বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: WBBSE ক্লাস 10 ইতিহাস (History)

বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
Share + Two Real PDF + Guest PDF
WhatsApp

এখানে (chapter 5) বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা, WBBSE ক্লাস 10 ইতিহাস (History) (Bengali medium) আধুনিক ভারতের ইতিহাস ও পরিবেশ (Adhunik Bharater Itihas O Poribesh)-এর উত্তর, ব্যাখ্যা, সমাধান, নোট, অতিরিক্ত তথ্য, এমসিকিউ এবং পিডিএফ পাওয়া যাবে। নোটগুলো শুধুমাত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

Select medium
English medium notes
Bengali medium notes
OFN – Free vs Registered

সারাংশ (summary)

বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (Bikalpa Chinta o Udyog: Boishishto o Porjalochona): প্রথমে ছাপাখানার কথা বলা যাক। ইউরোপে ছাপাখানা চালুর অনেক আগেই চিনে ছাপা শুরু হয়েছিল। ইউরোপে গুটেনবার্গ আধুনিক ছাপাখানা তৈরি করেন। বাংলায় চার্লস উইলকিন্স প্রথম বাংলা অক্ষর তৈরি করেন এবং তাঁর তৈরি অক্ষরেই প্রথম বাংলা ব্যাকরণ বই ছাপা হয় ১৭৭৮ সালে। উইলিয়াম কেরি ১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে একটি ছাপাখানা খোলেন। এরপর গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের মতো বাঙালিরাও ছাপাখানা খোলেন। ছাপাখানার প্রসারের ফলে বই ও সংবাদপত্র যেমন ‘দিগদর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’ ছাপা হতে লাগলো। ডেভিড হেয়ার ‘স্কুল বুক সোসাইটি’ তৈরি করেন যাতে কম দামে পড়ার বই পাওয়া যায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছোটদের জন্য ‘বর্ণপরিচয়’-এর মতো বই লেখেন যা শিক্ষাবিস্তারে খুব সাহায্য করে। উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ছাপাখানা ও বই প্রকাশ শুরু করেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছোটদের জন্য সুন্দর ছবিসহ বই ছাপার জন্য হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং নিয়ে আসেন।

এরপর বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার কথা। রাজা রামমোহন রায়, অক্ষয়কুমার দত্তের মতো মানুষেরা বুঝেছিলেন দেশের উন্নতির জন্য বিজ্ঞান পড়া দরকার। ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান পড়ানো শুরু হয়, কিন্তু ভালো শিক্ষক বা ল্যাবরেটরির অভাব ছিল। রাধানাথ শিকদার, প্রমথনাথ বসুর মতো মানুষেরা নিজের চেষ্টায় বিজ্ঞানচর্চা করেন। ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’ (IACS) প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে সি. ভি. রমন গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পান। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বিজ্ঞানের গবেষণায় অনেক নতুন কাজ করেন। জগদীশচন্দ্র বসু পরে ‘বসুবিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের চেষ্টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়, যেখানে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বিজ্ঞানীরা গবেষণা করতেন। স্বদেশি আন্দোলনের সময় কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজন বোঝা যায়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়, যা পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

সবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনার কথা। রবীন্দ্রনাথ প্রচলিত ইংরেজি শিক্ষাকে পছন্দ করতেন না কারণ তা ছিল জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন ও মুখস্থ বিদ্যার মতো, অনেকটা খাঁচায় বন্দি তোতাপাখির বুলি শেখার মতো। তিনি ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে এর সমালোচনা করেন। তিনি মনে করতেন, শিক্ষা হওয়া উচিত প্রকৃতির কাছাকাছি, আনন্দের সঙ্গে, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা হাতেকলমে কাজ করে শিখবে। এই চিন্তা থেকেই তিনি শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয় শুরু করেন, যা পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এখানে পুঁথিগত পড়ার পাশাপাশি গান, আঁকা, নাচ, চাষবাস, গ্রামের উন্নতি – এই সব কিছুকেই শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেখা হতো। তিনি মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর খুব জোর দিয়েছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে শিশুরা প্রকৃতি ও মানুষের কাছাকাছি থেকে আনন্দের সঙ্গে বড় হবে এবং তাদের মনের সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটবে।

পাঠ্য প্রশ্ন ও উত্তর (Prantik textbook)

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :

(ক) প্রথম বই ছাপা হয়েছিল-

(i) চিনে
(ii) ইংল্যান্ডে
(iii) ভারতে
(iv) ইউরোপে

উত্তর: (i) চিনে

(খ) বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন-

(i) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
(ii) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(iii) স্বামী বিবেকানন্দ
(iv) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তর: (ii) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

(গ) সাহিত্যকীর্তির জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করে-
(i) বসুমতী প্রেস
(ii) ইন্ডিয়ান প্রেস
(iii) ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স
(iv) কুন্তলীন প্রেস।

উত্তর: (iv) কুন্তলীন প্রেস।

(ঘ) ভারতে ভূতত্ত্ব অনুশীলনের পুরোধা ছিলেন-

(i) প্রফুল্লচন্দ্র রায়
(ii) জগদীশচন্দ্র বসু
(iii) মেঘনাদ সাহা
(iv) প্রমথনাথ বসু।

উত্তর: (iv) প্রমথনাথ বসু।

(ঙ) কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়-

(i) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ
(ii) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ
(iii) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ
(iv) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ।

উত্তর: (ii) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ

(চ) জাতীয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল-

(i) প্রাচ্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো
(ii) কারিগরি শিক্ষা ও স্বদেশি শিল্পের প্রসার ঘটানো
(iii) প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন
(iv) উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটানো।

উত্তর: (ii) কারিগরি শিক্ষা ও স্বদেশি শিল্পের প্রসার ঘটানো

(ছ) ‘বিশ্বভারতী’র উদ্বোধক ছিলেন-

(i) ব্রজেন্দ্রনাথ শীল
(ii) কানাইলাল বসু
(iii) সতীশচন্দ্র রায়
(iv) মোহিতচন্দ্র সেন।

উত্তর: (i) ব্রজেন্দ্রনাথ শীল

(জ) বিশ্বভারতী-র যাত্রা শুরু হয়েছিল-

(i) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে
(ii) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে
(iii) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
(iv) কোনোটিই নয়।

উত্তর: (ii) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে

(ঝ) ভারতে প্রথম সংবাদপত্র—

(i) দিগদর্শন
(ii) হিকির গেজেট
(iii) সংবাদ প্রভাকর
(iv) অমৃতবাজার পত্রিকা

উত্তর: (ii) হিকির গেজেট

নীচের বিবৃতিগুলির মধ্যে কোনটি ঠিক কোটি ভুল লেখো

(ক) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়ম কেরি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস স্থাপন করেন।

উত্তর: ঠিক

কারণ: ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস স্থাপন করেছিলেন।

(খ) বাঙালি উদ্যোগে ছাপাখানা শুরু করেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।

উত্তর: ঠিক

কারণ: মিশনারিদের হাত ধরে বাংলায় ছাপাখানার সূচনা হলেও, বাঙালি উদ্যোগে প্রথম ছাপাখানা শুরু করেছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।

(গ) ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ।

উত্তর: ভুল

কারণ: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ (ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ নয়। কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়েছিল স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, রাসবিহারী ঘোষ ও স্যার তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে।

(ঘ) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য ডন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

উত্তর: ভুল

কারণ: জাতীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ডন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর নন।

(ঙ) ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।

উত্তর: ভুল

কারণ: ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ সেখানে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

(চ) রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃতি ও মানব সমাজের সমন্বয় চেয়েছিলেন।

উত্তর: ঠিক

কারণ: রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মানুষের জন্ম বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবসমাজের মধ্যে, তাই তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই দুই উপাদানের সমন্বয় করতে চেয়েছিলেন।

(ছ) বাঙালি ছাপাখানা শুরু করেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।

উত্তর: ঠিক

কারণ: মিশনারিদের হাত ধরে বাংলায় ছাপাখানার সূচনা হলেও, বাঙালি উদ্যোগে প্রথম ছাপাখানা শুরু করেছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।

(জ) ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ।

উত্তর: ভুল

কারণ: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ (ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ নয়। কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়েছিল স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, রাসবিহারী ঘোষ ও স্যার তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে।

(ঝ) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য ডন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

উত্তর: ভুল

কারণ: জাতীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ডন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর নন।

নীচের বিবৃতির সঙ্গে সবচেয়ে মানানসই ব্যাখ্যাটি বেছে নাও

(ক) ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ হিকির সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করতেন না।

ব্যাখ্যা-

(i) তিনি ব্রিটিশদের অনুগত ছিলেন না।
(ii) তিনি কোম্পানির নীতি সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলেন।
(iii) তিনি তাঁর পত্রিকায় কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন।

উত্তর: (iii) তিনি তাঁর পত্রিকায় কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন।

(খ) প্রথমদিকে বিজ্ঞানচর্চা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই শুরু হয়

ব্যাখ্যা-

(i) বিজ্ঞান বিষয় পড়ানোর জন্য উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়া যেত না।
(ii) বিজ্ঞানের সিলেবাস উন্নতমানের ছিল না।
(iii) উচ্চস্তরে বিজ্ঞান পঠনপাঠন ও গবেষণার বিশেষ সুযোগ ছিল না।

উত্তর: (iii) উচ্চস্তরে বিজ্ঞান পঠনপাঠন ও গবেষণার বিশেষ সুযোগ ছিল না।

(গ) রবীন্দ্রনাথ জীবনমুখী শিক্ষা পদ্ধতি চেয়েছিলেন

ব্যাখ্যা-

(i) তিনি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখার জন্য আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
(ii) তিনি মাতৃভাষাকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করেন।
(iii) তিনি পড়াশোনা ছাড়াও ছবি আঁকা, গান গাওয়া প্রভৃতিকে শিক্ষার অংশ করে তোলেন।

উত্তর: (i) তিনি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখার জন্য আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

প্রদত্ত ভারতবর্ষের মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত করো

(ক) ভারতে পোর্তুগিজদের প্রথম ছাপাখানা যেখানে প্রতিষ্ঠিতহয়েছিল।
(খ) গোয়ায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ভারতে যেখানে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
(গ)পূর্ববঙ্গের ছাপাখানা প্রথম যেখানে স্থাপিত হয়।

বামস্তম্ভের সঙ্গে ডানস্তম্ভ মেলাও

(ক)

বামস্তম্ভডানস্তম্ভ
(i) সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়(a) হাফটোন
(ii) প্রফুল্লচন্দ্র রায়(b) জাতীয় শিক্ষা পরিষদ
(iii) বঙ্গদর্শন(c) বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড
(iv) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী(d) বিজ্ঞান রহস্য

উত্তর:

বামস্তম্ভডানস্তম্ভ
(i) সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়(b) জাতীয় শিক্ষা পরিষদ
(ii) প্রফুল্লচন্দ্র রায়(c) বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড
(iii) বঙ্গদর্শন(d) বিজ্ঞান রহস্য
(iv) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী(a) হাফটোন

(খ)

বামস্তম্ভডানস্তম্ভ
(i) চার্লস উইলকিন্স(a) বেঙ্গল গেজেট
(ii) অগাস্টাস হিকি(b) Calcutta Journal of Medicine
(iii) ড. মহেন্দ্রলাল সরকার(c) বসুবিজ্ঞান মন্দির
(iv) ভগিনী নিবেদিতা(d) বাংলার ক্যাক্সটন

উত্তর:

বামস্তম্ভডানস্তম্ভ
(i) চার্লস উইলকিন্স(d) বাংলার ক্যাক্সটন
(ii) অগাস্টাস হিকি(a) বেঙ্গল গেজেট
(iii) ড. মহেন্দ্রলাল সরকার(b) Calcutta Journal of Medicine
(iv) ভগিনী নিবেদিতা(c) বসুবিজ্ঞান মন্দির
একটি বাক্যে উত্তর দাও

ক. ‘নববাবু বিলাস’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে ছিলেন?

উত্তর: ‘নববাবু বিলাস’ গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

খ. স্কুল বুক সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত একটি পত্রিকার নাম লেখো।

উত্তর: স্কুল বুক সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত একটি পত্রিকার নাম হলো ‘পশ্বাবলী’, যা ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে চালু করা একটি মাসিক পত্র ছিল।

গ. যশোহরের ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার নাম লেখো।

উত্তর: যশোহরের ছাপাখানা থেকে ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ প্রকাশিত হয়েছিল।

ঘ. কে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্টকে চিঠি লিখে ও দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেন?

উত্তর: রাজা রামমোহন রায় ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্টকে পত্র লিখে এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেন।

ঙ. এভারেস্টের উচ্চতা প্রথম পরিমাপ করার সঙ্গে কোন্ বাঙালীর নাম যুক্ত আছে?

উত্তর: এভারেস্টের উচ্চতা প্রথম পরিমাপ করার সঙ্গে রাধানাথ শিকদারের নাম যুক্ত আছে, বলা হয় তিনিই সর্বপ্রথম এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করেন।

চ. ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভাকে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় কী বলে উল্লেখ করা হয়?

উত্তর: ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভাকে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় ভারতে বিজ্ঞান সাধনার ‘ম্যাগনা কার্টা’ বলে উল্লেখ করা হয়।

ছ. কাদের উদ্যোগ ও সহযোগিতায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়েছিল?

উত্তর: আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এবং রাসবিহারী ঘোষ, স্যার তারকনাথ পালিত প্রমুখের সহযোগিতায় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়।

জ. কত খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেছিল?

উত্তর: ১৯৫১ সালের মে মাসে বিশ্বভারতী ভারতীয় লোকসভায় একটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়।

ঝ. কে স্কুলবুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর:
ডেভিড হেয়ার কলকাতায় ‘স্কুল বুক সোসাইটি’ স্থাপন করেন।

ঞ. আবোল তাবোল প্রথম কোন্ প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়?

উত্তর:
সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ গ্রন্থটি ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স থেকে ছাপা হয়।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন

ক. ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখযোগ্য কেন?

উত্তর: ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ তাঁর প্রকাশনা সংস্থা থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-সহ আরও অন্যান্য বিশিষ্ট সাহিত্যিকের বই প্রকাশিত হত।

খ. ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স থেকে কী ধরনের পুস্তক প্রকাশিত হয়েছিল?

উত্তর: ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স থেকে খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বিখ্যাত ‘টুনটুনির বই’ এবং তাঁর পুত্র সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।

গ. চার্লস উডের প্রতিবেদন কি বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের সহায়ক হয়েছিল? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: হ্যাঁ, চার্লস উডের প্রতিবেদন বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের সহায়ক হয়েছিল। কারণ, চার্লস উড তাঁর প্রতিবেদনে মানববিদ্যার পাশাপাশি বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাদানের কথাও বলেন। এর ফলস্বরূপ, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিজ্ঞান শিক্ষাদান শুরু হয় এবং পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানে ডিগ্রিদানের ব্যবস্থা করা হয়।

ঘ. প্রমথনাথ বসুকে ভারতীয় শিল্পায়নের বলিষ্ঠ প্রবক্তা বলা হয় কেন?

উত্তর: প্রমথনাথ বসুকে ভারতীয় শিল্পায়নের বলিষ্ঠ প্রবক্তা বলা হয় কারণ তিনি একজন স্বদেশপ্রেমী ছিলেন এবং ভারতের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এক বলিষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন। তাঁর অক্ষয় কীর্তি হল ময়ূরভঞ্জ জেলার গুরুমহিষীনিতে আকরিক লৌহসম্পদের আবিষ্কার এবং জামশেদপুরে লৌহ-ইস্পাত কারখানা স্থাপনে জামশেদজি টাটাকে উৎসাহ প্রদান।

ঙ. জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: জাতীয় শিক্ষা পরিষদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুবকদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলা এবং হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষা ও স্বদেশি শিল্পের প্রসার ঘটানো। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কারিগরি শিক্ষার প্রসার।

চ. শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের অভিমত কী ছিল?

উত্তর:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করতেন মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। তাঁর অভিমত ছিল, বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষাকে শুধু প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে বন্দি রাখলে হবে না, উচ্চশিক্ষাতেও মাতৃভাষা ব্যবহারের যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, গরীবের ছেলেকে মাতৃস্তন্য (মাতৃভাষায় শিক্ষা) হইতে বঞ্চিত করা কেন।

ছ. ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স থেকে কী ধরনের পুস্তক প্রকাশিত হয়েছিল?

উত্তর:
ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স থেকে খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বিখ্যাত ‘টুনটুনির বই’ এবং তাঁর পুত্র সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।

বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন

ক. বাংলার ছাপাখানা শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করেছিল?

উত্তর: ছাপাখানার প্রসার ও শিক্ষাবিস্তারের মধ্যে নিবিড় সংযোগ রয়েছে। ছাপাখানার প্রসার বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে সক্রিয় প্রভাব ফেলে। উনিশ শতকের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বাংলায় মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রসার সূচিত হয়। ডেভিড হেয়ার কলকাতায় ‘স্কুল বুক সোসাইটি’ স্থাপন করেন, যার ফলে পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা মেটাতে পুস্তক প্রকাশনার কাজ গতি পায় এবং সুলভে বিভিন্ন বই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। স্কুল বুক সোসাইটি পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশের কাজও চালায় এবং এখান থেকে বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, হিন্দুস্থানি, ফারসি ও আরবি ভাষার পুস্তক ও প্রচারপত্র প্রকাশিত হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ও বাংলায় শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানা স্থাপনে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হন।

খ. ‘বই ছাপার ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কারিগরি দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে’-এই মন্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: উনিশ শতকে পুস্তক প্রকাশনায় কাঠ খোদাই ছবির প্রচলন ছিল, পরে হাফটোন ব্লক চালু হয় এবং এই হাফটোন ব্লকের পথিকৃৎ ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। ছোটোদের জন্য লেখা বইয়ে ছবি ছাপার অব্যবস্থায় তিনি খুবই দুঃখবোধ করেছিলেন এবং ফলস্বরূপ হাফটোন বিষয়ক গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। বিদেশেও তখন হাফটোন ব্লকের প্রারম্ভিক পর্যায় ছিল এবং প্রাচ্যে এর কোনো চর্চাই ছিল না। গণিত ও বিজ্ঞানে গভীর জ্ঞানের অধিকারী উপেন্দ্রকিশোর এদেশে বসেই নানা প্রকারের ডায়াগ্রাম, রে-স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র তৈরি, ব্লক নির্মাণের ডুয়োটাইপ ও রে-টিন্ট পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন, যা তাঁর দূরদর্শিতারই ফল। বিদেশে তাঁর এই কার্যপ্রণালী উচ্চপ্রশংসিত হয় এবং বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রণ সংক্রান্ত বিখ্যাত পত্রিকাতে, যেমন ‘দি ইনল্যান্ড প্রিন্টার’, ‘লে প্রসিদ’, ‘প্রসেস ওয়ার্ক অ্যান্ড ইলেকট্রোটাইপিং’ ইত্যাদিতে, তাঁর কর্মকাণ্ডের সশ্রদ্ধ উল্লেখ পাওয়া যায়। কোনো কোনো পত্রিকা তাঁকে কর্মপন্থা ও প্রক্রিয়া সংক্রান্ত গবেষণাকারীদের মধ্যে অন্যতম বলেও উল্লেখ করে। সুতরাং, বই ছাপার ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কারিগরি দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্য তাঁর খ্যাতি দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা এই মন্তব্যকে যথার্থ প্রতিপন্ন করে।

গ. উনিশ শতকের শেষ দিকে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’-এর অবদান কী ছিল?

উত্তর: ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সক্রিয়তার মধ্য দিয়েও বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা প্রসারলাভ করে। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা, যা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এখানে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়। বিজ্ঞানী সি. ভি. রমন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এখানেই গবেষণা করে ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন ও নোবেল পুরস্কার পান। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ও এই প্রতিষ্ঠানে গণিত বিষয়ে গবেষণা করেন। উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. টীকা লেখো-কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ।

উত্তর: আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার সময়ে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতেই গবেষণার কাজ শুরু করলেও মাঝে মাঝেই তাঁদের বিভিন্ন সরকারি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হত, ফলে একটি স্বশাসিত বিজ্ঞান বিভাগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হয়। এই উদ্দেশ্যকে রূপদান করেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যোগে এবং রাসবিহারী ঘোষ, স্যার তারকনাথ পালিত প্রমুখের সহযোগিতায় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়। তারকনাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষ বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিপুল অর্থ প্রদান করেন এবং বিদেশে ছাত্র পাঠিয়ে বিজ্ঞানচর্চার ব্যবস্থা করা হয়। আধুনিক ভারতের বিজ্ঞান অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কলেজ প্রধানতম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও স্যার সি. ভি. রমন যথাক্রমে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় পালিত অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজে নিযুক্ত হন মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখার্জি প্রমুখ বৈজ্ঞানিকরা। এখানকার উচ্চমানের গবেষণাপত্রগুলি বিশ্বের সেরা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে শুরু করে এবং বিখ্যাত গবেষক-শিক্ষকদের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অসামান্য মৌলিক গবেষণা বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের দ্বারা প্রশংসিত হয়। কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ শতকের বৌদ্ধিক জগতের ধ্রুবতারা হয়ে ওঠে।

ঙ. টীকা লেখো-বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।

উত্তর:
জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কারিগরি শিক্ষার প্রসার। তারকনাথ পালিত, মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই স্থাপিত হয় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’। প্রমথনাথ বসু এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন এবং নীলরতন সরকার সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল প্রমুখ উপদেষ্টামণ্ডলীতে ছিলেন। সাবান, কাচ, চর্ম প্রভৃতি শিল্প স্থাপনে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের জন্য এখানে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ক্রমশ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের নতুন ভবন গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের নাম বদলে হয় ‘কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বেঙ্গল’। ডঃ ত্রিগুণা সেনের সুযোগ্য পরিচালনায় এই কলেজের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পরিণত হয়।

চ. ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে কি রবীন্দ্রনাথ সমর্থন করেছিলেন? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর:
না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক বা ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমর্থন করেননি, বরং তার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর মতে, এই শিক্ষাধারা ভারতবাসীর জাতীয় জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। তিনি মনে করতেন, এই বাস্তবতা বিবর্জিত ও জীবনবিচ্ছিন্ন তোতাকাহিনির শিক্ষাপদ্ধতি শুধুমাত্র কেরানি তৈরির অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। তাঁর ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে তিনি বিদেশি মতের এই শিক্ষার সাথে জাতীয় জীবনের সামঞ্জস্যের অভাবকে সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেন এবং ‘চুচুঁয়ে-পড়া’ শিক্ষানীতিকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি ইংরেজ প্রবর্তিত মামুলি বিদ্যালয় ব্যবস্থারও কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “স্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল, মাস্টার এই কারখানার অংশ… ছাত্ররা দুই-চার খাতা কলে ছাঁটা বিদ্যা লইয়া বাড়ি ফেরে।” তাই বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমর্থন করেননি এবং এর পরিবর্তে তিনি এক জীবনমুখী, প্রকৃতি-সংলগ্ন, মাতৃভাষাকেন্দ্রিক এবং জাতীয় জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষার কথা বলেছিলেন।

ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্ন

ক. বিশ শতকের বাংলায় ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: বিশ শতকের শুরু থেকে ছাপাখানা ও প্রকাশনা সংস্থা দুইয়েরই বেশ প্রসার ঘটে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কুন্তলীন প্রেস স্থাপিত হয়। এরা সাহিত্যকীর্তির জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করে। এ ছাড়াও সেই সময় ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স, সিটি বুক সোসাইটি, ইন্ডিয়ান প্রেস, ইস্ট অ্যান্ড প্রেস, বসুমতী প্রেস প্রভৃতি গড়ে ওঠে। এখানে গুপ্ত প্রেসের কথাও বলা প্রয়োজন। এদের প্রকাশিত পঞ্জিকা সমস্ত বাংলায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। জাতীয়তাবাদী মনোভাবাপন্ন উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৬৮-১৯১৯ খ্রি.) ‘বসুমতী পত্রিকা’ ও ‘বসুমতী সাহিত্য মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় ও এস. সি. লাহিড়ীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের প্রকাশনা সংস্থা থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-সহ আরও অন্যান্য বিশিষ্ট সাহিত্যিকের বই প্রকাশিত হত। এস. সি. লাহিড়ী ছিলেন উনিশ শতকের বিখ্যাত মনীষী রামতনু লাহিড়ীর পুত্র। এই সময় কলেজ স্ট্রিটকে ঘিরে গোলদিঘির এলাকা বইপাড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। বই প্রকাশ ও বিক্রির জন্য প্রকাশক সংস্থার সংখ্যা বাড়তে থাকে। উনিশ শতকের শেষে শুধুমাত্র পুস্তক বিক্রেতা হিসাবে দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি স্থাপিত হয়। বই প্রকাশ ও বিক্রির ক্ষেত্রে এই সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩ খ্রি.-১৯১৫ খ্রি.) ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন পুস্তক প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধারও। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স সংস্থার সূচনা করেন। সংস্থাটির দফতর প্রথমে ছিল ১৩ নং কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে। পরে অফিসটি ১০০, গড়পার রোডে স্থানান্তরিত হয়। উনিশ শতকে পুস্তক প্রকাশনায় কাঠ খোদাই ছবির প্রচলন ছিল। পরে হাফটোন ব্লক চালু হয়। এই হাফটোন ব্লকের পথিকৃৎ ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর। ছোটোদের জন্য লেখা বইয়ে ছবি ছাপার অব্যবস্থায় উপেন্দ্রকিশোর খুবই দুঃখবোধ করেছিলেন। ফলস্বরূপ হাফটোন বিষয়ক গবেষণায় তাঁর মনোনিবেশ। বিদেশেও সে সময় হাফটোন ব্লকের প্রারম্ভিক পর্যায়। প্রাচ্যে তখন হাফটোনের কোনো চর্চাই ছিল না। গণিত ও বিজ্ঞানে গভীর জ্ঞানের অধিকারী উপেন্দ্রকিশোর এদেশে বসেই অনেক দূর দেখতে পেয়েছিলেন। নানা প্রকারের ডায়াগ্রাম, রে-স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র তৈরি, ব্লক নির্মাণের ডুয়োটাইপ ও রে-টিন্ট পদ্ধতির উদ্ভাবন-এ সমস্ত সেই দূরদর্শিতারই ফল। বিদেশে তাঁর এই কার্যপ্রণালী উচ্চপ্রশংসিত হয়। বই ব্যাবসার সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রেও তিনি উল্লেখের দাবি রাখেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে উপেন্দ্রকিশোরের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘সন্দেশ’। লেখায় রেখায় সন্দেশ পত্রিকা ছিল অনবদ্য। ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল উপেন্দ্রকিশোরের বিখ্যাত ‘টুনটুনির বই’। তাঁর পুত্র সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ গ্রন্থটিও এখান থেকেই ছাপা হয়।

খ. ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সক্রিয়তার মধ্য দিয়েও বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা প্রসারলাভ করে’-এই মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সক্রিয়তার মধ্য দিয়েও বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা প্রসারলাভ করে। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা। তাঁর সম্পাদিত ‘Calcutta Journal of Medicine’ পত্রিকায় তিনি এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সপক্ষে বক্তব্য রাখেন। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় (আগস্ট ১৮৭২ খ্রি.) এক প্রবন্ধে এই প্রচেষ্টাকে ভারতে বিজ্ঞান সাধনার ‘ম্যাগনা কার্টা’ বলে উল্লেখ করা হয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি উদ্যোগে শুরু হলেও ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই বাংলার ছোটোলাট রিচার্ড টেম্পল বিজ্ঞান সভার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এখানে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়। বিজ্ঞানী সি. ভি. রমন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখানে গবেষণা করেই তিনি ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন এবং নোবেল পুরস্কার পান। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ও এই প্রতিষ্ঠানে গণিত বিষয়ে গবেষণা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি সে যুগে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার সময়ে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতেই গবেষণার কাজ শুরু করেন। কিন্তু মাঝে মাঝেই তাঁদের বিভিন্ন সরকারি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হত। ফলে একটি স্বশাসিত বিজ্ঞান বিভাগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হয়, যেখানে গবেষকরা স্বাধীনভাবে গবেষণা করার সুযোগ লাভ করতে পারবেন। এই উদ্দেশ্যকে রূপদান করেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এবং রাসবিহারী ঘোষ, স্যার তারকনাথ পালিত প্রমুখের সহযোগিতায় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়। তারকনাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষ বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিপুল অর্থ প্রদান করেন। বিদেশে ছাত্র পাঠিয়ে বিজ্ঞানচর্চার ব্যবস্থা করা হয়। আধুনিক ভারতের বিজ্ঞান অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কলেজ প্রধানতম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও স্যার সি. ভি. রমন যথাক্রমে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় পালিত অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজে নিযুক্ত হন মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখার্জি প্রমুখ বৈজ্ঞানিকরা। এখানকার উচ্চমানের গবেষণাপত্রগুলি বিশ্বের সেরা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে শুরু করে। বিখ্যাত গবেষক-শিক্ষকদের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু নিজের উদ্যোগে একটি স্বাধীন বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করে তিনি সেই স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্রের আন্তরিক প্রচেষ্টা সফল হয়। তিনি এই বছর ৩০ নভেম্বর বসুবিজ্ঞান মন্দির-এর সূচনা করেন। তাঁর ভাষায়, “এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু বীক্ষণাগার নহে, এটি একটি মন্দিরও”। বসুবিজ্ঞান মন্দিরের সূচনায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও উদ্ভিদবিদ্যা-এই তিনটি বিষয়ে গবেষণার কাজ শুরু হয়। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানের আরও অনেক বিভাগ সংযোজিত হয়। আমৃত্যু জগদীশচন্দ্র এই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা ছিলেন। বসুবিজ্ঞান মন্দির বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

গ. বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো। কারিগরি শিক্ষা প্রসারে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কী ভূমিকা পালন করেছিল? (৫ + ৩)

উত্তর: বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার:
বিজ্ঞান শিক্ষার মতোই কারিগরি শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রেও ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী আশানুরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ভারতের শিল্পায়নের বিষয়ে তারা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করত। তবে পূর্ত বিভাগ স্থাপিত হলে সরকারের স্বার্থ নগণ্য হলেও কারিগরি শিক্ষার সূচনা হয়। রুরকিতে একটি কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলায় প্রাথমিকভাবে প্রেসিডেন্সি কলেজের মাধ্যমেই কারিগরি শিক্ষার আয়োজন করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে হাওড়ার পূর্বতন বিশপ কলেজ প্রাঙ্গণে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপিত হয়। প্রকৃত উচ্চশিক্ষার প্রসার ও জাতীয় শিল্পোন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসারের গুরুত্ব উপলব্ধ হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কারিগরি শিক্ষা প্রচলনের জন্য দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ প্রমথনাথ বসু ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য একটি পৃথক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রস্তাব দেন। এর কয়েকবছর পর ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় শিল্প সমিতি গঠিত হয়। উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে জাতীয় কংগ্রেস ও দেশীয় সংবাদপত্রগুলি কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের দাবি তোলে। ভারতীয়দের ধারণা হয় কারিগরি শিক্ষার অভাবে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে স্কলারশিপ দিয়ে ভারতীয় ছাত্রদের জাপান, ইউরোপ ও আমেরিকায় কারিগরি শিক্ষালাভের জন্য পাঠানো হত। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে দেশে স্বাদেশিকতার জোয়ার আসে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে ওঠে।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা: জাতীয় শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি জাতীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য ডন সোসাইটি (১৯০২ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জাতীয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল যুবকদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলা। হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষা ও স্বদেশি শিল্পের প্রসার ঘটানো। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর ডন সোসাইটির আহ্বানে জাতীয় শিক্ষা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখের উপস্থিতিতে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ৯২ জন সদস্যকে নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠিত হয়। ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কারিগরি শিক্ষার প্রসার। তারকনাথ পালিত, মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই স্থাপিত হয় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’। প্রমথনাথ বসু এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। নীলরতন সরকার সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। এছাড়া আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল উপদেষ্টামণ্ডলীতে ছিলেন। সাবান, কাচ, চর্ম প্রভৃতি শিল্প স্থাপনে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের জন্য এখানে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ক্রমশ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের নতুন ভবন গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের নাম বদলে হয় ‘কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বেঙ্গল’। ডঃ ত্রিগুণা সেনের সুযোগ্য পরিচালনায় এই কলেজের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পরিণত হয়।

ঘ. শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর:
রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ প্রবর্তিত মামুলি বিদ্যালয় ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, “স্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল, মাস্টার এই কারখানার অংশ-চারটের সময় কারখানা বন্ধ হয়। মাস্টার-কল তখন মুখ বন্ধ করেন। ছাত্ররা দুই-চার খাতা কলে ছাঁটা বিদ্যা লইয়া বাড়ি ফেরে।” রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন এমন এক জীবনমুখী শিক্ষা পদ্ধতি যা হবে জীবন-অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক। প্রকৃতির মধ্যে মিশে গিয়ে শিক্ষার্থীর সামর্থ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। শিক্ষার এই আনন্দময় ও সক্রিয়তাভিত্তিক অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই শান্তিনিকেতনের সূচনা। রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে বোলপুরের কাছে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে উপাসনা মন্দির নির্মিত হয়। তারপর শুরু হল পৌষমেলা। অবশেষে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ বিদ্যালয় সূচনা করেন। এই বিদ্যালয় মাত্র গুটিকয়েক ছাত্র নিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে একে একে জড়ো হলেন অজিতকুমার চক্রবর্তী, মোহিতচন্দ্র সেন, সতীশচন্দ্র রায়, কানাইলাল বসু প্রমুখ। ভারতের প্রাচীন তপোবনের শিক্ষা ভাবনার সঙ্গে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানমনস্কতাকে মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের নতুন পাঠক্রম। এই পাঠক্রমে মাতৃভাষা যেমন মর্যাদা পেয়েছে তেমনি শিক্ষার্থী দেশের ও বিশ্বের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগও পেয়েছে। শান্তিনিকেতনের পড়াশোনা শুধুমাত্র বিষয়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেনি। ছবি আঁকা, গান গাওয়া, গাছ পরিচর্যা, আশ্রম তত্ত্বাবধান, গ্রামোন্নয়ন-এই ধরনের বিভিন্ন একক ও যৌথ কাজে শিশুকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেয় এই শিক্ষাব্যবস্থা।

শান্তিনিকেতনের সূচনা হয়েছিল এক বিশেষ প্রকৃতির বিদ্যালয় হিসাবে। কালক্রমে তা একটি বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। পৃথিবীর নানান জায়গায় ঘুরে রবীন্দ্রনাথের মনে হয়েছিল যে উদ্দেশ্য ও ভাবনা নিয়ে শান্তিনিকেতনের সূচনা হয়েছে, তা সমগ্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার্থীদের ‘বিশ্ব প্রকৃতির উদার ক্ষেত্রে’, ‘সর্বমানবের বিরাট লোকে’ মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। তার যাত্রা শুরু হয় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর। উদ্বোধক ছিলেন আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠে পাঠভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, শ্রীনিকেতন, চিনাভবন, কলাভবন, হিন্দিভবন আর শিক্ষাভবন। শ্রীনিকেতনে পল্লি উন্নয়নের জন্য কৃষি, পশুপালন, কুটির শিল্প, সমবায়, স্বাস্থ্য প্রভৃতি কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগে পঠনপাঠনের দায়িত্বে যোগ দিলেন ক্ষিতিমোহন সেন, নকুলেশ্বর গোস্বামী, নন্দলাল বসু, চার্লস এন্ড্রুজ প্রমুখ। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী পরিচালনার জন্য একটি গঠনতন্ত্র রচিত হয়। বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ১৯৫১ সালের মে মাসে বিশ্বভারতী ভারতীয় লোকসভায় একটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক উন্নতির প্রতি জোর দিয়েছিলেন। একই সাথে তিনি বিশ্বভারতীকে মানবজাতির ভাববিনিময় ও পারস্পরিক বিকাশের কেন্দ্রভূমি হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন।

ঙ. ‘একবিংশ শতাব্দীর সূচনায় যে কথা বিশ্বের সব আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বলা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ একশো বছর আগে সেই একই কথা বলে গিয়েছেন’,-এই মন্তব্যের আলোকে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করো। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা সম্পর্কে উক্ত মতামত কী যথার্থ? (৫ + ৩)

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা:
ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষাধারা ভারতবাসীর জাতীয় জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এবিষয়ে রবীন্দ্রনাথ সুস্পষ্ট মন্তব্য করেন। বাস্তবতা বিবর্জিত ও জীবনবিচ্ছিন্ন তোতাকাহিনির শিক্ষাপদ্ধতি যে শুধুমাত্র কেরানি তৈরির অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে, এ বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহ ছিলেন। তিনি তাঁর ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে বিদেশি মতের এই শিক্ষার সাথে জাতীয় জীবনের সামঞ্জস্যের যে অভাব তা সুনির্দিষ্টভাবে বলেন। জাতীয় শিক্ষানীতিকে সার্বভৌম ও উদার করে তোলার পরামর্শ দেন। রবীন্দ্রনাথ ‘চুঁচুঁয়ে-পড়া’ শিক্ষানীতিকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “শিক্ষার অভিসিঞ্চন ক্রিয়া সমাজের ওপরের স্তরকেই দুই-এক ইঞ্চি মাত্র ভিজিয়ে দেবে আর নীচের স্তরপরম্পরা নিত্য-নীরস কাঠিন্যের সুদূর প্রসারিত মরুময়তাকে ক্ষীণ আবরণে ঢাকা দিয়ে রাখবে।” জাতীয় চেতনার প্রসারে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে মূল্যবান মতামত রাখেন। ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। ‘শিক্ষার বাহন’ প্রবন্ধে তিনি এও বলেন যে বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষাকে শুধু প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে বন্দি রাখলেই হবে না। উচ্চশিক্ষাতেও মাতৃভাষা ব্যবহারের যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। তিনি অবশ্য ইংরেজিকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে বলেননি। রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ প্রবর্তিত মামুলি বিদ্যালয় ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন এমন এক জীবনমুখী শিক্ষা পদ্ধতি যা হবে জীবন-অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক। প্রকৃতির মধ্যে মিশে গিয়ে শিক্ষার্থীর সামর্থ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। শিক্ষার এই আনন্দময় ও সক্রিয়তাভিত্তিক অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই শান্তিনিকেতনের সূচনা। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের মানসিক সংযোগ ঘটবে। তিনি বিশ্বাস করতেন শিশুরা শ্রেণিশিক্ষণ, পাঠ্যপুস্তক থেকে যা শেখে তার থেকে অনেক বেশি শিখতে পারে প্রকৃতির কাছ থেকে। শিশুদের জন্য “..atmosphere is a great deal more important than rules and methods, buildings, appliances, class-teaching and text book”। রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেন যে, মানুষের জন্ম বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবসমাজ-এই দুইয়ের মধ্যে। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি এই দুই উপাদানের সমন্বয় চেয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, শিখবার জন্য আলো, বাতাস, গাছপালা, মুক্ত আকাশ ইত্যাদি চক, বোর্ড, পুথির মতোই আবশ্যকীয়। এই কারণেই তিনি আশ্রমিক শিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখার জন্য তিনি আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন করেন। রবীন্দ্রনাথ দ্বিধাহীন ভাষায় তাঁর বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন-“আমার আশা ছিল যে, শান্তিনিকেতনের গাছপালা, পাখিই এদের শিক্ষার ভার নেবে।” তিনি প্রাচীন ভারতীয় আদর্শের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সমন্বয়সাধন করেছেন।উক্ত মতামতের যথার্থতা: একুশ শতকের সূচনায় যে কথা বিশ্বের সব আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বলা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ একশো বছর আগে সেই একই কথা বলে গিয়েছেন। শুধুমাত্র ভ্রান্ত ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির সমালোচনা করেই তিনি থেমে থাকেননি। সমাধানের সূত্রও তিনিই দিয়েছেন। অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক শিক্ষা, প্রকৃতির মধ্যে শিশুর বেড়ে ওঠা, মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণ বা চেনা জগৎ থেকে অচেনা জগতে উত্তরণ— যে কথা রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছেন এক শতাব্দী আগে, আসলে তা-ই অনুসৃত হচ্ছে আজকের জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ (National Curriculum Framework-2005)-এ বা শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ (RTE Act, 2009) -এ। সুতরাং, মন্তব্যটি যথার্থ।

অতিরিক্ত (Extras)

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQs)

১. ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে কোন দেশে প্রথম বই ছাপা হয়েছিল?

ক. চিন
খ. ইংল্যান্ড
গ. ইউরোপ
ঘ. ভারতে

উত্তর: ক. চিন

Missing answers are only available to registered users. Please register or login if already registered. How to register? Click on Menu and select Register

৩২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে কী সমালোচনা করেন?

ক. কেরানি শিক্ষা
খ. প্রকৃতি শিক্ষা
গ. মাতৃভাষার সীমাবদ্ধতা
ঘ. বিজ্ঞান শিক্ষা

উত্তর: ক. কেরানি শিক্ষা

প্রশ্ন ও উত্তর (Questions, Answers)

১. ছাপাখানার উদ্ভব প্রথম কোথায় হয়েছিল?

উত্তর: ছাপাখানার উদ্ভব প্রথম চিন-এ হয়।

Missing answers are only available to registered users. Please register or login if already registered. How to register? Click on Menu and select Register

৪১. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কী ভূমিকা নিয়েছিল? বিস্তারিত ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ৯২ জন সদস্যকে নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠিত হয়। ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কারিগরি শিক্ষার প্রসার। জাতীয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল যুবকদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলা এবং হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষা ও স্বদেশি শিল্পের প্রসার ঘটানো।

তারকনাথ পালিত, মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সোসাইটির অধীনে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’ স্থাপিত হয়। সাবান, কাচ, চর্ম প্রভৃতি শিল্প স্থাপনে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের জন্য এখানে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

ক্রমশ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের নতুন ভবন গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের নাম বদলে হয় ‘কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বেঙ্গল’। ডঃ ত্রিগুণা সেনের সুযোগ্য পরিচালনায় এই কলেজের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পরিণত হয়। এভাবে কারিগরি শিক্ষা প্রসারে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

Ron'e Dutta
Ron'e Dutta
Ron'e Dutta is a journalist, teacher, aspiring novelist, and blogger who manages Online Free Notes. An avid reader of Victorian literature, his favourite book is Wuthering Heights by Emily Brontë. He dreams of travelling the world. You can connect with him on social media. He does personal writing on ronism.

Get notes of other classes and subjects

NBSE SEBA/AHSEC
NCERT TBSE
WBBSE/WHCHSE ICSE/ISC
BSEM/COHSEM MBOSE
Share Feedback Question Papers
Notify change in syllabus/books Share PDFs of books, get benefits
Request notes not available now Share PDFs of question papers

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Only for Registered Users