এখানে (chapter 1) ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক: WBBSE ক্লাস ৯ ইতিহাস (বাংলা মাধ্যম)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।
Select medium |
English medium notes |
Bengali medium notes |
- সারাংশ (summary)
- পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Santra textbook)
- সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো (MCQs)
- শূন্যস্থান পূরণ করো (fill in the blanks)
- ‘ঠিক/’ভুল’ নির্বাচন করো (true or false)
- স্তম্ভ মেলাও (match)
- বিবৃতির সঙ্গে মানানসই ব্যাখ্যাটি লেখো
- অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (very short)
- সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (short)
- বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (detailed)
- ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (long)
- অতিরিক্ত (Extras)
Video tutorial
সারাংশ (summary)
ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক (Pharasi Biplober Koyekti Dik) – ফরাসি বিপ্লব মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে এই বিপ্লব শুরু হয়। এই বিপ্লবের ফলে সাধারণ মানুষ প্রথমবারের মতো সমান অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের স্বাদ পায়। যদিও এটি ফ্রান্সে শুরু হয়েছিল, এর প্রভাব ইউরোপসহ পুরো পৃথিবীজুড়ে পড়েছিল।
বিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল তৎকালীন রাজতন্ত্রের অন্যায় শাসন। ফ্রান্সে রাজা ষোড়শ লুই ছিলেন দুর্বল শাসক। তার শাসনে অভিজাত ও যাজক শ্রেণিরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পেতেন, কিন্তু কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি কর দিতে হতো। খাদ্যের দাম বাড়ছিল, আর লোকেরা খেতে পাচ্ছিল না। রাজা কর ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলেও ধনী শ্রেণিরা তা আটকায়। এইসব অন্যায়ে সাধারণ মানুষ ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
১৭৮৯ সালে “এস্টেট জেনারেল” নামের একটি সভা ডাকা হয়। এখানে তৃতীয় সম্প্রদায়, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিরা দাবি করে যে সবাইকে সমান অধিকার দিতে হবে। যখন তাদের কথা শোনা হয়নি, তারা নিজেরাই “জাতীয় সভা” (National Assembly) গঠন করে। তারা প্রতিজ্ঞা করে যে, ফ্রান্সে একটি নতুন সংবিধান তৈরি না করা পর্যন্ত তারা একসঙ্গে থাকবে। এই ঘটনাকে “টেনিস কোর্টের শপথ” (Tennis Court Oath) বলা হয়।
এরপর ১৪ জুলাই, সাধারণ মানুষ প্যারিসের “বাস্তিল দুর্গ” আক্রমণ করে। এটি ছিল রাজতন্ত্রের অত্যাচারের প্রতীক। বাস্তিল দুর্গের পতনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ দেখিয়েছিল যে তারা রাজতন্ত্র আর মানবে না। এই ঘটনার পর সারা ফ্রান্সে বিক্ষোভ শুরু হয়। গ্রামে কৃষকরা সামন্তপ্রভুদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। শহরে শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণ খাদ্য ও অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করে।
ফরাসি বিপ্লবের পেছনে অনেক দার্শনিকের বড় ভূমিকা ছিল। রুশো, ভলতেয়ার এবং মন্তেস্কু নামের দার্শনিকেরা তাদের লেখায় সমান অধিকার, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের কথা বলেছিলেন। রুশো তার বই “Social Contract”-এ লিখেছিলেন, “মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়।” এই লেখাগুলি সাধারণ মানুষকে সাহস জুগিয়েছিল।
বিপ্লব চলাকালীন, রাজা ষোড়শ লুই এবং রানি মেরি আঁতোয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে তারা দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। রাজাকে ১৭৯৩ সালে গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিপ্লবীরা “জ্যাকোবিন ক্লাব” নামের একটি দল গঠন করে ক্ষমতা দখল করে। তাদের শাসনকে “সন্ত্রাসের রাজত্ব” (Reign of Terror) বলা হয়, কারণ তারা প্রচুর মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে রাজতন্ত্র শেষ হয় এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। “মানবাধিকার ঘোষণা” (Declaration of the Rights of Man) প্রকাশিত হয়, যেখানে সবাইকে সমান বলা হয়।
ফরাসি বিপ্লবের শিক্ষা হলো যে অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে তারা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে। এটি শুধু ফ্রান্স নয়, সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ধারণাকে ছড়িয়ে দিয়েছিল।
পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Santra textbook)
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো (MCQs)
১. ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল
(ক) ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: ঘ) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে
২. ফরাসি চার্চকে দেয় করকে বলা হত
(ক) করভি
(খ) সেন্স
(গ) টাইথ
(ঘ) ক্যাপিটেশন
উত্তর: গ) টাইথ
৩. ‘পার্সিয়ান লেটারস’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন
(ক) ভলতেয়ার
(খ) মন্তেস্কু
(গ) অ্যাডাম স্মিথ
(ঘ) রুশো
উত্তর: খ) মন্তেস্কু
৪. রাজা ষোড়শ লুইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের
(ক) ২১ জানুয়ারি
(খ) ২১ ফেব্রুয়ারি
(গ) ২১ মার্চ
(ঘ) ২১ এপ্রিল
উত্তর: ক) ২১ জানুয়ারি
৫. নতুন ফরাসি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল
(ক) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর
(খ) ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর
(গ) ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর
(ঘ) ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর
উত্তর: ঘ) ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর
৬. ‘দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস’ গ্রন্থের লেখক
(ক) ভলতেয়ার
(খ) রুশো
(গ) অ্যাডাম স্মিথ
(ঘ) দিদেরো
উত্তর: গ) অ্যাডাম স্মিথ
৭. ‘সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থটির রচয়িতা
(ক) রুশো
(খ) ভলতেয়ার
(গ) অ্যাডাম স্মিথ
(ঘ) দিদেরো
উত্তর: ক) রুশো
৮. আর্থিক অসংগতির জন্য ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলেছেন
(ক) মর্স স্টিফেনস
(খ) রাইকার
(গ) অ্যাডাম স্মিথ
(ঘ) দিদেরো
উত্তর: গ) অ্যাডাম স্মিথ
শূন্যস্থান পূরণ করো (fill in the blanks)
১. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি অর্থনীতিকে অ্যাডাম স্মিথ ________ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
উত্তর: ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর
২. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ ________ এস্টেটে বিভক্ত ছিল।
উত্তর: তিনটি
৩. রুশো কর্তৃক রচিত বিখ্যাত গ্রন্থটি হল ________।
উত্তর: সামাজিক চুক্তি
৪. রাজা ষোড়শ লুই ________ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এস্টেট জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেন।
উত্তর: ১৭৮৯
৫. ফ্রান্সে জ্যাকোবিন শাসনের সূচনা হয়েছিল ________ তারিখ থেকে।
উত্তর: ২ জুন ১৭৯৩
৬. ফ্রান্সে মানুষ ও নাগরিকদের অধিকার ঘোষণা হয় ________ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ১৭৮৯
৭. গিলেটিন যন্ত্র আবিষ্কার করেন ________।
উত্তর: ডঃ গিলেটিন
৮. জ্যাকোবিন দলের একজন উদ্যোগকারী নেত্রী ছিলেন ________।
উত্তর: মাঁদাম রোনাল্ড
৯. টিপু সুলতান ______ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রাজ্যে জ্যাকোবিন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।
উত্তর: ১৭৯৭
১০. ______ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়।
উত্তর: ১৭৯২
‘ঠিক/’ভুল’ নির্বাচন করো (true or false)
১. বিপ্লবকালীন ফরাসি সম্রাট ছিলেন রাজা পঞ্চদশ লুই।
উত্তর: ভুল
কারণ: বিপ্লবকালীন ফরাসি সম্রাট ছিলেন ষোড়শ লুই, পঞ্চদশ লুই এর শাসনকাল অনেক আগে শেষ হয়েছিল।
২. ‘করভি’ ছিল বিনা পারিশ্রমিকে বাধ্যতামূলক শ্রম।
উত্তর: ঠিক
কারণ: করভি একটি সামন্ততান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল, যেখানে কৃষকরা বিনা পারিশ্রমিকে জমিদার বা সামন্তপ্রভুর জন্য কাজ করতে বাধ্য থাকত।
৩. ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ গৃহীত হয়েছিল 1790 খ্রিস্টাব্দের 20 জুন।
উত্তর: ভুল
কারণ: টেনিস কোর্টের শপথ গৃহীত হয়েছিল 1789 খ্রিস্টাব্দের 20 জুন।
৪. রোবসপিয়রকে গিলোটিনে হত্যা করা হয় 1794 খ্রিস্টাব্দের 28 জুলাই।
উত্তর: ঠিক
কারণ: রোবসপিয়র, যিনি জ্যাকোবিন শাসনের সময় ফরাসি বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার পতনের পরে এই তারিখে গিলোটিনে হত্যা করা হয়।
৫. জ্যাকোবিন দলের একজন উল্লেখযোগ্য নেত্রী ছিলেন মারাত।
উত্তর: ভুল
কারণ: মারাত ছিলেন একজন পুরুষ, এবং জ্যাকোবিন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন, কিন্তু তিনি নেত্রী ছিলেন না।
৬. 1793 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান হয়।
উত্তর: ভুল
কারণ: ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে 1792 খ্রিস্টাব্দে, যখন ফরাসি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্তম্ভ মেলাও (match)
1.
‘ক’-স্তম্ভ | ‘খ’-স্তম্ভ | মিল |
---|---|---|
a) টাইথ | i) রাজাকে দেয় কর | a → iv |
b) গ্যাবেল | ii) বাৎসরিক খাজনা | b → iii |
c) ক্যাপিটেশন | iii) লবণ কর | c → ii |
d) সেন্স | iv) চার্চকে দেয় কর | d → i |
2.
‘ক’-স্তম্ভ | ‘খ’-স্তম্ভ | মিল |
---|---|---|
a) 26 আগস্ট, 1789 | i) সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি ঘোষণা | a → iii |
b) 30 সেপ্টেম্বর, 1791 | ii) ফরাসি রাজতন্ত্রের বিলোপ | b → iv |
c) 21 সেপ্টেম্বর, 1792 | iii) ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা | c → ii |
d) 17 জুলাই, 1793 | iv) নতুন ফরাসি সংবিধান প্রণয়ন | d → i |
বিবৃতির সঙ্গে মানানসই ব্যাখ্যাটি লেখো
বিবৃতি ঃ বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের আইনব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ।
ব্যাখ্যা 1 ঃ ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল স্বৈরাচারী।
উত্তর: ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং স্বৈরাচারী। ষোড়শ লুই-এর শাসনকালে এই স্বৈরাচার চরমে পৌঁছায়। এই ব্যবস্থার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ছিল:
- রাজাদের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা: রাজা সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব ধারণ করতেন এবং কোনও নির্বাচনী বা গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। এমনকি অভিজাতদেরও কোনও বিশেষ প্রভাব ছিল না, কারণ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রাজা।
- ইন্টেন্ডেন্টদের অত্যাচার: প্রশাসনিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য রাজা যে প্রতিনিধিদের (ইন্টেন্ডেন্ট) নিয়োগ করতেন, তারা প্রায় স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। এই ইন্টেন্ডেন্টরা স্থানীয় স্তরে দমনমূলক শাসন চালাতেন এবং নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন।
- জনগণের অসন্তোষ: ইন্টেন্ডেন্টদের অত্যাচার এবং এই শাসনব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাদের রাজতন্ত্রের প্রতি আস্থা নষ্ট হয়। একপর্যায়ে ইন্টেন্ডেন্টদের ‘অর্থলোলুপ নেকড়ে’ নামে অভিহিত করা হয়, যা তাদের দুর্নীতি ও লোভকে প্রতিফলিত করে।
এতে বোঝা যায়, রাজতন্ত্রের এই অপ্রতিহত স্বৈরশাসন ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে বিদ্রোহের মনোভাব সৃষ্টির প্রধান কারণগুলোর একটি।
ব্যাখ্যা 2 : বিচারকগণ ছিলেন অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ণ।
উত্তর: বিচারব্যবস্থা ছিল পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং জনগণের প্রতি একেবারেই অবিচারপূর্ণ। এর কারণগুলো ছিল:
- বিনা বিচারে গ্রেফতার ও মুক্তি: রাজার হাতে ছিল অবাধ ক্ষমতা। তিনি যেকোনো ব্যক্তিকে লে-দ্য-ক্যাশে নামক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিনা বিচারে আটক করতে পারতেন। আবার, লে-দ্য-গ্রেস আদেশের মাধ্যমে অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারতেন। এই প্রক্রিয়ায় কোনো ন্যায্য বিচার পদ্ধতি ছিল না।
- আর্থিক লেনদেনের ওপর বিচারব্যবস্থা নির্ভরশীল: ফরাসি বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে পরিচালিত হত। অর্থাৎ, যে বেশি অর্থ দিতে পারত, সে-ই বিচার থেকে সুবিধা পেত। সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায্য বিচার পাওয়াটা ছিল প্রায় অসম্ভব।
- স্বার্থান্বেষী বিচারকরা: বিচারকদের একটি বড় অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং নিজেদের স্বার্থে কাজ করত। ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতেন।
এই ধরনের বিচারব্যবস্থা সমাজের প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতীক হয়ে ওঠে এবং এটি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
ব্যাখ্যা 3 ঃ দেশের সর্বত্র একই প্রকার আইনবিধির প্রচলন ছিল না।
উত্তর: ফ্রান্সে একইসঙ্গে বিভিন্ন প্রদেশে ভিন্ন ভিন্ন আইন চালু ছিল, যা সারা দেশে একক আইনি কাঠামোর অভাব নির্দেশ করে। এর প্রধান সমস্যাগুলো ছিল:
- অঞ্চলভিত্তিক আইন: ফ্রান্সের প্রত্যেক প্রদেশে আলাদা আইনবিধি ছিল। উদাহরণস্বরূপ, কোনও এক প্রদেশে যে আইন কার্যকর ছিল, তা অন্য প্রদেশে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এতে করে বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা বা সামঞ্জস্য বজায় রাখা সম্ভব ছিল না।
- রাজার আদেশই আইন: কোনও নির্দিষ্ট সংবিধান বা আইনবিধি ছিল না। অনেক সময় রাজার ইচ্ছা বা আদেশই আইন হিসেবে গণ্য হত। এই ধরনের ব্যবস্থা জনসাধারণের জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল এবং তাদের জন্য আইনকে একটি দমনমূলক হাতিয়ার হিসেবে উপস্থাপন করেছিল।
- আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বৈষম্য: উচ্চবিত্ত বা অভিজাত শ্রেণির জন্য আলাদা নিয়ম ছিল, যেখানে তারা অনেক সুবিধা ভোগ করত। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ওপর কঠোর আইন প্রয়োগ করা হত।
এই বিভাজন ও ত্রুটিপূর্ণ আইনব্যবস্থা সাধারণ মানুষের প্রতি অবিচারের আরেকটি চিত্র প্রকাশ করে এবং এটি ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম কারণ ছিল।
অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (very short)
১. ‘টাইথ’ কী?
উত্তর: টাইথ একটি বাধ্যতামূলক কর যা ফরাসি চার্চকে দেওয়া হত। এটি কৃষিপণ্যের এক-দশমাংশ হিসেবে আদায় করা হত, যেমন গম, বার্লি, ফল, সবজি এবং পশুজাত পণ্য।
২. ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ গ্রন্থ কার রচনা?
উত্তর: ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন মন্তেস্কু।
৩. বাস্তিল দুর্গের পতন কত খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিল?
উত্তর: বাস্তিল দুর্গের পতন ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই তারিখে ঘটেছিল।
৪. একটি বৈপ্লবিক নারী সংগঠনের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘সোসাইটি অফ রিভলিউশনারি রিপাবলিকান উইমেন’ একটি বৈপ্লবিক নারী সংগঠনের নাম।
৫. সামন্ততন্ত্রের পতন কবে ঘটেছিল?
উত্তর: সামন্ততন্ত্রের পতন ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই ঘোষণা করা হয়।
৬. ‘সাঁকুলোৎ’ নামে কারা পরিচিত ছিল?
উত্তর: ‘সাঁকুলোৎ’ নামে পরিচিত ছিল ফরাসি সমাজের শহুরে নিম্নবিত্ত মানুষ, যারা বিপ্লবের সবচেয়ে সক্রিয় এবং জঙ্গি সমর্থক ছিল।
৭. বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে কোন্ রাজবংশ রাজত্ব করত?
উত্তর: বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজবংশ রাজত্ব করত।
৮. ‘বাস্তিল’ কী?
উত্তর: ‘বাস্তিল’ ছিল ফ্রান্সের একটি কারাগার, যা স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত।
৯. রোবসপিয়র কে ছিলেন?
উত্তর: রোবসপিয়র ছিলেন জ্যাকোবিন দলের একজন প্রধান নেতা এবং ফরাসি বিপ্লবের সময় ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ নামে পরিচিত সময়কালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
১০. ‘বিশ্বকোশ’-এর রচনাকার হিসেবে দুজনের নাম লেখো।
উত্তর: দিদরো এবং ডি-অ্যালেমবার্ট ‘বিশ্বকোশ’-এর রচনাকার হিসেবে পরিচিত।
১১. ‘লৎ এৎ ভেন্তি’ কী?
উত্তর: ‘লৎ এৎ ভেন্তি’ ছিল ফ্রান্সে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় ধার্য করা একটি কর।
১২. সংবিধান সভার দুজন পরিচালকের নাম লেখো।
উত্তর: সংবিধান সভার দুইজন পরিচালক ছিলেন মুনিয়ে এবং রোবসপিয়র।
১৩. কত খ্রিস্টাব্দে রাজা ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদণ্ড হয়?
উত্তর: রাজা ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদণ্ড ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি কার্যকর করা হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (short)
১. ‘রাজনৈতিক কারাগার’ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ‘রাজনৈতিক কারাগার’ বলতে বোঝায় ফরাসি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের অবস্থা, যেখানে আইনের পরিবর্তে রাজার আদেশ আইন হিসেবে গণ্য হত। লে দ্য ক্যাশে নামক গ্রেফতারি পরোয়ানার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং লে দ্য গ্রেস দ্বারা মুক্তি দেওয়া হত।
২. ‘করভি’ কী?
উত্তর: ‘করভি’ হল বাধ্যতামূলক শ্রম, যা ফরাসি কৃষকদের সামন্ত প্রভুদের খেতে কাজ করার জন্য দিতে হত। এ ছাড়াও, রাস্তা নির্মাণ বা দুর্গ তৈরি ইত্যাদি কাজে বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমদান করতে হত।
৩. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে প্রথম এস্টেটে কারা ছিলেন?
উত্তর: বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে প্রথম এস্টেটে ছিলেন যাজক সম্প্রদায়। এই শ্রেণির মানুষ কর প্রদান থেকে মুক্ত ছিলেন এবং সামাজিকভাবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ছিলেন।
৪. ফিজিওক্রাট গোষ্ঠীর মূল বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর: ফিজিওক্রাট গোষ্ঠীর মতে, জমিই রাষ্ট্রের সম্পদের মূল উৎস এবং কৃষিক্ষেত্রের উন্নতির মাধ্যমেই অর্থনীতির অগ্রগতি সম্ভব। তাঁরা অবাধ বাণিজ্যের ধারণাকে সমর্থন করতেন।
৫. ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ কী?
উত্তর: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন, তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টে সমবেত হয়ে শপথ নেন যে, ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা না করা পর্যন্ত তাঁরা বিচ্ছিন্ন হবেন না।
৬. বিপ্লবের পূর্বে ফরাসি সমাজব্যবস্থা কীরূপ ছিল?
উত্তর: বিপ্লবের পূর্বে ফরাসি সমাজব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। এটি তিনটি এস্টেটে বিভক্ত ছিল—যাজক, অভিজাত এবং তৃতীয় সম্প্রদায়। প্রথম দুটি সম্প্রদায় ছিল করমুক্ত, আর তৃতীয় সম্প্রদায়কে করভার বহন করতে হত।
৭. ‘বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ‘বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলতে ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লবকে বোঝায়, যেখানে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ সাম্য, স্বাধীনতা এবং জনকল্যাণমূলক পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল।
৮. ‘অভিজাত বিপ্লব’ কেন হয়েছিল?
উত্তর: ‘অভিজাত বিপ্লব’ হয়েছিল রাজা ষোড়শ লুইয়ের করব্যবস্থার সংস্কারের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। করমুক্ত সুবিধা হারানোর আশঙ্কায় অভিজাতরা এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
৯. ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার’ ঘোষণার দুটি শর্ত লেখো।
উত্তর: ১. মানুষ স্বাধীন এবং সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ২. প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি, স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার অধিকার অঙ্গীকার করা হয়।
১০. ‘অ্যাসাইনেট’ কী?
উত্তর: ‘অ্যাসাইনেট’ ছিল বিপ্লবী ফরাসি সরকারের দ্বারা জারি করা একটি কাগজের মুদ্রা, যা গির্জার বাজেয়াপ্ত জমির মূল্যের বিপরীতে ইস্যু করা হয়েছিল।
১১. ভূমিদাস কাদের বলে?
উত্তর: ভূমিদাস বলা হয় সেই কৃষকদের, যারা সামন্ত প্রভুদের জমিতে বাধ্যতামূলক শ্রম দিত এবং প্রভুর অনুমতি ছাড়া জমি ছেড়ে যেতে পারত না।
১২. ‘অঁসিয়া রেজিম’ কী?
উত্তর: ‘অঁসিয়া রেজিম’ বলতে ফরাসি বিপ্লব-পূর্ব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বোঝানো হয়, যা বৈষম্য এবং স্বৈরাচারের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।
১৩. ‘ফিজিওক্রাট’ কাদের বলা হত?
উত্তর: ‘ফিজিওক্রাট’ বলা হত সেই দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদদের, যাঁরা জমিকে অর্থনীতির প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে মতপ্রকাশ করতেন।
বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (detailed)
১. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে করব্যবস্থা কীরূপ ছিল?
উত্তর: বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের করব্যবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক ও ভ্রান্ত। উচ্চ শ্রেণির যাজক ও অভিজাতদের কর দিতে হত না, অথচ তাদের সুবিধা ছিল সর্বাধিক। রাষ্ট্রের করের বেশিরভাগ অংশ তৃতীয় সম্প্রদায় তথা কৃষক ও বুর্জোয়া শ্রেণির কাছ থেকে আদায় করা হত। কৃষকদের ওপর নানা করের বোঝা ছিল। তারা চার্চকে টাইথ, রাজাকে তেইলি, ক্যাপিটেশন, ভিটিংয়েম প্রভৃতি কর প্রদান করত। বিশেষ করে গ্যাবেল বা লবণ কর ছিল অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এছাড়া বেগার শ্রম এবং সামন্ত প্রভুদের বিভিন্ন কর মেটাতে হত। সামগ্রিকভাবে, ফরাসি করব্যবস্থা জনসাধারণের প্রতি শোষণমূলক ছিল এবং তা বিপ্লবের প্রধান কারণগুলির একটি হয়ে ওঠে।
২. ফরাসি বিপ্লবের পশ্চাতে দার্শনিকদের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবের পটভূমি রচনায় দার্শনিকদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভলতেয়ার চার্চ ও যাজকদের দুর্নীতি প্রকাশ করেছিলেন। মন্তেস্কু ক্ষমতা বিভাজনের তত্ত্ব প্রচার করেন এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। রুশো মানুষের স্বাধীনতার কথা বলেন এবং সামাজিক চুক্তি মতবাদ উপস্থাপন করেন। ফিজিওক্রাটরা জমির গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলেন। ডেনিস ডিডেরো এবং ডি-অ্যালেমবার্ট বিশ্বকোষ রচনা করেন, যা জনগণের মধ্যে জ্ঞান প্রসারে সাহায্য করে। এঁরা পুরাতনতন্ত্রের ত্রুটির দিকটি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরে বিপ্লবী চেতনাকে উজ্জীবিত করেছিলেন।
৩. ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে জাতীয় সভার গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: জাতীয় সভা ফরাসি বিপ্লবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে টেনিস কোর্টের শপথ নিয়ে গঠিত হয়। সামন্ততন্ত্র বিলোপ, আইনের সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার ঘোষণা জাতীয় সভার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এছাড়া গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং সিভিল কনস্টিটিউশন অফ দ্য ক্লার্জি আইন প্রণয়ন করে। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান রচনা জাতীয় সভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। যদিও এই সভা বিত্তশালী বুর্জোয়াদের স্বার্থ রক্ষা করেছিল, তবু এটি ফ্রান্সে আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারণার প্রসার ঘটায়।
৪. ফরাসি বিপ্লবে শহুরে ও গ্রাম্য দরিদ্র জনতার অংশগ্রহণ কীভাবে লক্ষ করা গিয়েছিল?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবে শহুরে দরিদ্র জনগণ বাস্তিল দুর্গ দখল এবং পৌর বিপ্লবে অংশ নেয়। তারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা সামন্ত প্রভুদের সম্পত্তি ধ্বংস করে এবং কর প্রদান বন্ধ করে। শহরের সাঁকুলোৎ এবং গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনগণ বিপ্লবের গণভিত্তি শক্তিশালী করে। তাদের আন্দোলন সামন্ততন্ত্র বিলোপে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
৫. ‘মানুষ ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা’ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: ‘মানুষ ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা’ ছিল ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথি। এতে স্বাধীনতা, সম্পত্তি, নিরাপত্তা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার ঘোষণা করা হয়। আইন ছিল জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন এবং সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপের আহ্বান জানানো হয়। এটি বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করলেও, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে ওঠে।
৬. ফরাসি বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাইয়ের রাজপ্রাসাদের অভিমুখে নারী শোভাযাত্রা বিপ্লবের গতি ত্বরান্বিত করে। নারী সংগঠনগুলি রাজনৈতিক অধিকার ও সমানতার দাবি তোলে। ওলম্প দ্য গুজ নারীদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র রচনা করেন। তবে বিপ্লব নারীদের পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার দেয়নি।
৭. বিপ্লবের পূর্বে ফরাসি অর্থনীতি কীরূপ ছিল?
উত্তর: বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের অর্থনীতি ছিল সংকটময়। রাজতন্ত্রের বিলাসিতা, অকারণ যুদ্ধ এবং করব্যবস্থার বৈষম্য অর্থনৈতিক সমস্যা বাড়ায়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং খাদ্য সংকট সাধারণ মানুষকে বিপ্লবমুখী করে তোলে। অ্যাডাম স্মিথ এই অর্থনীতিকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (long)
১. নতুন ফরাসি সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি আলোচনা করো। ‘মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ কতটা কার্যকারী ছিল?
উত্তর: নতুন ফরাসি সংবিধান (১৭৯১) ছিল ফরাসি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল। এটি আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে এবং ইউরোপের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির মধ্যে ছিল তিনটি মৌলিক নীতি—স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব। এটি রাজতন্ত্রের ক্ষমতা সীমিত করে সংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রবর্তন করে।
নতুন সংবিধানে আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা পৃথক করার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা করা হয়। ফ্রান্সকে ৮৩টি প্রদেশে বিভক্ত করে শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রশাসনিক সংস্কার করা হয়। গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি আইন প্রণীত হয়। সংবিধান অনুসারে ভোটাধিকার দেওয়া হয় শুধুমাত্র সক্রিয় নাগরিকদের, অর্থাৎ যাঁরা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এর ফলে বিত্তশালী বুর্জোয়া শ্রেণি ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে, কিন্তু দরিদ্র জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
‘মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ (ডিক্লারেশন অব দ্য রাইটস অব ম্যান অ্যান্ড সিটিজেন) সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ইউরোপে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে আইনের সমতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়।
তবে এ ঘোষণার কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ ছিল। এটি নারীদের ভোটাধিকার বা সামাজিক সুরক্ষার অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এছাড়া, দাসপ্রথার প্রতি সরাসরি কোনো বিরোধিতা করা হয়নি। তৃতীয় সম্প্রদায়ের দরিদ্র কৃষক এবং শ্রমজীবী মানুষদের জন্যও এই ঘোষণা তেমন কার্যকর ছিল না।
সংক্ষেপে, ফরাসি সংবিধান এবং মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা মানবাধিকারের পথে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও, এটি মূলত ধনী বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করেছে। তবু, এটি গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে এবং আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এ ঘোষণার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে স্বাধীনতা ও সমতার ধারণা প্রসারিত হয়, যা পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপ্লবের অনুপ্রেরণা জোগায়।
২. ‘জ্যাকোবিন শাসন’ বলতে কী বোঝো? উক্ত শাসনের গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর: ‘জ্যাকোবিন শাসন’ বলতে বোঝানো হয় ফ্রান্সে ১৭৯৩ থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোবসপিয়রের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। এই সময়টিকে “সন্ত্রাসের রাজত্ব” (Reign of Terror) বলা হয়। এটি ফরাসি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যখন বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখতে এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শত্রুদের দমন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। জ্যাকোবিন ক্লাব ছিল উগ্রপন্থী বিপ্লবীদের একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যা ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
জ্যাকোবিন শাসনের সময় ফ্রান্সে একটি কেন্দ্রীভূত প্রশাসন গড়ে ওঠে। অভ্যন্তরীণ শত্রুদের দমনে গিলোটিনের ব্যাপক ব্যবহার হয়। রোবসপিয়র এবং তার সহযোগীরা বিপ্লব বিরোধী সন্দেহভাজনদের দমন করতে বিপ্লবী আদালত গঠন করেন। এই আদালত বিপ্লব বিরোধীদের বিচারের নামে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করত। এই শাসনে সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। দরিদ্রদের জন্য খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়, ভূমি সংস্কার প্রণয়ন করা হয় এবং সাধারণ শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়।
জ্যাকোবিন শাসনের গুরুত্ব কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, এটি ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের পতনকে নিশ্চিত করে। জ্যাকোবিন শাসনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। দ্বিতীয়ত, এটি বিপ্লবী আদর্শকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে নেওয়া বিভিন্ন নীতি বিপ্লবের গণভিত্তি মজবুত করে। তৃতীয়ত, জ্যাকোবিন শাসনের অধীনে ফ্রান্সের বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধ করা হয় এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা হয়।
তবে, এই শাসন বিতর্কিত হয়ে ওঠে তার কঠোর দমননীতির জন্য। বিপ্লবী আদর্শ রক্ষার নামে প্রায় ৫০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি, যেমন মেরি আঁতোয়ানেৎ, ব্রিসো, এবং মাদাম রঁলা সন্ত্রাসের শিকার হন।
উপসংহারে, জ্যাকোবিন শাসন ফরাসি বিপ্লবের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এটি বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখতে ও তার লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যদিও এর স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র এবং সন্ত্রাসবাদ এটিকে বিতর্কিত করে তোলে। তবুও, এটি আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিকাশে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।
৩. ফরাসি বিপ্লবের বৃহত্তর প্রভাব কী ছিল? সামন্ততন্ত্রের বিলোপসাধন কীভাবে হয়েছিল?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবের বৃহত্তর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী এবং আধুনিক বিশ্ব গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিপ্লব ইউরোপের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর মৌলিক পরিবর্তন এনেছিল। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে এটি আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারণার সূচনা করেছিল। স্বাধীনতা, সাম্য এবং মৈত্রীর মূলনীতিকে সামনে রেখে ফরাসি বিপ্লব মানুষের অধিকার এবং শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা প্রদান করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফরাসি বিপ্লব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকশিত হয়। এটি কেবল ফ্রান্সে নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও মুক্তি ও গণতন্ত্রের ভাবনা ছড়িয়ে দেয়। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলোপ এবং জমিদারি প্রথার অবসানের ফলে কৃষকেরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে। ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নাগরিক অধিকার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। বিপ্লব ইউরোপের শ্রেণি-ভিত্তিক সমাজকে ভেঙে একটি সমানাধিকারমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে।
সামন্ততন্ত্রের বিলোপসাধন ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান অর্জন। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট জাতীয় সভায় সামন্ততান্ত্রিক প্রথার অবসানের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে সামন্তপ্রভুদের বিশেষ অধিকার এবং শোষণমূলক করের অবসান ঘটে। তৃতীয় সম্প্রদায়ের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে যেসব বাধ্যতামূলক কর ও শ্রম (যেমন—টাইথ, বেগার) দিতে বাধ্য ছিল, সেগুলি বাতিল করা হয়। চার্চের জমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের জন্য তা বরাদ্দ করা হয়।
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি জাতীয় কনভেনশন দ্বারা সামন্তপ্রথা চিরতরে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এর ফলে জমিদারি ও কৃষকদের উপর শোষণমূলক শর্তাবলীর অবসান ঘটে। এই উদ্যোগ ফরাসি সমাজে গণতান্ত্রিক এবং সমতার ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে। সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ফরাসি সমাজে একটি নতুন যুগের সূচনা করে এবং এর প্রভাব সারা বিশ্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪. বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সের সামাজিক অবস্থা কীরূপ ছিল?
উত্তর: বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সের সামাজিক অবস্থা ছিল তীব্র বৈষম্য ও অসাম্যের প্রতীক। সমাজকে তিনটি এস্টেটে বিভক্ত করা হয়েছিল: প্রথম এস্টেট (যাজক), দ্বিতীয় এস্টেট (অভিজাত), এবং তৃতীয় এস্টেট (সাধারণ জনগণ)। এই বিভাজন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে তীব্রতর করেছিল এবং বিপ্লবের জন্য ভূমিকা রেখেছিল।
প্রথম এস্টেট ছিল যাজক শ্রেণি, যারা ফ্রান্সের জনসংখ্যার মাত্র ১% ছিল। এরা কর প্রদানের দায় থেকে মুক্ত ছিল এবং চার্চের মাধ্যমে বিপুল আয় করত। টাইথ নামে কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া বাধ্যতামূলক কর ছিল তাদের প্রধান আয়ের উৎস। তারা ধর্মের নামে জনগণের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করত।
দ্বিতীয় এস্টেট ছিল অভিজাত শ্রেণি, যারা ছিল ফ্রান্সের জনসংখ্যার প্রায় ৩-৪ লক্ষ। এদের হাতে ছিল প্রায় ২৫% জমির মালিকানা এবং রাজনৈতিক প্রভাব। অভিজাতরা রাজাকে কর দিত না এবং সামন্ততান্ত্রিক সুবিধা ভোগ করত। এদের অধিকাংশ সময় বিলাসবহুল জীবনে কাটত এবং তারা তৃতীয় এস্টেটের ওপর নানা রকম কর ও শোষণ চাপিয়ে দিত।
তৃতীয় এস্টেট ছিল ফ্রান্সের জনসংখ্যার প্রায় ৯৭%। এদের মধ্যে ছিল বুর্জোয়া, কৃষক এবং শ্রমজীবী শ্রেণি। বুর্জোয়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল ব্যবসায়ী, ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী ইত্যাদি, যারা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হলেও সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অবহেলিত ছিল। কৃষকদের জন্য করের বোঝা ছিল চরম। তাদের আয়ের প্রায় ৮০% বিভিন্ন কর প্রদানে ব্যয় হতো, যেমন: টাইথ (চার্চকে), তেইলি (রাজাকে), এবং সামন্তপ্রভুদের বিভিন্ন খাজনা।
শ্রমজীবী মানুষ, কারখানার শ্রমিক ও মজুররা ছিল সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত অংশ। এদের মজুরি ছিল অত্যন্ত কম এবং তারা খাদ্য সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দারিদ্র্যের শিকার হত।
এই বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা তৃতীয় এস্টেটের মানুষদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম দেয়। প্রথম দুই এস্টেটের করমুক্তি ও তৃতীয় এস্টেটের ওপর আরোপিত অসহনীয় করব্যবস্থা সমাজে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করে, যা শেষ পর্যন্ত ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজকে নতুন ভিত্তিতে গড়ে তোলার পথে নিয়ে যায়।
অতিরিক্ত (Extras)
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)
১. ফরাসি বিপ্লব কোন সালে শুরু হয়?
(ক) 1776
(খ) 1789
(গ) 1799
(ঘ) 1804
উত্তর: (খ) 1789
৯৩. ফরাসি বিপ্লবের সময় রানি মেরি আঁতোয়ানেৎ কোন দেশে জন্মগ্রহণ করেন?
(ক) ইংল্যান্ড
(খ) অস্ট্রিয়া
(গ) প্রাশিয়া
(ঘ) স্পেন
উত্তর: (খ) অস্ট্রিয়া
প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)
১. ফরাসি বিপ্লব কোন সালে শুরু হয়েছিল?
উত্তর: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে।
৯৭. ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক অসাম্য কীভাবে সামাজিক সংকট তৈরি করেছিল?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক অসাম্য ছিল একটি অন্যতম প্রধান সংকট যা সমাজে ব্যাপক অসন্তোষ এবং সামাজিক সংকটের সৃষ্টি করেছিল। এই সময় ফ্রান্সে রাজনৈতিক কাঠামো ছিল বৈষম্যমূলক এবং আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। ফরাসি সমাজ মূলত তিনটি সম্প্রদায় বা এস্টেটে বিভক্ত ছিল—যাজক, অভিজাত এবং তৃতীয় সম্প্রদায়। যাজক ও অভিজাতরা কর প্রদানে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পেয়েছিল, অথচ তারাই ছিলেন সবচেয়ে ধনী ও সুবিধাভোগী শ্রেণি। তৃতীয় সম্প্রদায়, যা ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৭ শতাংশ, সমস্ত করের বোঝা বহন করত।
কৃষকরা ছিলেন সবচেয়ে বেশি কর-আক্রান্ত। তারা চার্চকে টাইথ, রাজাকে তেইলি এবং অন্যান্য কর দিতে বাধ্য ছিল। এছাড়াও, লবণ করের মতো শুল্ক তাদের জীবনে প্রচণ্ড কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা তাদের আর্থিকভাবে নিঃশেষ করে ফেলেছিল। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্যের সংকট তৃতীয় সম্প্রদায়ের জীবনকে আরো কঠিন করে তুলেছিল।
অন্যদিকে, ফরাসি রাজতন্ত্রের বিলাসিতা এবং অযৌক্তিক ব্যয়, যেমন বারবার যুদ্ধ এবং রাজকোষের তীব্র ঋণ সংকট, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে। এই আর্থিক বৈষম্য এবং রাজকোষের অপব্যবহার সমাজের নিম্নস্তরে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করে। সামাজিক বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক সংকট একত্রে বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করে, কারণ তৃতীয় সম্প্রদায় বুঝতে পারে যে, তাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য একটি বিপ্লব আবশ্যক। এইভাবে, অর্থনৈতিক অসাম্য ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।
Get notes of other boards, classes, and subjects