে-সেখানে টিলার মতো ছোটো ছোটো পাহাড়ের আকারে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাহাড় হল পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি ও পাঞ্চেৎ, বাঁকুড়ার বিহারীনাথ ও শুশুনিয়া এবং বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড় প্রভৃতি। অযোধ্যা পাহাড়ের গোরগাবুরু (উচ্চতা ৬৭৭ মিটার) পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

৭. পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলোর বিবরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলির মধ্যে তিস্তা, জলঢাকা, মহানন্দা, তোর্সা, রায়ডাক, সঙ্কোশ, কালজানি প্রভৃতি নদীগুলি উল্লেখযোগ্য। পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হওয়ায় এইসব নদীগুলি খরস্রোতা।

তিস্তা (দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিমি) পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল তথা উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি পূর্ব হিমালয়ের উত্তর সিকিমের তেসোলামো হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে রঙ্গপো থেকে তিস্তা বাজার পর্যন্ত সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত রচনা করেছে। এরপর দার্জিলিং জেলাকে দু-ভাগে বিভক্ত করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পতিত হয়েছে। তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে প্রায় প্রতিবছর বন্যা হওয়ায় একে ‘ত্রাসের নদী’ বলা হয়। এর অন্যতম উপনদীর নাম রঙ্গিত।

জলঢাকা (দৈর্ঘ্য ১৯২ কিমি) পূর্ব হিমালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব সিকিমের পার্বত্য অঞ্চলে উৎপন্ন দিচু ও লীচু নদীর মিলিত প্রবাহ। এটি ভুটান এবং পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে যমুনা (ব্রহ্মপুত্র) নদীতে পড়েছে।

মহানন্দা (দৈর্ঘ্য ৩৬০ কিমি) দার্জিলিং হিমালয়ের ঘুম পাহাড়ের নিকটবর্তী মহালধিরাম পর্বতের পাগলাঝোরা প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্বে বেঁকে বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে পতিত হয়েছে। মেচি, বালাসন, টঙ্গন, রত্না, কংকাই প্রভৃতি এর উল্লেখযোগ্য উপনদী।

তোর্সা (মোট দৈর্ঘ্য ৩৫৮ কিমি, পশ্চিমবঙ্গে ১৪৫ কিমি) তিব্বতের চম্বি উপত্যকা থেকে মাচ নামে উৎপন্ন হয়ে তিব্বত, ভুটান, পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্বে বেঁকে বাংলাদেশে যমুনা (ব্রহ্মপুত্র) নদীতে পতিত হয়েছে। ইলং ও কালজানি এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী।

এই অঞ্চলের নদীগুলির বৈশিষ্ট্য হল এগুলি পূর্ব হিমালয়ের বরফগলা জল ও বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় চিরপ্রবাহী। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে এরা গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করেছে। পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে এদের গভীরতা কম, কিন্তু নদীখাত চওড়া। এই নদীগুলি বন্যাপ্রবণ। অধিকাংশ নদীই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনা (ব্রহ্মপুত্র) নদীতে মিশেছে, একমাত্র মহানন্দা পদ্মায় পতিত হয়েছে।

৮. পশ্চিমবঙ্গের গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকালের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে): মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকাল থাকে। এই সময় বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং মে মাসে সর্বোচ্চ হয়। সমভূমি অঞ্চলের উষ্ণতা ২৬° সেলসিয়াস থেকে ৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত হয় এবং উত্তাপ ক্রমশ অসহ্য হয়ে ওঠে। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উষুতার প্রকোপ বেশি হয় এবং মালদহ অঞ্চলে দুপুরে উত্তপ্ত ‘লু’ বাতাস প্রবাহিত হয়। রাজ্যের গড় উত্তাপ ২০°-৩০° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তবে দুর্গাপুর, আসানসোল প্রভৃতি স্থানে তাপমাত্রা ৪০°-৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। উচ্চতার জন্য জলপাইগুড়িতে এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় সাগরদ্বীপের তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াসের নীচে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে (শিলিগুড়ি বাদে) আবহাওয়া মনোরম থাকে (১৪°-১৭° সেলসিয়াস)। সমভূমি অঞ্চলে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী ঝড় হয়, যার সঙ্গে প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়।

বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর): জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপের ফলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এর দিকে ছুটে আসে। ১৫ জুনের মধ্যে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ১৮০ সেন্টিমিটার, যার প্রায় ১২৫ সেন্টিমিটার বর্ষাকালেই হয়। বৃষ্টিপাত দক্ষিণ থেকে উত্তরে ক্রমশ বাড়তে থাকে। বর্ষাকালে স্থানবিশেষে ১৩০ থেকে ৪০০ সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়, উত্তরবঙ্গে গড়ে ৩০০ সেমি এবং পশ্চিমাংশের মালভূমি অঞ্চলে গড়ে ১৫০ সেমি।

শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে শীতকাল। দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল বাদে অন্যত্র গড়ে তাপমাত্রা থাকে ১৩°-১৯° সেলসিয়াস। দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চলে শীত সবচেয়ে বেশি (০°-৫° সেলসিয়াস) এবং মাঝে মাঝে তুষারপাতও হয়। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলেও উষ্ণতা বেশ কমে যায়। শীতকালে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না, তবে পশ্চিমাবায়র প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস ও অল্প বৃষ্টিপাত হয়। কলকাতা ও আশপাশে ভোরে কুয়াশা হয়।

৯. পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের উদ্ভিদের বিবরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ দেখা যায়:

  • ১০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন: শাল, সেগুন, গর্জন ও চাপলাস প্রভৃতি।
  • ১০০০-২৫০০ মিটার উচ্চতায় নাতিশীতোয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ দেখা যায়, যেমন: ওক, বার্চ, ম্যাপল, লরেল, পপলার ও ওয়ালনাট, রডোডেনড্রন প্রভৃতি।
  • ২৫০০-৪০০০ মিটার উচ্চতায় সরলবর্গীয় উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন: পাইন, ফার, বার্চ, স্পুস, লার্চ, দেবদারু প্রভৃতি।
  • ৪০০০ মিটারের উপরে আল্পীয় উদ্ভিদ দেখা যায়, যেমন: জুনিপার, নাক্সভমিকা প্রভৃতি। এ ছাড়াও এই অঞ্চলে নানা ধরনের অর্কিড ও ছোটো ঘাস জন্মায়।

১০. পশ্চিমবঙ্গের কৃষির গুরুত্ব কী?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ একটি নদীমাতৃক রাজ্য এবং এর নদীবাহিত পলিগঠিত সমভূমি অত্যন্ত উর্বর। এখানকার জলবায়ুও কৃষিকাজের অনুকূল, ফলে এ রাজ্যে বিভিন্ন প্রকার কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ লোক কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত, অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। রাজ্যের অত্যধিক জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বেশিরভাগ কৃষিজমিতে খাদ্যশস্য চাষ করা হয়, যার মধ্যে ধানই প্রধান, কারণ ধান এ রাজ্যের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য। তাই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।

১১. পশ্চিমবঙ্গে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সমস্যাগুলো লেখো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সমস্যাগুলি হল:

  • উন্নত কোক-কয়লার অভাব।
  • কারিগরি দক্ষতার অভাব।
  • প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব।
  • প্রচুর অর্থব্যয়-এর সামর্থ্যের অভাব।
  • পরিবহণ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়।
  • অভ্যন্তরীণ বাজারে লৌহ-ইস্পাতের চাহিদার অভাব।
  • উন্নত প্রযুক্তির অভাব।
  • পুরোনো যন্ত্রপাতির জন্যে উৎপাদন কম এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি।
  • পৃথিবীর বাজারে চাহিদা হ্রাস।
  • নির্মীয়মান কারখানাগুলোর নির্মাণকাজ ধীরে চলা।

১২. পশ্চিমবঙ্গের তুলা শিল্পের অবস্থানের উল্লেখ করো।

উত্তর: কার্পাস শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে আছে। ভারতের প্রথম কার্পাস শিল্পটি গড়ে ওঠে হাওড়া জেলার ঘুষুড়িতে। এরাজ্যে বর্তমানে ৩৭টি কাপড়ের কল আছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, শ্রীরামপুর (ওয়েস্ট বেঙ্গল কো-অপারেটিভ স্পিনিং মিলস), শ্যামনগর, সোদপুর, বেলঘরিয়া, পানিহাটি, পলতা, মৌড়িগ্রাম, ফুলেশ্বর, কল্যাণী (কল্যাণী স্পিনিং মিলস), মেদিনীপুর (তাম্রলিপ্ত কো-অপারেটিভ স্পিনিং মিলস্), বড়জোড়া (কংসাবতী কো-অপারেটিভ স্পিনিং মিলস) প্রভৃতি স্থানে কাপড়ের কল আছে।

রচনাধর্মী প্রশ্ন

১. পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ও মালভূমির ভূ-প্রাকৃতিক বিবরণ দাও।

উত্তর: উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি:

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের এই পার্বত্য অঞ্চলটি পূর্ব হিমালয় পর্বতশ্রেণির ওপর অবস্থিত যা তরাইয়ের সমভূমি থেকে হঠাৎ খাড়াভাবে উপরে উঠে গেছে। একমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা ছাড়া পুরো দার্জিলিং জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর-পূর্ব অংশের সামান্য কিছু অংশ এই পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত। হিমালয় পর্বতের কয়েকটি গিরিশ্রেণি এবং উপত্যকা গঠিত এই অঞ্চলটি দক্ষিণদিক থেকে উত্তরদিকে ক্রমশ উঁচু হয়ে গেছে। তিস্তা নদী উত্তরদিকের সিকিম থেকে এই অঞ্চলে প্রবেশ করে তার সুগভীর গিরিখাত দ্বারা এই অঞ্চলটিকে দু-ভাগে ভাগ করেছে, যেমন : তিস্তার পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চল এবং তিস্তার পূর্বদিকের পার্বত্য অঞ্চল।

তিস্তা নদীর পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চলটি পূর্বদিকের পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় উঁচু। তিস্তা নদীর পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চলে দুইটি পর্বতশিরা দেখা যায়, এরা হল, সিংগালিলা এবং দার্জিলিং-কার্শিয়াং শৈলশিরা। সিংগালিলা শৈলশিরা নেপাল ও দার্জিলিং সীমান্তে অবস্থিত থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলাকে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সিংগালিলার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল : ফালুট, সিংগালিলা, সান্ডাকফু, টাংলু, সবরগ্রাম প্রভৃতি। সান্ডাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। দার্জিলিং-কার্শিয়াং শৈলশিরার উল্লেখযোগ্য দুটি শৃঙ্গ হল টাইগার হিল ও সিঞ্চুলা।

তিস্তার পূর্বদিকে রয়েছে দুরবিনদারা পর্বত। কালিম্পং শহর এখানে অবস্থিত। কালিম্পং থেকে দুরবিনদারা পর্বতটি ক্রমশ নীচু হয়ে পূর্বদিকে জলঢাকা নদীর উপত্যকার দিকে এগিয়ে গেছে। ঋষিলা এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এর আরও পূর্বদিকে জলপাইগুড়ি জেলার পূর্ব অংশে নাতিউচ্চ বক্সা-জয়ন্তী পাহাড় অবস্থিত। অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে এই পার্বত্য অঞ্চলটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।

ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : অঞ্চলগত অবস্থান: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে পুরো দার্জিলিং জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর-পূর্বের সামান্য কিছু অংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। ভূমিগত অবস্থান : পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের পর্বতগুলি পূর্ব হিমালয় পর্বতশ্রেণির অংশ। ভূমির ঢাল : পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু হয়ে গিয়েছে। প্রাচীনত্ব : এই অঞ্চলের পর্বতগুলি সবই নবীন ভঙ্গিল পর্বত। উল্লেখযোগ্য পাহাড়-পর্বত : সিংগালিলা, তাকদহ-পেশক, দার্জিলিং-লেবং ডাওহিল, দুরবিনদারা, বাগোরা, চোলা প্রভৃতি হল পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পর্বত।

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি:

অবস্থান : পুরুলিয়া জেলার সম্পূর্ণ অংশ, বীরভূম জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমের সামান্য অংশ এবং বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমভাগ নিয়ে তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ও মালভূমি গঠিত।

মালভূমি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি ও ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এই ঢেউখেলানো উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চলটি সমগ্র পুরুলিয়া জেলা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার পশ্চিমদিকের ৫০ মিটারের বেশি উচ্চতাযুক্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে। গ্রানাইট ও নাইস শিলা দ্বারা গঠিত এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি হল ছোটোনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ। সমগ্র অঞ্চলটি পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু হয়ে গেছে। এই অঞ্চলটি দক্ষিণে বরাভূম উচ্চভূমি, পশ্চিমে পুরুলিয়া উচ্চভূমি এবং উত্তর-পূর্বে শুশুনিয়া উচ্চভূমিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সুবর্ণরেখা, কংসাবতী, দ্বারকেশ্বর, কোপাই, অজয়, দামোদর প্রভৃতি নদীর ক্ষয়কাজের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি বর্তমানে সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলার দ্বারা গঠিত এই উচ্চভূমির বাকি অংশগুলো এখানে-সেখানে টিলার মতো ছোটো ছোটো পাহাড়ের আকারে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাহাড় হল- (i) পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি ও পাঞ্চেৎ, (ii) বাঁকুড়ার বিহারীনাথ ও শুশুনিয়া; (iii) বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড় প্রভৃতি। অযোধ্যা পাহাড়ের গোরগাবুরু (উচ্চতা ৬৭৭ মিটার) পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

২. পশ্চিমবঙ্গের মধ্য ও দক্ষিণের সমভূমির বিভিন্ন ভাগগুলোর নাম করো এবং প্রত্যেকটি ভাগের বিবরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি অঞ্চলকে ভূ-প্রকৃতি ও মৃত্তিকার পার্থক্যের জন্য ছয় ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : ① তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, ② উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, ③ রাঢ় অঞ্চল, ④ উপকূলের বালুকাময় সমভূমি, ⑤ গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল এবং ⑥ সুন্দরবন অঞ্চল।

① তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল : পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে-অর্থাৎ দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর ও পূর্বাংশ এবং কোচবিহার জেলার কিছু অংশে পার্বত্য নদীবাহিত বালি ও নুড়ি জমে তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলটির সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে তিস্তা নদীর পশ্চিম অংশ তরাই এবং তিস্তা নদীর পূর্ব অংশ ডুয়ার্স নামে পরিচিত। তরাই অঞ্চলের বিশেষত্ব; পূর্ব হিমালয় পর্বতের দক্ষিণাংশের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলটি হল জঙ্গলে ঢাকা স্যাঁতসেঁতে জলাভূমি (ফরাসি ভাষায় ‘তরাই’ শব্দের অর্থ হল স্যাঁতসেঁতে)। তরাই অঞ্চলটি পাদদেশীয় সমভূমির একটি উদাহরণ। এই অঞ্চলের উচ্চতা ৭৫-১৬০ মিটার। তরাই অঞ্চলটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চলের স্থানে স্থানে উচ্চভূমি ও ছোটোখাটো পাহাড় দেখা যায়। অসংখ্য নদীখাত তরাই অঞ্চলটিকে বিভিন্ন সমান্তরাল অংশে বিভক্ত করেছে।

② উত্তরের সমভূমি অঞ্চল: পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে তরাই ও গঙ্গার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং কোচবিহার-এই চারটি জেলা উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত। তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীর পলি জমে এই অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। মোটামুটিভাবে সমতল হলেও মাঝে মাঝে এখানে-সেখানে খাল-বিল এবং উঁচুনীচু জমি চোখে পড়ে। এখানে কোনো কোনো স্থানে ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢিবি দেখা যায়। ভূপ্রকৃতিগতভাবে উত্তরের সমভূমি অঞ্চলকে ৩টি অংশে ভাগ করা যায়, যথা : তাল : কালিন্দী নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত কোচবিহার জেলার দক্ষিণতম অংশ এবং সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তাল সমভূমি নামে পরিচিত। ভূ-প্রকৃতিগতভাবে অগভীর হ্রদ অঞ্চলে পলি সঞ্চয়ের ফলে তাল অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে অসংখ্য জলাভূমি রয়েছে। বর্ষাকালে তাল অঞ্চলটি প্রায়ই জলে প্লাবিত হয়। বরেন্দ্রভূমি : মহানন্দা নদীর বাঁ-তীরে অবস্থিত মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিছুটা ঢেউখেলানো ও প্রাচীন পলিগঠিত পূর্বাংশ বরেন্দ্রভূমি নামে পরিচিত। বরেন্দ্রভূমির মাটি লাল রঙের, শক্ত অনুর্বর ও ল্যাটেরাইট জাতীয়। এই অঞ্চলের কোনো কোনো স্থানে অনুচ্চ ঢিবি দেখা যায় (কমবেশি ৩০ মিটার উঁচু)। দিয়ারা : মালদহ জেলার কালিন্দী নদীর দক্ষিণাংশের নবীন পলিগঠিত ভূমি দিয়ারা নামে পরিচিত। এই অঞ্চলটি খুব উর্বর ও ঘনবসতিপূর্ণ।

③ রাঢ় অঞ্চল: পশ্চিমের মালভূমির পূর্ব সীমা থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত বিস্তৃত সামান্য ঢেউখেলানো ও পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঢালু হয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলটি রাঢ় সমভূমি নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং বীরভূম জেলার পূর্বাংশ রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। পুরানো পলিমাটি দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি কৃষিকাজে অত্যন্ত উন্নত।

④ উপকূলের বালুকাময় সমভূমি : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। সর্ব দক্ষিণের উপকূলবর্তী তটভূমি বালুকাময়। এখানকার তটভূমির ঢাল খুবই কম। এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বালিয়াড়ি দেখা যায়। তটভূমির উত্তরদিকের বালিয়াড়িগুলি সমুদ্র উপকূলের সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। দুটি বালিয়াড়ির মাঝের নীচু অংশে জলাভূমি দেখা যায়।

⑤ গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল: পূর্বদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে পশ্চিমে এই বদ্বীপ অঞ্চলটি কান্দি মহকুমা বাদে সমগ্র মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা এবং বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের ৫০ মিটার সমোন্নতি রেখা বরাবর বিস্তৃত। ভূ-প্রকৃতি অনুসারে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা : মুমুর্ষু বদ্বীপ: নদিয়া ও মুরশিদাবাদ জেলার এই বদ্বীপ অংশে নদীগুলো গঙ্গা বা পদ্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃতপ্রায় হওয়ায় এই অঞ্চলে বদ্বীপ গঠন আর সম্ভব নয়, তাই এখানে প্রচুর বিল, জলাভূমি ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়। পরিণত বদ্বীপ: ছোটোনাগপুরের মালভূমি থেকে নদীবাহিত প্রচুর বালি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি জমে বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলায় এই অঞ্চলের বদ্বীপ গঠন প্রায় শেষ হয়েছে। তাই এখানে জলাভূমির সংখ্যা অনেক কম এবং মৃত্তিকাও বেশ কঠিন। সক্রিয় বদ্বীপ : উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা জেলার দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন অঞ্চলে নদী ও সমুদ্রবাহিত পলি দিয়ে বদ্বীপ গঠনের কাজ আজও চলছে। সমুদ্রের জোয়ারের প্রভাবে এখানকার মৃত্তিকা কিছুটা লবণাক্ত।

⑥ সুন্দরবন অঞ্চল: দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলটি পুরোপুরিভাবে সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত, তাই এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ এখনও চলছে। সমুদ্রগর্ভে ক্রমাগত পলি সঞ্চয়ের ফলে এই অঞ্চলে নতুন নতুন দ্বীপ গড়ে উঠছে এবং এই অঞ্চলটি ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। এই অঞ্চলের একটি নবগঠিত দ্বীপ হল পূর্বাশা বা নিউমুর। সাগরদ্বীপ এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো দ্বীপ। অসংখ্য ছোটো-বড়ো দ্বীপ ও জলাভূমি নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে। সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে আসা ভূখণ্ড এখানে ‘চর’ নামে পরিচিত। অসংখ্য খাঁড়ি দ্বারা এই চরগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সুন্দরবনের জমিকে স্থানীয়ভাবে দু-ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: বাদা এবং আবাদ। সুন্দরবনের কর্দমাক্ত নীচু জলা জমি ও বনভুমি বাদা নামে পরিচিত। আর সুন্দরবনের যে অঞ্চলে চাষবাস করা হয় তাকে আবাদ বলে। বর্তমানে ক্যানিং, কাকদ্বীপ, সাগর এবং হাসনাবাদ অঞ্চলের বেশিরভাগ জমি আবাদে পরিণত করা হয়েছে।

৩. পশ্চিমবঙ্গের ঋতুবৈচিত্র্যের বিবরণ দাও।

উত্তর: বছরের বিভিন্ন সময়ে জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গকে কয়েকটি ঋতুতে ভাগ করা হয়, যেমন: ① শুষ্ক গ্রীষ্মাকাল, ② আর্দ্র বর্ষাকাল, ③ শরৎকাল ও ④ শীতকাল। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বসন্তকাল ও হেমন্তকাল স্বল্পস্থায়ী, তাই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর ক্ষেত্রে এদের বিশেষ কোনো প্রভাব নেই। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায় :

শুষ্ক গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে): মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকাল। মার্চ মাস থেকে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং মে মাসে সর্বোচ্চ হয়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের উত্তাপ ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠতে থাকে। এইসময় সমভূমি অঞ্চলের উষ্ণতা ২৬° সেলসিয়াস থেকে ৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উষুতার প্রকোপ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হয় এবং মালদহ অঞ্চলে দুপুরে উত্তপ্ত ‘লু’ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের গড় উত্তাপ ২০°-৩০° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তবে স্থানে স্থানে গড় তাপমাত্রায় পার্থক্য দেখা যায়। দুর্গাপুর, আসানসোল প্রভৃতি স্থানে তাপমাত্রা ৪০°-৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। তবে উচ্চতার জন্য জলপাইগুড়িতে এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় সাগরদ্বীপের তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াসের নীচে থাকে। পর্বতের উঁচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় গ্রীষ্মকালে শিলিগুড়ি বাদে দার্জিলিং জেলার আবহাওয়া খুব মনোরম ও আরামদায়ক হয় (১৪°-১৭° সেলসিয়াস)। পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী ঝড় হয়। কালবৈশাখীর অল্প বৃষ্টিপাতের সঙ্গে প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়।

আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমনের কাল বা বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর): জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপের ফলে পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত এই বায়ুপ্রবাহের ফলে ১৫ জুনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ১৮০ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে প্রায় ১২৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। বর্ষাকালে পশ্চিমবঙ্গের স্থানবিশেষে ১৩০ থেকে ৪০০ সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি (গড়ে ৩০০ সেমি) এবং পশ্চিমাংশের মালভূমি অঞ্চলে সবচেয়ে কম (গড়ে ১৫০ সেমি)।

শরৎকাল বা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) : অক্টোবর-নভেম্বর মাস পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার বিদায়ী কাল বা শরৎকাল। অক্টোবর থেকে নভেম্বর এই দু-মাসে বৃষ্টি ও উষ্ণতা (২০°-২৫° সেন্টিগ্রেড) দুই-ই কমে আসে। রাত্রিতে একটু শীত শীত বোধ হয় এবং ভোরবেলা শিশির পড়ে। সময়টা তাই খুব আরামদায়ক। তবে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির ফলে হঠাৎ আসা ঘূর্ণবাত বা ‘আশ্বিনের ঝড়’ মাঝে মাঝে উপদ্রবের সৃষ্টি করে। কালবৈশাখীর ঝড়ের তুলনায় এই ঝড় বেশি অনিষ্টকর। অনেক সময় সমুদ্র উত্তাল হয়ে উপকূলের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

শুষ্ক শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই তিন মাস পশ্চিমবঙ্গে শীতকাল। উত্তরের দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল বাদে পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র শীতকালে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ১৩°-১৯° সেলসিয়াস। দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চলে শীত সবচেয়ে বেশি (০°-৫° সেলসিয়াস)। এই সময় দার্জিলিং-এ মাঝে মাঝে তুষারপাতও হয়। শীতকালে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলেও উষ্ণতা বেশ কমে যায়। এই অঞ্চলে শীত গ্রীষ্মের উন্নতার পার্থক্য খুব বেশি (অর্থাৎ গ্রীষ্মে উত্তাপ খুব বেশি এবং শীতে উত্তাপ খুব কম)। পশ্চিমবঙ্গে শীতকালে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না, তবে পশ্চিমাবায়র প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস ও অল্প বৃষ্টিপাত হয়। কলকাতা ও আশপাশে শীতকালে ভোরের দিকে কুয়াশা হয়।

বিভিন্ন ঋতুতে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: সাধারণভাবে পশ্চিমবঙ্গ গ্রীষ্মপ্রধান উয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই তিনটি শীতের মাস বাদ দিলে সারাবছরই পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে। মে-জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি হয় (৩৫০-৪৫° সে.)। দীর্ঘস্থায়ী গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় (পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১৭৫ সেন্টিমিটার)। জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এবং ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে উয়তা কম, কিন্তু বৃষ্টিপাত বেশি। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উন্নতা বেশি, কিন্তু বৃষ্টিপাত কম। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং তাপমাত্রা কমতে থাকে।

৪. মানুষের জীবনে ঋতুপরিবর্তনের প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর: ঋতুপরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় প্রাকৃতিক দৃশ্যপটে, কৃষিতে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, যেমন:

① ক্রান্তীয় আর্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত বলে পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ পর্ণমোচী ধরনের। শীতকালের বৃষ্টিবিহীন সময়ে বাতাস ও মাটির শুষ্কতার প্রভাবে গাছের সবুজ পাতা প্রথমে হলুদ হয় ও তারপর ঝরে যায়। শীতের শেষে বায়ুর আর্দ্রতা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অল্পস্বল্প বৃষ্টি হলে গাছে নতুন পাতা গজায়।
② শস্য উৎপাদনের সময়সারণিকেও ঋতুপরিবর্তন প্রভাবিত করে। কালবৈশাখীর বৃষ্টি পেলেই এপ্রিল মাসে আউশ ধান রোয়া হয় যা সেপ্টেম্বর মাসে পরিপক্ক হলে কাটা হয়। বাংলা ক্যালেন্ডারের ভাদ্রমাসে এই ধান ওঠে বলে একে বলে ‘ভাদ্রোই’ ধান। জুন মাসে বর্ষা এলে আমন ধান রোয়া হয় এবং তার ফসল ওঠে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। বাংলার অগ্রহায়ণ মাসে এই ধান কাটা হয় বলে এর নাম ‘আঘ্রানি’ ধান। এই সময়ে নবান্ন উৎসব হয়। বৃষ্টিবিরল শীতকালে জলসেচের সুযোগ থাকলে ‘বোরো’ ধানের চাষ হয়; ডিসেম্বরে শুরু হয়ে যা শেষ হয় এপ্রিল মাসে।
③ ঋতুভেদে সবজি, ফুল ও ফলের প্রকারভেদ ঘটে, যেমন: বর্ষাকালের জুঁইফুল শীতকালে পাওয়া যায় না। বাজারে যে-কোনো ফল সারাবছর পাওয়া গেলেও তার উৎপাদন হয় নির্দিষ্ট ঋতুতে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালের ফল হল আম-জাম-লিচু-কাঁঠাল এবং শীতের ফল হল কমলালেবু। গ্রীষ্মের শাক নটে এবং কলমি বদলে যায় শীতের পালং-এ। খেজুর রস থেকে তৈরি হয় নলেন গুড় ও পাটালি।
④ পোশাক-পরিচ্ছদেও ঋতুপরিবর্তনের প্রভাব চোখে পড়ে, যেমন : গ্রীষ্মের উন্নআর্দ্র আবহাওয়ায় সুতির পোশাক বেশি জনপ্রিয়; পক্ষান্তরে কৃত্রিম তন্তু এবং পশমের কাপড় শীতকালে বেশি আরামদায়ক।
⑤ মানবশরীরের ওপরও ঋতুপরিবর্তন প্রভাব ফেলে, যেমন: বাতাসের আর্দ্রতার জন্য গ্রীষ্মকালে ঘাম হয়; আবার আর্দ্রতা কম হওয়ার কারণে শীতে ঠোঁট ও ত্বক ফাটে।
⑥ ঋতুভেদে অসুখ-বিসুখের ধরনও পালটায়, যেমন: বর্ষাকালে জন্ডিস, কলেরা, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগের প্রকোপ বাড়ে। এই ঋতুর শেষের দিকে জমা জলের কারণে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, এনকেফেলাইটিস ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। শীতকালে মানুষ কষ্ট পায় সর্দি-কাশি, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস প্রভৃতি রোগে। গ্রীষ্মের সাধারণ অসুখ হল সর্দি-কাশি।
⑦ গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে মানুষ শীতপ্রধান পার্বত্য জেলা দার্জিলিং-এ বেড়াতে যান। আবার শীতকাল সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চল পর্যটন ও বনভোজনের পক্ষে আদর্শ।
⑧ ঋতুভেদে খেলাধুলারও রকমফের হয়, যেমন : ক্রিকেট মূলত শীতকালের খেলা, এবং ফুটবল-হকি প্রভৃতি খেলা শীত ছাড়া অন্যান্য ঋতুতে বেশি জনপ্রিয়,
⑨ গ্রীষ্মে দিনের দৈর্ঘ্য এবং শীতকালে রাত্রির দৈর্ঘ্য বেশি হয় বলে সাধারণ মানুষকে ঋতুভেদে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়।

৫. পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকার বিবরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে প্রধানত ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা: ① উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের পজ্জল মৃত্তিকা, ② তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলের মাটি, ③ মালভূমি ও রাঢ় অঞ্চলের ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, ④ সমভূমি অঞ্চলের পলি মৃত্তিকা এবং ⑤ সুন্দরবন ও উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় মৃত্তিকা।

① উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের পড়জল মৃত্তিকা: উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের নীচের দিকে সাধারণত খয়েরি রঙের অরণ্য মাটি দেখা যায়। চা-বাগিচার পক্ষে এই মাটি খুবই উপযোগী। এ ছাড়া পর্বতের উচ্চ অংশে ক্রান্তীয় পজ্জল মৃত্তিকা দেখা যায়। উপরে-নীচে খয়েরি এবং মধ্যম স্তরে ছাই রং বিশিষ্ট এই মাটি আর্দ্র ও অম্ল। এই মাটির গভীরতা খুব বেশি হয় না। পর্বতের ঢালে ধস নামার জন্য এই মাটি ক্ষয়প্রবণ। তার ওপরে ছোটো ঘাসে ঢাকা তৃণভূমির মৃত্তিকা দেখা যায়। সামগ্রিকভাবে এরা সকলেই পার্বত্য মৃত্তিকা বলে পরিচিত যাদের সৃষ্টি হয়েছে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতাজনিত শীতল প্রকৃতির জলবায়ুর প্রভাবে।

② তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলের মৃত্তিকা: এই অঞ্চলের মাটিতে বালির ভাগ বেশি এবং কাদার ভাগ কম। তবে বক্সা ডুয়ার্স অঞ্চলে কাদামাটির আধিক্য দেখা যায়। বেশি বৃষ্টির ফলে ধস নামলে এই অঞ্চলের উপরের স্তরের মৃত্তিকার পাতলা আস্তরণ সরে গিয়ে বর্ষাকালে নীচের শিলাস্তর বেরিয়ে পড়ে। মাটির জলধারণের ক্ষমতা কম হওয়ায় এবং মাটিতে জৈব পদার্থ কম থাকায় এখানকার মাটির উর্বরতা অনেক কম।

③ মালভূমি ও রাঢ় অঞ্চলের ল্যাটেরাইট মাটি: পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, মেদিনীপুর ও মুরশিদাবাদ জেলার কোনো কোনো অংশে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আছে। ল্যাটিন শব্দ ‘ল্যাটার’ কথার অর্থ ইট। এই মৃত্তিকা ইটের মতো শক্ত এবং লাল, তাই একে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বলে। এই মৃত্তিকাতে নুড়ি, কাঁকর ও বালির ভাগ বেশি, তাই এর জলধারণ ক্ষমতা কম। তা ছাড়া এতে লোহার ভাগ বেশি তাই এর রং লাল। এই মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন, পটাশ এবং জৈব পদার্থ কম। তবে জলসেচের মাধ্যমে ধান, আখ ও সরষে এই মৃত্তিকায় চাষ করা হয়।

④ সমভূমি অঞ্চলের পলি মাটি: কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুরশিদাবাদ, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি এবং বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া জেলার পূর্বাংশ এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যভাগে পলিমাটি দেখা যায়। নদীবাহিত পলি, বালি সঞ্চিত হয়ে এই মাটির সৃষ্টি হয়েছে। এই মাটি খুবই উর্বর। এই মাটির জলধারণ ক্ষমতাও বেশি, তাই পলিমাটিতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ খুব ভালো হয়। এই মাটিতে ধান, পাট, গম, আখ, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হয়। পলিমাটির শ্রেণিবিভাগ: পলিমাটি সৃষ্টির সময় অনুসারে এর ২টি ভাগ, যেমন : প্রাচীন পলিমাটি: উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ জেলায় প্রাচীন পলিমাটি দেখা যায়। এই মাটি একটু লালচে রঙের হয়। এর উর্বরাশক্তিও তুলনায় কম, তাই ফসলও একটু কম হয়। নবীন পলিমাটি: মুরশিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় নবীন পলিমাটি দেখা যায়। এই মাটি খুবই উর্বর এবং জলধারণ ক্ষমতা বেশি। তাই বিভিন্ন ফসল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। উপাদান অনুসারে পলিমাটিকে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা : বেলে মাটি: এই মাটির দানা মোটা, মাটিতে বালির ভাগ বেশি। বেলে মাটিতে জল দাঁড়ায় না অর্থাৎ জলধারণ ক্ষমতা কম, উর্বরতাও কম। বেলে মাটিতে তরমুজ, ডাল, ফুটি ও আলু চাষ ভালো হয়। দোআঁশ মাটি: এই মৃত্তিকায় বালি এবং কাদার পরিমাণ প্রায় সমান সমান। এই মাটি খুবই উর্বর এবং জলধারণ ক্ষমতা মাঝারি, তাই চাষবাসের জন্য দোআঁশ মাটিই সবচেয়ে ভালো। এই মৃত্তিকায় ধান, গম, আখ, ডাল, পাট, তৈলবীজ প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। এঁটেল মাটি : এই মাটির দানা সূক্ষ্ম, মাটিতে কাদার ভাগ বেশি। এর উর্বরাশক্তিও বেশি এবং জলধারণ ক্ষমতা সর্বাধিক। এঁটেল মাটিতে আউশ ধানের চাষ খুবই ভালো হয়। পাট, আখ, গম, ডাল প্রভৃতির চাষও ভালো হয়।

⑤ সুন্দরবন ও উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় মৃত্তিকা: পশ্চিমবঙ্গের উপকূল ও সুন্দরবন অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় মৃত্তিকা দিয়ে গঠিত। সমুদ্রের লবণাক্ত জলের জন্য এই মৃত্তিকা লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়েছে। এই মৃত্তিকায় নারকেল, সুপারি, কার্পাস ও সূর্যমুখী জন্মায়।

৬. ধান ও পাট চাষে উপযুক্ত পরিবেশের উল্লেখ করো।

উত্তর: ধান চাষের উপযুক্ত পরিবেশ:

① প্রাকৃতিক পরিবেশ:

  • জমি: জল জমে থাকতে পারে এমন সমতল জমি ধান চাষের পক্ষে উপযুক্ত। পশ্চিমবঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে ধাপ কেটে জমি সমতল করে ধান চাষ করা হয়।
  • মাটি: ধান চাষের জন্য উর্বর এঁটেল মাটি ও দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।
  • উন্নতা: ধান চাষের জন্য ১৬°-৩০° সেলসিয়াস উদ্বুতার প্রয়োজন।
  • বৃষ্টিপাত: ধান চাষের জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন। ১০০-২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হলে ধান চাষ ভালো হয়। ধান কাটার সময় শুষ্ক আবহাওয়া দরকার।

② অপ্রাকৃতিক পরিবেশ: ধান চাষের জন্য পরিমিত মাত্রায় সার প্রয়োগ, জলসেচ, কীটনাশক, আগাছা দমন, সুলভ শ্রমিক এবং কিছু মূলধন-এর প্রয়োজন হয়।

পাট চাষের অনুকূল অবস্থা:

① প্রাকৃতিক অবস্থা:

  • জমি: জল দাঁড়াতে পারে না এমন সামান্য ঢালু সমতল ভূমি পাট চাষের পক্ষে উপযুক্ত। গাছের গোড়ায় জল জমলে পাটগাছের ক্ষতি হয়, তবে সাদা পাটের তেমন বেশি ক্ষতি হয় না।
  • মাটি: পাট চাষের জন্যে উর্বর দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। এঁটেল মাটিতেও চাষ হয়, তবে উৎপাদন কম হয়।
  • উষুতা: পাট উষুমণ্ডলের ফসল। পাট চাষের জন্যে ২৫° সেলসিয়াস থেকে ৩৫° সেলসিয়াস উষুতার প্রয়োজন।
  • বৃষ্টিপাত: ১৫০-২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত পাট চাষের উপযোগী এবং সপ্তাহে ভালো রোদ হওয়ার পর একবার বৃষ্টি হলে পাট গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
  • স্থির জল: আঁশ ছাড়াবার জন্যে পাটগাছ জলে পচাতে হয়। তার জন্যে খেতের কাছাকাছি স্থির জলাশয় প্রয়োজন হয়। স্রোতযুক্ত জলাশয়ে পাট পচতে চায় না।

② অপ্রাকৃতিক অবস্থা: পাট চাষের জন্য পরিমিত মাত্রায় সার প্রয়োগ, জলসেচ, কীটনাশক, আগাছা দমন, সুলভ শ্রমিক এবং কিছু মূলধন-এর প্রয়োজন হয়।

৭. পশ্চিমবঙ্গে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলো লেখো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি হল কাঁচামালের সহজলভ্যতা, যেমন লৌহ আকরিক ও কোক কয়লা, চুনাপাথর, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, টাংস্টেন, নিকেল ও প্রচুর জল।

ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (IISCO) [কুলটি ও বার্নপুর] কারখানাটির অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান:

① নিকটবর্তী রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলের কয়লা,
② সিংভূম ও ময়ূরভঞ্জ খনির আকরিক লোহা,
③ মধ্যপ্রদেশের ম্যাঙ্গানিজ,
④ গাংপুরের ডলোমাইট,
⑤ রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলের তাপসহনক্ষম ইট,
⑥ দামোদর নদের জল,
⑦ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশের সুলভ শ্রমিক এবং
⑧ কলকাতা বন্দরের নৈকট্য এই কারখানাটি গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট [দুর্গাপুর, বর্ধমান] কারখানাটির অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান :

① রানিগঞ্জ, আসানসোল ও ঝরিয়ার কয়লা এবং নিজস্ব চুল্লির কোক-কয়লা,
② নোয়ামুন্ডি খনির আকরিক লোহা,
③ বীরমিত্রপুরের চুনাপাথর,
④ বোনাই খনির ম্যাঙ্গানিজ,
⑤ স্থানীয় দক্ষ শ্রমিক,
⑥ দামোদর নদের জল,
⑦ কলকাতা বন্দরের নৈকট্য-এই ইস্পাত কারখানাটি স্থাপনে সাহায্য করেছে।

৮. হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ কী?

উত্তর: ভারতের অধিকাংশ পাটকল কলকাতার সন্নিহিত হুগলি নদীর দু-পাশে গড়ে উঠেছে। হুগলি নদীর উভয় তীরে পাটশিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল :

① এই রাজ্যে উৎপাদিত কাঁচামালের সহজলভ্যতা,
② কলকাতা বন্দরের নৈকট্য ও আমদানি-রপ্তানির সুবিধা,
③ শক্তিসম্পদের প্রাচুর্য (পাটশিল্পের শক্তিসম্পদের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় কয়লা নিকটবর্তী রানিগঞ্জ ও ঝরিয়া কয়লাখনি থেকে জলপথ, রেল বা সড়কপথে সহজেই পরিবহণ করা যায়),
④ কলকাতা শহরের অবস্থান (ব্যাংকিং ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধা),
⑤ সুলভ শ্রমিক (হুগলি শিল্পাঞ্চলের নিকটবর্তী ঘনবসতিপূর্ণ বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের সুলভ শ্রমিক এই অঞ্চলে পাটশিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে),
⑥ উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা (এই অঞ্চল সড়কপথ, রেলপথ ও জলপথে উন্নত),
⑦ সুলভ জল (ভাগীরথী-হুগলি নদী ও তার বিভিন্ন উপনদীর জল এই অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্পের প্রয়োজনীয় জলের জোগান দেয়)।

৯. পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় কী তা লেখো।

উত্তর: পাটশিল্পের সমস্যা:

① কাঁচা পাটের সমস্যা,
② পশ্চিমবঙ্গের পাটকলগুলির পুরানো যন্ত্রপাতি ও আধুনিকীকরণের অভাব এবং নিম্ন উৎপাদন ক্ষমতা,
③ পরিবর্ত সামগ্রীর আবিষ্কার ও কৃত্রিম তন্তুর সাথে প্রতিযোগিতা,
④ প্রতিযোগিতার সমস্যা (বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারতীয় পাটশিল্প, বিশেষত হুগলি শিল্পাঞ্চলের পাটশিল্প বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।),
⑤ অন্যান্য কারণ : (i) নিম্নমানের কয়লা, (ii) অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, (iii) মালিক ও শ্রমিক সম্পর্কের অবনতি, (iv) শ্রমিক সমস্যা ও কাজ করার মনোভাবের অভাব (Lack of Work Culture), (v) মূলধনের অভাব, (vi) শিল্প পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটি, (vii) কর্মী ছাঁটাই, ঘেরাও এবং লক আউট প্রভৃতি কারণের জন্য উৎপাদন ক্রমাগত কমে যাওয়া, এবং (viii) অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ পাটশিল্পের বর্তমান অবনতির জন্য দায়ী।

পশ্চিমবঙ্গে পাটশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা (সমাধানের উপায়):

① পাট চাষিদের উৎসাহিত করার জন্যে গঠিত হয়েছে ‘জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’।
② কাঁচাপাটের সরকারি সহায়ক মূল্য ধার্য করা হয়েছে।
③ খাদ্য ও চিনি প্যাকিং-এর জন্যে চটের থলের ব্যবহার আবশ্যিক করা হয়েছে।
④ নতুন পাটজাত সামগ্রীর আবিষ্কার এবং নতুন বাজারের সন্ধান করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত (Extras)

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)

coming soon

প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)

coming soon

Ron'e Dutta
Ron'e Dutta
Ron'e Dutta is a journalist, teacher, aspiring novelist, and blogger who manages Online Free Notes. An avid reader of Victorian literature, his favourite book is Wuthering Heights by Emily Brontë. He dreams of travelling the world. You can connect with him on social media. He does personal writing on ronism.

Get notes of other classes and subjects

NBSE SEBA/AHSEC
NCERT TBSE
WBBSE/WHCHSE ICSE/ISC
BSEM/COHSEM MBOSE
Share Feedback Question Papers
Notify change in syllabus/books Share PDFs of books, get benefits
Request notes not available now Share PDFs of question papers

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Only for Registered Users